- দে । শ
- জুলাই ১২, ২০২৪
অন্ধ্রপ্রদেশ: এক রাজধানীহীন রাজ্যের কাহিনী

অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার মধ্যে রাজধানী হিসাবে হায়দ্রাবাদকে ভাগ করার সময়সীমা ছিল ২ জুন, ২০২৪ ,যা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ এই মুহূর্তে রাজধানীহীন এক অঙ্গরাজ্য। গোটা দেশে একমাত্র রাজ্য,যার প্রশাসন থাকলেও মূল প্রশাসনিক কেন্দ্র নেই।
বর্তমানে অমরাবতী রাজ্যের রাজধানী হবার মূল দাবিদার রূপে গড়ে উঠছে।অনেকে একে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর স্বপ্নের প্রোজেক্ট বলে আখ্যায়িত করছেন।
২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে দু টুকরো হবার পর এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তেলেঙ্গানা রাজধানী রূপে হায়দ্রাবাদ পেলেও অন্ধ্রপ্রদেশের কপালে এখনও পর্যন্ত কোনও রাজধানী জোটেনি। অমরাবতীকে রাজধানী করার কথা এতদিন চিন্তাভাবনার স্তরেই আটকে রয়েছে।
হায়দ্রাবাদকে দশ বছরের জন্য দুই রাজ্যের রাজধানী করার প্রস্তাব করা হলেও অন্ধ্রের প্রশাসকেরা ভেলাগাপুডিকে অস্থায়ী প্রশাসনিক কেন্দ্র রূপে কাজ চালানোর প্রস্তাব দেন।
রাজধানী একটি রাজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে, প্রাথমিক সরকারী প্রতিষ্ঠান যেমন আইনসভা, কার্যনির্বাহী অফিস এবং বিচার বিভাগের মূল ভরকেন্দ্র হল রাজধানী। শাসনের কেন্দ্রীকরণ, প্রশাসনিক দক্ষতা,, নীতি প্রণয়ন এবং জনসেবা প্রদানকে সহজতর করে। এটি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও কাজ করে। তদুপরি, রাজধানী প্রায়শই রাষ্ট্রের পরিচয় ও ঐতিহ্যের প্রতীক। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্ররূপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানীরূপে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে গুন্টুরা জেলাস্থিত এই এলাকাটি। কৃষ্ণানদীর তীরে গড়ে ওঠা এই শহরটিকে কিছুটা মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর মানসকন্যা বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। ঠিক যেমন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কল্যাণী ছিল পশ্চিমবঙ্গের রূপকার মুখ্যমন্ত্রী ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ন,অমরাবতীও সেরকম কিছুটা।তবে বিধানচন্দ্র রায় কল্যাণীকে কখনও পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী করার কথা চিন্তা করেছেন বলে শোনা যায়নি।
পুরাণে কথিত আছে, দেবরাজ ইন্দ্রের রাজধানী ছিল অমরাবতী। সেখানে সতত সুখ বিরাজমান । মর্ত্যবাসী অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বমানের রাজধানী করার লক্ষ্যে বিভোর হয়ে সিঙ্গাপুরের বেশ কিছু নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেন।কৃষকদের থেকে ৩৩ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করলেন। জেনেছিলেন, তাঁর স্বপ্নের রাজধানী তৈরিতে খরচ হবে ৫১হাজার কোটি টাকা।
কিন্ত ২০১৯-এ ঘটল ছন্দপতন। নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) নির্বাচনে হেরে যায় এবং ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআরসিপি ক্ষমতায় আসে। রেড্ডি এসেই সমস্ত প্রকল্প স্থগিত করে দেন এবং নতুন রাজধানী নির্মাণে বাজেট কমিয়ে দেন। ফলে সিঙ্গাপুরের সংস্থাগুলি পাততাড়ি গুঁটিয়ে নিজের দেশে ফিরে যায়।
তবে রেড্ডির স্বপ্ন ছিল চন্দ্রবাবুর থেকে তিনকাঠি ওপরে।তিনি একটা নয়,দুটো নয়,একটি রাজ্যের জন্য তিনটি রাজধানীর প্রস্তাব করে বসেন। মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াল।
২০২৪ সালে নিজের হারানো সিংহাসন ফিরে পেলেন নাইডু।আর ফিরে এসেই তাঁর মুলতুবি হওয়া স্বপ্নের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছেন। অমরাবতী ছাড়াও বিশাখাপত্তনমকে একটি অর্থনৈতিক রাজধানী ও বিশেষ উন্নত শহররূপে গড়ে তুলতে চান তিনি।
অন্ধ্রপ্রদেশও অমরাবতী পুনর্নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের সহযোগিতা চেয়েছে। কেন্দ্র বিশেষ ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে।
শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু তা না হওয়া পর্যন্ত, অন্ধ্রপ্রদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও নিজের রাজধানী ছাড়াই টিকে রয়েছে।
❤ Support Us