Advertisement
  • দে । শ পা | র্স | পে | ক্টি | ভ
  • আগস্ট ২৬, ২০২২

কেন কংগ্রেসের সব পদ ছাড়লেন গোলাম নবি?

লক্ষ্য কাশ্মীরের কুরসি নয় তো?

কেন কংগ্রেসের সব পদ ছাড়লেন গোলাম নবি?

সম্পাদকীয় বিশ্লেষণ

প্রাথমিক সদস্যপদ সহ কংগ্রেসের সব পদ থেকে সরে গেলেন বরিষ্ঠ কাশ্মীরি নেতা গোলাম নবি আজাদ। একসময় গুজরাটের আহমেদ প্যাটেলের মতো গান্ধী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। দলের অভ্যন্তরীন অবক্ষয়, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব ও উত্তরাধিকারের রাজনীতি নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণার পর গান্ধী পরিবার তাঁকে প্রায় ব্রাত্য করে তোলে। রাজনীতি থেকে সরে না গেলেও তাঁর বিদ্রোহ কন্ঠ চাপা দেওয়া যায়নি।

ইতিমধ্যে একের পর এক রাজ্যে কংগ্রেস ধরাশায়ী হতে থাকে। কংগ্রেসের ভেতরে দুটি কন্ঠস্বর জেগে ওঠে। এক, রাহুলগান্ধীকে সভাপতির দায়িত্ব নিতে হবে। দুই, গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি করতে হবে।

সোনিয়ার স্বাস্থ্য ঠিক নয়। তাঁর পক্ষে সংগঠন পরিচালনা করা অসম্ভব।তিনি চাইছিলেন রাহুল হাল ধরুক। রাহুল রাজি
হননি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষিত হল অতিসম্প্রতি। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে সভাপতির পদে বসানোর চেষ্টা হচ্ছে। ২০ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন। তখনই ঠিক হবে, কে হবেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের প্রধান। কংগ্রেসের ভেতরে গৃহযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধকে বাড়িয়ে দিতে চায় শাসক দল। এই ডামাডোলের মধ্যেই দলের সব দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিলেন গোলাম নবি। সোনিয়াকে লেখা চিঠিতে বলেছেন , অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে আমার অর্ধশতাব্দী পুরনো সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিতে হল।

গোলাম নবির পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কাশ্মীর বিধানসভা ভোটের আগে কেন ইস্তাফা দিলেন  ? মনোমালিন্য চলছিল। আগে কেন সরে গেলেন না ? কতটা নির্মোহ তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত।

গোলাম নবি মূল উপত্যকার বাসিন্দা নন। তাঁর বাড়ি জম্মু এলাকার কাছাকাছি। অর্ধশতক জুড়ে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মাঝখানে, ভাগাভাগির রাজনীতির সুযোগে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।সে আঁতাত স্থায়ী হয়নি। দিল্লি ফিরতে হল। রাজ্যসভা থেকেও অবসর নিতে বাধ্য হলেন। অবসর গ্রহণের পর বিজেপির সঙ্গে তাঁর হৃদ্ধতা কি বেড়ে উঠেছে? গেরুয়া শিবির কাশ্মীরের কুরশি দখল করতে মরিয়া। বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস হয়েছে। সম্প্রতি ভোটের অধিকার পেয়েছেন বহিরাগতরা। যা কাশ্মীর চুক্তির পরিপন্থী।

ক্ষমতা দখলের ইচ্ছাকে চরিতার্থ করতে কি গুলাম নবিকে প্ররোচিত করছে কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী? একমাত্র রাজস্থান আর পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া, প্রতিটি সীমান্ত রাজ্যে এনডিএর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত। এটি বিজেপির ফ্রন্টিয়ার পলিসির অন্তর্ভূক্ত। কাশ্মীরেও তারা অঘোষিত নীতি স্থাপন করবে। প্রয়োজনে, কাশ্মীরি দ্রোহকন্ঠের সঙ্গে আপোস করবে। ক্ষমতার শীর্ষে গোলাম নবিকে বসাতেও পিছপা হবে না হয়তো।

প্রবল প্রতিপক্ষ ন্যাশেনাল কন্ফারেন্স কিংবা মেহবুবা মুফতির পিডিপির গণভিত্তিতে ধ্বস। হুরিয়াত কনফারেন্স কার্যত স্বরহীন। পায়ের তলার জমি নড়বড়ে।হুরিয়াতের নেতারা বন্দীযাপনে অভ্যস্ত। মৌলবি ফারুক নিষ্কন্ঠ। জনপ্রিয়, সর্বজেষ্ঠ্য, এককালের জামাত নেতা সৈয়দ আলি শাহ জিলানির মৃত্যুর পর হুরিয়াতের সুদৃঢ় নেতৃত্ব কোথায় ? জিলানি প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করতেন। দিল্লির শাসনকে ঔপনিবেশিকতা, অপশাসন বলতে দ্বিধা ছিল না তাঁর। অসঙ্গত আর একধরনের ভারত বিরোধিতা হলেও, এটাই ছিল তাঁর জনপ্রিয়তার ভিত্তি। শেখ আব্দুল্লাহর জীবদ্দশায় শেখের কেন্দ্র বিরোধিতা, পাকিস্তান বিরোধিতা, আমানুল্লাহর প্ল্যাবিসাইট ফ্রন্ট, জেকে এল এফের ধীর উত্থান, রাজনীতির মঞ্চে ফারুক আব্দুল্লাহর সরাসরি  প্রবেশ ইত্যাদি কারণে জিলানির জনপ্রিয়তা থমকে গেল। পাকিস্তানও তাঁকে নিয়ে সংশয়ে ছিল, কারণ তাঁর গোপন লক্ষ্য ছিল অখণ্ড কাশ্মীরের সার্বোভৌমত্ব।

এরকম পরিস্থিতিতেই, জামাত নেতা আর বাগ্মী অধ্যাপক জিলানির নেতৃত্ব পাক পন্থীদের অবলম্বন হয়ে ওঠে। জামাতের তৃণস্তরকে ব্যবহার করতে থাকলেন জিলানি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের সংযোগ বাড়িয়ে তুললেন। জেকেএলএফ ছাড়া অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর, বিশেষ করে প্রাক্তন তহশিলদার সালাহউদ্দিন এর হিজব-এ-মুজাহিদিন তাঁর পরোক্ষ আয়ত্তে চলে এল। ৯০ এর দশকে, বরফের তলায় আগুন যখন ধিক্ ধিক্ করে জ্বলছিল, যখন সন্ত্রাস রোখার প্রচেষ্টাকে ঘিরে ভারতের সেনা-আধা সেনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের লড়াই তুঙ্গে উঠল, যখন প্রায় দুদশক জুড়ে একই উত্তপ্ত আবহ অব্যাহত থাকল, তখন সর্বস্তরের প্রতিবাদী কন্ঠকে ছাড়িয়ে জিলানির একক নেতৃত্বই কাশ্মীরি আজাদির লড়াইয়ের ভরসা ।

জিলানির আসন এখন শূন্য। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরাই জঙ্গিদের আশ্রয়। জনগণ দিশাহারা। মূলস্রোতের নেতারা জনবিচ্ছিন্ন। কেউ কেউ স্বনির্বাসিত। কেউ কেউ যতটা না নেতা, তার চেয়ে অনেক বেশি অভিনেতা। নেতৃত্বহীনতা আর জঙ্গিদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ নিয়ে দিল্লির একদলীয় ক্ষমতামত্ততার প্রবল হাওয়া ক্রমশ ঢুকে পড়ছে। রাজা যা চায়, সেটাই কাশ্মীরে ঘটবে। রাজার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলবে কে? দেশদ্রোহিতার অভিযোগ বুকের ওপর ঝুলবে। বিরোধীদেরও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কুরসির মোহ, লোভ, অনৈক্য ঘিরে আছে তাঁদের। প্রত্যেকেই নিজের রাজ্যে নিয়ে ব্যস্ত।যদি নির্বাচনের নামে, ছলেবলে উপত্যকায়, জম্মুতে ভোট করিয়ে নেয় কেন্ত্রীয় শাসক, যদি গোলাম নবির মতো জনবিচ্ছিন্ন, কংগ্রেস ত্যাগী নেতাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়, সঙ্গবদ্ধ আওয়াজ উঠবে না। আবার, কাশ্মীরে শান্তিও ফিরবে না। এখন যা স্ফুলিঙ্গ, অদূর ভবিষ্যতে তা মারাত্মক অগ্নিকান্ডের সহযোগী হয়ে রইবে।

শেখ আব্দুল্লাহকে জেলবন্দী করে ন্যাশেনাল কনফারেন্সের দুর্বল ক্ষমতা-কাঙাল বকশি গোলাম মহম্মদকে(১৯৫৩-১৯৬৪) কুরসিতে বসিয়ে ছিলেন নেহরু। ফায়দা হয়নি। কংগ্রেসের ক্ষমতাবলয়ের আওতায় কাশ্মীরকে নিয়ে আসার চেষ্টাও কাজে আসেনি। জেলমুক্ত শেখ আব্দুল্লার হাতে কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণের ভার ছেড়ে দিয়ে, ফারুকের সঙ্গে আঁতাত করেও মূল ইস্যু থেকে কাশ্মীরের দৃষ্টি নিক্ষেপ অন্যদিকে ঘোরানো যায় নি।রাজা হরিসিং এর শাসনমুক্ত কা্শ্মীর শাসনের নামে শোষণ, সন্ত্রাস দমনের নামে অবদমনের মনোহর বন্দিশালা হয়ে রইল।আজও সে ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আর অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরীক্ষাগার হয়ে আছে। দুদেশের পারস্পরিক বৈরিতায় পুরোপুরি স্যান্ডুইচ অখন্ড ভারতের বৃহত্তম অঙ্গ রাজ্য।যেখানে কংগ্রেস জামানা, জনতা আমল এবং বিজেপি শাসনের ভুল অভিন্ন। বিভ্রান্তি পরিত্রানহীন। সেখানে কংগ্রেসত্যাগী আজাদকে বসালেও, মৌলিক আজাদি (সুবিচার, শান্তি) বলতে যা বোঝায়, তার আগমন অসম্ভবের চেয়েও অসম্ভব মনে হচ্ছে।


❤ Support Us
গুম গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
ধারাবাহিক: একদিন প্রতিদিন । পর্ব ৫ পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
পথ ভুবনের দিনলিপি । পর্ব এক ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
error: Content is protected !!