- প্রচ্ছদ রচনা
- এপ্রিল ২৩, ২০২২
রাশিয়ার দখলে মারিওপোল, এবার পশ্চিমের পথে পা বাড়াবে পুতিনের সেনা, সতর্কবার্তা জেলেনস্কির
রুশ জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ জানিয়েছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনে রুশ নিয়ন্ত্রণ কায়েম হলে ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার সঙ্গে মস্কোর যোগাযোগের সুবিধা হবে।

বেশ কয়েক দিনের চেষ্টায় অবশেষে বৃহস্পতিবার রুশ বাহিনী মারিওপোল শহরকে স্বাধীন ঘোষণা করার পর এবার পুতিন বাহিনী লাগাতার অগ্নিবৃষ্টি করছে খারকভ ও ডোনেৎস্কে। শুক্রবার রুশ বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ইউক্রেনের খারকভ ও ডোনেৎস্ক প্রদেশে প্রায় এক ডজন জায়গায় হামলা চালিয়েছে তাদের বাহিনী। এর আগে খারকভের পাশে ইউক্রেনীয় ফৌজের একটি অস্ত্রভাণ্ডার দখল করার কথা ঘোষণা করেছে মস্কো। সবমিলিয়ে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ দ্বিতীয় দফায় আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে রুশ সেনাবাহিনী। বিশ্লেষকদের মতে, কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর পূর্ব ইউক্রেনের সামরিক অভিযান বাড়িয়ে তুলেছে রাশিয়া। গোটা দোনবাস অঞ্চল দখল করাই তাদের উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যে জেলেনস্কি বাহিনীর হাতছাড়া হয়েছে মারিওপোল। এবার দোনবাসের পতন হলে তা কিয়েভের জন্য বড় ধাক্কা হবে।
এদিকে, সরাসরি রাশিয়ার জয় মেনে না নিলেও মারিওপোল ‘পরাধীন’ বলে জানিয়েছে কিয়েভ। বন্দর শহরটির সব বাসিন্দাকে অবিলম্বে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মেয়র বাদিম বয়চেঙ্কো। সরকারি টিভি চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘এখন সবাইকে উদ্ধার করতে হবে। মারিওপোলে এখনও অন্তত ১ লক্ষ মানুষ আটকে রয়েছে।’ মেয়র বয়চেঙ্কো জানিয়েছেন, তিনি মারিওপোলে নেই। শহরের বাইরে থাকলেও বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর তিনি। কিন্তু এ-ও জানান, সব কিছুই এখন পুতিনের হাতে।মারিওপোল দখলের পর এ বার ভ্লাদিমির পুতিনের নজর পূর্ব ইউক্রেনে। তাঁর নির্দেশে সেখানকার ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) ইতিমধ্যেই হানাদারির অভিঘাত বাড়িয়েছে রুশ সেনা। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের উপরেই নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ।’
পাশাপাশি আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির উদ্দেশে জেলেনস্কির সতর্কবার্তা, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা সূচনা মাত্র। ভ্লাদিমির পুতিন শেষ পর্যন্ত তাঁর সেনাদের এ বার পশ্চিমের অন্য দেশগুলি দখলের নির্দেশ দেবেন। বস্তুত, ইউক্রেনের পশ্চিমের পড়শি দেশ মলডোভার অংশ ট্রান্সনিস্ট্রিয়া নব্বইয়ের দশক থেকেই রাশিয়ার দখলে। মারিওপোল দখলের পর রুশ জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ জানিয়েছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনে রুশ নিয়ন্ত্রণ কায়েম হলে ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার সঙ্গে মস্কোর যোগাযোগের সুবিধা হবে।
যুদ্ধের ৫৯ তম দিনেও রাজধানী কিভ-সব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা রুশ সেনার দখলমুক্ত। এমনকি, তাদের দখল করা বেশ কিছু এলাকা পুনর্দখল করেছে জেলেনস্কির ফৌজ। এই পরিস্থিতিতে কিভ-মুখী অভিযানের গতি কমিয়ে রুশ সীমান্ত লাগোয়া ডনবাস অঞ্চল দখলকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন পুতিন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ডনবাসকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। তার পরের দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
এরই মধ্যে ডনবাস এলাকায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে ৮০ কোটি ডলারের (প্রায় ৬,১১৭ কোটি টাকা) সামরিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন। সেই তালিকায় রয়েছে ৭২টি এম-৭৭৭ হাউইৎজার কামান। এবং তার ১ লক্ষ ৩৪ হাজার গোলা। ১৫৫ মিলিমিটারের এই অত্যাধুনিক কামান সম্প্রতি ভারত কিনেছে। এ ছাড়া ‘ট্যাকটিক্যাল মিলিটারি ভেহিকল্’ (হাম্ভি) এবং ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’ ড্রোন রয়েছে এই তালিকায়। ইউক্রেন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে ওই যুদ্ধ-ড্রোন।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার অভিযোগে ক্রমে চাপ বাড়ছে রাশিয়ার উপর। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের হাইকমিশনার মিশেল ব্যাকলেট জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তাঁদের হাতে যে রিপোর্ট রয়েছে, তাতে স্পষ্ট, সাধারণ মানুষকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে রুশ বাহিনী। দপ্তরের মুখপাত্র রবীনা শামদাসানি বলেন, ‘বুচায় এমন একটি পরিবার নেই, যাদের কেউ খুন হননি।’ এদিকে, গোটা বিশ্বের নিন্দার মুখেও অবিচল পুতিন। তিনি বুচা হত্যাকাণ্ডে জড়িত রুশ বাহিনীকে সম্মানিত করেছেন। এহেন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বক্তব্য, ‘পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে ২০২৩ সাল পর্যন্তও যুদ্ধ চলতে পারে।’ অর্থাৎ এ যুদ্ধ এখনই শেষ হওয়ার নয়।
❤ Support Us