- পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ স্মৃ | তি | প | ট
- জুন ১৬, ২০২৪
মৌ সম্পর্কে আমরা যা জানি

মৌ রায়চৌধুরীর সঙ্গে আমার আলাপ দীর্ঘদিনের নয়। পরিচয় নিবিড় ছিল, এরকম দাবি করার বিলকুল সুযোগ নেই। সত্যম রায়চৌধুরীকে যতটা দেখেছি, কাজে—অকাজে তাঁর সান্নিধ্য যে রকম অনুভব করেছি, মৌ–এর বেলায় কয়েক বছর আগেও তা কখনো হয়নি।
আমি যখন ‘আজকাল’ পত্রিকার অন্দরে ও বাহিরে সব সময়ের কর্মী, মৌ তখন হয়তো কেবল নামে আমাকে চিনতেন। সল্টলেকে ওঁদের বাড়িতে, সত্যমের সৌজন্যে আমার যাওয়া- আসা ছিল। যাতায়াতের পরিধি ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং আপ্যায়নের বহর দেখে বুঝতে পারি, এ বাড়ির গৃহিণী আপাদমস্তক সুভদ্রা অতিথিনিষ্ঠ।
টেকনো ইন্ডিয়ার বহুরকম সংস্কৃতিকর্মে, কলকাতার নানা বর্ণের অনুষ্ঠানে, মৌ-এর গান, আবৃত্তি শোনার সুযোগ যখন বাড়ল, তখনই এক ধরন্রয মুগ্ধতা, যার অন্য নাম ‘বিস্ময়’ আমাকে ভাবিয়ে তোলে। জানবার সুযোগ হয়, ফর্সা আয়ত চোখের, প্রাণ চঞ্চল ও বিনয়ী, হাসিখুশির মহিলাটি ভিন্ন ধাতুতে তৈরি। নিজস্বতাই তাঁর ব্যক্তিকতার শৈলী। এ শৈলীকে নির্মাণ করেছে তাঁর রবীন্দ্র চেতনা । এরকম রবীন্দ্র মগ্নতা, ব্যবহারিক বিশ্বাসে রবীন্দ্রময়তার প্রবাহ সচরাচর দেখা যায় না। আমরা অনেকেই রবীন্দ্রনাথকে পড়ি, রবীন্দ্রনাথের গানের সুর আর কথার ঐশ্বর্যে গলা মেলাই, মেতে উঠি তাঁর অনুভবের বাহ্যিক প্রদর্শনে। কিন্তু কবির দাঢ্য, আনন্দময়, বেদনাপ্লুত ভাবাবেগ আর মর্মকে আমাদের কাজে, আমাদের সাজে যুক্ত করবার অনুশীলন আর সঞ্চয় কি খুব বিস্তৃত, পরিশীলিত ?
মৌ রায়চৌধুরীর কৈশোর আর ছাত্রজমানা সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের সীমিত। যিনি মৌ-সত্যমের প্রেমপর্ব, দাম্পত্য, মর্মের চালচিত্র আর তাঁদের হয়ে-ওঠার সাংগঠনিক বৃত্তান্ত লিখবেন, তাঁকে সময়ের ইতিহাস জানতে হবে, বলতেও হবে। এরকম বলবার প্রস্তুতি আর সনিষ্ঠ উদ্যোগে অবশ্য, অতি অবশ্য মৌ রায়চৌধুরীর রবীন্দ্র বিষয়ক ভাবনাচিন্তা ভেসে উঠবে। মৌ কীভাবে রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে বেঁচে থাকতেন, কী করে কবি তাঁকে স্বপ্নে আনন্দের যাবতীয় যজ্ঞে জাগিয়ে রাখতেন, তাঁর দুরারোগ্য অসুখের আড়ালে পরম অবলম্বন হয়ে থাকত কবির প্রজ্ঞা, জীবদ্দশায় এর কিছু চিহ্ন রেখে গেছেন মৌ। কালক্রমে তাঁর এই পরিচয় উন্মোচিত ,আরো আরো উন্মুক্ত হবে। আমরা জানবার সুযোগ পাব, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, গীতা ঘটক, সানজিদা খাতুন, ঋতু গুহকে যেরকম নিরন্তর তাঁর ছায়াতলে আশ্রয় দিতেন প্রগাঢ় রবীন্দ্রনাথ, ব্যবসার নেপথ্যচারী সংগঠক আর ভিন্ন পেশার সদস্য হলেও মৌ-এর প্রতিটি কর্মকেও একইভাবে উর্বরা ফলদায়ী করে তুলত তাঁর রবীন্দ্রময়তা । আবু সয়ীদ আইয়ুব বলেছিলেন, যে কোনো বিষয়ে বলতে গেলেই এসে পড়েন কবি। মৌ প্রসঙ্গেও এ এক নিখুঁত সত্য। তাঁর যে কোনো লেখার শুরুতে, মাঝখানে, শেষ পঙক্তিতে প্রায় অপরিহার্য রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি। মৌ-এর জীবন সখার আসনে দুজন পুরুষকে লক্ষ্য করি আমরা। এক, অশরীরী কবি। দুই, সকালের ভরা দুপুরের সত্যম। বলা দরকার রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে মৌ-এর প্রেম-যাপনের রচনা অসম্ভব।তেমনি, সত্যমের সঙ্গস্রোত ছাড়া সুরলোকে সদ্য প্রবিষ্ট এই যাত্রীর রবীন্দ্রময়তার সূচনা আর স্নিগ্ধ সফর হতে পারে, একথাও ভাবনাতীত কষ্টকল্প।
♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us