Advertisement
  • টে | ক | স | ই দে । শ
  • মার্চ ১৩, ২০২৫

প্রযুক্তিকে সহযোগী করলে বাড়বে অর্থনীতি । উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেই দারিদ্র্য মোচন সম্ভব, মন্তব্য নারায়ণ মূর্তির

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
প্রযুক্তিকে সহযোগী করলে বাড়বে অর্থনীতি । উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেই দারিদ্র্য মোচন সম্ভব, মন্তব্য নারায়ণ মূর্তির

মুম্বাইয়ে টিআইই কন-এ প্রচুর দর্শকদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন.আর. নারায়ণ মূর্তি, ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা বলে মন্তব্য করেছেন।তিনি আরো বলেছেন, উদ্ভাবন আর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য মোকাবেলা করা যেতে পারে, অনুদান বা ভর্তুকির মাধ্যমে নয়।

ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন.আর. নারায়ণ মূর্তি বুধবার ভারতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চলমান অতিরঞ্জিত আলোচনার বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি জোর দিয়ে বললেন , ভারতের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে, নিছক ভর্তুকি বা অনুদানের মাধ্যমে নয়। এ দিন মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত টিআইই কন-২০২৫-এর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মূর্তি বলেন, বর্তমানে অনেক সফটওয়্যারকে এআই বলে প্রচার করা হলেও, সেগুলি প্রকৃতপক্ষে সাধারণ কম্পিউটার প্রোগ্রাম মাত্র। আমি দেখতে পাচ্ছি, বেশিরভাগ তথাকথিত এআই আসলে স্রেফ পুরনো ধাঁচের প্রোগ্রামিং। ভারতে এখন এআই নিয়ে বাড়াবাড়ি চলছে। সাধারণ প্রোগ্রামকেও এআই বলে চালানো হচ্ছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো ব্যাখ্যা করে দেখান, সত্যিকারের এআই মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। প্রথমত, মেশিন লার্নিং। যা বিভিন্ন ডেটার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে ও ভবিষ্যতবাণীমূলক বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। দ্বিতীয়ত, ডিপ  লার্নিং, যা মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী অনুকরণ করে আর অসংগঠিত তথ্য বিশ্লেষণ করে। মূর্তি বলেন, ‘ডিপ লার্নিং ও নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত অ্যালগরিদমগুলোর সম্ভাবনা অনেক বেশি, কারণ এগুলি মানুষের মতো চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহজলভ্য হলে মানুষ কাজ হারাবে। প্রায়শই এরকম আশঙ্কা করা হয়। এ প্রসঙ্গে তাঁর মত, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে কিছু চাকরি হারিয়ে যেতে পারে, তবে এটিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে কিছু চাকরি হারিয়ে যায়, কিন্তু যদি প্রযুক্তিকে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি নতুন শিল্প তৈরি করবে, কর্মসংস্থান বাড়াবে।’ তিনি  এআই-র বাস্তব উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন, ‘যদি এআই স্বয়ংক্রিয় যানবাহন হাসপাতালের সেবায় ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেই শিল্পগুলো আরো প্রসারিত হবে, নতুন কর্মসংস্থানের  সুযোগ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি, ভারতীয় স্টার্টআপ কোম্পানিদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অতিরঞ্জনের ফাঁদে না পড়ে, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বড়ো স্বপ্ন দেখার পরামর্শ দিয়ে মূর্তি বলেন, ‘শুরুর দিকে কঠিন মনে হলেও, সঠিক মানসিকতা তৈরি হলে অগ্রগতি আসবেই।’ তিনি উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন যেন তাঁরা তাঁদের  সংস্থায় নিজের চেয়ে বেশি মেধাবী ও দক্ষ কর্মী নিয়োগ করেন, নতুন নতুন চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানান।  সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘এই নীতিগুলো যারা অনুসরণ করেনি, তাঁদের  স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়েছে।’

ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা  ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ‘সহানুভূতিশীল পুঁজিবাদ’ ধারণার পক্ষে সওয়াল করেন। সরাসরি সরকারি ভর্তুকির বিপক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘ সরকারি ভর্তুকি দেওয়ার সময়, তা মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে সত্যিই উন্নতি ঘটাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিৎ। যদি কোনো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উন্নতির জন্য ৬ মাস বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়, তাহলে ৬ মাস পর দেখতে হবে তারা পড়াশোনায় উন্নতি করছে কি না।’ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় সমাজের কল্যাণ করা, তাহলে ক্রেতারা বারবার আপনার পণ্য কিনবে, কর্মচারীরা আপনাকে ছেড়ে যাবে না, বিনিয়োগকারীরা কঠিন সময়েও পাশে থাকবে, এমনকি রাজনীতিবিদরাও চাইবে আপনি সফল হন।’ তিনি তাঁর  বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, ভারতের দারিদ্র্য দূর করতে হলে ‘উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থানই মূল চাবিকাঠি, নিছক সরকারি অনুদান বা বিনামূল্যে সুবিধা প্রদান নয়। বিপুল পরিমাণে উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থান ঘটাতে পারলে ভারতের দারিদ্র্য, এক রোদ ঝলমলে সকালের শিশির কণার মতো বিলীন হয়ে যাবে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!