- এই মুহূর্তে বি। দে । শ
- মার্চ ২৬, ২০২৫
দক্ষিণ কোরিয়ার দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল! মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮, আহত ২০, সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি

দক্ষিণ কোয়িরায় এ দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। তীব্র বাতাস আর শুষ্ক আবহাওয়ার ফলে একাধিক এলাকা অগ্নিকাণ্ডের কড়াল গ্রাসে। প্রায় ২৭,০০০ বাসিন্দা ঘরছাড়া। স্কুল, কলেজ বন্ধ। জেলবন্দিদের স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮, আহত ২০ জন।
দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল সানচেং প্রদেশে ২০টিরও বেশি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে, আহত ২০-র বেশি। তীব্র বাতাস আর শুষ্ক আবহাওয়ার ফলে একাধিক এলাকা অগ্নিকাণ্ডের কড়াল গ্রাসে। প্রায় ২৭,০০০ বাসিন্দা ঘরছাড়া। স্কুল, কলেজ বন্ধ। জেলবন্দিদের স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হাজার হাজার দমকল কর্মী আর সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এটিই সে দেশের বিগত এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডগুলোর মধ্যে একটি। এ তথ্য নিশ্চিত করছে দেশটির স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী, সীমিত কর্মী ও সরঞ্জাম নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। কিন্তু অবস্থা ভালো নয়। কোরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন সেনাবাহিনীও সাহায্য চাওয়া হয়েছে। হান আরো বলেন, ‘আমরা মরিয়া হয়ে বৃষ্টির অপেক্ষা করছি, যা আগুন নেভাতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু কোরিয়া আবহাওয়া প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার কোনো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবার মাত্র ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে।’ বুধবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা পর্যন্ত, ইউসেওং প্রদেশে শুরু হওয়া অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জন এবং সানচিয়ং প্রদেশের আরেকটি অগ্নিকাণ্ডে ৪ জন মারা গেছে, দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা সন চাং-হো জানিয়েছেন, যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৬০- ৭০-র আশপাশে। এর আগে আগুনের দাবানল থেকে শনিবার তিন জন অগ্নিনির্বাপক কর্মী এবং একজন সরকারি বনকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে ২৫ মার্চ জাতীয়স্তরে সতর্কতা জারি করেছে সরকার। দাবানলের ফলে অনেক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, বিশেষ করে ১,৩০০ বছরের পুরনো গউনসা বৌদ্ধ মন্দিরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে উইসিয়ং শহরে নির্মিত এই মন্দিরটি দাবানলে সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়েছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যা জোসন রাজবংশের [১৩৯২-১৯১০] সময়কালীন জাতীয় সম্পদ হিসেবে পরিচিত, তা-ও দাবানলে পুড়ে গেছে। বুধবার দুপুরে, উইসিয়ং প্রদেশের পাহাড়ী অঞ্চলে একটি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করছে। বর্তমানে প্রায় ৫,০০০ সামরিক সদস্যসহ হাজার হাজার দমকলকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও আগুন নেভাতে সহায়তা করছে।
ইউসেওংয়ের অগ্নিকাণ্ড, প্রথমদিকে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ঝোড়ো বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে তীব্র হয়ে ওঠে, অবর্ণনীয় দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় বনবিপর্যয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বন বিপর্যয় বিশেষজ্ঞ লি বিং-ডু বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আরো ঘন ঘন ঘটবে। জানুয়ারিয়ে লস এঞ্জেলেসের অগ্নিকাণ্ড ও সম্প্রতি জাপানের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। আমাদের আগামী দিনে বৃহৎ আকারের দাবানলের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সমস্যা মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করতে হবে। চলতি বছরে ইতোমধ্যে ২৪৪টি দাবানল রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪ গুণ বেশি।’ দক্ষিণ কোরিয়া, পাহাড়ী অঞ্চলে অঞ্চলে আগুন লাগবার কারণে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে, তবে এ প্রসঙ্গে লি বলেছেন, ‘আমাদের অন্যান্য আগ্নিনির্বাপক বিমান আর ড্রোনের ব্যবহার প্রয়োজন, যেগুলি রাতের বেলাতেও কাজ করতে পারে।’উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার বনবিভাগেরের ৪৮টি অগ্নি নির্বাপণ হেলিকপ্টারের মধ্যে ৮টি রাশিয়ান হেলিকপ্টার গত বছর থেকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করা সম্ভব হয়নি। কোরিয়া ফরেস্ট সার্ভিসের মুখপাত্র কিম জং-গুন বলেছেন, সংস্থা আরো অগ্নি নির্বাপন হেলিকপ্টার সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করছে।
অন্যদিকে, ইউসেওংয়ের অগ্নিকাণ্ড ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান’-এর তালিকায় থাকা হাহোয়ে গ্রাম ও বাইংসান কনফুসিয়ান একাডেমিতেও থাবা বসিয়েছে। সংশীষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেগুলিকে রক্ষা করতে আগ্নিনির্বাপক পদার্থ ছড়ানো হচ্ছে। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে নি। প্রায় ১৫,০০০ হেক্টরেরও বেশি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে দেশের সরকার আক্রান্ত এলাকাগুলিকে বিশেষ দুর্যোগ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে।
❤ Support Us