- টে | ক | স | ই দে । শ
- জুলাই ২৩, ২০২৪
সিবিআইএর নাম ভাঙিয়ে ডিজিটাল গ্রেফতার, প্রতারকদের নয়া ছকে বিপর্যস্ত সাংবাদিক । টেলিকম সংস্থার নাম করে আর্থিক প্রতারণার নয়া চক্রান্ত

ডিজিটাল জালিয়াতির শিকার হলেন খোদ বর্ষীয়ান ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং লেখক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় । সংবাদ সংস্থা ‘ওয়্যার ডট ইন’কে তিনি তাঁর এই দুঃস্বপ্ন-যাত্রার কাহিনি শুনিয়েছেন । ভারতের দৈনন্দিন ব্যবস্থার অনেকটাই এখন ডিজিটালাইজেশন হয়ে গেছে । কেনাকাটা থেকে শুরু করে নিজেদের প্রয়োজনীয় যে কোনও কাজে একটিই শব্দ আমরা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, তা হল ‘অনলাইন’। তবে প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি । হ্যাকাররা ওঁত পেতে বসে আছে । আপনার যথাসর্বস্ব লুঠ করে মুহূর্তে দেউলিয়া করে দেওয়ার জন্য একটি ক্লিক যথেষ্ট । তবে নীলাঞ্জন বাবুর সঙ্গে যে জালিয়াতি হয়েছে তা কিছুটা অন্যরকম ।
তাঁর মোবাইলে কোনও এক অজানা নম্বর থেকে একটি ফোন আসে । রিসিভ করতে ওপার থেকে একটি যান্ত্রিক পুরুষ কণ্ঠ বলে ওঠে , তাঁর মোবাইলে ইনকামিং কল পরিষেবা জারি রাখতে তাঁকে ‘৯’ টিপতে হবে । এর চেয়ে বেশি আর একটি শব্দও খরচ করেনি সে যন্ত্রমানব । তবে নীলাঞ্জনবাবুর সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষা না করে সঙ্গে সঙ্গে কল ট্রান্সফার হয় অন্য একটি পুরুষ কণ্ঠের কাছে । তবে ইনি যন্ত্র নন । একজন রক্ত মাংসের মানুষ।
নিজেকে নোটিফিকেশন ইউনিটের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে তিনি ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন,’ আপনি আপনি টেলিকম কর্তৃপক্ষকে কেন ফোন করেছেন?’ নীলাঞ্জন প্রশ্ন করেন, যে তিনি টেলিকম কর্তৃপক্ষ বলতে কী টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই) কে বোঝাচ্ছেন ?
নীলাঞ্জন বলেন, না তিনি তা করেননি । বরং এক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ বিপরীত । পরিবর্তে অপর প্রান্ত থেকে সে ব্যক্তি যা বললেন, তাতে চোখ কপালে ওঠে এই বর্ষীয়ান সাংবাদিকের । ওই ব্যক্তি নীলাঞ্জন বাবুর নাম সম্বোধন করে জানান তাঁর নামে থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে । অভিযোগ, তাঁর মোবাইল ফোন থেকে একাধিক ব্যক্তির কাছে বেআইনি ও হয়রানিমূলক বার্তা গেছে ।
নীলাঞ্জন বাবু জানান তিনি আর কোনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না । তখন ওই রহস্যময় ব্যক্তি তাঁর ফোন নম্বর, মুম্বইয়ের কোন দোকান থেকে তিনি সেটি কিনেছিলেন এবং এফ আই আর নম্বর সবকটি তাঁকে গড়গড় করে বলে যায় । তবে আশ্চর্যের বিষয় এটাই, নীলাঞ্জন বাবুর দাবি তিনি গত দু বছরে দেশের বাণিজ্য নগরিতে পা রাখেননি ।
তখন ওই ব্যক্তি সহানুভূতি প্রদর্শন করে বলেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনার পরিচয়পত্র কোনও কারণে চুরি গেছে হয়ত । আপনি কী আপনার আধার কার্ডটি কাউকে দিয়েছিলেন?
নীলাঞ্জন বাবু জানা, সম্প্রতি তিনি তা কাউকে দেননি । তখন ওই ব্যক্তি বলেন, তাহলে নিশ্চয়ই কেউ সেটি হাতিয়ে কোনোভাবে নম্বর বের করে ফেলেছে । যাইহোক, নম্বর যেহেতু আপনার ,তাই এফ আই আরটি আপনার নামেই নথিভুক্ত হয়েছে । আপনাকে পরবর্তী দু ঘণ্টার মধ্যে কোলাবায় মুম্বই পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় উপস্থিত হতে হবে ।
নীলাঞ্জন বাবু জানান তিনি বর্তমানে দিল্লি এনসিআরের বাসিন্দা । দু ঘণ্টার মধ্যে কোনোভাবেই উপস্থিত হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় ।
তখন সেই রহস্য-মানব তাঁকে এক প্রস্তাব দেন । তিনি বললেন, সেক্ষেত্রে উপায় হল, আপনার এই কল মুম্বই পুলিশের সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার করা হচ্ছে । একজন আধিকারিক আপনার সঙ্গে কথা বলবেন । আপনি কি রাজি?
নিরুপায় নীলাঞ্জন বাবু সম্মতি জানাতে, কলটি ট্রান্সফার হয় এবং এবার একজন নারী কণ্ঠ তাঁর সঙ্গে ইংরিজিতে বাক্যালাপ শুরু করেন । ওই আধিকারিক জানান তাঁর নাম নেহা শর্মা ।
যথেষ্ট সহানুভূতির কণ্ঠে ওই মহিলা বলেন, সত্যি এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক । আপনার উচিত ছিল আধার কার্ড ঢেকে রাখা । যাইহোক, একবার যখন দুর্ঘটনা ঘটে গেছে তখন আমরা আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করব ।
নীলাঞ্জন বাবু জানান তখন আর পাঁচজন মানুষের মতো এ পরিস্থিতিতে সাধারণ বুদ্ধিমত্তা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল । তাঁদের একের পর এক কথাবার্তায় আমার মস্তিষ্ক অবাস্তব বিষয়কে সত্যি বলে ভাবতে শুরু করেছিল ।
ওই মহিলা তাঁকে বলেন, অবিলম্বে স্কাইপে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হতে । নীলাঞ্জন বাবু বলেন তিনি আর সেটা ব্যবহার করেননা । তখন নেহা শর্মা পরিচয়দানকারী মহিলা বলেন, অবিলম্বে স্কাইপ তিনি তাঁর মোবাইল ফোনে ইন্সটল করুন । নীলাঞ্জন বাবু নিজের ডেস্কটপ কম্পিউটারে স্কাইপ ব্যবহারের অনুমতি চাইলে ওই মহিলা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হন । তবে স্কাইপে পুরো কথোপকথনে নীলাঞ্জন বাবুর অডিও ও ভিডিও দুটোই চালু থাকলেও নেহা শর্মার শুধুমাত্র অডিও অপশন চালু ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি । বৃহত্তর মুম্বই পুলিশের লোগোটি সেখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল । ‘সাইবার ক্রাইমমুম্বাই9900’ লেখাটি মধ্যিখানে জ্বলজ্বল করছিল, যেন সত্যিই আমি মুম্বই পুলিশের সাইবার ক্রাইম দফতরের কোনও আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলছি ।
নেহা তাঁকে একই প্রশ্ন ও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করতে থাকেন । তারপরে তিনি নীলাঞ্জন বাবুকে জানিয়েছিলেন যে একজন সিনিয়র সহকর্মী ‘জেরা কক্ষে’ প্রবেশ করবেন । এবার এটি একটি পুরুষ কণ্ঠ কথোপকথন শুরু করেন । তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিক রাহুল গুপ্ত হিসাবে পরিচয় দেন।
এরপরের ঘটনা স্বয়ং নীলাঞ্জন বাবুর জবানবন্দীতে প্রকাশিত হল ।
তিনি বললেন,আসলে, উল্টোপাল্টা মেসেজ এবং হয়রানিমূলক বাক্যের থেকেও গুরুতর বিষয় রয়েছে তাঁর সম্বন্ধে । কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় তিনি বললেন, নীলাঞ্জন নরেশ গোয়েল নামে কাউকে চেনেন কিনা । নীলাঞ্জন বললেন, না, আমার বন্ধু, আত্মীয় কর্মস্থল কোথাও এই নামে কাউকে চিনি না।
উত্তর আসে- জেট এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা ।
তুরন্ত পরের প্রশ্ন আসে আপনার কি কানাড়া ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে ?
এই প্রশ্ন আমাকে হতবাক করেছে । আমার একবার ব্যাঙ্কের দক্ষিণ দিল্লি শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট ছিল । এটি ৮০ -এর দশকের প্রথম দিকে খোলা হয়েছিল । অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করার কথা আমার মনে আছে । আমি ২০০১ সাল পর্যন্ত চালিয়েছিলাম । কিন্তু আমি এই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিনা তা আমার মনে ছিল না । সব টাকা তুলে নেওয়ার পরেও হয়তো এটি বন্ধ করিনি ।
পরে সে শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমার নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই ।
কিন্তু তার পরে সে যা বলল , তাতে আমি কেঁপে উঠেছিলাম । সে ব্যক্তি বলে ‘আপনার অ্যাকাউন্টটি গত কয়েক বছরে নরেশ গোয়াল কেলেঙ্কারিতে দুই থেকে তিন কোটি টাকার অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে । আপনি আসলে একটি মানি লন্ডারিং মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ।’
কথাগুলো প্রচন্ডভাবে কমে গেল । যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আরও কঠোর হওয়ার জন্য সংশোধিত এই কঠোর আইনের বিশেষজ্ঞ নন, আমি এই আইনের অধীনে অভিযুক্ত হওয়ার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন ছিলাম ।
আস্তে আসতে বলা কথাগুলো বজ্রপাতের মতো ধ্বনিত হল যেন । আমি এই আইনের বিশেষজ্ঞ না হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই আইনে অভিযুক্তদের কীরকম শাস্তি বিধান রয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ।
সিবিআই অফিসার’ আরও বলেছিলেন যে তাকে মামলার তদন্ত করার এবং একজন ‘সন্দেহবাদী’ হিসাবে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য অভিযুক্ত নিয়োগ করা হয়েছে । অপরাধে জড়িত থাকার জন্য আমাকে ‘ডিজিটাল হেফাজতে’ নেওয়া হয়েছে ।
তিনি বলেন যে এই ধরনের হেফাজতের প্রোটোকলের অংশ হিসাবে, আমাকে অসংখ্য ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন দ্বারা ট্র্যাক করা হবে । আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট ও হাউজিং সোসাইটির চারপাশে AI এর একটি ওয়েব তৈরি করা হয়েছে । তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে এবং ‘ডিজিটাল হেফাজতের শর্তাবলীতে সম্মতিসূচক নথি অবিলম্বে স্কাইপের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে ।
আমাকে জোরে জোরে একটি ৭০-দফা ‘rules and regulations for a suspect under surveillance’ পড়তে বলা হয়েছিল ।
বর্ষীয়ান সাংবাদিকের মনে কু – ডাক দিলেও তিনি জানিয়েছেন, তাঁর স্বাভাবিক বুদ্ধি বৃত্তি সেসময় বিসশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করেছিল।
স্বঘোষিত সিবিআই আধিকারিক আমার ক্রমবর্ধমান আশংকা উসকে দিয়ে যে উল্লেখ করে যে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ) এর অধীনে, আমাকে ৪৫ দিনের জন্য গ্রেপ্তার করা হবে যার মধ্যে আইনি সহায়তা বা পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে কোনও সংযোগ থাকবে না । আমি এই বিষয়ে চিন্তা করার সময়, তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে আমি ‘priority investigation’ করে গ্রেফতার এড়াতে পারি । তবে এর জন্য সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি প্রয়োজন ছিল।
এটি আবেদন করার জন্য, ‘সিবিআই’ আমার আবেদনটি অডিও-ভিডিও ফর্ম্যাটে নিয়ে বিচারকের কাছে জমা দেবে । এই মর্মে আমার নামে আদালতকে উদ্দেশ্য করে একটি লেখা শেয়ার করে। তা আমি ক্যামেরায় পড়েছি।
এই সময়ের মধ্যে আমি ‘মেডিকেল বোর্ড’ থেকে ‘ক্লিয়ারেন্স’-এর জন্য প্রতিদিন যে ওষুধগুলি নিয়ে থাকি তার ছবিও তুলেছিলাম । আমি তাদের ভার্চুয়াল ‘ক্রীতদাস’ হয়ে গিয়েছিলাম এবং প্রতিটি নির্দেশ অনুসরণ করছিলাম।
‘অফিসার’ বারবার বলেছে যে তার কাজ ছিল আমার অপরাধ প্রমাণ করা নয় বরং ‘নির্দোষ’ রূপে প্রমাণ করা। এটি কেবল তখনই করা যেতে পারে যদি আমি চিঠির নির্দেশনা অনুসরণ করি । ততক্ষণে, আমাকে টয়লেটে যেতে এবং প্রাতঃরাশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ।
আদালতে আবেদন জমা দেওয়ার সময় আমাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল এবং লোকটি যখন আবার হাজির হয়েছিল তখন বিকেল হয়ে গিয়েছে । কিন্তু এবার তিনি চিন্তিত কণ্ঠে কথা বললেন। তিনি আমাকে বললেন যে তাদের আইনজীবীরা বলেছেন যে আমার আবেদনটি, বর্তমানে আমার আর্থিক অবস্থার বিশদ বিবরণ ছাড়াই, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছুঁড়ে ফেলে দেবেন ।
‘priority investigation’ চাওয়ার জন্য আমার কাগজপত্র ‘প্রস্তুত’ করতে তিনি আমার অর্থনৈতিক প্রোফাইল সম্পর্কিত প্রশ্ন করেছিলেন – ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ, মোট উপার্জন, আয়কর রিটার্নের বিশদ, আমার ফিক্সড ডিপোজিট ছিল কি না, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট থাকে, আমি শেয়ারে বিনিয়োগ করেছি কিনা, মিউচুয়াল ফান্ডের বিবরণ সহ একাধিক খতিয়ান চেয়ে পাঠাল তারা ।
যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে আমার সমস্ত সঞ্চয় মিউচুয়াল ফান্ডে (এমএফ) রয়েছে, তখন তিনি একটি নতুন ‘সমস্যা’ নিয়ে হাজির হলেন ।
‘সরকার আপনার অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে পারে কিন্তু আমাদের মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই আপনাকে এগুলি রিডিম করতে হবে এবং আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে হবে।‘
পরের ঘণ্টায় এই ‘অফিসার’ আমাকে ফোনে (স্পিকারের ওপরে) এমন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য করেন যিনি আমার তহবিল পরিচালনা করেন এবং তাকে সমস্ত মিউচুয়াল রিডিম করতে নির্দেশ দেওয়া হয় । আমি জানিয়েছি যে আমি পরবর্তী সময়ে এই অদ্ভুত অনুরোধের কারণ ব্যাখ্যা করব । পরবর্তীকালে, নিয়মানুযায়ী, আমি রিডিমের অনুমোদন দিয়েছি।
এরপরে, এই ‘অফিসার’ ও ‘সাইবার ক্রাইম’ মহিলা আমাকে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করতে শুরু করে । আমাকে বলা হয়েছিল ৭০০টি প্রশ্ন করা হবে, যার সমস্ত উত্তর তাদের কাছে ছিল। কিন্তু তারা আমার ‘সততা যাচাই করতে চেয়েছিল।
আমি ভেবেছিলাম যে এবার আমি ‘মুক্ত’ হব। ঠিক ৯ টায় আমাকে জানানো হয় যে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ আজকের দিনের জন্য স্থগিত করা হবে এবং আমি আমার রাতের খাবার খেতে পারব । তবে আমাকে ক্যামেরার সামনে ঘুমাতে হবে। এর জন্য, আমাকে আমার ক্যামেরা পুনর্বিন্যাস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে আমি ‘ডিজিটাল কাস্টডি’-এর সময় আমার ওপর নজর রাখা যায়।
পুরো অগ্নিপরীক্ষা জুড়ে, যখন আমি জল আনতে গিয়েছিলাম আমি একবার মাত্র আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি । আমি সিবিআই এবং সাইবার ক্রাইম সেলের ‘ডিজিটাল হেফাজতে’ ছিলাম এবং কাউকে এই বিষয়ে জানাতে চাইনি।
পরের দিন সকালে, আমাকে স্কাইপে বলা হল যে ঘুম থেকে উঠতে এবং পরবর্তী রাউন্ডের ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ জন্য প্রস্তুত হতে। ‘সিবিআই’ লোকটি জিজ্ঞাসা করে যে এমএফ তহবিলগুলি আমার অ্যাকাউন্টে রিডিম করা হয়েছে কি না।
তখনই আমার মাথার মধ্যে প্রথম অ্যালার্ম বেজে উঠল – সিবিআই অফিসার কেন জানেননা যে এমএফ রিডেম্পশন কমপক্ষে ৪৮থেকে ৭২ ঘন্টা সময় নেয়, কখনও কখনও আরও বেশি !
পরবর্তী অ্যালার্ম বেজে উঠল যখন এই লোকটি আমাকে জানায় যে আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সমস্ত তহবিল স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত আমি ‘ডিজিটাল হেফাজতে’ থাকব । কিন্তু, এখনও আমার কানারা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি মানি লন্ডারিংয়ের জন্য ‘ব্যবহার’ হওয়ার অভিযোগের গল্পটি মেনে নিতে শুরু করি । একবার আমার সঞ্চয়ের প্রতিটি টাকা এতে খালাস হয়ে গেলে সরকার আমার অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করবে । .
এখন ক্রমশ বুঝতে পারি যে আসলে বিশাল বড় ফাঁদ পাতা হয়েছে । আমি জল আনার জন্য ‘অনুমতি’ চাই এবং সেই ছলে, আমার পরিবারের সদস্যদের কয়েকজন বন্ধুর সোঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি ।
কয়েক মিনিট পরে, তারা আমাদের স্টাডির দরজায় দাঁড়িয়ে (ক্যামেরার রেঞ্জে নয়) এবং আমাকে বেরিয়ে আসার জন্য ইঙ্গিত করে । আমি আরেকটা অজুহাত দেখিয়ে বেরিয়ে গেলাম ।
পরিবার উদ্বেগ এবং ভয়ে ভরা কণ্ঠে ফিসফিস করে । বলে, ‘ এটি একটি ধাপ্পাবাজি ছাড়া কিছুই নয় ।’
আমাদের বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী জানা যায়, ‘ডিজিটাল কাস্টডি’ বলে কিছু নেই।
প্রথম কাজটি ছিল আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এখনও সুরক্ষিত আছে কিনা তা পরীক্ষা করা এবং আমরা কোন টাকা হারিয়েছি কিনা তা যাচাই করা । একবার এটি সুরক্ষিত হয়ে গেলে, পাসওয়ার্ড ও সিক্রেট প্রশ্ন পরিবর্তন করতে বলা হয়।
যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা শেষ হয়েছে কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে গেছে । পরে আমরা জানতে পারি যে রাজধানী শহরের একজন বয়স্ক মহিলা এতটা ভাগ্যবান ছিলেন না । পনেরো দিন আগে ৮৩ লাখ টাকা হারিয়েছিলেন । এটি একই মোডাস অপারেন্ডি ছিল, তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দটি ছিল ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’। উপরন্তু, আমার ক্ষেত্রে অভিযোগটি শুধু আপত্তিকর বার্তা পাঠানোর নয়, অর্থ পাচারেরও ছিল ।
সরকার একটি ‘হেল্পলাইন’ নম্বর ১৯৩০ প্রচার করেই দায় সেরেছে। এটি আমাকে শুধুমাত্র www.cybercrime.gov.in ওয়েবসাইটে অভিযোগ দায়ের করতে বলে। অভিযোগ দায়ের করার পরেও, তা অনুসরণ করার দায়িত্ব অভিযোগকারীর উপর থেকে যায়।
❤ Support Us