Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • জানুয়ারি ৩১, ২০২৫

এবারের বাজেট ‘বিদেশী হস্তক্ষেপহীন’। সংশোধন, রূপান্তর, কাজ – তিন দিশাতেই চলবে ভারত, বাজেট অধিবেশনের সূচনায় বললেন প্রধানমন্ত্রী

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
এবারের বাজেট ‘বিদেশী হস্তক্ষেপহীন’। সংশোধন, রূপান্তর, কাজ –  তিন দিশাতেই চলবে ভারত,  বাজেট অধিবেশনের সূচনায় বললেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতীয় সংসদ ভবনের হংসদ্বারে দাঁড়িয়ে দেবী লক্ষ্মীর স্তব করে কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫- ২৬ অধিবেশনের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংশোধন, রূপান্তর, কাজ এই নীতিতে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করা হবে। ‘ ১০ বছরে প্রথম কোনও বিদেশি ইন্ধন নেই’ – বিরোধীদের নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা।

শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি মোদি সরকারের তৃতীবার ক্ষমতায় আসবার পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট অধিবেশন। অধিবেশনের আগে সংসদের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার নিয়ম রয়েছে, আজ ভাষণ দেবার সময় মোদী বলেন, ‘‘১০ বছরের মধ্যে এই প্রথম বাজেট অধিবেশন হতে চলেছে, যেখানে কোনও বিদেশি ইন্ধন নেই।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, বিদেশ থেকে কোনও না কোনও ভাবে ইন্ধন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আর এখানে বসে কিছু মানুষ সেই ইন্ধনে মদত জোগান। প্রধানমন্ত্রীর এই ‘বিদেশি ইন্ধন’ মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা। বিগত বছরগুলিতে বাজেট বা সংসদের অন্যান্য অধিবেশনের আগে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ঝড় উঠেছে। কখনও কৃষক আন্দোলন, কখনও সিএএ, কখনও পেগাসাস বা কখনও আদানি। মোদী বলেন, ‘আমি গত ১০ বছর ধরে লক্ষ্য করছি, প্রতিটি অধিবেশনের আগে অনেকে দুষ্টুমি করার জন্য প্রস্তুত হয়। আমরা জানি যে সেই দুষ্টুমি বাড়ানোর জন্য এখানে লোকেরও অভাব নেই।’ তবে এবারের বাজেট নিয়ে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী তিনি, তাঁর মতে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলবার ক্ষেত্রে নতুন বাজেট কাজ করবে। দেশে যুবশক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার শতবর্ষে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেবেন। তাঁরা যখন ৪০-৫০ বছর বয়সে পৌঁছবেন, তখন লাভবান হবেন। ভারত বিশ্বে নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছে। স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্ণরূপে বিকশিত ভারতের আত্মপ্রকাশ হবে। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে সরকার।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশবাসী আমাকে তৃতীয় বারের জন্য তাঁদের স্বপ্নপূরণের উদ্দেশে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন, তাতে আমি আপ্লুত। আগামী ২৫ বছর সমৃদ্ধ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার শতবর্ষে বিকশিত ভারতের স্বপ্নপূরণের সংকল্প নিয়েছে এই সরকার। এ বারের বাজেট সেই সংকল্প পূরণের লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সংশোধন, রূপান্তর, কাজ, এটাই আমাদের লক্ষ্য। এ বারের বাজেট নতুন ভারতের স্বপ্নপূরণের বাজেট হতে চলেছে। নারীশক্তির পুনরায় জাগরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ খোঁচা দেওয়ার পাশাপশি বিরোধী সাংসদদের কাছে অধিবেশন সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনায় সহায়তা করবার আবেদন জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দু দফায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সংসদের বাজেট অধিবেশেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণের মধ্য দিয়ে অধিবেশন শুরু হয়েছে। শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। অর্থমন্ত্রীকে সাহায্যকারী দলে রয়েছেন রাজস্ব সচিব পান্ডে, অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিব অজয় শেঠ, বিনিয়োগ ও জনসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব অরুনীশ চাওলা, আর্থ সচিব এম নাগারাজু এবং প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন। বাজেট অধিবেশনের দুটি পর্যায়ের প্রথম ভাগ ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। মাঝে বিরতির পরে আবার ১০ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্যায় চলবে। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের শুরুতে কুম্ভমেলায় পদিপিষ্ট হয়ে নিহতের প্রতি শোকজ্ঞাপন করেছেন।পাশাপাশি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি। নরেন্দ্র মোদির মতো তাঁর মুখেও বাড়বার শোনা গেল ‘বিকশিত ভারত’ প্রসঙ্গ। তাঁর অধস্তন সরকার সংশোধন, রূপান্তলক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্রতার সীমা থেকে উঠে এসেছেন, সরকার দলিত আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া মানূষের হয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, “সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সহযোগিতায় লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্রতার সীমা থেকে উঠে এসেছেন।”র, কাজ – এই ৩ নিয়ে আগামীতে ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মজবুত করতে চলেছে সে কথা জানিয়েছেন তিনি। বিতর্কিত নানান বিল ও সংসধনের স্বপক্ষেও তাঁকে কথা বলতে শোনা গেল, তিনি বলেছেন বলেন, “ওয়াকফ বোর্ড, এক দেশ, এক নির্বাচনের মতো বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যুব প্রজন্মের শিক্ষা ও তাদের কর্মসংস্থান তৈরির উপরও বিশেষ জোর দিয়েছে সরকার।” আত্মনির্ভর ভারত উদ্ভাবন অন্তর্ভুক্তি ও বিনিয়গের নতুন দিশাতে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু কর্মসঙ্গস্থান নয় দেশের নিরপত্তা ও সুরক্ষা মজবুদ করতে কাজ করছে। সংসদের উভয় কক্ষে ভাষণ দেওয়ার সময় রাষ্ট্রপতি বলেন,’খুব শীঘ্রই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত’। কেন্দ্রীয় সরকারের নানান প্রকম্পের কথা তুলে ধরেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রকল্প, মুদ্রা ঋণ ১০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ করা, ইন্টার্নশিপ কর্মসূচি, ড্রোন দিদির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন। ৩ কোটি দিদি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা। দেশে ৫২০০০ বৈদ্যুতিক বাস চালানো, অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের অনুমোদন, কর সংক্রান্ত নতুন সহজ নিয়ম, বিজ্ঞানক্ষেত্রে ভারত বিশ্বকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পথ দেখাচ্ছে সহ একাধিক কাজের কথা তুলে ধরেছেন। বামপন্থী চরমপন্থা কঠোর হাতে দমনে ঝাড়খণ্ড, চত্তিশগড় উন্নইয়নের মূল স্রোতের সাথে যুক্ত হচ্ছে এ দাবি করেছেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি।

তিনি আরো বলেন,’লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে চলেছে সরকার। তার ফল সকলে দেখছেন। বিদেশ থেকে বিপুল বিনিয়োগ এসেছে। দেশের তরুণরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে’।তাঁর ভাষণে সংবিধান গ্রহণের ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন এর পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরে রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়াকেও বড় অর্জন হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। বিমান শিল্পেও বড় অগ্রগতি হয়েছে। ‘মিথ্যে প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি’ – রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে, বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন সনিয়া গান্ধী। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ‘বড়ো একঘেয়’ মন্তব্য রাহুল গান্ধীর। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘এতে রাষ্ট্রপতির সম্মানহানি হয়েছে।’ অন্যদিকে, কংগ্রেস এখনও এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়নি।

এরপর লোকসভায় ২০২৪-২৫ সালের ইকোনমিক সার্ভে রিপোর্ট (Economic Survey report) পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ভারতের জিডিপি ২০২৫-২৬ অর্ধবর্ষে ৬.৩-৬.৮ শতাংশ অবদি বাড়তে পড়ে বলে রিপোর্টে উল্লেখ। জরিপে বলা হয়েছে, দুর্বল রপ্তানি চাহিদা এবং দেশে অভ্যন্তরীণ মৌসুমী অবস্থার কারণে উৎপাদন ব্যবস্থা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।” ব্যক্তিগত স্থিতিশীল ব্যবহার আসলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে প্রতিফলিত করে। আর্থিক শৃঙ্খলা এবং উন্নত বাণিজ্যিক পরিষেবা ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বিশেষ অবদান রেখেছে। এই কারণে বাহ্যিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও দেশের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করার পরে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা পর্যন্ত অধিবেশনের কার্যবিবরণী স্থগিত করেছেন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!