- এই মুহূর্তে দে । শ
- ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫
লোকসভা ভাষণে চিনের প্রশংসা রাহুল গান্ধীর! ‘বিকৃত তথ্য দিয়েছেন’ — স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের

সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর, ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন আলোচনা’য় একাধিকবার চিনের প্রসঙ্গ তোলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সে নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। ‘বিকৃত তথ্য দিয়েছেন’ — স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের। গেরুয়া শিবিরের নেতা সম্বিত পাত্র তাঁকে কটাক্ষ করে ‘রাহুল জিনপিং’ বলেন।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে লোকসভাইয় স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ ভারতীয় জনতা পার্টির। মঙ্গলবার এই অভিযোগ এনেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর অভিযোগ, ‘লোকসভায় বিকৃত তথ্য উল্লেখ করেছেন বিরোধী দলনেতা।’ দুবে এ দিন লোকসভায় নিজের ভাষণে বলেন, ‘ঐতিহাসিক তথ্য নির্লজ্জের তো বিকৃত করেছেন। সেখানেই থেমে থাকেননি বিরোধী দলনেতা, দেশকে উপহাস করার চেষ্টা করেছেন। প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছেন।’ এই মর্মে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে একটি চিঠিও দিয়েছেন তিনি।
সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর, ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন আলোচনা’য় একাধিকবার চিনের প্রসঙ্গ তোলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সে নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। সেখানে রাহুল যতবার চিনের নাম উল্লেখ করেছেন ততবার সেখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মালব্য লিখেছেন, ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে রাহুল গান্ধী অন্তত ৩৪ বার চিন শব্দটি উল্লেখ করেছেন। নিজের ভাষণে এদিন একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর দাবি, ভারতীয় ভূ-খণ্ডে চিনা আগ্রাস্ন রুখতে ব্যর্থ বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী অস্বীকার করেছেন যে চিনা বাহিনী আমাদের ভূখণ্ডের ভিতরে রয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী চিনাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে চলেছে। ভারতের সেনাপ্রধানও মেনে নিয়েছেন যে আগ্রাসী চিনা সৈন্যরা আমাদের ভূখণ্ডের ভিতরে রয়েছে।’ রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ মিথ্যা বলে গর্জে উঠেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘শ্রী রাহুল গান্ধী তাঁর ভাষণে সেনাপ্রধানের নামে যে কথাগুলি চালাচ্ছেন, সে কথাগুলি সেনাপ্রধান কখনো বলেননি। এটা গভীর দুঃখের বিষয় যে শ্রী রাহুল গান্ধীর জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাব রয়েছে। আরো দায়িত্ববোধ নিয়ে তাঁর রাজনীতি করা উচিত।’ কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসনের ইতিহাসকে কটাক্ষ করে দুঁদে বিজেপি নেতার মন্তব্য, ‘যদি আদৌ ভারতীয় কোনো ভূখণ্ড চিনের দখলে থাকে, তবে তা ১৯৬২ সালের সংঘাতের ফলেই হয়েচ্ছে। সে সময় আকসাই চিনে ৩৮,০০০ বর্গ কিমি জমি হাতছাড়া হয়েছিল ভারতের। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান অবৈধভাবে চিনকে ৫,১৮০ বর্গ কিমি জায়গা দেয়। ইতিহাসের ঘটনা তিনি ভুলে গেছেন, মনে করিয়ে দিলাম। এখন আত্মসমালোচনার কথা ভাবতে পারেন।’
এছাড়াও রাহুল গান্ধী বলেন, ট্রাম্পের শপথগ্রহণে যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তা নিশ্চিত করতে একাধিকবার বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করকে সে দেশে পাঠানো হয়েছিল, তবুও কাজ হয় নি। তাঁর মন্তব্য, দেশে উৎপাদনে পিছিয়ে না থাকলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নাকি নিজে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতেন। এরপর দেশের উৎপাদন ক্ষেত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গেই গান্ধী জানিয়েছিলেন, চিন কমপক্ষে ১০ বছর এগিয়ে আছে এই উৎপাদন ক্ষেত্রে। ব্যাটারি, রোবট, মোটর সহ নানা ক্ষেত্র নিয়ে চিন কাজ করছে। গত ১০ বছর ধরে তারা এই সব নিয়ে কাজ করছে। আমরা এ কাজে অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছি। এখন মানুষ এআইয়ের কথা বলেন। কিন্তু তথ্য ছাড়া এআইয়ের কোনও মানে হয় না। আর আমরা যদি তথ্যের দিকে তাকাই সেখানে একটা বিষয় খুব পরিস্কার। এই তথ্য কাজে লাগে ফোন তৈরির ক্ষেত্রে, এই তথ্য কাজে লাগে ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে। আর ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে যে ডেটা তার প্রায় সবটারই মালিক হল চিন। আর পরিষেবা সংক্রান্ত যে ডেটা তার মালিক হল আমেরিকা।’ তবে প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের প্রশংসা করতে দেখা যায় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা একটা ভালো আইডিয়া। আর তার ফল তো আপনাদের সামনেই হাজির। উৎপাদনক্ষেত্রে জিডিপি ১৫.৩ শতাংশ ছিল ২০১৪ সালে। সেটা আরও নেমে গিয়ে হয়েছে ১২.৬ শতাংশ। ৬০ বছরে এটা সর্বনিম্ন।’ আত্মনির্ভর ভারত’- এর সমালোচনায় তিনি বলেছেন, ‘যদি ভবিষ্যতে ভারত-চিন যুদ্ধ বাধে, তাহলে ভারতকে চিনের তৈরি মোটর, ব্যাটারি ও অপটিক্স ব্যবহার করেই লড়তে হবে। কারণ, ভারতের আমদানি নির্ভরতা এতটাই বেশি যে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পও চিনা পণ্যের বিকল্প তৈরি করতে পারেনি।’ দেশে চলমান বেকারত্বের সমস্যা নিয়েও সরব হন।
রাহুল গান্ধীর ভাষনের পরে তীব্র বিরোধিতা শুরু করে গেরুয়া শিবির। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘লোকসভার বিরোধী দলনেতা বিকৃত তথ্য পেশ করছেন। মিথ্যাচার করছেন। ভারতীয় বিদেশনীতির ক্ষেত্রে অন্তত বিরোধীদের সরকারের সঙ্গে একমত হওয়া উচিত। হয় তাঁকে প্রমাণ দিতে হবে অথবা ক্ষমা চাইতে হবে।’ অন্যদিকে রাহুলের মন্তব্যে ক্ষিপ্ত বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। নিজের এক্স হ্যান্ডল পোস্ট করে তিনি বলেন, ‘আমি বাইডেন প্রশাসনের সেক্রেটারি অফ স্টেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। কনসাল জেনারেলদের একটি মিটিংও ছিল। আমার থাকার সময়ে হবু জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও আমার সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যান না। সাধারণত এমন অনুষ্ঠানে ভারত বিশেষ প্রতিনিধি পাঠায়।’
বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র, সম্বিত পাত্র তাঁকে কটাক্ষ করে ‘রাহুল জিনপিং’ বলেছেন। ‘আমি ওঁকে ‘রাহুল জিনপিং’ বলেই সম্বোধন করতে চাই। উনি ৪৫ মিনিটের ভাষণে ৩৪ বার চিনের নাম নিয়েছেন। হয়তো তিনি মনে মনে এই প্রার্থনাই করছেন যাতে, পরের জন্মে যেন চিনেই জন্ম নিতে পারেন।’ মন্তব্য করেন তিনি।
❤ Support Us