Advertisement
  • ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র প্রচ্ছদ রচনা
  • নভেম্বর ১০, ২০২৩

নজরুলের কালজয়ী গান “কারার ওই লৌহকপাট”-এর সুর ও ছন্দ বিকৃতি । ক্ষুব্ধ নাতনি খিলখিল কাজী, শিল্পী রামানুজ দাশগুপ্ত

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
নজরুলের কালজয়ী গান “কারার ওই লৌহকপাট”-এর সুর ও ছন্দ বিকৃতি । ক্ষুব্ধ নাতনি খিলখিল কাজী, শিল্পী রামানুজ দাশগুপ্ত

ঈশান খট্টর এবং মৃণাল ঠাকুর অভিনীত “পিপ্পা” ছবিতে বলিউডের বিখ্যাত সুরকার এ আর রহমান কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান “কারার ওই লৌহকপাট”- গানটির রিমেক ভার্সন ব্যবহার করেছেন। ছন্দ ও সুরের দিক থেকে এই রিমেক ভার্সনে মূল গানটিকে “হত্যা” করা হয়েছে বলে সংগীত বিশেষজ্ঞদের মত। সংগীত শিল্পী, সংগীত পরিচালক, নজরুলগীতি বিশেষজ্ঞ রামানুজ দাশগুপ্ত এ আর রহমানের কারার  ওই লৌহকপাট-এর রিমের ভার্সন শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। এ আর রহমান কি ভাবে এই জনপ্রিয় গানটিকে এভাবে বিকৃত করতে পারলেন তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী খিলখিল কাজী।

সংগীত শিল্পী ও সংগীত বিশেষজ্ঞ রামানুজ দাশগুপ্ত এই বিষয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, “আমি গানটি দু’লাইন শুনলাম। এই গানটি যাতে এই মুহূর্তে আর কারও কানে পৌঁছতে না পারে তার জন্য এ আর রহমান ও ছবির পরিচালকের কাছে আগে সমস্ত মহল থেকে একটি আবেদন জানানো প্রয়োজন। তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে কারার ওই লৌহকপাট গানটিকে বিকৃত করার জন্য এ আর রহমান ও ছবির পরিচালকের বিরুদ্ধে তখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটা এমন হয়েছে যেন তাজমহলের পাথর তুলে নিয়ে আমরা বাথরুমে বসাচ্ছি। বেলুড় মঠের পাথর তুলে নিয়ে আমার ড্রয়িং রুমে বসাচ্ছি। এ আর রহমান আমাদের থেকে অনেক পরের প্রজন্মের শিল্পী। তিনি একজন ভালো মানুষ। তবে তিনি যা করেছেন সেই সুরটি যাতে মানুষের কাছে না পৌঁছয় সেই ব্যবস্থা করা জরুরি। গানটির সুরতো বটেই, গানের বাণীর ছন্দের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। আমি এ আর রহমানকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। তিনি ফিল্মি গানের মধ্যে একটা নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন। তবে তিনি নিজের অজান্তেই হয়তো কারার ওই লৌহকপাট গানটি সম্পর্কে, গানটির সুর সম্পর্কে না জেনে এই কাজ করেছেন। এই গানটির সুরটি বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করতো। আমাদের কাছে কাজী নজরুল ইসলামের কারার ওই লৌহকপাট গানটি একটি স্তোত্রের মতো। কাজেই সেই গানটিকে এভাবে বিকৃত করা বা করতে দেওয়া যায় না।”

শোনা যাচ্ছে অরিন্দম কাজী ও কল্যাণী কাজী কারার ওই লৌহকপাট গানটি ব্যবহারের জন্য এ আর রহমানকে কপিরাইট দিয়ে গেছেন। এই প্রসঙ্গে রামানুজ দাশগুপ্তকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “গানটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায়, তবে সুরটি বদল করার অনুমতি দেওয়া যায় কী? আর গানটি গেয়েছেন বাঙালি শিল্পীরা। তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কারণ কি ভাবে তাঁরা এই কাজটি করলেন?”

এই প্রসঙ্গে অনিন্দিতা কাজী বলেছেন, “এ আর রহমানকে অসম্মান না করেই বলছি আমি এই সুর কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছি না।”
এই গানটি রেকর্ডিং হয়েছিল ২০২১ সালে। আগামী ১০ নভেম্বর অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেতে চলেছে “পিপ্পা’ ছবিটি। সিনেমাটি ক্যাপ্টেন বলরাম সিং মেহতার জীবনের উপর তৈরি। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পূর্ব ফ্রন্টে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি।

আবারও বলে রাখি, এই সিনেমার সুরকার সেই এ আর রহমান, যিনি নব্বইয়ের দশকে তাঁর সৃষ্টি করা  “হাম্মা হাম্মা” গানটি রিমেক হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এই গানটি ছিল “বম্বে” সিনেমার। সিনেমাটি তেলুগু ও হিন্দি দুই ভাষাতেই রিলিজ করেছিল নব্বইয়ের দশকে। সুরকারের বয়স তখন ২৮ বছর। “হাম্মা হাম্মা গানটি গেয়েছিলেন এ আর রহমান, সুরেশ পিটার্স এবং স্বর্ণলতা। সুপারহিট সেই গানেরই রিমেক ভার্সান শোনা গিয়েছিল শাদ আলির “ওকে জানু” সিনেমায়। এক সাক্ষাৎকারে এ আর রহমান বলেছিলেন, “হাম্মা হাম্মা গানটির রিমেকে তাঁর ঘোরতর আপত্তি ছিল। এ গানের রিমেকে ‘না’ মানে ‘না’ই।” এটা যদি নিজের গানের রিমেক নিয়ে এ আর রহমানের বক্তব্য হতে পারে তাহলে শিল্পী হিসেবে তিনি কোন ভাবনা থেকে কাজী নজরুল ইসলামের “কারার ওই লৌহকপাট” গানটিকে রিমেক করে বিকৃত করলেন বা করার সাহস পেলেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই প্রশ্ন উঠছে, তবে এখন আর “রিমেকে না মানে না-ই”, বলতে শোনা যাচ্ছে না এ আর রহমানকে !


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!