শিবভোলার দেশ শিবখোলা
শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।
বাঙালির ইতিহাস- প্রেমিক গৌরকিশোর ঘোষকে, বহুমাত্রিক স্রষ্টা গৌরকিশোরকে, স্বাধীন চিন্তার দুঃসাহসী প্রবক্তা গৌরকে ভুলবে না। ভুলতে পারে না। শতবর্ষের শতবর্ষেও তাঁর স্মৃতির প্রত্যাবর্তন অপ্রতিরোধ্য।
চিত্র: সংগৃহীত
প্রবাদপ্রতিম সাংবাদিক আর বহুমাত্রিক লেখক গৌরকিশোর ঘোষ-এর শতবর্ষের যাত্রা শুরু হল । তাঁর এ প্রজন্মের অনুরাগী, গুণমুগ্ধ পাঠক ও আত্মার একান্ত আত্মীয়রা শতবর্ষ উদযাপনের প্রথম সভায় মিলিত হবেন, আজ সন্ধ্যা ৬ টায়। রবীন্দ্রসদনে। গৌরকিশোর শতবর্ষ বক্তৃতা দেবেন ঐতিহাসিক সুগত বসু। ‘মনুষ্যত্বের সন্ধানে’ শীর্ষক বক্তৃতায় বলবেন গৌরকিশোরের মুক্তচিন্তার সহজসঙ্গী মেধা পাটেকর। স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করবেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী আর নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু। এ অনুষ্ঠানেই দেখানো হবে শৈবাল মিত্র পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘রূপদর্শী’।
অখণ্ড বাঙালির আধুনিক চিন্তা-ভাবনার অন্যতম রূপকার ছিলেন গৌরকিশোর । তাঁর জীবদ্দশায় মিথ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে তাঁর সমকালের ভাবুক আর সমাজকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষক হয়ে উঠেছিল গৌরকিশোরের আবরণহীন সহজিয়া স্বাতন্ত্র্য। শৈশবের দারিদ্র, উঠতি যৌবনের সংগ্রাম, প্রশ্ন প্রবণতা হৃদ্ধ করে তোলে গৌরকিশোরকে। লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে লেখা এক চিঠিতে কমলকুমার মজুমদার বলেছিলেন, আজ গৌর এসেছিল। ওঁর মতো আধুনিক বাঙালি খুঁজে পাওয়া, এই সময়ে কঠিন। একজন ব্যক্তি বহুদর্শী প্রেমের কত বড়ো রূপদর্শী হতে পারেন, গৌরকিশোর মনন আর উচ্চারণ তাঁর অনির্বাণ দৃষ্টান্ত। বাঙালি তাঁকে ভুলবে না। তাঁর শতবর্ষ উদযাপনের শুরুতেই জাতিসত্ত্বা এ-অঙ্গীকারকে, বিভিন্ন সাংগঠনিক ভাবনা আর কর্মকে, লেখার চালচিত্রকে, কর্মের ধারণাকে স্মরণ করতে প্রস্তুত।বিদ্যাসাগরের মতো সহজ দিনযাপন আর চিন্তাভাবনায় মানবেন্দ্রনাথ রায়-এর মতো জিজ্ঞাসু গৌরকিশোর একসময় তাঁর সামসাময়িক কিংবা অগ্রজ অন্নদাশঙ্কর রায়, আবুসয়ীদ আয়ুব, শিবনারায়ন রায়, জহুর হোসেন চৌধুরী, অম্লান দত্ত, গৌরী আয়ুব, অশীন দাশগুপ্ত , হোসেনুর রাহমান, কমলকুমার মজুমদার, সন্তোষ কুমার ঘোষ, বুদ্ধদেব বসু, প্রতিভা বসু, আনিসুজ্জামান এরকম বহু গুনীর সান্নিধ্যে এসে নিজেকে বহুর ভেতরে ও বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
গৌরকিশোর এমন এক প্রাণচঞ্চল জলধারা যে কখনও অন্তঃস্রোতের সঙ্গী কখনও বা বহিঃস্রোতের অট্টহাসির স্বাধীনতায় ফেটে পড়া যৌবন। বাঙালির ইতিহাস- প্রেমিক গৌরকিশোর ঘোষকে, বহুমাত্রিক স্রষ্টা গৌরকিশোরকে, স্বাধীন চিন্তার দুঃসাহসী প্রবক্তা গৌরকে ভুলবে না। ভুলতে পারে না। শতবর্ষের শতবর্ষেও তাঁর স্মৃতির প্রত্যাবর্তন অপ্রতিরোধ্য।
গৌরকিশোরের জন্ম অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলার গোপালপুর গ্রামে। ২০ জুন ১৯২৩ সালে। লেখাপড়া নবদ্বীপে, ওখান থেকেই ১৯৪৫ সালে আইএসসিতে উত্তীর্ণ। পরীক্ষায় তাঁর তথাকথিত সাফল্য আমাদের জানা নেই। তাঁর প্রতিভা যে জন্মগত, মুক্তচিন্তা যে স্বতঃস্ফূর্ত, আপোসহীন এবং প্রতিভার বিকিরণ যে স্তরে স্তরে কালানুক্রমিক, অগতানুগতিক তা অজানা হয়ে রইল না। কখনও ইলেকট্রিশিয়ান, ফ্রিটার মিস্ত্রি, কখনও রেস্তোরার ওয়েটার, শ্রমিক সংগঠনের সর্বক্ষণের ভ্রাম্যমান কর্মী, কখনও প্রুফ রিডার, সীমান্তে কাস্টমক্লার্ক— এরকম নানা পেশায় জড়িয়ে থাকার ভুখা ও লড়াকু অভিজ্ঞতা লেখক জীবনে, সাংবাদিকতায় উন্মোচিত হতে থাকে বহুপর্বে। গৌরকিশোরের অন্যতম সেরা কীর্তি আজকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠা। একদল তরুণ, উজ্জ্বল নবিশদের নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন চিন্তার সংবাদপত্রের সূচনা করে যে প্রতিস্পর্ধা, যে উদ্ভাবনা আর না দেখা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি, তা ভারতীয় সাংবাদিকতায়, আধুনিক চিন্তার রূপায়নে এ-এক অবিস্মরণীয় পদক্ষেপ। আজকালের শুরুতেই তরুণ সহকর্মীদের দিয়ে প্রতিসপ্তাহে কলম, উপসম্পাদকীয় লিখিয়েছিলেন । অন্য ভাষার প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকদের আজকালের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিলেন হামদি-বে-এর মতো বাংলাভাষা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবহিত অথচ তীক্ষ্ণ এনসাইউক্লোপিডিয়াকে দৈনন্দিন সংবাদের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব অর্পন করে যে যুক্তিময় বাস্তবকে, প্রতিদিনের সংবাদনামায় সংশ্লিষ্ট করেছিলেন তা অতুলনীয় এবং দূরদৃষ্টিময়।গত শতাব্দীর আশির দশকে তরুণ সহকর্মীদের গৌরকিশোর বলেছিলেন, সংবাদপত্রকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে। ভবিষ্যতে তার নিত্য প্রয়োজনীয় পরিসরকে গ্রাস করতে চাইবে বৈদ্যুতিন মাধ্যম ও তৎসংশ্লিষ্ট নানা অভিমুখ। এক্ষেত্রে তদন্তমূলক আর বিশ্লেষণাত্মক সাংবাদিকতাকে রপ্ত করতে হবে। এই দুয়ের মিলিত প্রতিচ্ছবির দিকে চারদশক আগেই মুগ্ধ নয়নে তাকাতে হয়েছিল পাঠকদের।
বাংলা উপন্যাস, গল্প আর রম্যরচনায় গৌরকিশোর নবীন পথের যাত্রী। গদ্যে, গল্পের নির্মাণে সূক্ষ্ণ নাগরিক আর মধ্যবিত্তের প্রতিদিনের ভাবনা-চিন্তার আপোসহীন সঙ্গী এবং দুঃখবোধের সহমর্মী স্থপতি। রম্যরচনায় সৈয়দ মুজতবা আলী অথবা রাজশেখর বসুর জগতে পা দেননি।ব্যক্তিগত আর সামাজিক চালচিত্র অবলম্বন করে, নৈর্ব্যক্তিক কৌশলে সময়ের প্রতিবিম্ব তৈরি করেছিলেন জাগতিকতার রূপদর্শী। দেশভাগ নিয়ে, সমাজের পারস্পরিক অপরিচয় নিয়ে তাঁর ত্রিস্তর দুঃখ ছিল। প্রকাশ ঘটল ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘প্রেম নেই’ আর অসমাপ্ত উপন্যাস ‘প্রতিবেশীতে’। গৌরকিশোর সম্ভবত ভাবতেন, প্রেমের বহুরূপ তাঁর আবেগ আর যুক্তির মহোত্তম উৎস। ওই ভাবনার অভূতপূর্ব বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে ‘সাগিনা মাহাতো’, ‘আমরা যেখানে’, ‘একধরণের বিপন্নতা’ উপন্যাসে এবং ‘বুড়োর প্রেম বড়ো এলোমেলো’ গল্পে।
গৌরকিশোর এমন এক প্রাণচঞ্চল জলধারা যে কখনও অন্তঃস্রোতের সঙ্গী কখনও বা বহিঃস্রোতের অট্টহাসির স্বাধীনতায় ফেটে পড়া যৌবন। বাঙালির ইতিহাস- প্রেমিক গৌরকিশোর ঘোষকে, বহুমাত্রিক স্রষ্টা গৌরকিশোরকে, স্বাধীন চিন্তার দুঃসাহসী প্রবক্তা গৌরকে ভুলবে না। ভুলতে পারে না। শতবর্ষের শতবর্ষেও তাঁর স্মৃতির প্রত্যাবর্তন অপ্রতিরোধ্য। শাশ্বতের রূপকার, প্রেমিক আর দুঃসাধ্যের সাধককে তাঁর জন্মশতবর্ষের শুরুতে আমাদের বিনম্র নমস্কার। আমরা তাঁর কাছে ঋণী। মুক্ত চিন্তাকে কীভাবে লালন করতে হয়, সামাজিক কুৎসিতের বিরুদ্ধে কখন দুঃসাহসে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়, পাগল আর সাধকের ভাবনা কোন আলোকস্পর্শে জড়ো করে এগোতে হয়, সে-সব আলোকে বারবার স্নাত, পরিশুদ্ধ হতে হবে আমাদের । তাকাতে হবে তাঁর সাবলম্বী চিন্তা আর সহজাত যাপনের দিকে ।
শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।
সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।
মিরিক নামটি এসেছে লেপচা ভাষার “মির-ইওক” শব্দ থেকে, যার অর্থ আগুনে পুড়ে যাওয়া জায়গা।
15:34