- এই মুহূর্তে দে । শ
- অক্টোবর ১৬, ২০২৩
তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচন : মেয়েদের বিয়ের সময় দেওয়া হবে ১০ গ্রাম সোনা, ১ লাখ নগদ ! কংগ্রেস নিয়ে আসতে চলেছে “মহালক্ষ্মী” প্রকল্প

ভারত থেকে কি স্থায়ী উন্নয়নের রাজনীতি উবে যাচ্ছে? তুষ্টিকরণের রাজনীতি কী ভারতীয় রাজনীতির ভিত্তি হয়ে দাঁড়াচ্ছে? ভোট এলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সম্বলিত নির্বাচনী ইস্তেহারে সেটাই এখন দেখা যায়। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হতেই তেলাঙ্গানার নির্বাচনী রাজনৈতিক পরিসরে তুষ্টিকরণের প্রবল দাপট নজরে পড়ছে। এই আবহেই নিজেদের ইস্তাহারে বড় বড় সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি। তেলেঙ্গানায় ইতিমধ্যেই ৪০০ টাকায় গ্যাস, মাসিক ৫০০০ টাকা ভাতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিআরএস। কেসিআর-এর দলকে টেক্কা দিতে এবার আরও বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পথে কংগ্রেস। কংগ্রেস ঠিক করেছে ১ লক্ষ টাকার সঙ্গে ১০ গ্রাম সোনা দেওয়া হবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের তরুণীদের বিয়ের সময়। তবে কেসিআর ইতিমধ্যেই ১.১৬ লক্ষ টাকা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের তরুণীদের বিয়ের সময় দেওয়া হচ্ছে তেলেঙ্গানায়। কংগ্রেস এই টাকার সঙ্গে বাড়তি ১০ গ্রাম সোনা দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে চলেছে তাদের তেলেঙ্গানার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে। কেসিআর এবং কংগ্রেসের এই পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসা বা ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমাজকর্মীরা বলছেন, এর ফলে বাল্য বিবাহ বাড়বে। সরকারের থেকে নগদ পাওয়ার আশায় বাবা-মায়েরা নিজেদের মেয়েকে আগেই বিয়ে দিয়ে দেবে। এমনকী অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিতে ভুয়ো পরিচপত্রও বানানোর সংখ্যা বাড়বে, এমনিতেই তেলাঙ্গানায় অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ের জন্য ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি হয়।
তেলাঙ্গানা গঠনের পর থেকেই সেই রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেছেন কেসিআর। কয়েক মাস আগে নিজের দলের নাম বদলে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সমিতি রেখেছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল, বিজেপি বিরোধী তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ে তোলা। তবে তাতে ব্যর্থ হয়েছেন কেসিআর। এখন তাঁর লক্ষ্য তেলাঙ্গানায় ক্ষমতা ধরে রাখা। আর কেসিআর-এর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে চাইছে কংগ্রেস।
তেলাঙ্গানার রাজনীতিতে বিগত কয়েক বছর ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল কেসিআর-এর। নয়া রাজ্য গঠনের পর কংগ্রেস প্রায় অস্তিত্বহীনতায় ভুগেছে এই রাজ্যে। বিজেপি আবার এই রাজ্যে ধীরে ধীরে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছে। এই আবহে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে তেলাঙ্গানায়। এই আবহে বিআরএস বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে ইস্তাহার। সেই ইস্তাহারকে টেক্কা দিতে নতুন অঙ্ক কষছে কংগ্রেস।
জানা গিয়েছে, তেলাঙ্গানায় নিজেদের নির্বাচনী ইস্তাহারে কংগ্রেস মহিলাদের জন্য বড় প্রতিশ্রুতি দিতে চলেছে। তেলেঙ্গানায় বিয়ের সময় অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল এবং সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির তরুণীদের ১ লাখ টাকা নগদ এবং ১০ গ্রাম করে সোনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে চলেছে কংগ্রেস। এর জন্য সরকারে এলে “মহালক্ষী” নামক স্কিম চালু করবে কংগ্রেস, এমনই প্রচার চালাচ্ছে কংগ্রেস।
বর্তমানে তেলাঙ্গানায় অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল এবং সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির তরুণীদের বিয়ের সময় ১.১৬ লাখ টাকা দিয়ে থাকে সরকার। প্রায় সেই পরিমাণ অর্থের সঙ্গে ১০ গ্রাম সোনা অতিরিক্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইস্তেহারে দিতে চলেছে কংগ্রেস।
এদিকে বিআরএস-এর নির্বাচনী ইস্তাহারে একাধিক জনমুখী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেসিআর। তেলাঙ্গানার শাসক দলের প্রতিশ্রুতি, ক্ষমতায় এলে ৪০০ টাকায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেবে তাদের সরকার। এছাড়া মহিলা, প্রবীণ নাগরিক, কৃষকদের আরও বেশি আর্থিক সাহায্য করবে তারা। ১৫ লাখ টাকার সরকারি স্বাস্থ্য বিমার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী ইস্তাহারে।
রবিবার তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও জানিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা প্রতিটি পরিবারকে মাত্র ৪০০ টাকা রান্নার গ্যাস দেওয়া হবে। এদিকে ইস্তাহারে দাবি করা হয়েছে, দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা প্রায় ৯৩ লাখ পরিবারকে ইতিমধ্যেই “কেসিআর বিমা”-র আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত এই স্কিমে বিমার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে পুরো ১০০ শতাংশ প্রিমিয়াম দেবে সরকার। এদিকে কৃষকদের বার্ষিক ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেসিআর।
এদিকে সরকারে এলে ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে থেকে তেলাঙ্গানা অন্নপূর্ণা প্রকল্পের আওতায় সমস্ত রেশন কার্ডধারীদের চাল প্রদান করা হবে বলে ইস্তাহারে দাবি করেছে বিআরএস। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় প্রবীণ নাগরিক এবং মহিলাদের মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত করা হবে। আপাতত ভাতা বাবদ এই প্রকল্পে মাসে ২,০১৬ টাকা প্রদান করা হয়। সরকারে এলে আগামী বছর ভাতা বাড়িয়ে ৩,০১৬ টাকা করা হবে বলে জানিয়েছেন কেসিআর। পরে তা ৫ হাজার টাকা করা হবে। এদিকে বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হবে।
রাজনৈতিক দলগুলির স্থায়ী উন্নয়নের পরিবর্তে এখন নজর পড়েছে মানুষের ছোট ছোট চাহিদা পূরণের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিকে ধরে রাখা, শক্তি বৃদ্ধি করা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার দিকে। এসব তুষ্টিকরণের রাজনীতি ক্রমেই ভারতীয় রাজনীতির নেতাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার হয়ে উঠছে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “লক্ষ্মীর ভান্ডার” চালু করেছিলেন মহিলাদের জন্য। এই লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলকে বিপুল ডিভিডেন্ড দিয়েছিল সেই ভোটে। তিনি ২০২১ সালে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেই চালু করেছেন লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে মহিলাদের ব্যাঙ্কে সরাসরি টাকা পাঠান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পকে প্রথমে বিজেপি ভিক্ষা বলে সমালোচনা করলেও এখন বাংলার বিজেপি নেতারা বলছেন, তারা বাংলায় ক্ষমতায় এলে মহিলাদের ৫০০/১০০০ নয়, ২০০০ টাকা লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা হিসেবে সব মহিলাদের দেবে।
❤ Support Us