- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩
চাঁদের পর এবার সূর্য অভিমুখে সফল ভাবে উড়ে নতুন ইতিহাস গড়ল আদিত্য এল-১

শনিবার বেলা ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে ইসরোর বিজ্ঞানীদের দক্ষতায় দেশের মানুষ আরও এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী থাকল। সূর্যের দিকে সেকেন্ড প্রতি ৩.৮ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে পাড়ি দিল আদিত্য এল-১। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য এল-১ তৈরি করেছে। ভারতীয় রকেট ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ বা পিএসএলভি-র ওপর ভর করে ১১টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা সতীশ ধাওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে সূর্যের উদ্দেশে রওনা দিল ভারতের এই মহাকাশযান।
আদিত্য এল-১-এর উৎক্ষেপণ নিয়ে এখন আবার দেশ খুশির বন্যায় ভাসছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আদিত্য এল-১ এর উৎক্ষেপণ দেখান হশেছে।
আদিত্য-এল-১ ভারত থেকে সূর্যের অভিমুখে পাঠানো প্রথম মহাকাশযান। সূর্য অর্থাৎ আদিত্য। তাই সূর্যের অভিমুখে পাঠান মহাকাশযানটির নাম আদিত্য রাখা হয়েছে।
ইসরো জানিয়েছে, মহাকাশযানটিকে সূর্য-পৃথিবীর মধ্যে একটি ‘হ্যালো’ কক্ষপথের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট বা এল-১ পয়েন্টে স্থাপন করা হবে। প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ কিলোমিটার ভ্রমণ করে গন্তব্যে পৌঁছবে মহাকাশযানটি। সময় লাগবে প্রায় ১২০ দিন বা চার মাস। সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতেই আদিত্য এল-১কে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে বলে ইসরো সূত্রে জানান হয়েছে।
ইসরো সূত্রে আরও জানান হয়েছে, উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬ দিন পৃথিবীর চারিদিকে পাক খাবে আদিত্য-এল১। এই ১৬ দিনে সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার জন্য পাঁচটি ধাপে গতিবেগ বাড়াবে আদিত্য। এর পর ১১০ দিন সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য এল-১। এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে সূর্য এবং পৃথিবীর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল একসঙ্গে ক্রিয়াশীল থাকে। ফলে এই অঞ্চলে পৌঁছে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থির থাকতে পারবে। মহাকাশের পরিবেশ, আবহাওয়া, তার উপর সূর্যের কী প্রভাব পড়ে, সে সব জানাবে আদিত্য এল-১।
আদিত্য এল-১ -এর নির্মাণ কৌশল নিয়ে ইসরো জানিয়েছে, আদিত্য এল-১ মহাকাশযানটিতে মোট সাতটি পেলোড রয়েছে। এ গুলি সূর্যের বিভিন্ন স্তর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফটোস্ফিয়ার থেকে ক্রোমোস্ফিয়ার কিংবা সূর্যের একে বারে বাইরের দিকের স্তর কোরোনায় পৌঁছে, সেই অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করবে এই পেলোডগুলি। এ ছাড়া, সূর্যের উত্তাপ, সৌর পদার্থের নিঃসরণ, সৌরঝড়ের মতো সূর্যকেন্দ্রিক বিষয়গুলি বুঝতেও বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে আদিত্য এল-১। ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি বা ভিইএলসি এবং সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ বা এসএউআইটি নামে দু’টি মূল পেলোড রয়েছে আদিত্য এল-১ এ। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পরে এই ভিইএলসি পেলোড প্রতিদিন ১,৪৪০টি ছবি তুলে ইসরোকে পাঠাবে। তাই এই পেলোডটিকেই আদিত্য এল-১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেলোড বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য পেলোডগুলির মধ্যে রয়েছে সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার বা এসওএলইএক্সএস, হাই এনার্জি এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার বা এইচইএল১ওএস, আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকল এক্সপেরিমেন্ট বা এসপিইএক্স এবং প্লাজ়মা অ্যানালাইজ়ার প্যাকেজ ফর আদিত্য বা পিএপিএ। সদ্য পাঠানো চন্দ্রযান-৩-তে চারটি পেলোড রয়েছে।
আদিত্য-এল-১ অভিযানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা। এই অভিযান সফল হলে সৌরঝড়ের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে ইসরো। পাশাপাশি সূর্যের আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবও বুঝতে সাহায্য করবে এই মহাকাশযান। এই অভিযানের মাধ্যমে সূর্য সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য ভারতের হাতে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের স্যাটেলাইট নির্ভর আবহাওয়া ব্যবস্থা থেকে এর ফলে আরও নিখুঁত ও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে।
❤ Support Us