Advertisement
  • টে | ক | স | ই প্রচ্ছদ রচনা
  • এপ্রিল ৩, ২০২৩

মোবাইলের ৫০ বছর, ফিরে দেখা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
মোবাইলের ৫০ বছর,  ফিরে দেখা

আজকের আধুনিক পৃথিবী মোবাইল ছাড়া একদমই অচল। দূরের মানুষের সঙ্গে কথা বলা তো বটেই, চিঠি লেখা, ব্যাঙ্কিং, বিল পেমেণ্ট, উচ্চ মানের ছবি তোলা, গান শোনা, সিনেমা দেখা– মুঠোফোনের দৌলতে সবই যেন খুব সহজ।। কিন্তু সূচনাটা এরকম ছিল না। বেশ সরল প্রযুক্তি নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল আজকের স্মার্ট ফোন। বর্তমানে প্রত্যেক ফোন কোম্পানি একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত কে কত উন্নতমানের মোবাইল কত কম দামে গ্রাহকের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু প্রথম দিকে বাজারে আসা মোবাইলের দাম শুনলে আজকের মানুষ ভিরমি খাবেন। ১৯৭৩ সালে একটি সেলুলার ফোনের দাম ছিল মার্কিন মুদ্রায় ১১,৭০০ ডলার।

একথা এখন সর্বজনবিদিত যে, আজকে আমরা যে মোবাইল ব্যবহার করি তাঁর জনক হলেন মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন , আজকে যে মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে সে সময়ের প্রথম আবিষ্কৃত ফোনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পার্থক্য অনেকটাই। তাঁর কথায় তখনকার ফোন শুধু কথা বলার জন্য তৈরি হয়েছিল। ফোনের কীপ্যাডে নম্বর ডায়াল করলে অন্য প্রান্তে থাকা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেত । আজকের ফোনের মতো, ক্যামেরায় ছবি তোলা, বার্তা পাঠানো বা গান শোনা ও ছবি দেখার বিকল্প সেক্ষেত্রে ছিল না। কুপার বলেন, মোটারোলা কোম্পানিতে যখন তিনি কাজ করতেন সে সময় তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে বেল কোম্পানিও বাজারে মোবাইল আনার ব্যাপারে গবেষণার কাজে যুক্ত ছিল। ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল যখন প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি করলেন, তখন প্রথম যে কলটি করেছিলেন তা তাঁদের প্রতিযোগী বেল ল্যাবের কর্মী জো এঞ্জেলকে। যখন তিনি ফোন করেন তখন বিপরীত প্রান্ত ছিল নীরব। শুধু পেয়েছিলেন চারপাশে বরফের পুরু আস্তরণের ওপর লবণ ছড়ানোর শব্দ।

কেমন দেখতে ছিল প্রথম মোবাইল? প্রথম মোবাইলের একটি নমুনা নিকটস্থ মোবাইল ফোন মিউজিয়ামে রাখা আছে। সে সম্পর্কে সংগ্রহশালার কর্ণধার বেন উড বলছেন, এখনকার ফোনের তুলনায় তা ছিল প্রায় ৪গুণ ভারী। ওজন প্রায় ৭৯০ গ্রাম। প্রথম দিকের সেলুলার ফোন গুলোতে চার্জে বেশি সময় লাগত প্রায় ১০ ঘণ্টা চার্জ দিতে হত। টক টাইম পাওয়া যেত মাত্র ৩০ মিনিট। এমন ছিল শুরুর দিকের মোবাইলের গঠন ও তাঁর বৈশিষ্ট্য।

তারপর সময় গড়িয়েছে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোবাইল ফোনে আকৃতি ও ব্যবহারেও এসেছে পরিবর্তন। ১৯৮৩ সালে মোবাইল প্রথম সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য বাজারে আসে। তখন এর দাম ছিল ৩৯৯৫ ডলার। ১৯৯২ সালে ভোডাফোনের কর্মী রিচার্ড জার্ভিস মোবাইল থেকে প্রথম মেসেজ করেন। ক্রিসমাস উপলক্ষে তিনি সবাইকে মেরি ক্রিসমাস বলে অভিনন্দন জানান। দু বছর আগে সেই বার্তার এনএফটিতে নীলামে দর ওঠে ১কোটি ৫০ লক্ষ ডলার। ১৯৯৭ সালে ফিনল্যাণ্ডের কোম্পানি নোকিয়া প্রথম স্নেক গেম সহকারে তাঁদের নতুন মডেল ৬১১০ বাজারে নিয়ে আসে। দু বছর পর একই কোম্পানি বিনা তারে নেট ব্রাউজিঙ্গের সুবিধাযুক্ত নতুন ফোন ৭১১০ নিয়ে আসে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের নেটওয়ার্ক পরিষেবারও উন্নতি হয়। ২০০ ১ সালে জাপান প্রথম থ্রি-জি পরিষেবা নিয়ে আসে। ২০০৯ সালে সুইডেনের স্টকহোমে প্রথম ৪জি পরিষেবা চালু হয়। আবার ৫জি পরিষেবা কিন্তু ইউরোপ আমেরিকা নয়, তার পথ চলা হয় এশীয় ভূখন্ডে। ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া নতুন প্রযুক্তি বাজারে আনে।

২০০৭ সালে প্রথম স্টিভ জোবস নিয়ে এলেন অ্যাপল এর আইফোন। যাতে স্পর্শ মাত্রই বিভিন্ন অপশনের ক্লিক করা যায়। আজকের দিনে হোয়াটস অ্যাপ,উই চ্যাট অত্যন্ত জনপ্রিয় মেসেজিং সার্ভিস। ২০০৯ সাল থেকে এর সূচনা ঘটে। চ্যাট মেসেজে যে ইমোজি ব্যবহারকারীরা বার্তা চালাচালির সময় ব্যবহার করেন ত তা ২০১১ সালে ব্যবহার করা প্রথম শুরু হয়য়। অবশ্য,প্রতিটি ইমোজির ছবি তাঁর অনেক আগেই আঁকা হয়েছিল। শুরু করেছিলেন শিগেতাকা কুর্তিয়া। পরে স্মার্টফোনের মেসেজ লাইব্রেরী মধ্যে তা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

মোবাইল যেমন আমাদের আজকের  জীনকে অনেক দ্রুত  ওসহজ যেমন করেছে তেমনি কিছু সমস্যাও সৃষ্টি করেছে।  ৯৪  বছরের কুপারে  চোখে  এ সমস্যা এড়ায়নি। তিনি  সম্প্রতি বলেছিলেন, নিজের আবিষ্কারের   অতিরিক্ত ব্যবহার ও তার প্রতি আসক্তি  দেখে তিনি আজ  বিরক্ত।  অল্প বয়সী  থেকে প্রৌঢ় — প্রায় সবাই আজ পথ চলতে মুঠো ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। অন্য কোনো কিছুর দিকে তাকানোর তাঁর সময় নেই।  তার পরিণতি যে খুব  ভালো হয়য় না একের পর এক পথ দুর্ঘটনা  তার অন্যতম প্রমাণ।  আসলে প্রযুক্তির সুপরিমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ মানবসভ্যাতাকে অগ্রসরমানতার দিকে ধাবিত করে কিন্তু অসংযমী ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার তাকে  সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়।  বর্তমান প্রজন্ম সে সম্পর্কে বিস্মৃত।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!