Advertisement
  • প্রচ্ছদ রচনা মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
  • আগস্ট ২২, ২০২২

থেমে যাবে ক্রিকেটজীবন?‌ ঝুলনকে নিয়ে চর্চা শুরু

২৪ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসে একদিনের সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলবে ভারত। অনেকের ধারণা, ওটাই হয়তো শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ঝুলনের।

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
থেমে যাবে ক্রিকেটজীবন?‌ ঝুলনকে নিয়ে চর্চা শুরু

একসময় চাকদার লালপুর ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠে ছেলেদের সাথে বল হাতে দাপিয়ে বেড়াতেন। সেখান থেকে অনেক বাধা–বিপত্তি, চড়াই–উৎরাই পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠা। ভেঙেছেন একের পর ভেঙেছেন রেকর্ড। স্পর্শ করেছেন একটার পর একটা মাইলস্টোন। ক্রিকেট থেকে অনেক কিছুই পেয়েছেন ঝুলন গোস্বামী। তাহলে এবার কি ক্রিকেট জীবনের পরিসমাপ্তি ? ইতিমধ্যেই প্রশ্নটা উঠে গেছে।

এবছর সেপ্টেম্বরে একদিনের সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারতীয় মহিলা দল। চোট সারিয়ে দীর্ঘদিন পর আবার দলে ফিরে এসেছেন ঝুলন। শেষ খেলেছিলেন এবছর মার্চে একদিনের বিশ্বকাপে। যদিও চোটের জন্য সেমিফাইনালে মাঠে নামতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে দলে ছিলেন না। অনেকেই ভেবেছিলেন, সতীর্থ মিতালি রাজের মতোই হয়তো অবসরের পথে হাঁটবেন ৩৯ বছর বয়সী এই জোরে বোলার। কিন্তু চোট সারিয়ে বাংলার অনুশীলনে যোগ দেওয়াটা অন্য ইঙ্গিত দিয়ে গেছে। তাঁকে বাংলার মহিলা দলের মেন্টরের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তবে এখনই ব্যাট–বল তুলে রাখার ইচ্ছে নেই ঝুলনের।

২৪ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসে একদিনের সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলবে ভারত। অনেকের ধারণা, ওটাই হয়তো শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ঝুলনের। সেদিনই অবসর ঘোষণা করে দিতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এমন খবরও প্রকাশিত হয়। ঝুলন অবশ্য পরিষ্কার জানান, ‘আমি এখনও খেলতে চাই। তবে বোর্ড যদি অবসর নিতে বলে, তাহলে নিয়ে নেব। কোনও নির্বাচক কিংবা বোর্ড কর্তার কাছ থেকে এখনও এই ধরণের প্রস্তাব পাইনি। নির্বাচক, বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই অবসর নেব। যেদিন অবসর নেব, সবাইকে জানিয়েই নেব।’‌ লর্ডসেই যে শেষ ম্যাচ খেলবেন, এ ব্যাপারেও কিছু জানেন না। দাবি ঝুলনের। আগামী বছর মেয়েদের আইপিএল হবে। সেই প্রতিযোগিতাতেও খেলতে চান ঝুলন।

২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঝুলনের। এখনও পর্যন্ত দেশের হয়ে খেলেছেন ১২টি টেস্ট, ২০১টি একদিনের ম্যাচ ও ৬৮টি টি২০ ম্যাচ। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে ২৫২ উইকেট। মহিলাদের ক্রিকেটে এই ফরম্যাটে একমাত্র তাঁরই ২০০–র বেশি উইকেট রয়েছে।

তাঁর ক্রিকেট খেলা নিয়ে একসময় অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে ঝুলনের পরিবারকে। ‘‌প্যান্ট পরে ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছে আপনাদের বাড়ির মেয়ে।’‌ পাড়ার লোকেরা এমন অভিযোগ করতেন। ঝুলনের ঠাকুমা মুখের ওপর জবাব দিতেন, ‘‌প্যান্ট পরে ক্রিকেট খেলবে না তো শাড়ি পরে খেলবে?’‌ সমালোচনা দমিয়ে রাখতে পারেনি ঝুলন গোস্বামীকে।
ঝুলনকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে বায়োপিক, ‘‌চাকদা এক্সপ্রেস’‌। তাঁর সৌজন্যে বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে পড়ছে চাকদার নাম। গর্বিত গোস্বামী পরিবার। ক্রিকেটের জন্য একসময় দারুণ লড়াই করতে হয়েছে ঝুলনকে। সবার অলক্ষ্যে পালিয়ে যাবেন বলে, দুপুরে গেটে তালা দিয়ে রাখতেন বাবা–মা। প্রাচীর টপকে পালিয়ে যেতেন ঝুলন। খেলে আবার সন্ধেয় ফিরে আসতেন। খেলার প্রতি ওর আগ্রহ দেখে পরে আর কিছু বলতেন না বাবা–মা। ছেলেদের সঙ্গে বাইরেও ম্যাচ খেলতে যেতেন।

পরে আসল লড়াই শুরু। প্রতিদিন ভোরের ট্রেন ধরে কলকাতায় প্র্যাক্টিসে যাওয়া। ফিরতে ফিরতে সেই বিকেল। মাঝে মাঝে সঙ্গে যেতেন মা ঝর্ণা গোস্বামী। মা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পেরে তিনি গর্বিত। বলেছিলেন, ‘‌ঝুলন আজ মেয়েদের কাছে রোল মডেল। ভাবলেই গর্ব হয়। ওকে দেখে চাকদার মতো মফস্বলের মেয়েরা ক্রিকেটে এগিয়ে আসছে। আজ মনে হচ্ছে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। একজন মা হিসেবে চাইব, অন্য মায়েরাও এভাবে মেয়েদের এগিয়ে দিক।’‌


❤ Support Us
error: Content is protected !!