- দে । শ
- মে ৭, ২০২৪
পুরোহিত-কন্যার দৃষ্টান্ত, মাদ্রাসায় পড়ে নজরকাড়া ফল
বাবা পেশায় পুরোহিত। তাঁর কন্যা কিনা আশপাশের হাইস্কুল বাদ দিয়ে ভর্তি হবে মাদ্রাসায়? প্রথমে প্রশ্ন। তারপর নানারকম চাপ। দারিদ্রের ভারে নুয়ে পড়েছেন বারেবারেই। কিন্তু এই চাপের কাছে টলেননি। মেয়ের ভবিষ্যত তৈরির লক্ষ্যে অবিচল কেতুগ্রামের আগরডাঙার বাসিন্দা সমীরণ আচার্য মেয়ে অনন্যাকে গ্রামের হাই মাদ্রাসাতেই ভর্তি করান। সেই মেয়ে দারিদ্র, রোগভোগ-সহ নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে শেষমেশ সাফল্যের মিনার ছুঁতে পারল।
কেতুগ্রামের আগরডাঙা হাই মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী অনন্যা মাধ্যমিকে ৭০০ নম্বর পেয়ে সমালোচক আর রক্ষণশীলদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। সাড়ে ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে অনন্যা। তার বিষয়ভিত্তিক নম্বর বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৫, অঙ্কে ৯৬, ভৌত বিজ্ঞান ৮৭, জীবন বিজ্ঞান ৯৪, ইতিহাস ৮৮, ভূগোল ৯৮, ইসলাম পরিচয় ৬২। সেইসঙ্গে ঐচ্ছিক বিষয় আরবিতে পেয়েছে ৩৯। এই মাদ্রাসা থেকে এবার মাধ্যমিক দিয়েছিল ৪৬ জন। ৪৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।
কেন মাদ্রাসায় পড়ার ইচ্ছে হল? অনন্যার জবাব, ‘আমরা জানতাম আগরডাঙা মাদ্রাসায় ভালো পড়াশোনা হয়। ভালো রেজাল্ট হয়। শিক্ষকরাও খুবই ভালো।’ আরও বলে, ‘আমার ক্লাস ফোরের অনেক সহপাঠী আশপাশের স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়। তাদের অনেকের বাড়ির লোক আমার মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানায়। কিন্তু বাবা আমাকে জেদ করেই মাদ্রাসাতে ভর্তি করে দিয়েছিল।’ অনন্যার অভিজ্ঞতা, মাদ্রাসার পরিবেশ খুব ভাল। স্যররাও আন্তরিক। তবে অনন্যা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে, তখন তার কঠিন অসুখ হয়। স্কুলে যাওয়াই বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল তাকে ‘ড্রপ আউট স্টুডেন্টস’ তালিকাভুক্ত করে। শরীরটা ঠিকঠাক হতেই পড়াশোনার জন্য জেদ ধরে অনন্যা। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও অনন্যার আকুতিতে সাড়া দেন। দশম শ্রেণীতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। স্কুলের পাশে দাঁড়ানোর কৃতজ্ঞতা হিসেবে ভাল রেজাল্ট করার জেদ চাপে অনন্যার। সেই জেদে শান দিতে এগিয়ে আসেন প্রধানশিক্ষক আবদুল ওয়াহাব, সহ-শিক্ষক নাজিবুর রহমান, অতনু গোস্বামী, করণিক শিবরাম সাহারা। বইখাতা কিনে দেওয়া, বাড়তি সময় দিয়ে পড়ানো থেকে সবরকমভাবে অনন্যার পাশে দাঁড়ান। অনন্যার মা অপর্ণা আচার্য বলছিলেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষকরা যেভাবে অনন্যার পাশে দাঁড়িয়েছেন, অন্য কোথাও এতটা সাহায্য পেতাম না। এই সাহায্য যাতে ভবিষ্যতেও মেয়েটা পায় সেই প্রার্থনাই করছি।’ এ বছর আগরডাঙা হাই মাদ্রাসায় উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ খুলেছে। ফলে একাদশে পড়ার জন্য অনন্যাকে আর অন্য কোনও স্কুলে যেতে হবে না। নিজের স্কুলেই বিজ্ঞান বিভাগে পড়বে। অনন্যা নার্স হতে চায়। রোগকাতর মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চায়। তার আদর্শ বিবেকানন্দ
❤ Support Us