- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
গুচ্ছ কবিতা

চিত্র: শৈলজা মুখোপাধ্যায় (১৯০৯-১৯৬০)
নেপথ্যে মোস্তাক আহমেদের পৃথিবী
বৈদগ্ধ্য আর প্রজ্ঞার তারুণ্য, আবহমান, আবর্তমান বাংলা কবিতার — চর্যাপদ থেকে, আলাওল থেকে, আব্দুল হাকিম, মুকুন্দরাম, ভারতচন্দ্র রায় পর্যন্ত, প্রাচীন আর মধ্যযুগের শেষ আর আরম্ভ পর্বে প্রতিনিধি স্তরের এমন কাউকে, এমন কোনো কবিকে খুঁজে পার না আমরা – যিনি মেধার সঙ্গ আর তাঁর রচিত নিঃসঙ্গতা দিয়ে কবিতা পাঠের শ্রুতি আর সরল বোধির ছন্দময়, ছন্দহীন, অন্তরাময়, অনুপ্রাসমগ্ন মগ্ন উচ্চারণের দিকে— তাঁর কবি ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট করেননি আমাদের। এ ক্ষেত্রে বাঙালির মতো ভাগ্যবান জাতি। কবিতা পাগল জনপদ বিশ্বে সম্ভবত বিরল !
উনিশশতকে মাইকেল মধুসূদনের স্বতঃস্ফুর্ত, সচেতন, মিশ্র চর্চা আর চর্যার সূত্রে, সামাজিক সম্ভ্রম আর বিলম্বিত গ্রহণযোগ্যতার পরিধি আরো দীর্ঘ, আরো প্রশস্ত হয়ে ওঠে কবিদের ধ্রুপদিয়ানা আর শাশ্বত রোমান্টিকতা, যা ইউরোপীয় নয়, অবশ্যই দেশজ, ভারতীয় সংস্কৃত কাব্য, মহাকাব্যের অনুসারি ইংরেজি কবিতা, খানিকটা ফরসি, তার আগের ফারসি কবিতা উদ্বুদ্ধ করেছে আমাদের, শ্রবণে বিস্তর বিত্ত যুগিয়েছে, কিন্তু তা সর্বগামী হতে পারেনি। ইংরেজি এখানে সফল, বিশ্বস্ত সহগামী, এবং ধাত্রী প্রসূত সহোদর, বিদেশি হলেও তার কবিতাপ্রীতি বাংলা কবিতাকে যতদূর সম্ভব ধর্মমগ্ন করেছে, ধর্মান্তরিত করেনি, সাহসী, দুঃসাহসী হয়ে ওঠার সূচিপত্র দিয়েছে, ইংরেজির অনুদান-অবদান অস্বীকার করা অন্যায়। মনে রাখা জরুরি, ইংরেজ আর ইংরেজি এদেশে না এলে, বাংলা কবিতার অলিন্দ আর অন্দরে আজনবি আলোর ছোটাছুটি দেরিতে ঘটত, এত সহজে মাইকেল কবিতায় আসতেন কিনা সন্দেহ; ছন্দের অন্ধকারে তাঁর অমিত্রাক্ষর, তাঁর ভাঙ্গা গড়ার শৈলী কি এত স্বাভাবিক, এরকম সহজসাধ্য হতে পারত ? রোমান্টিকতার প্রাক রবীন্দ্র চক্রবর্তী, বিহারী লালের অনুশীলন নিঃশব্দ। অনাড়ম্বর, তাঁর কারুকৃতি। মাইকেল তাঁকে কতটা আলোড়িত করেছিলেন, মাইকেলের সঙ্গে তাঁর আদৌ মানসিক ভাববিনিময় হয়েছিল কিনা, প্রমাণ নেই, কিন্তু মাইকেলকে এড়িয়ে, মাইকেলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে এমন স্থিতধী, সৃজনশীল ঐশ্বর্য নির্মাণ করা কি সম্ভব ? মাইকল ধ্রপদিবৃত্তের কবি, আবার রোমান্টিকদেরও নিবিড় আত্মীয়; মাইকেলের ঘরানা, ইংরেজি ও ফারসি কবিতার ঐতিহ্য আর ঐশ্বর্য যে রকম প্রজ্ঞাসিক্ত করেছিল সব যুগের, সব দেশের সেরা রোমান্টিক রবীন্দ্রনাথকে, যার প্রবাহ কখনো মন্দ্র, কখনো তীর্যক, কখনো বিনিদ্র, তা ভারতীয় কবিতার, বিশ্ব কবিতার তুলনারহিত দৃষ্টান্ত। আমাদের কান, আমাদের দৃষ্টি আর অর্ন্তদৃষ্টিকে যে-প্রাচর্যে তৈরি করে গেছেন মহর্ষী কবি, তার স্থিতির উত্তরাধিকার কেবল বাংলা কবিতার নয়, বিশ্বভাষায়ও এ-এক উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম। রবীন্দ্র-পর্বকে, তাঁর অনিঃশেষ উরণকেই মেনে নেয়; বিনম্র ধ্বনিতে, কবি ও পাঠকের মনন আর স্রোতধর উচ্ছ্বাস।
কাজী নজরুল ইসলামের আবেগ- ছোঁওয়া উচ্চারণ, তাঁর তেজোদীপ্ত, পেশীবহুল কণ্ঠের কব্জি, ঝড়ো প্রতিভা, তরঙ্গায়িত শব্দ, গান আর সুরের ধ্রুপদী সম্ভার, লোকায়তিক আনন্দ আর সজল মমতার বিস্তার রবীন্দ্রনাথের উদয় আর উপস্থিতি ছাড়া কি সম্ভব? ঠিক একইভাবে, রবির আলো মেখে, তৃষ্ণাতুর হয়ে ওঠে অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন দও, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ, আলী আহসান, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, ফাররুখ আহমদ, আহসান হাবীব প্রমুখ কবি (১৯৩০ – ১৯৫০) ও তাঁদের সচেতন পাঠকের মগ্ন ও বহিরাদিক চৈতন্য। ১৯৩০-এর কবিদের মননের ঐশ্বর্য আর মুক্ত হাওয়া অবলম্বনের অনুশীলন অন্যরকম দুর্লভ কর্ম। মর্মে মর্মে তার স্পর্শ আরো উর্ধ্বাচারী, আরো শস্যময়, আরো শ্যামল করে তোলে কবিতাকে, পাশাপাশি আমাদের কবিতা পাঠকের মনোহর চারণভূমিকে। প্রসঙ্গত, সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক এবং দরকার প্রভূত জিজ্ঞাসার যে, ওই স্রোত, ওই ঐতিহ্য, ওই কবিতা চর্যার ঐশ্বর্য এখনো কি অক্ষত ? নেতিকে প্রশয় দেওয়া অন্যায়, কবিতা থেকে, কবিতার নিয়মিত পাঠ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া আরো বড়ো অপরাধ, আমাদের বিশ্বাস, কবিতা আর ছবিতা, (চিত্রশিল্প) গুঞ্জনিয়া সুরের মতো সব শিল্পের জনক-জননী, ওই দেখুন মায়ের জঠরে গান করে, হাসে শিশুরা; জন্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তোলে তার গুঞ্জন, আদি মানুষ ছবি আঁকত গুহায়, মরুভূমির অন্ধকারে কম্পিত শীতের রাতে ছড়া বলে উষ্ণতা অনুভব করত পান্থজন আর প্রান্তজন — আজও সে সৌভাগ্য তাঁর সঙ্গী, যুদ্ধ গিয়ে কবিতা পড়ে, ঝড়ের রাতে খুঁজে বেড়ায় ছবির অভিসার, দৃশ্যগত আর অনুভূত বিশ্বাস তার নিত্য সঙ্গী, এখানে কবিতা তার শ্রবণের আধার, ছবি তার কল্পিত ছায়া আর রূপকের ইঙ্গিতধর্মী দৃষ্টান্ত। যেমন মাইফেল মধুমূদন, যেমন রবীন্দ্রনাথ, যেমন সৃষ্টির উল্লাসে মাতোয়ারা নজরুল ইসলাম, তেমনি কবিতার সতত সঙ্গী জীবনানন্দ এবং তাঁর কণ্ঠ অনানুসারী উত্তরাধিকারীরা। এটাই একটি কারণ, সমূহ কারণ নয়। কেননা, নেতিকে, হতাশাকে আস্কারা দেওয়া পাপ। এ পাপে বাঙালির সায় নেই, বিশেষ পূর্ব প্রস্তুতি নেই, শিল্প চর্চা, কবিতা লেখা, কবিতা পাঠ তার সামাজিকতার, তার প্রাণ ধারণের, অফুরন্ত যাপনের অবিচ্ছেদ্য চিহ্ন। কবিতার প্রতি— তার ঝোঁক আর পক্ষপাত অপেক্ষাকৃত বেশি, কবিতার পরেই গান তার সুরের গুণগুণ তাকে ছড়িয়ে দেয়, জড়িয়ে রাখে, এই দুটি শিল্প সঙ্গ ছাড়া নাগরিক বাঙালি, গ্রামীণ বঙ্গজনও বাঁচতে পরে না, গ্রামের কবিতায় নির্মাণ কম, সৃষ্টির তাগিদ বেশি, সৃজনময়তা প্রবল বলেইশহরে এসে গ্রামীণ সন্তান নাগরিকতার স্নান করেও ছাড়তে পারে না সেকাল আর একালের কলসকে; এ কলসে ফাটল নেই, ভাঙন নেই, সমাধি নেই, আছে- শুধু পূর্ণতার সন্ধান। এখানে সে ব্যর্থ হয়, সে অনুর্বর, সে কবি নয়, নির্মানশীল হওয়ার চেষ্টা করেও অন্তঃশক্তির অভাবে ‘কেউ কেড না-কবির’ স্তরেই, কল্পনার রুগ্নতার শিকার হযে, বেঁচে থাকে।
এরা আমাদের আলোচ্য নয়, কবিতার গ্রহে, উপগ্রহের তাঁদের জায়গা নেই; আমরা বরং কবিতার নিস্ফলা জমি, রুগ্ন তটরেখা, ছায়ালপ্ত বনানী আর নির্জলা নদী, যাদের সম্ভাবনা ক্রমশ নিভে যাচ্ছে, তাদের নিয়েই উদ্বিগ্ন; একধরনের দুশ্চিন্তা ঘেরাও করছে কবি আর কবিতার বিশুদ্ধ পাঠককেও; এ কারণেই প্রসঙ্গটি, প্রশ্নটিও জাগিয়ে তোলা জরুরি, পরিষ্কার কণ্ঠে নিষ্কন্ঠক ভূমিতে দাড়িয়ে প্রশ্নের উত্থাপন দরকার। তা হচ্ছে এই যে, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে— ভাস্কর চক্রবর্তী, শামসের আনোয়ার, শান্তনু ঘোষ, রফিক আজাদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মহম্মদ শহিদ উল্লাহ, তুষার রায়, হুমায়ুন আজাদ, আবুল হোসেন, মনীন্দ্র গুপ্ত, দেবারতি মিত্র, প্রমুখের প্রজ্জ্বলিত শিখা – ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এবং অনেক পরেও অনেকের চিত্রপভ, শব্দপ্রভ, চিত্রনীয়, অনুকরণীয় হয়ে আছে। মৃদুল দাশগুপ্ত, একরাজ আলি, রণজিৎ দাশ, রেজা উদ্দিন স্ট্যালিন, এবং জয় গোস্বামী, জয়দেব বসু, শম্ভু রক্ষিত, সুরোধ সরকার; সৈয়দ কওসর জামালের মতো কবিদের আঙ্গিক আর বৈষয়িক ধারাবাহিকতা অবশ্যই বাংলা কবিতাকে বিত্তবান করে রেখেছে, তবু একথা কি বলা খুব ভুল হবে যে, মেঘ জমেছে, চাঁদে পা দিচ্ছে পাপ, ক্রমশ ঘিরে ধরছে কবিতাকে দূষণ আর রোগা অবক্ষয়। এতক্ষণ, এককথা, এতটা বকবক করতে হল বলে দুঃখিত।
কবিতা কিংবা চিত্রশিল্প, কিংবা যে কোনো কারুকৃতিকে, সারগ্রাহী ব্যক্তি প্রতিভার অভিব্যক্তিকেও নেতিগ্রস্থতাকে ঝাঁড়ফুক দিয়ে কাবু করা কঠিন। তাকে প্রতিভার বিকাশকে মসৃণ করে শিল্পের সত্য আর শর্তকে উঁচু করে রক্ষা করতে হয় সমাজকে। রাজনৈতিক অপচয়, সামাজিক দিশাহীনতা, অতিরিক্ত আত্মকথনের ভব্য, অভব্য মাধ্যমের অপব্যবহার, যে কবি নয়, শিল্পী নয়, সুরকার নয়, তাকে গণ্য আর পুজ্য করে তুলছে। এ-এক সংক্রামক দুর্যোগ। দুঃসময়। এরকম প্রবণতা বেশিদিন টিকবে না, নেতির উপাস্য পথ হারিয়ে অন্ধকারে প্রবেশ করবে।
তার জায়গায় ফিরে আসবের নির্মীয়মণ প্রতিভা। আলোহীনতার বাগিচার নার্গিস কাঁদে, সে কান্না মুছে দেয় প্রত্যাশিত বহু কাঙ্ক্ষিত প্রতিভা। ‘হাজারো সাল নার্গিস আপনি বেনুরি পে রোতি হ্যায়।’ কখনো কখনো জন্ম নেয় একজন ইকবাল, নার্গিসের কান্না থেমে যায়, বাগিচায় দোল তোলে বুলবুল— বলেছিলেন অবিস্মরণীয় কবি মহম্মদ ইকবাল।এরকম প্রতিভা সচরাচর হয় না। তাঁরা হঠাৎ আসেন, নিবেশিত, নিবেদিত হতে থাকেন মেধা আর প্রজন্মের স্বার্থে অমূল্য বিত্ত সংগ্রহে।
জাগিয়ে তোলেন অবিশ্বাসের পরাজয়ের অবধারিত ছায়া চিহ্ন। একক ভাবনা, অকপট বলাটাও নিঃসন্দেহে স্বস্তির জন্ম দেয়। কিছু দুঃখ দেয় বিপরীতের চিত্র। ক্রমে প্রকারান্তে নেতিকে বলে দেন আলাদা।
সর্বনাশা অবক্ষয়কে ভেদ করে, বঙ্গীয় সমতটের, পাহাড়ি অঞ্চলের, নদীমাতৃক অববাহিকার বহু কবি, কবিতার ‘সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বীরা’ ইদানীং ভাঙনবোধে, জগদ্দল শূন্যতাকে মুছে ফেলতে দলবদ্ধ সঙ্ঘ অথবা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানিকতার শিকড়ে নিরন্তর ঘা দিচ্ছেন। শৈলীর সন্ধান খুঁজতে খুজতে লড়তে লড়তে। তাঁরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, অঙ্গীকারবদ্ধ। নিঃশব্দ চরণে অথবা কখনো কখনো কোলাহল রচনা করে জানাতে চাইছেন, জেগে ওঠো বসন্ত, প্রতিদিন প্রতিমাসে, জ্বলুক তোমার শিখা। বলতে আর ভাবতে ভালো লাগছে, শুধু কর্মে নয়, মর্মে মর্মে তিনি কবিতার প্রতিভাধর পুরুষ। সফল দূরদর্শী গবেষক এবং স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর চিত্রিত, রচিত কবিতা এবং তা পড়ার অভিজ্ঞতা বেঁচে থাকার পুঁজিকে কাছাকাছি নিয়ে আসে, ছড়িয়ে দেয় গ্রাম আর নাগরিকের প্রতীক্ষিত ঘ্রাণ। মোস্তাক ভালো কবিদের সাহসী মিছিলের যাত্রী, প্রয়োজনে দুঃসাহসেরও অভিযাত্রী। তাঁর চিন্তার রক্তে সুধীন দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ, আলী আহসান, শঙ্খ ঘোষ, অলোক রঞ্জন দাশগুপ্ত, হুমায়ুন আজাদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল এবং শিবাজি দাশগুপ্তের উত্তরাধিকার। শিল্প শর্তের হেফাজতেও তিনি স্বতন্ত্র। তাঁকে ভরসা করা যায়, অবলম্বনও ভাবতে পারি।সঙ্কটকালে তাঁর অধ্যাবসায়, তাঁর পর্যবেক্ষন, তাঁর প্রীতি আর সম্প্রীতির বোধ ভাষা করি গড়ে তুলবে স্নিগ্ধ, দাঢ্য তার স্থিতধী শিল্পের সংসার।
বাহার উদ্দিন। ১৭.৯.২০২৩
তমাল ও ছায়ামূর্তি
এক
এ গল্প তমালের জারণের ইতিহাস
ইতিহাসে ভাষার মুনশিয়ানা
বিনয়-বীক্ষণে অনাদি-অনন্ত
নিছক প্রশংসা নয়, সে এক নিরপেক্ষ উড়ান
আরোহণ-অবরোহণের অনেক গল্প
গণিত ও কবিতার শরিকানায় বে-সামাল মগ্ন তমাল
উন্নাসিক, উদাসীন, আক্ষেপে বেদনাক্রান্ত
আত্মকথন অসংলগ্ন, ঠিক বেছে নেওয়া মুশকিল
ছড়িয়ে ছিটিয়ে তথ্য, প্রতিধ্বনি
মিথের মতো জড়িয়ে যায় গল্পগুলোও
গায়ত্রী নামে জনার্দন চক্রবর্তীর কোনো মেয়েই ছিল না
গড়ে তোলে অতি কথা, কবিতার চেয়ে বেশি চর্চিত
রাস্তার পাশে উঁচু পাঁচিল, পাঁচিলে বেসাতি স্বপ্ন-ঘর
ও পাশে অযথা দৃশ্য-দূষণ, ভয়ানক অন্ধকার

চিত্র: শৈলজা মুখোপাধ্যায়
দুই
আপাত বিতর্ক— কবিতার একটি অণু-পরমাণুও অবহেলার নয়
সৃজনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে আছে তমালের মেধা-চিন্তন
মানবিক যুক্তি-পরম্পরা
প্রকৃতির সঙ্গে যন্ত্রণা ভাগ
কল-কোলাহল থেকে সচেতন দূরত্ব
অনন্য সংবেদী চেতন, ভয়ংকর স্পর্শ-কাতরতা
ভিন্নবোধের চিত্রকল্প, কাব্যনির্মাণ, ভাষার লালন
জীবনের প্রতিটি স্পন্দনের সংযুক্তির প্রকরণ
ভালোবাসাময় অলৌকিক চ্যালেঞ্জ
পাপ-ধ্বংস-অপ্রেম-কুৎসিতের বস্তুবিশ্ব
অমরত্ব সঞ্চিত হয়ে থাকে কবিতায় কবিতায়
লাবণ্যময় লোকভাবনাশৈলী—
শমীবৃক্ষের মতো তমাল অগ্নিগর্ভ
হালের কণাবিজ্ঞান থেকে উপনিষদ
অব্যক্ত অসীমকে ছোঁয়া

চিত্র: শৈলজা মুখোপাধ্যায়
তিন
তিনি আবার দরজায় এসে দাঁড়ান
একা পারলেন না, এই প্রথম
তমাল নেমে আসে সিঁড়ি দিয়ে—
বাঁক ঘোরে— বাঁকের পর বাঁক
এবার হয়তো তিনি নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করবেন
ফিরে যাবেন লেখার টেবিলে
দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাত
এ কোন্ বিদায়ের লগ্ন
আন্তরিক, নততলে আরোহণ
আশ্চর্য ঔজ্জ্বল্যে চারদিক ঝলমল করে
গড়ে ওঠে আবহমানের গল্প
গল্পে গল্পে আকাশ-মর্ত্য-পাতাল একাকার
ঈশ্বর এসে তমালের হাত ধরেন
সে ঈশ্বর কবিতার মতো জরাহীন, পবিত্র

চিত্র: শৈলজা মুখোপাধ্যায়
চার
সুরের মাদকতা নয়, মন খুঁজছিল কথা
কথার কথা নয়, একটা খিদে
নিজেকে পাওয়া— ভেসে যাওয়া নয়, ভেসে থাকা
আঁকড়ে ধরা— আরো বেশি কাছাকাছি, পাশাপাশি
মনখারাপের খাতার উপর অঝোরধারা, সম্পর্কের ধারাপাত
হঠাৎ করেই কুড়িয়ে পাওয়া— ভিনদেশি তারা
খোলা গলায় চিৎকার এবং একান্ত সংগোপন
তমাল খোঁজে শব্দবন্ধ, স্মৃতিকাতরতা
বিরহ তো সুন্দর, এতটা কি মায়াময়
ভুল করে ঘটে যায় আনাড়ি হেতু
চিলেকোঠার পাশে তবু চড়ুই-এর ঘর—
মুখবন্ধ খামে আগামীর শমন
কিংবা বন্ধুতার নতুন রসায়ন
♦—♦♦—♦♦—♦
❤ Support Us