- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- মার্চ ১৭, ২০২৪
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে। পর্ব ১৪
চিত্রকর্ম: কাইয়ুম চৌধুরী
বহুমাত্রার বিস্ময়
দুর্বোধ্য ভিড়ে, বহুস্বরের মধ্যে, তাঁর যে-কোনো পরিশীলিত কর্মে, গল্পে, কবিতায়, উপন্যাসে, স্মূতি আর আত্মকথনে, সামাজিক সংলাপে, প্রবন্ধে চেনা যায় যে, এই তো নিজস্ব ভঙ্গিতে, স্বতান্ত্রিক বাক্য ছড়িয়ে বলছেন, হাঁটছেন, বসে আছেন একরাম আলি, বাংলাভাষায় এ মুহূর্তের অন্যরকম কবি, অবশ্যই প্রধান কবিদের অন্যতম; প্রজন্ম তাঁকে আড়াল করে না, করতে পারে না, সমীহ করে শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে জড়িয়ে রাখে বুকে। সম্ভবত, আমাদের আগামী তাঁর কবিস্বরূপকে, সংযত ভাষণ আর মিতব্যয়ী স্বভাবকে, পাঠ্যবইয়ের বাইরেও মনে রাখবে। শঙ্খ ঘোষের জীবদ্দশায়, স্ববলয় আর নিয়মিত নিঃস্বর রোমান্টিকতার আবহ নির্মাণ করে যাওয়া এবং নাগরিক যাপনের ভেতরে আর বাইরেও, নিসর্গের বিশুদ্ধ রূপকার হয়ে ওঠা অবশ্যই বিস্ময়কর। কবিতার একরাম, গদ্যের একরাম, স্মৃতিকথার একরাম, নৃতত্ত্বের একরাম আত্মপ্রকাশের হরেকরকমের ফর্ম নিয়ে তাঁর পাঠকের নিকটস্থ আত্মীয় । বিচ্ছিন্ন নয়, অখণ্ড তাঁর ভাবনা ও শিল্পশর্ত।
বাহার উদ্দিন। ১৭/০৩/২০২৪
শিশুকে নিজের পায়ে হাঁটতে বলি
♦ কবিতার মুহূর্তে কি খুব অস্থির হয়ে ওঠেন ?না। এমনকি অন্তর্গত অস্থিরতা থেকেও দূরে থাকতে হয়। কবিতা একাগ্রতা দাবি করে। এ সেই একাগ্রতা, যা অর্জন করতে হয়; এবং তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়।
♦ ভেবেচিন্তে লেখেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ?ভেবেচিন্তে নয়, আবার স্বতঃস্ফূর্তভাবেও নয়। তাহলে কীভাবে? লেখার মুহূর্তের কথা হয়তো-বা লেখাটিই জানে বা লেখাও জানে না। পরে নিজে খুঁটিয়ে দেখেছি, কোনো চিহ্ন কোথাও পাইনি। তাই বলতে পারব না।
♦ কখনো কি মনে হয়, কেউ আপনাকে ভেতর থেকে লিখিয়ে নেয়, এমন কোনো মনোবাসী ?না। সেরকম পরোপকারীর খোঁজ এখনো পাইনি। যা লিখি, যতটুকু লিখি, নিজেকেই লিখতে হয়। মনের হদিসই আমি জানি না। ফলে মনোবাসী কারো অস্তিত্বে আমার ভরসা নেই।
♦ একটানা লেখেন, না থেকে থেকে লিখতে হয় ?যখন লিখি একটানা লিখতে পারলেই কথোপকথন সম্পূর্ণ হয়। রাত না হলে, লিখতে পারিনা। কখনো মনে হয়, পুরো রাত জেগে থাকে যদি কবিতায়, ক্ষতি কী!
♦ লেখার আগে কি মনে মনে পংক্তি আওড়ান ?অনেক সময়। সাপুড়ে যেমন, বিড়বিড় করি আনমনে।
♦ অন্তমিল, মধ্যমিল কি কবিতায় ফেরাতে চান ?অন্ত্যমিল বা মধ্যমিল বাড়ি থেকে, অর্থাৎ কবিতা থেকে পালিয়ে যায়নি বা তাদের নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হয়নি যে এখন ফের ফিরিয়ে আনার উদযোগ নিতে হবে। তারা কবিতার সঙ্গে কবে থেকে যেন লেপটে আছে। এখন তারা থাকলে থাকবে। না থাকলেও ক্ষতি নেই।
♦ ছন্দের ওলট পালট বা ভাঙচুর কতটা পছন্দ ?ছন্দ হচ্ছে ওয়াকার। হাঁটা শেখার সময় শিশুর যেমন। শিখে গেলে ওয়াকার আমরা সরিয়ে রাখি। শিশুকে নিজের পায়ে হাটতে বলি।
এক
শুধু কি জঙ্গলই গোপনে কথা বলতে জানে?
মাটির নীরবতায় ঢাকা গ্রামের পর গ্রাম
শুকনো জিভগুলো ছায়াপথ পর্যন্ত লম্বা
সবাই বলে, বৃষ্টি আর কখনো ফিরবে না
নেতিয়ে-পড়া কলাপাতার মা
বুকে তার মাটির শিশু
তারা স্বপ্ন দেখে— বৃষ্টি আসছে
অসংখ্য, ঝমঝম
জঙ্গল পেরিয়ে আসছে অনাদি কালের নাচ
দুই
আয়নার ভাঙা টুকরো
সেখানে ঠিকরোচ্ছে তোমার মুখের একটু অংশ
ওইটুকু বিশ্বে তুমি বেঁচে রয়েছ
ওপরে নীচে বিস্তীর্ণ উপহাস
তবেই তো তোমার মুণ্ড
আশ্রয় পেয়েছে রক্তঝরা মালায়
তিন
সারাটা বছর, বিশ্বাস করো
আমি ঘুমিয়েছিলাম
জঙ্গল পুড়ে গেছে, সেই নিভু আগুন
চরাচরে ধিকিধিকি জ্বলে
কাঠ পুড়তে পুড়তে ফাটে
তার শব্দে বৃক্ষমাতার গর্জন
জঙ্গল থেকে দূরে একটি নির্বাসিত বিছানা
শোনো, এবছরও আমি ঘুমিয়ে পড়ব
♦—♦—♦♦—♦—♦♦—♦—♦
❤ Support Us