Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • মে ২৫, ২০২৩

অভিষেকের মন্তব্যে উষ্মা কুড়মি সম্প্রদায়ের, সাবধান বাণী অধীরের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
অভিষেকের মন্তব্যে উষ্মা কুড়মি সম্প্রদায়ের, সাবধান বাণী অধীরের

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের প্রকাশ্যে বলছেন, “কুড়মিরা তৃণমূলকে কোনও দিন ভোট দেয়নি ।” আর কুড়মি  সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অভিষেককে বলছেন,”এরকম করলে কুড়মিদের ভোট তৃণমূল পাবে না।” কোনও রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কোনও সম্প্রদায়ের মুখোমুখি রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই জাতীয় বাক্যবিনিময় এর আগে খুব একটা বাংলার রাজনীতির ময়দানে শোনা গেছে বলে মনে পড়ছে না। এটা করে কি অভিষেক পরিণত রাজনীতিকের পরিচয় দিলেন না নিজের অহমিকাই প্রকাশ করে ফেললেন সেই প্রশ্ন উঠছে।

ঘটনার সূত্রপাত সম্প্রতি অভিষেকের বাঁকুড়ায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে। বাঁকুড়া সফরকালে কুড়মি সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার সময় অভিষেকের বলা কিছু কথা নিয়ে কুড়মি  সমাজ তথা বঙ্গ রাজনীতিতে এখন জোর জল্পনা চলছে। তাই এই মন্তব্য নিয়ে জঙ্গলমহলে যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে পঞ্চায়েত তথা লোকসভা নির্বাচনের আগে তা সামাল দেওয়া তৃণমূলের কাছে বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুড়মি আন্দোলনের এক নেতা বলেন, “আগামী নির্বাচনে কিন্তু এই কুড়মি  সম্প্রদায়ের মানুষ আপনার সমর্থনে থাকবে না।” উত্তরে অভিষেক খুব শান্ত ভাবে বলেন, “আমি আপনাকে ক্যামেরার সামনেই বলছি শুনে নিন। আপনার কুড়মি সম্প্রদায়ের লোকেরা কোনওদিন আমাদের ভোট দেয়নি। পুরুলিয়াতে ২০১৯ সালে বিজেপি প্রার্থী ২ লক্ষ ভোটে জিতেছে। পুরুলিয়ায় ৯টা  আসনের মধ্যে ৬টা  আসন আমরা হেরেছি। আমার দরকার ছিল না এখানে দাঁড়ানোর। এতো প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে বলছেন, তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে না।” এর পর কুড়মি আন্দোলনকারী নেতা কিছু বলতে গেলে অভিষেক তাঁকে থামিয়ে তাঁর হাত ধরে বলেন, “ভোটের পলিটিক্স !. বাবু ২০১৯ সালেও করো নি ২০২১ সালেও করোনি।”  প্রকাশ্যে, রাজপথে তবে খুব ঠান্ডা মাথায় অভিষেক কুড়মি আন্দোলনের নেতাকে ভোটের হিসেবে বুঝিয়ে দেন।

তবে অভিষেকের এই মন্তব্যে চটেছে কুড়মি সমাজ। জঙ্গল মহলের ৪টি লোকসভা ও ১৭টি বিধানসভা আসনে কুড়মি  ভোট বড় ফ্যাক্টর। আর অভিষেকের এই মন্তব্যে কুড়মি  নেতারা বিরক্ত। ঝাড়গ্রামে কুড়মি  ভোট ৩৫ শতাংশ। ঝাড়গ্রাম জেলার কুড়মি নেতা শিবাজী মাহাতো বলেন, “আমাদের এখানকার ২টি বিধানসভায় তৃণমূল জয়ী হয়েছে। এলাকার পঞ্চায়েত, জেলাপরিষদ, এমএলএ নির্বাচন, সব জায়গাতেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। কুড়মিরা ভোট দিয়েছে বলেই তো তৃণমূলের এই সাফল্য এসেছে। কিন্তু উনিতো (পড়ুন অভিষেক) এসবের ধার ধারেন না। আসলে হয়েছে কি জানেন তো স্বৈরাচারী শাসকের কথাগুলিই এ রকম।”

বুধবার নবজোয়ার কর্মসূচিতে বাঁকুড়া ছেড়ে পুরুলিয়ায় পৌঁছেছেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার অভিষেক জঙ্গল মহলেই আছেন। এই জেলাতেও কুর্মি সমাজের ভোট বড় ফ্যাক্টর। বাঁকুড়ার এই মন্তব্যে কি পুরুলিয়ার ২৪ শতাংশ কুড়মি ভোটারকে প্রভাবিত করবে?

এই প্রসঙ্গে পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতা শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঠ্যাকা কুড়মি নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কাজেই এটা কোনও কাটা হবে না।”

তবে তৃণমূল জানে, রাজ্যের মধ্যে নির্বাচনে পুরুলিয়াতেই  তৃণমূলের সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে আগেও এখনও সেটাই হবে। বলা যায় পুরুলিয়ার রাজনৈতিক পথে তৃণমূলের জন্য ফুল বিছিয়ে রাখা নেই। আমরা দেখেছি ঝালদা পুরসভা বহু চেষ্টা করেও শাসক দল দখল করতে পারেনি। তার ওপর এবার কুড়মি অসন্তোষ যুক্ত হচ্ছে। জঙ্গল মহলের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরেই এখনও তৃণমূলের পায়ের তোলার মাটি কিছুটা হলেও শক্ত।

এই প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কুড়মি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেননি  বা মন্তব্যও করেননি। আমাদের দরকার নেই কুড়মি  সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করার বা খারাপ কথা বলার। তার কারণ, আমরা কুড়মি  সম্প্রদায়ের সাথে আছি, পাশে আছি।”

প্রসঙ্গত বাঁকুড়ার জামদার সভায় অভিষেক বলেছেন, “বাঁকুড়ায় শুধু কুড়মিরাই  নেই, অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও আছে।” অভিষেকের এই কথায় প্রশ্ন উঠছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি কুড়মিদের সঙ্গে অন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে মেরুকরণের চেষ্টা করছেন। বাঁকুড়ার কুড়মি  নেতা বীরেন্দ্রনাথ মাহাতোর কথায় এই অভিযোগ ধ্বনিত হচ্ছে। বীরেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেছেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ভাবেন অন্য সম্প্রদায়কে খুশি করে বৈতরণী পার হয়ে যাবেন তবে সেটা ওনার ভাবনা। শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটা তাহলে সময় বলবে।”

অভিষেকের এই মন্তব্যে জঙ্গল মহলের রুক্ষ মাটি তৃণমূলের জন্য আরও রুক্ষ হয়ে যাবে না তো? এর আগে মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা অজিত মাইতির মন্তব্যে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষেরা চটেছিল। দিলীপ ঘোষের মন্তব্যেও কুড়মিরা ক্ষুব্ধ হয়ে খড়গপুরে দিলীপ ঘোষের বাড়ি আক্রমণ করে। শেষ পর্যন্ত দিলীপ ঘোষ কুড়মি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেও সুকান্ত মজুমদার কুড়মি নেতাদের কাছে মার্জনা চান।

তবে অভিষেকের এই মন্তব্যের পর দিলীপ ঘোষ বলেন, “সবই সেটিং। ওদের টাকায় বাস নিয়ে এসে আমার বাড়ি ঘেরাও করা হল।” দিলীপ ঘোষের এই সেটিং তত্ত্ব খারিজ করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “কিসের সেটিং? কথা বললেই সেটিং? গ্রহণযোগ্যতা চাই তো। দিলীপ ঘোষ কুড়মিদের প্রতি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন ঢুকতে পারবেন ওখানে হেঁটে একা? যান না।”

এদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “মণিপুরে কুকি-মেইতিদের মধ্যে যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি চলছে সেই পরিস্থিতি যাতে পশ্চিমবঙ্গে কুড়মি ও অন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তৈরী না হয় তার জন্য রাজ্য সরকারকে সতর্ক করছি।”

প্রসঙ্গত কিছু দিন আগে কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ  কুমারকে সঙ্গে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিজেপি বিরোধী জোটের সলতে পাকাচ্ছেন সেই নীতিশ কুমারও কিন্তু  কুড়মি সমাজের মানুষ। তাই রাজ্য ও জাতীয়স্তরে কুড়মিদের চটিয়ে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল সমস্যায় পড়বে না তো?


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!