- এই মুহূর্তে দে । শ
- জুন ২৪, ২০২৫
ফুঁসছে তিস্তা-মহানন্দা, বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ

উত্তরবঙ্গের আকাশে কালো মেঘের মেলা, ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। সোমবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি, ফুঁসে উঠেছে তিস্তা ও মহানন্দা নদী। পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতল সর্বত্র ভারী বৃষ্টির তাণ্ডব চলছে। এর ফলে একাধিক স্থানে ধস নামছে, বন্ধ হয়ে গেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের যান চলাচল, যার ফলে কালিম্পং ও সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগ এখন ভেস্তে পড়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক— সবাই বিপাকে।
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন, শতাধিক গ্রাম-টাউন প্লাবিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নদীগুলো তীব্র গতিতে বইছে, বিশেষ করে তিস্তা ও মহানন্দার জলস্তর বিপদসীমার কাছাকাছি। শিঘ্রই বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জলসম্পদ দফতর। কলকাতা-সিকিম সড়কের মূল পথ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নেমেছে শ্বেতীঝোরা, সেলফিন্দারা, বিরিকদারা, লিকুভিড়সহ একাধিক স্থানে। পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসা বিশাল পাথর, বোল্ডার ও মাটি রাস্তার ওপর পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সড়ক বন্ধ থাকায় গাড়িগুলোকে দীর্ঘ পরিক্রমায় অন্য পথ বেছে নিতে হচ্ছে। এর ফলে পর্যটকরা বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও প্রতিদিনের যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। অধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ধসে বন্ধ সড়কের কাজ ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চলছে। প্রশাসন দ্রুত পাথর ও মাটি সরিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে ধসের আশঙ্কা এখনো কাটেনি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, এই সপ্তাহজুড়ে ভারী বৃষ্টি চলতে পারে উত্তরবঙ্গে। মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার থেকে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও উত্তর দিনাজপুরে বিশেষ করে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সিকিমে যদি আরও ভারী বৃষ্টি হয়, তিস্তার অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। জলসম্পদ দফতর ইতিমধ্যেই বাঁধ ও ব্যারেজগুলোর ওপর নজরদারি জোরদার করেছে।
দক্ষিণবঙ্গেও বৃষ্টির তাণ্ডব অব্যাহত। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুরসহ একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই বিভিন্ন জেলা প্রশাসন হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। উপকূলীয় এলাকায় ২৫ ও ২৬ জুন ঝড়ো হাওয়া প্রবল হওয়ার কারণে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ডিভিসির জলে ভাসছে পূর্ব মেদিনীপুরের ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। চন্দ্রকোনাতেও একই পরিস্থিতি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বন্যা দুর্গত প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ। জেলায় সব মিলিয়ে ১২২টি ওয়ার্ড ও অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গড়বেতা ১ ও ২ নং ব্লকের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ঘাটাল ও চন্দ্রকোনাতে একেবারে ভয়াবহ পরিস্থিতি। অন্যদিকে, প্রবল বৃষ্টিপাতে গুজরাটের সুরাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। যান চলাচল ব্যহত, বেশ কয়েকটি আবাসনের কিছু অংশ জলের তলায়। ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে স্কুলগুলিতে, বচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে দাভোলি এবং ভারাছা। বিপর্যয় মোকাবিলায়, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে এনডিআরএফ আর এসডিআরএফ ইউনিট সহ দুর্যোগ মোকাবেলা দল। একাধিক অঞ্চলে জারি করা হয়েছে কমলা আর লাল সতর্কতা।
❤ Support Us