- প্রচ্ছদ রচনা
- জুলাই ৪, ২০২২
বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক নক্ষত্র পতন । তরুণ মজুমদার প্রয়াত । শোক মুখ্যমন্ত্রীর। স্তব্ধ গৌতম ঘোষ, রঞ্জিত মল্লিক, শতাব্দী-ঋতুপর্ণা-সৌমিলি ।

বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক নক্ষত্র পতন । বর্ষীয়ান চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদার প্রয়াত ৷ আজ সকাল ১১.১৭ মিনিটে তাঁর প্রাণবায়ু নিঃশেষিত হয়ে পড়ে। মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে । বয়স হয়েছিল ৯২, তবু নানা ধরনের অসুখ নিয়েও সচল ছিল তাঁর ভাবনাচিন্তা। গুণমুগ্ধদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন । কথা বলতেন ফোনে। গতকাল তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় শারীরিক অবস্থা অবনতি দেখে। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় । কিডনিতে সংক্রমণ, হৃদযন্ত্রে সমস্যা এবং ফুসফুসে ইনফেকশন ছিল । রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তাঁর অনুরাগী আর অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা । তাঁদের সব চেষ্টাকে থমকে দিয়ে সকাল ১১.১৭ মিনিটে চির তরুণ পরিচালকের দেহবসানে স্তম্ভিত বাংলার সব স্তরের মানুষ। আকাশ হঠাৎ ভারি হয়ে উঠল। অনেকেই বাকরুদ্ধ । বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা গভীর শোকপ্রকাশ করে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন । সমবেদনা জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্য ও সমব্যথী অনুগামীদের । শোক জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সজল উচ্চারনে বললেন, ‘মনটা খুবই ভারাক্রান্ত লাগছে। ওঁর সঙ্গে কাজের স্মৃতি অনেক দীর্ঘ। । ওঁর নির্দেশনায় আমরা প্রথম ছবি ‘আলো’, যা আমার অভিনয়ের পরিসরকে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়। বাংলা সিনেমার ই্তিহাসে ওই ছবি একটি মাইলফলক। এরপর চাঁদের বাড়ি করেছি। সম্প্রতি ভালবাসার বাড়ি ছবিটি করলাম । উনি বাংলা সিনেমার স্তম্ভ। ওঁর অবদান অনিঃশেষ। ‘ একইভাবে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শতাব্দী রায়, রঞ্জিত মল্লিক, সৌমিলি বিশ্বাস ও আন্তর্জাতিক খ্যাতির পরিচালক গৌতম ঘোষের। গৌতম বলেছেন, তরণ মজুমদার আমার পূর্বসূরি এবং দক্ষ পরিচালক । ওঁর কাজ দেখে অনেক শিক্ষা গ্রহণ করেছি । রোমান্টিক বাস্তবতাকে কী ভাবে সর্বজনগ্রাহ্য করে শিল্পের সূক্ষ্ণতার সঙ্গে ছোটো ছোটো অনুভূতিকে জড়িয়ে দিতে হয়, এ ব্যাপারে তরুণ মজুমদার ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক অসামান্য স্থপতি । অহেতুক জটিলতা নেই, কিন্তু ছবির নির্মাণে শিল্পশর্তের লঙ্ঘন নেই কোথাও। পরবর্তী কালের চিত্রনির্মাতাদের সামনে চিরঞ্জীব আর সূষ্টির সহজ, সুন্দর, প্রগাঢ় আদর্শ হয়ে থাকবেন ।
তরুণ মজুমদারের জন্ম, পূর্ববঙ্গের বোগরায় । রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেই লচ্চিত্র পরিচালনাই পেশা হিসেবে বেছে নেন স্কটিশচার্চ-এর প্রাক্তনী। প্রথম ছবি উত্তম সুচিত্রা অভিনীত ‘চাওয়া-পাওয়া’। পরের সব ছবি হিট । ‘বালিকা বধূ’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’ এরকম একের পর এক সফল ছবি উপহার দিয়েছেন । এসব ছবিতে উত্তম-সুচিত্রা জুটির উত্তোরণের পাশাপাশি তরুণ মজুমদারের উর্দ্ধারোহনের মুখ আর অভিমুখ অপরিহার্য্য, অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। তরুণ মজুমদার একটি যুগের নাম । সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল সেনের সমকালে তাঁর ঘরাণা যেমন স্বনির্ভর তেমনি স্বয়ংসম্পূর্ণ । এরকম একজন স্রষ্ঠার মৃত্যুতে তৈরি হল যে শূন্যতা তা হয়তো পূর্ণ হবে কিন্তু বাংলার নবীন পরিচালকদের বারবার ফিরে যেতে হবে তাঁর স্বঅর্জিত রুচি আর নির্মাণের শিল্পীত প্রকরণে ।
❤ Support Us