- ক | বি | তা
- মার্চ ৩১, ২০২৪
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে। পর্ব ১৬
চিত্রকর্ম: প্রকাশ কর্মকার
রক্তে তাঁর বাঘের আভিজাত্য
পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর দশকের পাগলামির সঙ্গে দেখা হয়েছে সব্যসাচীর; অনেকের সঙ্গে মিশে গেছে তাঁর প্রতিভার হিসেবশূণ্য ভাবাবেগ। কবি অমিতাভ দাশগুপ্তকে গুরু ভাবতেন, আশৈশব হলেও নিবিড় কবিতা –পাঠের অভ্যাস আর অনুশীলন গড়ে ওঠে বয়ন বিজয়ী কবির সান্নিধ্যে। ভবঘুরে চিত্রকর পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়ের একান্ত সহজসঙ্গী বনে যান সব্যসাচী, দুধর্ষ প্রকাশ কর্মকারের আলিঙ্গনও টেনে নেয় বুকে। এরকম কিংবদন্তীদের সঙ্গলাভে যাঁর ভাগ্যলেখা নির্মিত, তার পক্ষে নিঃশব্দ বাঘ হওয়াটাই স্বাভাবিক, অলিগলিতে লোকালয়ে খুঁজছিলেন নিজেকে, পেয়ে গেলেন মহাজনের সংশ্রব আর প্রশ্রয়।
কবিতা লেখা ছাড়া সব্যসাচীর ভিন্ন কোনও মাধ্যম নেই, ছিল না, থাকতে পারে না, রক্তে যে বাঘের আভিজাত্য, খবরের কাগজে কাজ করার সূত্রে নিয়মতান্ত্রিকতার আড়ালে, নিভৃতে ভেতরে ও বাইরে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর শৈলীর গদ্য ভঙ্গি, যা আড়ম্বরহীন, অনাযোজিত, স্বতঃস্ফূর্ত। গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে যাঁরা বাংলা কবিতার অলঙ্কারহীন গরিমা বলে পরিচিত, তাঁদের কারো সঙ্গে সব্যসাচীর মিল নেই, তাঁর স্বর অন্যরকম, বিশেষণহীন, পুরোপুরি স্বতন্ত্র। কোলাহলহীন, পৌরুষময়। কম লেখেন, প্রচুর হাঁটেন। পেশাগত কারণে হাঁটতে হয় তাঁকে, অভ্যাসের নির্দেশ জানিয়ে দেয়, দ্রুত ছুটতে হবে, এরই মাঝে সহযাত্রীদের কেউ কেউ চেঁচিয়ে উঠবেন, দাদা তাড়াতাড়ি চলুন। আমাদের পৌঁছতেই হবে; এরকম বলতে বলতে, ভাবতে ভাবতে, সরল ও সরষ ভঙ্গিতে অকাব্যিক সব্যসাচী পৌঁছে যাচ্ছেন নীল সমুদ্রের অপরপ্রান্তে, যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে ভুরি ভুরি অভিজ্ঞতার ডালপালা, কিংবা সামুদ্রিকতার শাখা প্রশাখা।
বাহার উদ্দিন। ৩১.০৩.২০২৪
‘কবিতা মননের এক সরীসৃপ, অলিগলি দিয়ে ঢুকে পড়ে ঘরে’
♦ কবিতার মুহূর্তে কি খুব অস্থির হয়ে ওঠেন ?
কবিতা আশপাশেই থাকে। কথা হয়। লেখার সময় বলে কিছু হয়, এমনটা আমার বিশ্বাস নেই। তবে নিয়ম করে লিখতে বসার অভ্যেস জরুরি। এই নিয়মেই লেখা হয়। নিয়ম মানা একটু অস্থিরতা তো বটেই।
♦ ভেবেচিন্তে লেখেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ?
কবিতা ভাবের ,অনুভবের বিষয়। ভেবে কী লেখা যায়? লেখার পরেই ভাবি।
♦ কখনো কি মনে হয়, কেউ আপনাকে ভেতর থেকে লিখিয়ে নেয়, এমন কোনো মনোবাসী ?
একেকটা সময় মনে হয়, এই লাইনটা বা এই কবিতাটা আমার লেখার কথা নয়। অত মেধা নেই। তাহলে? আমার ধারণা, কবিতা মনন একটা সরীসৃপ। সে ঠিক অলিগলি দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে।
♦ একটানা লেখেন, না থেকে থেকে লিখতে হয় ?
পেশার তাড়নায় একটানা লিখতেই হয়। কবিতা লেখা আমার পেশা নয়। নেশাও নয়। ভাললাগাও নয়। একটা কুঅভ্যাসের মতো। বাল্যকাল থেকে চলছে।
♦ লেখার আগে কি মনে মনে পংক্তি আওড়ান ?
নাহ। কিছু আওড়াই না। বধির হয়ে থাকি।
♦ অন্তমিল, মধ্যমিল কি কবিতায় ফেরাতে চান ?
কে জানে। ছেনি হাতুড়ির কাজ নয়। আর স্কেল ফেলে, সেটস্কোয়ার দিয়ে জ্যামিতির মত নয়, ত্রিকোণমিতির সাইন থিটা, কসথিটাও নয় ! যদি কিছু বলার মনে হয়,বলি।
♦ ছন্দের ওলট পালট বা ভাঙচুর কতটা পছন্দ ?
এত লেখা তো কঠিন। যে কোন বলার একটা ছন্দ আছে। সেটাই আরেক পাঠককে শোনার জন্য কৌতুহলের বৃত্তে টেনে আনে।
বাঘের রচনা
জঙ্গলে জ্যোৎস্নায় বাঘ খুঁজছিল । খুঁজছিল, আর ভাবছিল, একবার পেলে হয়
বাঘের সঙ্গে দেখা হল বটগাছের । তুমি যে জীবন কাটালে গাছ হয়ে, আর কুড়ুলের কোপ খেলে, কী লাভ
এত ছায়া দিয়ে
গাছ আড়মোড়া ভেঙে বলল
ঠিকই বলেছ । কিন্তু তোমার ভালবাসার কে ?
বাঘ হাসল।
আমি বাঘজীবন কাটালাম ।
আর দেখলাম, ভয় পেয়ে পেয়ে মানুষ কেমন
হয়ে গেল ।
মানুষের খালি ভয় ।
আমি একটা বাঘ । আমি মানুষ খেয়ে ফেলব ।
কিন্তু, বিচার কী হবে । এই যে জ্যোৎস্নায় তুমি চুপ করে আছো ।
আর অন্ধকারে তোমাকে খুনের
কথা বলাবলি করছিল লোকজন। সেই শুনেই তো এলাম। একবার কাছে পাই
কোথায় যায়
ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে
বাস ছুটে চলেছে। অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে
কেউ কথা বলছে। কেউ শুনছে। কেউ ভাবছে।
কিন্তু,যাচ্ছে কোথায়
কন্ডাকটর বলল, পৌঁছে যাবেন। এক যাত্রী বলল না।
আমি পৌঁছতে চাই না।
আমি নিরুদ্দেশ হতে চাই
এক যাত্রী বলল, আপনি কী করে জানলেন, আমি পৌঁছতে চাই? এই এক সমস্যা।
দুজন যাত্রী বলল, দাদা তাড়াতাড়ি চলুন। আমাদের পৌঁছতেই হবে।
বাস থেমে গেল। বহু মানুষ চেঁচিয়ে বলল, এটা কী হচ্ছে।
তারপর, একসময় সবাই চুপ করে গেল। কন্ডাকটর নেমে গেল।
চালক নিজেও। শেষে বাস একাই চলতে লাগল, নীল সমুদ্রের দিকে
শব্দের মত
নীরব থাকা মানে মুখর
কী তুমি বোঝো মর্মর
নীরব হয়ে থাকা
এক সংযম
সংযম বদলে যায় সংঘাতে
একেই তুমি বলো মুখর
♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us