- খাস-কলম ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
দিনলিপির নিপাট বুনন। উইম ওয়েন্ডার্সের পার্ফেক্ট ডেস কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের এক বড়ো প্রাপ্তি
উইম ওয়েন্ডার্স পরিচালিত “পার্ফেক্ট ডেস” এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এক শক্তিশালী নির্মাণ। যার বিষয়, শান্তি, সৌন্দর্য আর জীবনের অর্থ খুঁজে নেওয়ার যাত্রা।
টোকিও শহর আর নাগরিক প্রাত্যহিক জীবন দিয়ে চলচিত্রের শুরু। সাফাইকর্মী হিরায়ামার (বিখ্যাত নায়ক কোজি ইয়াকুশো) কাজ করার পরিধি নির্মাণ করা চলতে থাকে। ভোরে একক বিছানা গুছিয়ে ওঠা, প্রাতকৃত্যের নানা কাজ সারা, টবের গাছে জল দেওয়া,বিশেষ পোশাক, চাবির দুই গোছা, কাজের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি নেওয়া দেখানো হয় এত নিখুঁত অথচ চকিত ছোঁয়ায়,তখনি বোঝা যায় এই দৈনন্দিনকে পরিচালক কাজে লাগাবেন।দরজা খুলেই হিরায়ামা মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালেও আসলে সে গাছের পাতা দেখে।পাশের ভেণ্ডিং যন্ত্রে পয়সা ফেলে কফির ক্যান নেয় আর পান করার মাঝে গাড়ি ও ক্যাসেট চালিয়ে একের পর এক শৌচাগারগুলোয় গিয়ে সাফাই করতে থাকে একেবারে মন দিয়ে। ফেরার আগে সে গণস্নানাগারে ভালো করে স্নান করে, নির্দিষ্ট জায়গায় খায়।সর্বত্র সকলে তাকে চেনে ও মানে।
এই বিস্তৃত প্রথম দিনের কাজ ও ফিরে এসে শোওয়া, যেখানে ঘুমের আগে বই পড়ার ব্যাপার আছে, প্রায় তেত্রিশ মিনিট নেন ওয়েন্ডার্স। পরের দিন একই রুটিন, সামান্য হেরফের থাকে এক সতীর্থ তাকাশি-র কাজে অবহেলা, টিফিন খাবার সময় পার্কে একটি মেয়ের সঙ্গে নজর বিনিময় হওয়া ইত্যাদিতে, কিন্তু মাত্র ষোল মিনিট নেওয়া হয়। তার পরের সে-ই ওঠা থেকে শোওয়ার গল্পই বলা হয়,পাঁচ সাত মিনিট ব্যয় করে।এই কঠোর দিনচিত্রের ব্যবহার মনে করিয়ে দেয় হাংগেরীয় বেলা তার-এর কথা। পরের এই ছোট দিন-বর্ণনাগুলোতেই দক্ষ কারসাজিতে ব্যতিক্রম এনে চরিত্র ও কাহিনির এগোনোর কাজ চলে। তাতে তাকাশি ও তার প্রেমিকার সম্পর্ক, পার্কের মেয়েটির তাকানো,এক শৌচাগারের তাকের কোণে লুকোনো কাগজে কাটাকুটি খেলা চলার অগ্রগতি থাকে।
হিরায়ামার গান, বইপড়া, গাছচর্চা ও ফটোগ্রাফির নেশা এবং তার শান্ত সন্তুষ্টির ছবি ফুটে ওঠে। ওদিকে পুরনো ক্যাসেট নিতে না দিয়ে হিরায়ামা টাকা দিলেও তাকাশির প্রেম ভাঙে, সে কাজ ছেড়ে দেয়।
যখন পার্কের মেয়েটি, কাটাকুটির ব্যক্তিটি, রেস্তোরাঁর বয়টি, এমনকি তাকাশির প্রেমিকা পর্যন্ত তাকে পছন্দ করে আচমকা চুমু খায়, অবিচল হিরায়ামা কেবল স্বপ্নে সেসব দেখে, সে এক অনন্য স্বপ্ন,মেঝের বিছানা, চাটাই ইত্যাদির নকশায় ভেসে চলে তার অবচেতন।
আসে তার ভাগ্নী, যে কিনা তার মা এলেও ফিরতে অরাজি, তবু যাবার সময় আদর করে বুঝিয়ে যায়,মায়ের চেয়েও কাকাকে সে বেশি ভালোবাসে।এই পর্বে ওই মহিলার কথা,”তা হলে সত্যিই তুমি সাফাইয়ের কাজই করো!” বুঝিয়ে দেয় হিরায়ামার এক মর্যাদাময় অতীত জীবন ছিল!কোন ধাক্কা খেয়ে সে এই জীবন বেছে নিয়েছে ! এমনকি রবিবারে ছুটির দিনের আলাদা সাইকেলে চড়া সফরে ও এক হোটেলে খাওয়ার পর্বেও মালকিন মহিলার অস্ফুট প্রেমের আঁচ লাগে না তার,তাই ঘটনাচক্রে মালকিন মহিলার কর্কট রোগাক্রান্ত স্বামীর বলা সত্ত্বেও হিরায়ামা অবিচল থাকে।অন্যান্য অনেক প্রতীকী দৃশ্যের মতো এখানে স্বামীটির সঙ্গে কিতকিতের মতো বিচিত্র এক জাপানি খেলার চিত্রায়ণ মুগ্ধ করে।শেষে গাড়ি করে ফেরার সময় হিরায়ামার বিচিত্র হাসি,গম্ভীর হওয়া এবং শেষে কেঁদে ফেলা না-বলা কত কথা বলে দেয়,যা পরিচালকের ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার নির্যাস হয়ে থাকে।
এমন করে আধুনিক জীবনের ভাষ্য চিত্রনাট্য, সম্পাদনা, চিত্রগ্রহণ,পরিচালনায় বলতে পারা বড়ই ব্যতিক্রমী সৃষ্টি।
অন্যান্য ছবির মধ্যে আজ হিরোকাজু কোরিদার-র জাপানি “মনস্টার”, ইটালির ম্যাট্টিও গ্যারোনের “মাই ক্যাপটেন”, ও আরেক অনন্য ছবি অস্ট্রেলিয়ার রল্ফ ডে হীর এর “দ্য সারভাইভাল অব কাইন্ডনেস” ছিল,যা নিয়ে পরে বিস্তারে আলোচনা করা যাবে।
❤ Support Us