- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- মার্চ ১০, ২০২৪
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে। পর্ব ১৩
চিত্রকর: হেমন্ত মিশ্র
ছড়িয়ে দিন তন্ময় ঐশ্বর্য
মোহাজির হুসেইন চৌধুরীর জন্ম আর মর্মস্থান বরাক উপত্যকার বড়যাত্রাপুর। লেখাপড়া গ্রামে, শিলচরে। মেধাবি ছাত্র, দক্ষিণ অসমের অভিজাত মহাবিদ্যালয়, গুরুচরণ কলেজে পড়তে পড়তে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসেই বাজিমাৎ। সুযোগ ছাড়লেন না, মৎস্যবিভাগে স্বমহিমায় চাকরি করেছেন ৩৬ বছর। পেশার সঙ্গে দুটো নেশাও তখন অব্যাহত, অবিরত কবিতা চর্চা আর হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা।
নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে মানুষকে, পারিপার্শ্বিকতাকে ত্রিনয়নে দেখে যাওয়া, এও এক কালহীন বড়োযাত্রা।এক্ষেত্রে কবিতা তাঁর আশ্রয়, বলেছেন মোহাজির; বলেছেন কবিতার সূত্রে বিশ্বযোগ গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে এ তো কোনো সুফির বা সন্ত-কবির সঙ্কেতময় অভিজ্ঞতার প্রতিলিপি। কম লেখেন। কবিতার জগত তাঁর বিস্তৃত। অসমে, বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত নাম। উদ্বাস্তু মানসিকতার প্রশ্রয় নেই তাঁর কবিতায়, যাপনের হরেক মুহূর্তে। একধরনের দায়বদ্ধতা বেঁধে রাখে তাঁর রোমান্টিকতা আর বাস্তবতাবোধকে। সঙ্কলিত কবিতার বই দুটি, এই প্রথম দেখা, পাতাঝরা দোঁহা।
তৃতীয়, চতুর্থ বই নেই কেন হে আত্মউদাসীন। বরযাত্রাপুর থেকে বেরিয়ে ওখানে আবার ফিরতে হলে আরো কিছুটা, আরো আরো দ্রুত পা ফেলতে হবে, ছড়িয়ে দিন যাপন আর অনুভূতির ঐশ্বর্য।
বাহার উদ্দিন। ৩/০৩/২০২৪

আমার কোনো শূন্যকাল নেই
কেন কবিতা লিখি? প্রশ্নটা যত সহজ, উত্তর ততটাই দুর্বোধ্য, রহস্যময়। ঘোর- ছোঁওয়া–স্তব্ধতা যেন। একজন কবি যে-ভাষায় বলবেন, আরেক কবি নীরবতা পেরিয়ে ব্যক্তিক অভিজ্ঞতা জানিয়ে দেবেন, অনায়াসে, ভেবে কিংবা না ভেবে। প্রশ্নটির নির্ভরযোগ্য উত্তর পেতে হলে কবিকে নয়, সোজাসুজি প্রশ্ন করুণ কবিতাকে। জবাব পেয়ে যাবেন, কবিতার ঘরবাড়ি কোথায়? তার কি কোনো প্রান্তসীমা আছে? কীভাবে সে বদলায়, ক্রমাগত বদলাচ্ছে ? অন্তরে ও বাইরে।
আমরা জানি, বিশ্বের পরতে পরতে প্রতি মুহূর্তে অজস্র শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে, জ্বলে যাবার, ভেঙ্গে যাবার, প্রেম ও অপ্রেমের এবং চিৎকারের । কবিরা সেই শব্দগুলোর সাকার রূপ দেন নিজের লেখায় । এর সফলতা ও বিফলতা দুটোই রয়েছে । কোনো কবি কোনো কালে ছন্দ মাত্রার জটিল ব্যাকরণ শিখে মাঠে নামেননি । কবিতা শেখার কোন নিয়ম তান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বা পাঠক্রম নেই। হতে পারেনা । ব্যবধান শুধু এটাই, কেউ লিখতে লিখতে লেখক হন আর কেউ লেখক বলেই লেখেন । কবিতা নিরন্তর সাধনার যোগফল । শুধু সখের শব্দমালা জুড়ে দিলেই কবিতার সৃষ্টি কি সম্ভব ?
কবিতার মাধ্যমে স্বল্প ভাষ্যে বিশ্বজনীনতা গড়ে তোলা যায় । কবিদের ভাষা ও শিল্পশৈলী ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু হৃ্দয় তন্ত্রীতে যে সুরের মূর্ছনা থাকে, তাতে অভিন্ন আকুতি বিরাজ করে । কবিতা বলবে মাটির কথা, আঁকবে পারিপার্শ্বিকতার রৌদ্র ছায়া, অনাগত সময়ের শঙ্কা ও সংকেত । কখনো ভবিষ্যত দ্রষ্টার মতো সময়ের ইঙ্গিত ।

চিত্রকর: হেমন্ত মিশ্র
সমাপিকা এক দুর্দান্ত স্বপ্নের নদী
সমাপিকা ক্রিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকি
দু’হাতে প্রার্থনা সেরে মুখ মুছি
কখনো দরজা খুলতে দেখেছ?
কখনো কি জবরদস্তি করে
দরজা খুলতে পারি?
নিভন্ত শিখার দুইধারে হাত রেখে
আর কতক্ষণ দাঁড়াব দরজায়
পাখির কিচিরমিচিরে রাত ভেঙে যায়
জগৎবাসীরা নড়েচড়ে ওঠে
আমি অসমাপিকায় শুয়ে
তখন শ্রাদ্ধের কোঠায় দ্রুত ছুটি
বুঝেছি সমাপিকা বলে কোনকিছু নেই
ধোয়াশার কুণ্ডলে
সমাপিকা এক দুর্দান্ত স্বপ্নের নদী ।।

চিত্রকর: হেমন্ত মিশ্র
প্রতীক্ষা
বৃষ্টিস্নাত মাঘের আকাশে
ভালবাসার ময়ুরী গা ঝাড়া-য়
পেখম ফুলিয়ে তুলে কেকা রবে
এখনো এলোনা কেউ দেখে নিতে
বিরহ বিবসে কাঁদে নীরবতা
সে ত চেয়ে ছিল কারো ভালোবাসা
নিভৃত আড়ালে
সে – ই জানে কার প্রতিবিম্ব
ভেসে যায় গড়ানো চোখের জলে ।

চিত্রকর: হেমন্ত মিশ্র
আমলকী যৌবন
একটা ধূসর পাহাড়
কাছে যেতেই সবুজ হয়ে উঠল
সিঁড়ি কাটা পথ আর এক বুক নির্জনতা
দেখিয়ে দিয়ে
আমাকে আরও কাছে যেতে বলল
তারপর একে একে পরত খুলতে খুলতে
দেখাল তার অন্তর্বতী ভালবাসার অন্তর্বাস
আমি বিমোহিত স্ট্রিট লাইট হয়ে
তার বুকে জ্বলন্ত আলো ছিটিয়ে দিলাম
চোখে ফুটে উঠল এক তন্ময়
বালিকার আমলকী যৌবন …
♦—♦—♦♦—♦—♦♦—♦—♦
❤ Support Us








