- ধা | রা | বা | হি | ক
- ডিসেম্বর ১৯, ২০২১
ধা|রা|বা|হি|ক: কয়েকটি প্রেমের গল্প |পর্ব ৩১|

জীবনের রোজনামচায় আকস্মিক তার আগমন। স্থায়িত্বে কোথাও সে পূর্ণাঙ্গ, আবার কোথাও অসম্পূর্ণ। রূপক এ নয়, নানান জীবনচর্যায়, সেই পূর্ণ অপূর্ণের রূপ নিয়ে দেবপ্রিয় চক্রবর্তীর ধারাবাহিক কথামালা…
বিনি পয়সার ঘটক
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দরজা ঠেলে জিন্স আর টি-শার্ট পরা মেয়েটাকে দেখে সিধু বুঝতে পারল রিয়া কি করেছে। যদিও এই পরিস্থিতির জন্য একেবারেই তৈরি ছিল না সে।
পেছনে হেলান দিয়ে এবার মুচকি হাসিটাকে একটু বড় হতে দিল রিয়া। সিধুর দিকে কৌতুক ভরা চোখে তাকিয়ে বলল, – ‘সিধুদা, মিট মাই হেড অফ ডিজাইন এবং বন্ধু দেবলিনা চৌধুরী। আর লীনা এ হল সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী।’
লীনার মুখের ভাবে স্পষ্ট চমক এবং পরিচিতির ভাব। অবাক হওয়া স্বরে প্রশ্ন করল লীনা, -‘শিলংয়ের সিধুদা?’
–‘হ্যাঁ।’ উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে সিধু বলল, – ‘এখন অবশ্য মুম্বাইতে থাকি।’
–‘সেটা জানি। অভি বলেছে।’ বলল লীনা।অভি নামটা উচ্চারণ করতেই ঘরের ভেতর হঠাৎ একটা অস্বস্তিকর নীরবতা কয়েক মুহূর্তের জন্য চেপে ধরল সবাইকে। সেটা নিজের মন্তব্যে ভেঙে দিয়ে রিয়া বলল, – ‘তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে সিধুদা এবার কলকাতায়।’
আশ্চর্য হওয়া ভুরু কপালে তুলে লীনা বলল, -‘আমার সঙ্গে?’ততক্ষণে সহজ হয়ে সিধু বলল, -‘সেটাও একটা কারণ সত্যি। তবে একমাত্র কারণ নয়। তোমার সঙ্গে কথা বলার আছে যদি ফ্রি থাকো।’
–‘আমার আধঘন্টার কাজ আছে। তারপর কথা বলি?’
উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ আর একটা ফাইল টেবিল থেকে গোছাতে গোছাতে বলল রিয়া, – ‘ওকে সিধুদা কদিন আছ কলকাতায় ? আমাকে একটু বেরোতে হবে। একদিন ডিনার করা যাক একসঙ্গে। কবে যাবে বল। অনেক গল্প আছে।’ গলার স্বর সহজ রিয়ার।
–‘আছি কয়েক দিন। এর মধ্যে একদিন মিট করা যাক। তোদের এখন কাজ করার সময় আর নেবো না। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে নিই।’ বলল সিধু।
♦–♦–♦♦–♦–♦
আশাবরীর অফিসের নিচে এসে ট্যাক্সিতে উঠে সিধু বলল -‘কোথায় বসা যায় বলো তো? নিশ্চিন্তে কথা বলার জন্য।’
–‘এখন তো লাঞ্চ টাইম। সব জায়গায় ভিড় হবে। চল দেখা যাক।’ বলে ট্যাক্সিকে পার্কস্ট্রিটের গন্তব্য জানাল লীনা।
গাড়িতে এদিক সেদিকের কিছু কথা হল দুজনের মধ্যে।রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটু অপেক্ষার পর একটা খালি টেবিল পেয়ে দুজনে বসলো।
খাবার অর্ডার হবার পর সিধু বললো –‘তোমার সঙ্গে পরিচয়টা যে রিয়ার মাধ্যমে হবে সেটা ভাবতে পারিনি।’
–‘আমিও না। তোমার সম্পর্কে এত শুনেছি যে একদম মনে হচ্ছে না আজই প্রথম পরিচয়।’ হেসে বলল লীনা।
–‘আসলে আমাদের দুজনেরি একজন খুব প্রিয় কমন মানুষ আছে। সেটা একটা কারণ।’ সিধু লক্ষ্য করল লীনা উত্তর দিল না কথাটার। হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে জলের গ্লাস তুলে চুমুক দিল। দৃষ্টি জানালার বাইরে রাস্তায়। সরাসরি লীনার দিকে চেয়ে সিধু বলল, – ‘দেখ লীনা। যে জন্য আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি সেটা খোলাখুলি বলি। অভির সঙ্গে তোমার সম্পর্কটার ভবিষ্যৎ কী বলে মনে হয় তোমার?’
রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে সিধুর দিকে তাকালো লীনা। -‘এর উত্তর এত সহজে কি করে দেবো সিধুদা?’
পরিবেশ হাল্কা করার উদ্দেশ্যে সিধু হেসে বলল, – ‘বারি সিদ্দিকীকে কোট করতে হচ্ছে।’–‘মানে?’ প্রশ্ন লীনার।
–‘তুম জমানে কে রাহ সে আয়ে বরনা সিধা সা থা দিল কা রাস্তা।’ হাল্কা স্বরে শেরটা বলে সামনে ঝুঁকে বসল সিধু,
–‘কি জান লীনা? জীবনটা আমরা অনেক সময় নিজেরাই জটিল করে ফেলি। অভি একবার ধাক্কা খেয়েছে। তোমার কাছ থেকে আঘাত পেলে ভেঙে যাবে একদম।’
–‘আঘাত পাবে কেন?’ মুখ তুলে চেয়ে প্রশ্ন করল লীনা।
–‘তোমার বন্ধুত্ব হারাবার ভয়ে তোমাকে নিজের মনের কথা বলতে পারছে না সেটা বুঝতে পারছ কি?
–‘কি মনের কথা?’
–‘সেটা বলার অধিকার আমার নেই। অভিই বলবে। আমি শুধু তোমার কাছে একটা অনেস্ট উত্তর চাইছি। অভিকে ভালোবাসো?’
চমকে সিধুর মুখের দিকে তাকালো লীনা। হাত তুলে লীনার উত্তর থামিয়ে দিয়ে সিধু বলল, -‘জানি প্রশ্নটা একান্ত ব্যক্তিগত। কিন্তু আমি অভিকে আবার ভাঙতে দেখতে পারবো না। এত বছর পর ওকে তুমি আবার নতুন করে খুশি এনে দিয়েছ। যদি তোমার তরফে সেটা কেবল বন্ধুত্বই হয় তবে এটুকুই বলবো নিজেকে একটা সুযোগ দাও। আমি তোমাদের সব কথা শুনেছি। আমার বিশ্বাস তোমাদের সম্পর্কটা নিছক বন্ধুত্ব নয়। অন্তত এর ভবিষ্যৎ সেটা নয়। তুমি এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে পারবে?’
–‘সিধুদা, ভালবাসা কি এত চট করে হয়?’ চাপা স্বরে লীনার উত্তর শুনে জোর গলায় বলল সিধু।
–‘অভির মত ছেলে হলে চট করেই হয়। তোমার কথা তুমি বলবে। যদি নাও হয় তাহলেও কোন অপ্রয়োজনীয় কারণে নিজেকে এটা থেকে আটকে রেখো না। এটুকুই অনুরোধ আমার। তোমাদের দুজনেরই খোলাখুলি আলোচনা করেছেন করা উচিত।’
–‘সেটা তো করবোই। কিন্তু অভি কি তোমাকে কিছু বলেছে? ও কি চায়?’
–‘অভির আমাকে বলার প্রয়োজন নেই। ওর তোমার সঙ্গে কথা বলা উচিত। তুমি শুধু আমাকে এই আশ্বাসটা দিতে পারো যে, তুমি নিজের ফিলিংসটা অনেস্টলি ওকে বলবে?’
–‘বলবো সিধুদা। সেটা আমি আগেই ঠিক করেছি। কিন্তু অভির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে হবে।’
এবার ফোনটা বের করে ডায়াল করল সিধু। ওদিকের কথা শুনে বলল, -‘আমি পার্কস্ট্রিটে টিটাইম রেস্টুরেন্টে। চলে আয়।’ ভুরু কপালে তুলে লীনা প্রশ্ন করল, – ‘অভি?’
–‘হ্যাঁ ওকে বলেছিলাম চৌরঙ্গীতে আসতে। দশ মিনিটে পৌছে যাবে এখানে। প্লিজ তোমরা কথা বলো। আর প্রমিজ মী অনেস্টলি মনের কথা বলবে।’
–‘অন্য কোন উপায় আছে কি?’ অল্প হেসে বলল লীনা।
দুজনের খাবার আর চা দিয়ে গেলে সিধু বলল, – ‘আর একটা প্রশ্ন আছে। আমার তারপর ছুটি।’–‘কি?’
–‘ অভির সঙ্গে কথা বলবে ভেবে কোন নার্ভাসনেস বা এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে কি? সত্যি বল প্লিজ।’
ভুরু কুঁচকে কৌতুক ভরা দৃষ্টিতে সিধুর দিকে তাকিয়ে লীনা বলল, – ‘অভি ঠিকই বলেছিল, তুমি সত্যিই একটা অদ্ভুত চিজ। হ্যাঁ হচ্ছে এক্সাইটমেন্ট।’–‘ব্যাস আমি নিশ্চিন্ত। এবার খাবারটা শেষ করি। আর হ্যাঁ। অভি কিন্তু জানে না আমি তোমার সঙ্গে বসে আছি। মুখের ভাবটা দেখো যখন ঢুকবে। সিওর উপভোগ্য হবে।’
ওদের খাওয়া শেষ হবার আগেই অভি এসে ঢুকলো। লীনাকে সিধুর সঙ্গে বসে থাকতে দেখে তার মুখের ভাব ঠিক সিধুর কথা মতই দেখবার মতো হয়ে গেছে। সিধু আর লীনা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে হেসে ফেললো একসঙ্গে।
দুজনকে একা বসতে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে সিধু বলল, -‘আমার কিছু কেনাকাটা আছে। তোরা কথা বল। আমাকে ফোন করে দিস পরে। আর অভি বিলটা মিটিয়ে দিবি। লীনা কে আমি ডেকে এনেছি। আমার ট্রিট।’ বলে দুজনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল সে।রাস্তার ওপার থেকে দেখতে পেল হাত বাড়িয়ে টেবিলের ওপর রাখা লীনার হাতের উপর নিজের হাতটা রাখছে অভি। লীনার মুখে মৃদু হাসিটা দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত মনে ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে পকেট থেকে ফোনটা বের করে স্ত্রীকে ডায়াল করল অভির বিনে পয়সার ঘটক।
ক্রমশ…
❤ Support Us