Advertisement
  • খাস-কলম দে । শ
  • ডিসেম্বর ২১, ২০২৩

লাগলো হাওয়া নৌকোয়। ভোটের আগেই হিংসা, বিরোধীরা দিশেহারা

শৃঙ্খল নয়, শৃঙ্খলা আর হিংসাহীন, সাম্প্রদায়িকতাহীন, সন্ত্রাসবাদহীন রাজনীতিই বাংলাদেশের ভবিষ্যত। এপথে এগোলেই উন্নয়ন লক্ষ্যচুত হবে না

বাহার উদ্দিন
লাগলো হাওয়া নৌকোয়। ভোটের আগেই হিংসা, বিরোধীরা দিশেহারা

বঙ্গতটে ভোটের গতি

১৬ দিন পর বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। ৩৫০ আসনের জন্য লড়বে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি) এবং তাঁদের ঘোষিত বা অঘোষিত সহযোগী জামাত এ ইসলামি প্রবল গুস্সা নিয়ে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।বিএনপির ভেতরে বহুরকমের সঙ্কট। দলের নেত্রী আর দু-দফায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঠিকানা এখন হাসপাতাল। তাঁর ছেলে, দলের সভাপতি তারেক জিয়া বিদেশে স্বনির্বাসিত। নেতৃত্বের জায়গা প্রায় শূন্য বলেই বিএনপি সংগঠিত হতে পারেনি। ময়দানে নেমে লড়াই করার জন্য যে ক্ষমতা দরকার, জরুরি যে সাংগঠনিক বিস্তৃতি, তা ব্যক্তি ও ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে বিএনপি গড়ে তুলতে পারেনি।তাঁদের জনসমর্থন নেই, একথা বলা অন্যায়। পশ্চিমের বহুদেশ সুষ্ঠ নির্বাচনের অজুহাত তুলে আকার ইঙ্গিতে বিএনপিকে বুকে জড়াতে চেয়েছে।দাবি করেছে তদারকি সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়া আবশ্যিক। কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রের এসব অজুহাত আর আবদারকে আমল দেয়নি বাংলাদেশের জাতীয় ভাবাবেগ। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দেশপ্রেম আর গতকয়েক বছরের ‘ব্যাপক’ উন্নয়ণের ভিত্তিতে একতরফা বলার সুযোগ পেয়ে গেল, বাংলাদেশকে টিঁকে থাকতে হলে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সন্ত্রাসবাদ বিরোধ আর বাংলাদেশের জন্মগত ভাবাবেগকে সুস্থাপিত করতে হবে, প্রত্যেক প্রার্থীকে ভোটে গণতান্ত্রিক রীতি মেনে জিতে আসতে হবে। দল কিংবা দলীয় আনুগত্য বড়ো কথা নয়, দেশের প্রতি অঙ্গীকারই প্রধান ইস্যু। প্রসঙ্গত বলা দরকার, আওয়ামী লিগের বহু সাংসদ টিকিট পাননি।তাঁরা বিভিন্ন আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। এটা শাসকদলের নিছক কৌশল নয়।গণতন্ত্রহীনতা আর স্বৈরশাসনের যে অভিযোগ গত কয়েকবছর ধরে তোলা হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশটির ভেতরে আর বাইরে, তার জবাব দিতে গিয়েই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বেশ কিছু সুপরিচিত মুখকে মনোনয়ন দেয়নি। বাধ্য হয়ে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীত্ব বেছে নিয়েছেন। শেখ হাসিনা কিংবা প্রবীন নেতারা দলীয় প্রার্থীর হয়েই প্রচার করবেন।

যে সব বিদেশি কোলাহলে মত্ত, তাঁরা বাংলাদেশকে চিনতে ভুল করেছেন, কখনো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সমুদ্র ঘেঁষা দেশটির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেননি, চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁদেরই অনুশাসন। ওই দাদাগিরি, নব উপনিবেশিকতার ওই ছায়া, বিলম্বিত হলেও বুঝতে পেরেছে যে, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে, বঙ্গবন্ধুর প্রবাদতুল্য ব্যক্তিকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ সমঝোতা সম্ভব নয়

আঁতাতের রাজনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিচয় অনেক দিনের, প্রায় ৫০ বছরের। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যা এবং জেলে প্রথমসারির নেতাদের হত্যার পর সামরিকতন্ত্র মাথা চাড়া দেয়। সামরিক শাসকদের অভিপ্রায়ে অসামরিক সরকার গড়ে উঠলেও, ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনগণের রায় নিয়ে কোনো সরকার ক্ষমতায় আসেনি।জিয়াউর রহমান থেকে হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ পর্যন্ত রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের দাবিতে লড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।তাঁদের লড়াই এর ভিতকে শক্তি যুগিয়েছে বহু দলীয় আঁতাত। এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে, জামাতের মতো কলঙ্কিত, পাকিস্তানপন্হী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে, এরশাদের একনায়কত্বের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। তখন থেকেই শাসকবিরোধী ও শাসকপন্থী ঐক্য জোটের আরম্ভ। ৯১ সালে, গণরায়ে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় চলে আসার পর ঐক্যজোটের সমীকরণ বদলে যায়। সরাসরি পাকিস্তানপন্থী কিংবা পরোক্ষ পাক সমর্থকরা বিএনপিকে সমর্থনের ঝান্ডা কাঁধে তুলে নেন। আর মুক্তিযুদ্ধের শরিক ও তাঁদের কোটি কোটি সন্তান বাংলাদেশ ও বাঙালি ভাবাদর্শকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগের বিস্তীর্ণ সমর্থনের ভিত্ হয়ে ওঠেন। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর পুঁজিতান্ত্রিক উন্নয়নকে উঁচিয়ে ধরতে চান তাঁরা। নিছক ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নয়, সব ধর্মাবলম্বীর প্রতি সুবিচার এবং সামাজিক বৈষম্যহীনতা প্রতিষ্ঠাই তাঁদের গন্তব্য। এখানেই শেখ মুজিবর রহমান আর তাঁর উত্তরসূরী শেখ হাসিনা গণবন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ। ‘বাকশাল’ গঠনের আগে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ কৃষি আর প্রযুক্তিতে একদিন জাপান হয়ে উঠবে। পাকিস্তানের জেল থেকে দেশে ফেরার দিন কয়েকের মধ্যে কলকাতায় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আয়োজিত নৈশভোজে বলেছিলেন, আর যুদ্ধ নয়, প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যে খরচ হয়, জনক্ষয় ঘটে, সে সব অর্থ আর জনসম্পদকে উন্নয়ণের কাজে ব্যবহার করতে হবে। যে পাকিস্তানি রাষ্ট্রশক্তি ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছে, ইজ্জত লুটেছে ৩ লাখ মহিলার তার প্রতিও অসূয়া ব্যক্ত করেননি বঙ্গবন্ধু।জড়িয়ে ধরেছিলেন ইসলামাবাদকে পরম ভালোবাসায়। বঙ্গবন্ধুর ওইসব উত্তরাধিকার নিয়েই শেখ হাসিনার সচেতন উত্থান আর অবস্থান। যা ঘোষিত এবং অভিপ্রেত। শেখ হাসিনা না চাইলেও মানুষের অভিপ্রায়ের মূল্য তাঁকে দিতে হবে। এটাই তাঁর সামাজিক, তাঁর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। এর বাইরে আওয়ামী লীগের এবং বাংলাদেশের টিঁকে থাকার রাস্তা নেই। শৃঙ্খল নয়, শৃঙ্খলা আর হিংসাহীন, সাম্প্রদায়িকতাহীন, সন্ত্রাসবাদহীন রাজনীতিই বাংলাদেশের ভবিষ্যত। এপথে এগোলেই উন্নয়ন লক্ষ্যচুত হবে না। শেখ হাসিনা নরম প্রকৃতির মহিলা। বাইরের আচরণে, সংলাপে, চিন্তায় সম্ভবত এককদর্শী নন, কিন্তু ভেতরে, তাঁর গহীনে সব হারানোর যে বেদনা তাঁর সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, সে বেদনা তাঁকে কঠোর থেকে কঠোরতর করে তুলেছে, নির্মোহ বিবেক, সাহস আর যুক্তি যুগিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর তফাৎ দেশভাগের পর থেকে জেলে জেলে দিন কেটেছে জননেতার। দেশ গড়ার সময়টুকু পাননি। পাকিস্তানি জেল যা পারেনি, তা তাঁকে সপরিবারে খুন করে দেশের গঠন ও পুনর্গঠনের শুরুতেই, কোন বিভৎস ইঙ্গিতে হাসিল করতে সক্ষম হল একদল দুর্বৃত্ত। এদের যারা প্রশ্রয় দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে স্বদেশে ও বিদেশে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি। করবে না। অপ্রিয় সত্য, স্বদেশের উন্নয়ণের ইচ্ছা আর প্রতিশোধের জাতীয় স্পৃহাকে পূর্ণ করার দায় বইতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অঙ্গীকার নয়, সামাজিক সঙ্কল্পের অপরিহার্য অঙ্গ আর প্রত্যঙ্গ। এখানে ব্যর্থতা মানেই বাংলাদেশের অস্তিত্বে, তার সমূহ উন্নয়ণের সূচিতে ঘুণপোকাকে মেনে নেওয়া।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কী রায় জানাবে বঙ্গের সবচেয়ে বলবান সমতট, তা জানার আগ্রহ রইল। কার ক্ষমতায় থাকা উচিত, দেশ পরিচালনায় কার অবস্থান মানতে হবে, এসব প্রশ্ন বাংলাদেশের বাইরের কোনো ভোট বিশেষজ্ঞের রায় হতে পারে না। মতামত জানাবে বাংলাদেশের মানুষ, রায় দেবে ওখানকার মানব প্রকৃতি

ঘুণপোকাদের যারা সহ্য করছে আর করবে, জনরোষ তাদের তৃণসম দহন করবে। সুষ্ঠ নির্বাচন আর তদারকি সরকারের দাবিতে যে সব বিদেশি কোলাহলে মত্ত, তাঁরা বাংলাদেশকে চিনতে ভুল করেছেন, কখনো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সমুদ্র ঘেঁষা দেশটির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেননি, চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁদেরই অনুশাসন। ওই দাদাগিরি, নব উপনিবেশিকতার ওই ছায়া, বিলম্বিত হলেও বুঝতে পেরেছে যে, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে, বঙ্গবন্ধুর প্রবাদতুল্য ব্যক্তিকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ সমঝোতা সম্ভব নয়।বাঙালির চিরায়ত সাধানাকে গুরুত্ব দিতেই হবে।আসন্ন নির্বাচনের এটাও এক প্রতীকার্থক সঙ্কেত। এ সঙ্কেতের নির্দেশ কী? বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানো চলবে না। বাংলাদেশই তার ভাগ্যরেখা আঁকবে। উন্নয়নকামী আর উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের মতো তার নিজস্ব নিয়ম তৈরি করবে। শেখ হাসিনার নীতি আর কৌশল বিশ্বকে স্বীকার করতে বাধ্য করেছে যে, নির্বিশেষের সমূহ উন্নতি আর সাবলম্বন তাঁর বিকল্পহীন গন্তব্য। এখানে আপোস নেই। নেই কোনো সমঝোতা। আপোসকামিতা মানেই বাংলাদেশের অস্তিত্বের পরাজয়। এরকম পরাজয়কে থমকে দেওয়ার সবচেয়ে বড়ো শক্তি কী? বৈষম্যহীন গণতন্ত্র, বিভেদহীন উন্নয়ণ আর অসাম্প্রদায়িকতার সজল কৃষিকর্ম নয় কি ? স্বকর্মের, সদিচ্ছার মধ্যপাঠেও শেখ হাসিনা সফল। স্বীকার করেছেন বড়ো বড়ো সমাজবিজ্ঞানীও অর্থশাস্ত্রীরা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কী রায় জানাবে বঙ্গের সবচেয়ে বলবান সমতট, তা জানার আগ্রহ রইল। কার ক্ষমতায় থাকা উচিত, দেশ পরিচালনায় কার অবস্থান মানতে হবে, এসব প্রশ্ন বাংলাদেশের বাইরের কোনো দেশের, কোনো ভোট বিশেষজ্ঞের রায় হতে পারে না। মতামত জানাবে বাংলাদেশের মানুষ, রায় দেবে ওখানকার মানব প্রকৃতি। আমরা শুধু বলব ভোটের গতি কোন দিকে, পাল তুলবে কে? আবহমানের নৌকা ! না অরাজকতা আর উপদ্রবের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শক্তি ? তৃতীয় শক্তি বুঝে গেছে, পরাজয় অনিবার্য। দ্বিতীয় শক্তি ছন্নছাড়া, নেতৃত্বহীন।শোরগোল রচনা করেই তারা ক্লান্ত। আওয়ামী লীগ জলমেপে দেখে নিয়েছে, ঐক্য জোটের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রেখেই স্বমহিমার ওপর ভর করে ভোটে লড়তে হবে। জিততেও হবে। এরশাদহীন জাতীয় পার্টি তরীর মতো ভাসছে। উত্তরবঙ্গে তাদের ভিত্ আছে। সে ভিত সংসদে ভিড় বাড়াবে কতটা, ছবিটি পরিষ্কার নয়।উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ কেউ জিততে পারেন। জাতীয় পার্টি আর নির্দলীয়দের আশু সমন্বয় অবশ্যই বিরোধী আসনে বসবে। পিরিত্ থাকবে, রীতি একটু বদলাবে। আর দুরবিন দিয়ে খুঁজতে হবে জামাত আর বিএনপির রুদ্ধ ও স্বনির্বাসিত নেতৃত্বকে। এই মুহূর্তে এরকম আভাসই মিলছে। জল্পনা আর অনুমান সত্য হলে, প্রধানমন্ত্রীর পদে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন অনিবার্য।রক্তস্নাত, সজল বাংলাদেশে যা প্রত্যাশিত, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, এমন কি পশ্চিমের বহু দেশের সামনে তা গণতন্ত্রের আরেক বিস্ময় তৈরি করবে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!