- এই মুহূর্তে বি। দে । শ
- ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
হিমালয়ের দুর্গমে অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে যাওয়া যাবে না একা। সোলো-ট্রেকিংয়ে নেপালের নিষেধাজ্ঞা

নেপালের দুর্গম জায়গায় একা-একা ঘুরে বেড়ানো, অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে একাই পর্বত আরোহণ করা যাবে না আর। বিদেশিদের একা একা ট্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করল নেপাল সরকার। হিমালয়ের বুকে ট্রেকিংয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক করল কাঠমান্ডু। তাহলে একা নেপাল বেড়াতে গেলে কি ট্রেকিং করা যাবে না? সেরকম কিন্তু নয়। যেতেই পারেন। তবে সেক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে আপনাকে কোনও লাইসেন্সপ্রাপ্ত গাইড ভাড়া করতে হবে। সম্পূর্ণ একা-একা, কাউকে ছাড়া পাহাড়ি এলাকায় ঘুরে বেড়ানো যাবে না। পর্বতারোহণ বিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী নেপাল আগেই প্রকাশ করেছে, যাতে পর্বতারোহীদের সমস্ত ৮০০০ ফুটের চূড়ায় একক অভিযান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নেপালের পাহাড়ি পথ বেশ দুর্গম। হিমালয়ের কোলে একাধিক দুর্ধর্ষ ট্রেকিং রুট শুরু হয় নেপাল থেকেই। হিমালয়ের বাঁকে বাঁকে হয়েছে রোমাঞ্চ। কিন্তু এই অ্যাডভেঞ্চারের মাঝে বিপদের মুখে কোনও পর্যটক পড়ুক, চায় না সে দেশের সরকার। তাই নেপালে বিদেশিদের সোলো ট্রেকিং বন্ধ করা হয়েছে। সোলো ট্রেকিংয়ের অর্থ হল, সম্পূর্ণ একা-একা ট্রেকিংয়ে যাওয়া। বর্তমানে অনেকেই ব্যাকপ্যাক কাঁধে একাই ট্রেকিং করতে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু একেবারে অচেনা, দূর্গম স্থানে এভাবে ঘোরাফেরা করা, পাহাড়ে চড়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে বিপদ। এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছেও। এরপর থেকেই বিদেশিদের সোলো ট্রেকিংয়ে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নেপাল সরকার। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পর্বতারোহণের নিয়ম সংশোধন করে মাউন্ট এভারেস্ট সহ ৮০০০ মিটারের উপরে সমস্ত পর্বতে একক অভিযানকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন নিয়মানুযায়ী, পর্বতারোহণ দলের প্রতি দুই সদস্যের সঙ্গে অন্তত একজন উচ্চতাকর্মী বা পর্বত গাইড থাকতে হবে। এই নিয়ম মাউন্ট এভারেস্ট সহ ৮০০০ মিটারের উপরে সমস্ত পর্বতে প্রযোজ্য।
নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে, পর্বত শিখরে একাকী আরোহণের স্বপ্ন, আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হল। নেপাল সরকার অভিজ্ঞতা নির্বিশেষে একা কাউকে পাহাড়ে যেতে না দেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নয়া ফরমান ‘অভিযান-শৈলী’ পর্বতারোহীদের জন্যও লাগু হবে। মানক দক্ষিণ রুট থেকে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় অভিযানের জন্য বিদেশী পর্বতারোহীদের ১৫,০০০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। হিমালয়ে বসন্ত ঋতুর অভিযান যা মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত চলে, তার খরচ আগে ১১,০০০ মার্কিন ডলার ছিল। নতুন বিধানে শরৎ মৌসুমের জন্য খরচও ৫৫০০ থেকে ৭৫০০ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। একইভাবে, শীতকালীন অভিযান যা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এবং জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বর্ষার সময়ে শিখরে উঠতে ট্যাঁক থেকে খসাতে হবে ৩৭০০ মার্কিন ডলার।
নেপালের বেশিরভাগ হাইকিং ট্রেইলই পাণ্ডববর্জিত। জনসংখ্যা এবং পরিকাঠামো নেই। সেলুলার সংযোগও মেলে না। উপরন্তু, নেপালের পার্বত্য অঞ্চলে হঠাৎ হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়। প্রতি বছর, নেপালের পাহাড়ে তুষারপাত, তুষারঝড় এবং অতি-উচ্চতায় অসুস্থতার মতো মারাত্মক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। একাকী হাইকাররা নিখোঁজ হয়ে গেলে তাঁদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার মিশন চালানোও অত্যন্ত কঠিন। নেপালের ট্রেকিং এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নীলহারি বাস্তোলা জানান, প্রতি বছর নেপালে ১০ থেকে ১৫ জন হাইকার নিখোঁজ হয়ে যান। এঁদের বেশিরভাগই একা-একা ট্রেকিং করতে গিয়েছিলেন। সেই কারণেই এই নিয়মকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁরা। একাকী ট্রেকিংয়ের বিপদের পাশাপাশি লাইসেন্সবিহীন ট্যুর গাইড এবং কোম্পানিগুলিও বর্তমানে অন্যতম বড় সমস্যা। পর্যটন বোর্ডের পরিচালক জানালেন, লাইসেন্সবিহীন গাইডরা সরকারি রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই কাজ করেন। করও প্রদান করেন না। এর ফলে সঠিক, অভিজ্ঞ গাইডরা বঞ্চিত হন। ফলে শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত গাইডই ভাড়া করার নিয়ম চালু করা হল।
হিমালয় রেঞ্জে সম্প্রতি যে কয়েকটি পরিবর্তন গ্রহণ করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে, পর্বতারোহীদের পরিবারের সদস্য, গাইড এবং উচ্চ-উচ্চতা বেস ক্যাম্পের কর্মীদেরও বেস ক্যাম্প থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যটন বিভাগ থেকে পূর্বানুমোদনের ক্ষেত্রে, পরিবারের সদস্যদের বেস ক্যাম্পে দুই দিনের বেশি থাকার জন্য ছাড় দেওয়া যেতে পারে, নতুন নিয়মে বলা হয়েছে। এছাড়াও, নতুন নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থায় সফল শিখর অভিযান “স্ব-ঘোষণা” দ্বারা নথিবদ্ধ করার জন্য অফিসার নিয়োগ করেছে। সফল আহরণ প্রমাণ করার জন্য, অভিযানের সংগঠক এবং লিয়াজোঁ অফিসারদের কাছে আরোহীর মুখ পরিষ্কারভাবে দেখানো আসল ছবি জমা দিতে হবে। ছবির পটভূমিতে অবশ্যই পর্বতশ্রেণী থাকতে হবে, যা এভারেস্ট আরোহনের শংসাপত্র পাওয়ার নতুন যোগ্যতার মানদণ্ড।
সংশোধিত আইনে লিয়াজোঁ অফিসারদের জন্য দৈনিক ভাতা, গাইডদের দৈনিক মজুরি, এবং বেস ক্যাম্প কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। লিয়াজোঁ অফিসারদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৬০০ টাকা। সিরদাররা বা প্রধান শেরপারা এখন প্রতিদিন ১৫০০ টাকা পাবে। একইভাবে, গাইডদের মজুরি প্রতিদিন ৩৫০ থেকে বেড়ে ১২০০ করা হয়েছে। বেস- ক্যাম্পের কর্মীদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০০ টাকা হয়েছে। উঁচু পাহাড়ে দূষণ রোধ করার প্রয়াসে, এই বছরের বসন্ত থেকে পর্বতারোহীদের বাধ্যতামূলকভাবে তাদের বর্জ্য, সঠিকভাবে নিষ্পত্তির জন্য বেস-ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনতে হবে। পর্বতারোহীদের উপরের দিকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বহন করতে হয়।
নেপালের সমস্ত ন্যাশানাল পার্কের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, সেখানকার অন্নপূর্ণা পর্বতমালা এলাকা ট্রেকিংয়ের জন্য বেশ জনপ্রিয়। এই সকল স্থানে আবশ্যিকভাবে লাইসেন্সড গাইড সঙ্গী নিয়ে যেতে হবে। তবে স্থানীয়দের ক্ষেত্রে এমন কোনও নিয়ম নেই। তাঁরা সেখানকার দূর্গম পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত। রুটগুলিও তাঁদের চেনা। তাই তাঁদের বিপদ ঘটা বা পথ হারানোর সম্ভাবনা কম। এর পাশাপাশি এই নিয়মের আরও একটি বড় দিক রয়েছে। এর মাধ্যমে দূর্গম এলাকায় গাইড হিসাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। নেপালের ট্যুরিজম বোর্ডের কর্তা মণি আর লামিছনে এমনটাই জানালেন ।তিনি আরও বলেন, ‘একা একা ট্রেকিং করলে বিপদে পড়লে, আপনাকে সাহায্য করার জন্য কাউকে পাবেন না। শহর এলাকায় একা ঘুরুন, সমস্যা নেই। কিন্তু জনমানবহীন দূর্গম এলাকায় ঘোরা বিপদজনক।’ ১৯৫৩ সাল থেকে প্রায় ৮,৯০০ জন মানুষ নেপালের দিক থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠেছেন।
❤ Support Us