Advertisement
  • দে । শ
  • জুলাই ১২, ২০২৪

অনর্থক বৃক্ষ নিধনে অশ্রুসিক্ত আশিস, সবুজ রক্ষায় পথে পথেই তাঁর নিঃশব্দ অভিযান

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
অনর্থক বৃক্ষ নিধনে অশ্রুসিক্ত আশিস, সবুজ রক্ষায় পথে পথেই তাঁর নিঃশব্দ অভিযান

সবুজ ধ্বংসের বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথাই বলেন। দূষণ রোধে গাছের ভূমিকা সত্যি ‌বোঝেন ক’‌জন ?‌ তবে যাঁরা সত্যিই বোঝেন প্রকৃতিকে একমাত্র রক্ষা করতে পারে সবুজ, তাঁরা কিন্তু চুপ করে বসে নেই। তাঁরা লড়াইটা নিঃশব্দে চালিয়ে যাচ্ছেন। এরকমই এক বসিরহাটের গাছ পাগল আশিস ঘোষ। নিজের উদ্যোগে বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগিয়ে চলেছেন এক যুগ ধরে । সাইকোলজিতে এমএসসি করা বছর ৪৪–‌র আশিস একটা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাতে কতই বা উপার্জন। কিন্তু তাতে কী আসে যায়। ছুটি পেলে কিংবা প্রতি রবিবার সকালে আশিসবাবু নানা রকম গাছের চারা, কোদাল, শাবল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পথে পথে সবুজ বুনতে। ছুটি পেলেই কখনও তাঁর দেখা মেলে ইছামতীর পাড়ে, কখনও বা টাকি রোড, মার্টিন বার্ন রোড, সংগ্রামপুর কিংবা কোন পার্ক, রাস্তার মোড়ে গাছ পুঁতছেন আশিস। নয়তো তাঁকে দেখা যায় আগে লাগানো গাছের পরিচর্যা করতে ।

বসিরহাট ময়লাখোলার বাসিন্দা আশিস ঘোষ । তাঁর ভাবনা একটাই, নির্বিচারে সর্বত্র যখন বৃক্ষ নিধন চলছে অন্তত তার হাতে পোঁতা কিছু গাছ মাটিকে শীতল করুক। অর্জুন, কৃষ্ণচূড়া, মহানিম, গামার, শিশু, জারুল, রাধাচূড়ার মত পরিবেশ সহায়ক গাছ লাগিয়ে চলেছেন আশিসবাবু ৷ শুধু গাছ লাগিয়েই দায় সারা নয়। সেগুলিকে নিখুঁত পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা না পর্যন্ত থামা নেই। নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে সন্তানের মত প্রতিপালন করে বড় করে না তোলা পর্যন্ত শান্তি নেই। নার্সারি থেকে গাছ কিনে সেটাকে ভালো জায়গা দেখে পুঁতে নেট, বাঁশের চটা দিয়ে বেড়া দেওয়া, সবই গাঁটের কড়ি খরচ করে, নিজের হাতে করেন আশিস বাবু। তাঁর পোঁতা ছোট্ট অর্জুন,কৃষ্ণচূড়ার চারা আজ আজ রীতিমত বড় গাছ হয়ে ছায়া বিলোচ্ছে। আশিস বলেন, ‘‌১৪ বছর হয়ে গেল। গাছ লাগিয়ে যাচ্ছি। যখন দেখি সেই গাছের ছায়ায় বসে কেউ দু’‌দন্ড জিরোচ্ছে বড় ভালো লাগে।’‌ নৈহাটির বাসিন্দা সমর দে বলেন, ‘‌বসিরহাটের পার্ক গুলিতে যত গাছ আছে তার প্রায় সবই সবার অলক্ষ্যে আশিসবাবু নিজে লাগিয়ে পরিচর্যা করে বড় করে তুলেছেন। উনি নিজের উদ্যোগে ও নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে এটা করেছেন।’‌ সমরবাবুদের মত প্রকৃতি প্রেমীরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করলেন, ‘‌এখন তো আমরা একটা গাছ পুঁতে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিই। আর আশিসকে একটা গাছ বাঁচাতে না পারলে হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখেছি।’‌

বাস্তবিকই তাই। রবীন্দ্র সৈকতে ইছামতীর পাড়ে সম্প্রতি ‘‌লাভ বসিরহাট’‌ সেলফি জোন তৈরি হয়েছে। এটা করতে গিয়ে নদীর পাড়ে সুন্দরী গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সুন্দরী গাছ লাগিয়েছিলেন আশিস বাবু। উপড়ে ফেলা গাছগুলি দেখে কেঁদে ফেললেন তিনি। বললেন, ‘‌একটু আগে জানতে পারলে সুন্দরী গাছ গুলো বাঁচাতে পারতাম।’‌ আশিসবাবুর কান্না ফেসবুকে পোস্ট হয়নি।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!