Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • মার্চ ১৯, ২০২৫

নাগপুরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ‘মাস্টারমাইন্ড’, এমডিপি নেতা শামীম খান গ্রেফতার

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
নাগপুরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ‘মাস্টারমাইন্ড’, এমডিপি নেতা শামীম খান গ্রেফতার

নাগপুরে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় মাইনরিটি ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এমডিপি-র স্থানীয় নেতা ফাহিম শামীম খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফাহিম খান নাগপুরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মূল ষড়যন্ত্রকারী। তিনি উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে সহিংসতা উস্কে দিয়েছেন। ১৭ মার্চ নাগপুরের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের পর বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশ পরবর্তী সময়ে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, ফাহিম খান, যিনি সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত, নাগপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় প্রধান ‘প্ররোচক’ হিসেবে কাজ করেছেন। বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ এনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর রাজ্য থেকে সরানোর দাবি নিয়ে ২ সম্পরদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর অভিযোগ ওঠে।

এরই মধ্যে, এই সহিংসতার ঘটনায় ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, এই ঘটনার পিছনে একটি একক ব্যক্তির হাত ছিল কি না, নাকি এর পিছনে কোনো সংগঠন রয়েছে। ঘটনার জেরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় মোট ৬ মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রায় ১,২০০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকি ১,০০০ জনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এফআইআর দায়ের হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফাহিম খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য ও একটি ভিডিও পুলিশের হাতে এসেছে। অভিযোগ ফাহিম খানের উত্তেজক বক্তৃতা নাগপুরের চিতনিস পার্ক এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সংঘর্ষের আগে একটি উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। ৩৮ বছর বয়সী ফাহিম খান, যিনি ইয়াশোধারা নগরের সঞ্জয় বাগ কলোনির বাসিন্দা। তিনি নাগপুর শহর শাখার এমডিপি সভাপতি। তাঁকে ২১ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীর মিছিল থেকে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তাতে তাঁর কোনো হাত নেই। এররেই একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, একটি ধর্মগ্রন্থ অবমাননা করা হয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণ বিস ও উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, মঙ্গলবার এই ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফড়ণবিস জানান, এই সহিংসতার ঘটনার সূত্রপাত হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আর বজরং দলসহ কঠোর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করে। তাঁরা একটি ‘প্রতীকী কবর’ পুড়িয়ে দেয়। এরপর গুজব ছড়ায়, সবুজ রঙের কাপড়ে ধর্মীয় গ্রন্থ ছিল যেটিও পোড়ানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান, ‘জুম্মার নামাজের পর ২৫০ জনের একটি ভিড় ঘটনাস্থলে এসে স্লোগান দিতে শুরু করে। গাড়ি-বাড়ি পুড়িয়ে ফেলবার হুমকি দেওয়া হয়। ৩৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘ছত্রপতি শিবাজির পুত্র শম্ভুজি মহারাজের জীবন নিয়ে তৈরি হওয়া হিন্দি সিনেমা ‘ছাবা’-র প্রতভাবও এই সহিংসতার পেছনে থাকতে পারে।’ এদিকে উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা, বিজেপির জোট সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী ফড়ণবিসের পদত্যাগের জোরালো দাবি তুলেছে। উদ্ধব ঠাকরে মঙ্গলবার এই সহিংসতার নিয়ে রাজ্য সরকারকে তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, ‘ঔরঙ্গজেব ৩১৮ বছর আগেই মারা গেছেন, মহারাষ্ট্রে তাঁর কবর অনাড়ম্বর ও চিহ্নিহীন ভাবেই আছে। তাহলে ২০২৫ সালে এসে নতুন করে হিংসার ঘটনা ঘটছে কেন?’ এ বিষয়ে তার পুত্র আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, বিজেপি সরকার নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে এ ধরণের বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিজেপি মহারাষ্ট্রে ‘মণিপুরের পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করতে চাইছে।’ উল্লেখ্য, ঔরঙ্গজেবের কবর একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ, প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বা এএসআই-এর অধীন। মুখ্যমন্ত্রী ফরণবিস এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমরাও কবর সরাতেই চাই, কিন্তু হিংসা দিয়ে নয়, আইন মোতাবেক।’

উল্লেখ্য, নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান দপ্তর সেখানে এ ধরণের ঘটনার পিছনে আসলে কারা রয়েছে সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। গত সোমবার রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের দিকে পাথর ও পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, এতে ৩৮ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা। একজন পুলিশ কর্মীকে এ্যক্স দিয়ে আক্রমণ করা হয়। তবে, কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এই সহিংসতার পর, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। নাগপুরে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, শহরের অনেক সংবেদনশীল এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২,০০০ এর বেশি সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন।


  • Tags:
❤ Support Us
গুম গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
ধারাবাহিক: একদিন প্রতিদিন । পর্ব ৫ পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
পথ ভুবনের দিনলিপি । পর্ব এক ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
error: Content is protected !!