- দে । শ
- অক্টোবর ২৮, ২০২৪
৫ গ্রামে নিষিদ্ধ কালী।উপাসনা পাথরের অষ্টভুজার

কালীপ্রতিমা ঢোকার হুকুম নেই। এমনকী বাড়িতেও টাঙানো যাবে না কালী মূর্তির ছবি। বছরের পর বছর ধরে এই দস্তুর বহন করে আসছে কাটোয়ার কালিকাপুর-সহ এলাকার ৫টি গ্রাম। গ্রামে রয়েছে অষ্টভুজা মহামায়ার প্রস্তর মূর্তি। এই মূর্তিটিই এখানে কালী হিসেবে পূজিত হন। এককালে এলাকাটি ছিল ঘনজঙ্গলে ঘেরা, জনমানবশূন্য। বসতি গড়ে ওঠার পর কালিকা দেবীর নাম অনুসারে জনপদটির নাম হয় কালিকাপুর। শুধু এই গ্রামই নয়, এলাকার বেশকয়েকটি গ্রামের আরাধ্য এই কালিকাপুরের মহামায়া-কালী। নিত্যপূজার জন্য বছরভর এখানে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে।
প্রায় আড়াইশো বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে কালিকাপুর গ্রামের এক ব্রাহ্মণ প্রায় ছয় কিমি দূরে কুমড়ি গ্রামের এক জলাশয় থেকে এই অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনীর প্রস্তর মূর্তি উদ্ধার করে গ্রামে আনেন। জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় তেমনভাবে বসতি তখনও গড়ে ওঠেনি। দেবীর সেবাকর্ম চালাতে গিয়ে ব্রাহ্মণের হিমশিম খাওয়ার জোগাড়। তখন পাগলা বাবা নামে এক তন্ত্রসাধক এই দেবীমূর্তির সেবার ভার নেন। গ্রামের রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে মান্যতা পেল এই দেবীমূর্তি। মূর্তির গঠনকাঠামো দেখে বিশিষ্ট গবেষক রণদেব মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘এই ধরনের মূর্তি পূর্ব ভারতে বিরল। দেখে মনে হচ্ছে এটা পাল যুগের দশম বা একাদশ শতকের শিল্পকর্ম। সম্ভবত কোনোও ডাকাতদল এটা চুরি করে এনে পুকুরে ফেলে রেখেছিল।’ উনিশ শতকের মাঝামাঝি জমিদারদের উদ্যোগে নিত্যসেবার জন্য সেবাইত নিয়োগ করা হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় মুর্শিদাবাদের এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবারকে। সেবাইত হিসেবে নিয়োগ করে নিত্যসেবা শুরু হয় দেবী মহামায়ার। আজও সেই মুখোপাধ্যায় পরিবার বংশপরম্পরায় কালিকাপুরের দেবীর পুজো করে আসছে। বর্তমান সেবাইত রতন মুখোপাধ্যায় জানান, ‘দেবী মহামায়ার রূপ হলেও কালী পুজোর দিন কালী মন্ত্রে এই মহামায়াকে পুজো করা হয়।’ মহামায়া কীভাবে কালী পরিচিতি পেয়ে স্থানীয় অগ্রদ্বীপ ও গাজীপুর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার দশ-বারোটা গ্রামের হিন্দু ও মুসলমানদের দেবী হয়ে উঠল, তা খুবই বিস্ময়ের। গ্রামের বাসিন্দা গায়ত্রী মুখোপাধ্যায়, বঙ্কু চন্দ্ররা জানালেন, ‘আগে এখানে তান্ত্রিকদের ভিড় লেগেই থাকত। কালিকাপুর, কুমরি, নওয়াদা, কুলগাছি ও পলাশি গ্রামের গেরস্তের বাড়িতো বটেই, ক্লাবে পর্যন্ত কালী মূর্তির ঠাঁই নেই। কার্তিক অমাবস্যায় কালী পুজোর দিন বলিদান নিষিদ্ধ থাকলেও বছরের অন্যসময় দেবী মহামায়ার সামনে বলিদানের প্রথা আছে।
❤ Support Us