Advertisement
  • ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
  • সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা

রজত সান্যাল
গুচ্ছ কবিতা

চিত্র: বিজন চৌধুরী

আমার সকাল

আমার সকাল একদম আলাদা
একটু বিচিত্র
কখনো হয়ে যায় আমার মতো
কখনো পুরো রাত জেগে থাকি
কখনো দুপুর জুড়ে চোখ খোলা থাকে
মনে হয় এখনই সকাল হল
সবাই আমাকে বলে জেরা করে
বলে আমি নাকি বোহেমিয়ান
সকাল তো রাতের পর আসে
আর গভীর ঘুমের পর এঁকে রাখি রেখাচিত্র
আমি বুঝতে পারিনা ঘুম কী
আমার ঘুম এলেই আমি হঠাৎ উঠে পড়ি
সবকিছু ভস্ম হয়ে যাওয়ার পরও
আমার চোখের পাতা থেমে যায়
মনে হয় কোনও স্বপ্ন দেখছি
আর তখনই একটু ঘুম আসে
কিছুক্ষনের জন্য
আমি স্বপ্ন দেখতে পাই না
কখনো দেখি কোনো এক মিথ্যাবাদী কে
সারা জীবন মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছে
সবার মধ্যে মিথ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে
কখনও লোকেদের হাতে কাগজের টাকা গুঁজে দিচ্ছে
আর লোকেরা ভাবছে সত্যি টাকা
কখনো কোনো মন্দির থেকে জোরে জোরে
ভগবানের গান গাইছে
অথবা লোকেদের সাবধান করছে
আর দেখি আমাদের জনসংখ্যা ক্ষুধার্ত
ওদের পরিবেশন করছে অন্য কিছু
বিস্ময়ে আমার চোখ ওপরে উড়তে থাকে
দেখি গরুর গোবর আর গোমূত্র,
যারা ক্ষুধার্ত তারা কী করবে
লোকে দু হাত দিয়ে তালি ও বাজাচ্ছে
আমার এরকম স্বপ্ন যেন না আসে
তাহলে আমাকে আরও জেগে থাকতে হবে
যা একটু ঘুম আসবে, তাও চলে যাবে
হটাৎ উঠে পড়ে যে চেহারা দেখছিলাম
আর দেখিনা তারা হারিয়ে গিয়েছে ।

 

 

পুনর্জন্ম

আজ পুরো দিন বাইরে ঘুরে ঘুরে কাটালাম
কিছুই বুঝতে পারছিলাম না
কি করবো
চারিদিকে এত ক্ষত
রাজনৈতিক উত্থান পতন
দুর্ঘটনা ঘটেছে
মানুষ আজ চোখের জলে সর্বশান্ত
সুমদ্রের নোনা জলের স্বাদ এখন
আমার কোনো দুর্ঘটনা হয়নি
আজ পুরো দিন সব পরিচিত লোকের সঙ্গে
দেখা করলাম
অনেকে অবশ্য ফিরিয়ে দিল
কেউ আমায় অপমান করেনি
আর কেউ অন্তরঙ্গ কথা ও বলেনি
আমি পুরো দিন সত্যের সঙ্গে ছিলাম
কাউকে আমি কটু কথা বলিনি
আমার খারাপ লাগেনি
আজ আমি সবার উপরে ভরসা করেছি
ওদের কথা শুনেছি
এইরকম কথা বলতে বলতে
আমার একটি পরিবর্তন হল
এটাকে চমৎকার বলা যেতে পারে
যখন ফিরে এলাম বাড়িতে
তখন মনে হলো আমি আমাকে
ফিরে পেলাম
অন্য কাউকে নয় আমাকেই ফিরে পেলাম
পুনর্জন্ম হল আজ আমার।
 

চিত্র: মকবুল ফিদা হুসেন

নাক

যখন ও বারো বছরের ছিল
জুনের এক দুর্বিষহ গরমে
ওর মামাতো ভাই ওকে বাড়ির
বাথরুমের কাছে জোর করে
নিয়ে গিয়ে ওর সদ্য প্রস্ফুটিত স্তনকে
দাবিয়ে দেয়
আর জোর করে বেল্টের নিচে
প্যান্টের চেনের ভেতরে হাত রেখে
লম্বা লম্বা নিঃশাস নিতে নিতে ও আমাকে
বার বার ধরতে বলছিলো ওর গোপন অঙ্গ
কিছুক্ষণ আগে ও ওর টানা বা জড়ানো লেখা অথবা অভিশাপ
আমার খুব পছন্দ ছিল।
যখন সেদিনও আকাশে অনেক বিমান, যা রাফ খাতার মতো তৈরি উড়ে যাচ্ছিলো
ওই সময় মামাতো ভাইয়ের চোখে ঘৃণিত চেহারা আর যৌন লালসা দেখে সে
বিদ্যুতের স্রোতের মতো দৌড়ঝাঁপ করছিল
ওই দিনই খরগোশের মতো এক ঝটকায়
ছাড়িয়ে নিয়েছিল নিজের হাত
ওর হাতে এখনও একটা অদ্ভুত গন্ধ ঝুলছে
ওখান থেকে তাড়াতাড়ি পালিয়ে গিয়েছিলো
ভাবতে ভাবতে ওর নাক কাটা যাবে
আর কোনও সম্মান থাকবে না
নাক ওর মা চুপিচুপি ওর দিদিমার কথায়
অনেক বছর লুকিয়ে রেখে ছিল
একটা কালো গন্ধের সংকুচিত বর্গাকার
কাপড়ের পোটলার মধ্যে
যার কোনগুলো একদম ছেঁড়া
যার আরেক কোনে বানানো রয়েছে
সাদা পায়রার জোড়া ফটো
পেয়রাগুলো নিজেদের ঠোঁটে
ধরে রেখেছে খড়ের একেকটা সবুজ রঙ
এখন সে বড় হয়ে গিয়েছে
একবার এই মেয়ে নিজের ভাইকে
থাপ্পড় কষিয়ে দেয়
বাড়ির কাছের পুলিশ স্টেশনে
সবার সামনে
ওই দিন থেকে ওর আর কেউ নিজের নেই
সে সেই মেয়ে যার জন্য
কখন ও কেটে যেত নাক
নাক এখন অনেক বড়
কাটতে কাটতেও শেষই হয় না

 
 

একটা শহরে

একটা শহরে ষোলটা বছর কেটে গেল
এটা আমার বয়েসের ষোল বছর নয়
যেখান থেকে একটা নতুন শহর জীবন তৈরি হতে থাকে
ষোল বছরে একটা কাহিনী লেখা
হয়ে গিয়েছে
আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর বছর
যার জন্য আমি এখনও নিশ্চিত নই
যা হারিয়ে গিয়েছে বা মুছে গিয়েছে
তার জন্য আমি কি খুশি হব
বা ওর নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য আমার দুঃখ হবে
শহর কে একবার প্রশ্ন করো
আমি কি এখানে আসার জন্য বেরিয়েছিলাম
ওর চোখে এখনও সেই নীরসতা আর ঘুম দেখা যায়
যেটা আমার চোখের আশেপাশে তৈরি হতে থাকে
যা আমার চোখের নিচে কালো হয়ে জমা হয়
আমার পরিছন্ন চোখে তখন একটা নতুন শহর ছিল
আমার নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার জন্য
আমার বেঁচে থাকার জন্য
এখন আবর্জনার পাহাড়ে নতুন ফুলের গন্ধ
ওদের মৃতদেহের দুর্গন্ধে ভরা শব গুলো শতাব্দী
ধরে লুকিয়ে রাখা যায়নি
আমি এটা ও নিশ্চিত হয়ে বলতে পারিনি
কি এটা এই শহরের শব
বা আমার স্বপ্নের
যার অসহ্য গন্ধ শুকে আমরা পুরোনো হয়ে গিয়েছি
এটাও সত্যি যে কেনো পরিবর্তন বা কিছুই বদলায়নি
শুধু বদলেছে আমাদের পরস্পরকে দেখার দৃষ্টি
এক শহরের বয়সের সঙ্গে নিজের ষোলটা বছর
জুড়ে দেওয়া কী সহজ, কী কঠিন
 
ওদের ছোটার গতি দেখে পেছনে রয়ে যাচ্ছে মানুষ
যখন শহর দৌড়ায় না
মানুষ দৌড়ায়
নিজের স্মৃতির সঙ্গে, নিজের সঙ্গে
অতীত থেকে, বর্তমান থেকে
প্রেমের জন্য, ভালোবাসা পাবে বলে
প্রেম থেকে অনেক দূরে
এক দিশাহীন, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য
আর এখানে ভবিষ্যৎ কী নিজের প্রথম অক্ষর
আমি দুটো শহরে খুঁজি
একটা ছেড়ে আসা বয়স
একটা শহর আমাকে ধরে রাখতে পারেনি
আর একটাকে আমি আপন করে নিতে পারিনি
দুজনেই দোষী আমরা,
আবার যখন দুজনেই একে-অন্যকে দোষারোপ করি,
নিজেদের নদী, স্ত্রী, কবি
যাদের ভাষা কোনও দিন বুঝতেই পারিনি
সবসময় অসহায় ছিল তারা,
যাদের চোখে কখনও আট প্রহরের আদ্রতা থাকত
এখন বৃষ্টির দিনে শুষ্ক / শুকনোথাকে
আর ইতিহাস লিখে রাখে
কী ওই বছর, ওই শতাব্দী
একটা শহর আবার ধ্বংস হয়ে গেল
যে তোমাকে ভুলে গিয়েছে
আর তুমি ওকে আগেই ভুলিয়ে দিয়েছ।
 

♦—♦♦—♦♦—♦♦—♦


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!