Advertisement
  • পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
  • মে ২২, ২০২২

সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ এবং মানবেন্দ্র

কাজী নজরুল ইসলাম সর্বপ্রথম জগত ঘটক ও নিতাই ঘটক এই দুই জনকে তার সৃষ্ট গানের স্বরলিপি করতে বলেছিলেন। তার সন্দেহ হয়েছিল যে, আস্তে আস্তে তার গানসমূহ সংরক্ষিত না হওয়ার কারণে হারিয়ে যেতে পারে।

মিন্টু রহমান
সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ এবং মানবেন্দ্র

কাজী নজরুল ইসলামের অনবদ্য সৃষ্টি তার বৈচিত্র্যপূর্ণ সঙ্গীত ভান্ডার। নজরুল নিজেই বলেছেন, ‘সাহিত্যের কোন শাখায় আমি টিকে না থাকলেও সঙ্গীতে আমি নিঃসন্দেহে বেঁচে থাকবো’। শুধু সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নয় তার সমগ্র সৃষ্টিকর্মে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছে। নজরুল-সঙ্গীতের প্রথম স্বর্ণযুগের শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদ, আঙ্গুরবালা দেবী, ইন্দুবালা, কাসেম মল্লিক [কে মল্লিক], হরিমতি, জগন্ময় মিত্র, সচীন দেববর্মণ, কমলা ঝরিয়া, ধীরেন্দ্রচন্দ্র মিত্র সহ অনেক অনেক গুণী শিল্পী বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানিতে রেকর্ডে গান প্রকাশ করে সমগ্র বাঙালির হৃদয় জয় করে নিয়েছিল– যা অনস্বীকার্য। কিন্তু নজরুল-সঙ্গীতের সুর করা নিয়ে কিছু দাবিদার লক্ষ্য করা যায়। নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে স্বরলিপিকার সুধীন দাশ ও নজরুল ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা রশিদুন নবী সম্পাদিত ‘আদি গ্রামোফোন রেকর্ড ভিত্তিক নির্বাচিত নজরুল সঙ্গীতের বাণী সংকলন’ গ্রন্থে অন্ততঃ ২৫/২৬ জনকে সুরকার হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রন্থটি যেন নজরুল-সঙ্গীতের সুরকারদের জনপ্রিয় করার তাগিদ অনুভব করে পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রামোফোন রেকর্ডের লেবেলে এই সকল সুরকারদের নাম  সংযোজিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু এদের পরিচিতি কোনদিন ছিল না কিংবা এখনো পর্যন্ত কোলকাতা শহরে নাম গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র বাংলাদেশে একটি মহল নজরুলের গানের চেয়ে সুরকারদের স্তুতি গাইতে ব্যস্ত। একমাত্র কমল দাশগুপ্ত প্রথম থেকে নজরুলের সহকারী হিসাবে অনেক গানের সুর করেছেন বলে কিছুটা সত্যতা মেলে– তাও অনেক নজরুল অনুরাগী এ কথা মানতে নারাজ। আমাদেরকে গবেষণায় প্রমাণ করতে হবে যে, নজরুলের গান কি আদৌ অন্যজনেরা সুর করেছে?

কথিত আছে যে, ১৯২৮ সালে কাজী নজরুল ইসলাম যখন ব্রিটিশ শাসকদের চরম রোষাণলে তখন কোলকাতা কেন্দ্রিক কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী শুধুমাত্র পত্র-পত্রিকায় কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নৃত্যনাট্য ও রম্যরচনা প্রকাশ করতে ব্যস্ত। নজরুলের পক্ষে একা ব্রিটিশ শাসকদের সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। স্বৈরশাসক ও স্থানীয় কুচক্রি মহলের হাত থেকে নিস্তার পেতে নজরুল নতুন পথ খুঁজেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে বিগত দিনে বড় বড় ওস্তাদের কাছে সঙ্গীতে তালিম পাওয়া নজরুলের সঙ্গীত পিপাসু মন অগ্নিগিরির স্ফুলিঙ্গে হৃদয়ের মাঝে জেগে উঠতে শুরু করে— তাই তিনি সঙ্গীত রচনায় অধিক মনোযোগী হয়ে পড়েন। ফলে বাঙালি জাতির আশীর্বাদ স্বরূপ কাজী নজরুল ইসলাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতকার হিসেবে আবির্ভূত হন। বলা হয়ে থাকে তিনি পাঁচ হাজারের অধিক গান সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সঙ্গীত অঙ্গনেও উইপোকার প্রবেশ ঘটেছিল তাঁর রচিত গানগুলোকে বিতর্কিত করতে। এক শ্রেণীর নজরুল ভক্ত ও অনুরাগী প্রায় চব্বিশ ঘন্টা নজরুলকে ঘিরে থাকতো মৌমাছির মতো, গ্রামোফোন কোম্পানির চুক্তিনামা অনুযায়ী গান রচনা, অর্ডারি গান, বিভিন্ন গুণী ও খ্যাতিমান শিল্পীদের জন্য মৌলিক গান রচনা ইত্যাদি তার নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছিল। এই সুযোগে অনেক গান হারিয়ে গেছে, সংরক্ষণ করা হয়নি বা চুরি হয়ে গেছে– যা হাতে গুনে বলা অসম্ভব। তবে সে সময় থেকেই নজরুল জানতেন যে, তার গান খোয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে তাকে তার আপনজন বহুবার বলেছেন সত্য, তবে নজরুল তার উত্তরও দিয়েছেন বিনীতভাবে– ‘সমুদ্র থেকে এক ঘটি জল তুলে নিলে সমুদ্রের কি ক্ষতি হয়’? এভাবেই হাসিমুখে উত্তর করেছেন। নজরুল জানতেন যে, তার গান খোয়া যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। সবচেয়ে মারাত্মক ভুলটি হয়েছে গ্রামোফোন কোম্পানির প্রকাশিত রেকর্ড-লেবেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেয়ার কোন ব্যবস্থা বা নিয়ম-কানুন রক্ষা করা হয়নি— যার ফলে রেকর্ড-লেবেলে গীতিকারের-সুরকারের নাম ঠিকমত লিপিবদ্ধ হয়েছে কিনা তা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। নজরুল তার গান রচনা, সুর সংযোগ ও শিল্পীকে শিখিয়ে তার কাজ শেষ করতেন কিন্তু রেকর্ড বের হবার পর লেবেলে কি ছাপানো হয়েছে কোনদিন তা দেখার চেষ্টা করেননি। ফলে একশ্রেণীর মতলববাজ অসাধু নজরুল-বিদ্বেষী নজরুলের নাম লিপিবদ্ধ না করেই বাজারে রেকর্ড ছেড়ে দিয়েছে কিংবা অন্যের নাম সংযোজন করে রাতারাতি নাম কুড়াতে চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন কোম্পানির ৭৮ আরপিএম গ্রামোফোন রেকর্ডগুলো পরীক্ষা করলে এর সত্যতা মিলবে।

নজরুলের অনেক গান আছে যেখানে লেবেলে কথা ও সুর লেখার প্রয়োজন হয়নি, কিংবা শুধুমাত্র আধুনিক গান লিখে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অনেকেই এই রেকর্ড-লেবেল এর দায়িত্বে থাকা কর্মচারীকে এর জন্য দায়ী করেছেন। এদের মধ্যে এখন আর কেউ জীবিত নেই। সদিচ্ছা থাকলে পঞ্চাশ বছর আগে এদের নাম, ঠিকানা জোগাড় করে তাদের কাছ থেকে ঘটনা উদঘাটন করা বা সঠিক তথ্য পাওয়া যেত। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, একটি মানুষও তাদের কাজীদার জন্য এতটুকু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে, নজরুলের গান অযত্নে, অবহেলায় অদৃশ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী আজও বেঁচে আছে। তাই নজরুল-সঙ্গীতের সুরকার বা গীতিকারের নাম এর সংখ্যা পঁচিশ কেন, প্রয়োজনে পঁচিশ ‘শ হলেও এটা কোন গবেষণার বিষয় নয়, একটি গোষ্ঠী নজরুলকে একজন সাধারন কবি হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে এটাই তো স্বাভাবিক। দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, পঁচিশজন সরকারের নাম পাওয়া গেলেও তারা আবার একটি বা দু’টি গানের বেশি সুর করেনি, কিংবা নজরুলের স্টাইল থেকে আলাদা কোন মুন্সিয়ানা দেখাতে সক্ষম হননি। এক্ষেত্রে একমাত্র কমল দাশগুপ্তের সুর করা গানগুলি শুনলেই বুঝা যায় যে, গানগুলো যথেষ্ট আলাদা মেজাজে সুরারোপিত ও গীত। এমনকি তার প্রতিটি গান যেন নজরুলের একমাত্র সহকারি হিসাবে নিজেকে অসামান্য সুরকারের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে— যেখানে নজরুলের  জাদুময়ী সুরের ব্যঞ্জনা যেন সমস্ত গানে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে। অথচ আলাদা সত্ত্বা নিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে আজও মাথা উঁচু করে পর্বতসম দাঁড়িয়ে আছেন। অন্যদিকে তিনি বাংলা গানে একটি যুগের স্রষ্টাও বটে, তার গান বাংলা সিনেমা ও গ্রামোফোন কোম্পানিতে আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।  সঙ্গতঃ কারণে কমল দাশগুপ্তকে অনুসরণ করে তার সহ-ধর্মিণী ফিরোজা বেগম এত বড় মাপের নজরুল সঙ্গীতশিল্পী হতে পেরেছিলেন বলে ধারণা করা যেতে পারে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, অন্য সুরকারদের কারো নাম-গন্ধ পর্যন্ত বাংলা গানের জগতে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফিরোজা বেগমের সুরেলা ও জাদুময়ী কন্ঠে ও কমল দাশগুপ্তের অনুপ্রেরনায় দ্বিতীয় দফায় নজরুল-সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ সৃষ্টি হয়। ফিরোজা বেগম বহু বছর ধরে নজরুল-সঙ্গীতের সুকণ্ঠী গায়িকা হিসাবে কোলকাতা শহরে এক নম্বর স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন। উল্লেখ করা দরকার যে, ফিরোজা বেগমের পূর্বে অনেক বছর ধরে নজরুলের গান অনুপস্থিত ছিল– সেই শূন্যস্থানকে পূর্ণ করে ফিরোজা বেগম নজরুল-সঙ্গীতের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা আনয়ন করেন। /১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ফিরোজা বেগম স্বপরিবারে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন– এরপর আস্তে আস্তে কোলকাতা শহরে নজরুল-সঙ্গীত কে বনবাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফিরোজা বেগমের গাওয়া নজরুল-সঙ্গীত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমল দাশগুপ্তের সুরনির্ভর ছিল। যদিও তিনি নজরুলের সুর করা অনেক গান অশুদ্ধ সুরে গেয়েছেন– যা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এমন মেধাবী, দক্ষ ও অপূর্ব কন্ঠের অধিকারিনী শিল্পী ফিরোজা বেগমের গাওয়া নজরুল-সঙ্গীত অস্বীকার বা প্রতিবাদ করার মতো সাহস কারো হয়নি। এক্ষেত্রেও নজরুলের শুদ্ধ সুর নিয়ে কথা থেকেই যাবে। কারণ, ফিরোজা বেগম আদি গ্রামোফোন রেকর্ড অনুসরণ করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি। এর পক্ষে যুক্তি হিসাবে কমল দাশগুপ্তকে অধিক দায়ী হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। কারণ, তিনি প্রথম থেকে শেষ অবধি নজরুলের সহকারী হিসাবে পাশে থেকেছেন এবং তাকেই নজরুলের সৃষ্ঠ গানের চাক্ষুস সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

ফিরোজা বেগমের গাওয়া নজরুলের গান সঠিক নয়– এমন কথা বলতে পারে এই উপমহাদেশে কারো সাহস নেই। কারণ, তিনি হৃদয়ে দিয়ে নজরুলের বাণী ও সুরকে ধারণ করে সুকন্ঠি গলায় পরিবেশন করতেন বলে গানগুলো যেন সত্যি সত্যি কথা কয়ে উঠেছে। তাই আদি গ্রামোফোন কোম্পানির রেকর্ড অনুসরণ করা হয়নি সত্যি– তিনি যে গলার কারুকার্যে বিভিন্ন জায়গায় অর্নামেন্টস পরিয়ে গানগুলো আরো সুমধুর করেছেন তা অস্বীকার করা যায় না। অন্যদিকে নজরুল-সঙ্গীত উচ্চাঙ্গ ঢঙ্গের সৃষ্ঠ হওয়াতে গানগুলো রাগ-রাগিণীর উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে যথেষ্ট স্বাধীনতা পাওয়া যায় অধিকাংশ গানে। ফিরোজা বেগম যে সুযোগ ব্যবহার করতে ছাড়েনি বলে তার গান আদি রেকর্ডের সাথে স্বভাবতঃই অমিল রয়ে গেছে। কমল দাশগুপ্ত নজরুলের মানসিকতা ও রাগাশ্রয়ী গানের ব্যাপারে কাজীদা’র দেয়া স্বাধীনতাটুকু জানতেন বলে ফিরোজা বেগমকে কোন রকম বারণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি এবং তার তত্ত্বাবধানে অনায়াসে ফিরোজা বেগমের গানগুলো রেকর্ডে ধারণ করে প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে কমল দাশগুপ্তের নজরুল-মানসিকতা, স্বাধীনতাবোধ, সঙ্গীত দর্শন বিষয়ে কিঞ্চিৎ ধারণা অবশ্যই পাওয়া যায়। অন্যদিকে আজ পর্যন্ত ফিরোজা বেগমের কোন গানকে অশুদ্ধ বলার সাহস কারো হয়নি। উল্লেখ করা দরকার যে, বাংলাদেশে সরকারী প্রতিষ্ঠান নজরুল ইনস্টিটিউটের স্বরলিপি সত্যায়ন পরিষদের তিনি সভাপতি ছিলেন কোন মতপার্থক্য ছাড়া। এখানেই প্রমাণ করে যে, অন্তর থেকে সকল সদস্য ফিরোজা বেগমকে মেনে নিয়েছিলেন অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাভরে এবং দুই বাংলার প্রতিটি বাঙালি ফিরোজা বেগমের কন্ঠে নজরুল-সঙ্গীত শুনে হৃদয় মনে পরিতৃপ্তিবোধ উপলব্ধি করেন।

তৃতীয় দফায় নজরুল-সঙ্গীতের স্বর্ণ যুগের শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ১৯৭০ সালে হিজ মাস্টার্স ভয়েজ কোম্পানির ট্রেনার শ্রী বিমান মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে কয়েক শ’ নজরুল-সঙ্গীত গেয়ে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নজরুল-সঙ্গীতের অনুরাগী শিল্পীদের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। এ সময় মানবেন্দ্রকে অনুসরণ করে কোলকাতা শহরে শত শত নজরুল সঙ্গীতশিল্পী তৈরি হওয়ার সুযোগ পায়। অনেকে আধুনিক গান ও উচ্চাঙ্গ-সঙ্গীতের পাশাপাশি নজরুল-সঙ্গীতকে প্রাধান্য দিয়ে চর্চা করতে শুরু করে। ফলে নজরুল-সঙ্গীত বহুবছর পর বনবাস থেকে ফিরে এসে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। মাত্র ৫ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪শে মে কাজী নজরুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে সপরিবারে বাংলাদেশের ধানমন্ডিতে নিয়ে আসেন। নজরুলের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদনপূর্বক তিনি এই কাজটি করেছিলেন বলে সর্বজন স্বীকৃত। এর ফলে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জ থেকে তাদের প্রিয় কবি নজরুলকে এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ধানমন্ডিতে আসতে শুরু করে। অন্যদিকে নজরুল-সঙ্গীতের তরুণ শিল্পীদের মুখে শুধুই মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের রেকর্ড অবলম্বনে নজরুল-সঙ্গীত গাওয়া অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ মানবেন্দ্র মুখার্জীর গাওয়া নজরুল-সঙ্গীত বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৬ সালে সরকারীভাবে নজরুল ইন্সটিটিউট তৈরি হবার কয়েক বছর পর ‘নজরুল সঙ্গীত সত্যায়ন পরিষদ’ গঠিত হয়। এরপর মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানগুলিকে অশুদ্ধ সুরে গাওয়া হয়েছে বলে নিষিদ্ধ ও বাতিল বলে গণ্য করা হয়। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে নজরুল-সঙ্গীত আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে ‘শুদ্ধ বাণী ও সুর’ শিরোনাম গাওয়া শুরু হয়। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, বাংলাদেশের নেয়া এই ধরনের সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করে একশ্রেণীর সুযোগ-সন্ধানী ও নজরুল-বিদ্বেষী কোলকাতায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানগুলোকে বিলুপ্ত করার সুবর্ণ সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে তখন থেকে নজরুল-সঙ্গীতের সুর নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দেয়। অনেকে মনে করে যে, এরকম ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রকৃতপক্ষে নজরুল-সঙ্গীতকে কৌশলে আঘাত করার অপচেষ্টা হয়েছে মাত্র, নজরুল-সঙ্গীতের নতুনভাবে মর্যাদা বা শ্রীবৃদ্ধি করার মোটেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তবে সম্পূর্ণ স্বরলিপি অনুসরণ করে যারা গান তুলে থাকে তাদের ক্ষেত্রে ‘আদুভাই মার্কা’ পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে মাত্র। ধারাবাহিকতায় নজরুল-সঙ্গীতের স্বর্ণযুগের তৃতীয় পর্যায়ের শিল্পী বলতে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে কেউ ভালোবাসে না– একথা একজন বাঙালিও বলার সাহস রাখে না। তারপরও ওই শিল্পীর প্রতি একশ্রেণীর নজরুল শিল্পীদের এত রাগ ও অভিমান কেন তা বলার সঙ্গতঃ কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা কিংবা সমালোচনা হয় নানাভাবে। যেমন–

ক.  মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় নজরুল-সঙ্গীতের আসল গায়কী রক্ষা করে উচ্চাঙ্গ ঘরানার রাগাশ্রয়ী গানগুলোকে পরিপূর্ণতা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে কেউ কেউ তা মেনে নিতে পারেনি। কারণ, ওরা নিজেরা মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মত পরিপক্ক [ফিনিসদ] শিল্পী হয়ে গান গাইতে পারেনি বা তার মতো সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেনি বলে অনেকে মনে করে।

খ.  আধুনিক শিল্পী থেকে হঠাৎ করে নজরুল-সঙ্গীতে আগমন ও রাতারাতি জনপ্রিয়তা অর্জন একটি হিংসা-বিদ্বেষের অন্যতম কারণ হতে পারে। বছরের পর বছর চর্চা করেও অনেক নজরুল সঙ্গীতশিল্পী একটি গানের জন্য নজরুল অনুরাগীদের ভালোবাসা লাভে সমর্থ হয়নি। অথচ কী এক জাদুময়ী কন্ঠে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় গলায় কারুকাজ করে নতুন ঢঙ্গে নজরুল-সঙ্গীত গাইলেন যে, প্রতিটি মানুষ অন্ধের মত তাকে ভালবাসতে বাধ্য হলো।

গ.  মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গলায় বেশি কাজ করায় গান শুনতে ভালো লাগে না, এ যেন নজরুলের গানকে বিকৃত করা হয়েছে বলে মানবেন্দ্র বিরোধীদের আক্ষেপ বলে মনে করা হয়। তাই মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় নজরুলকে অমর্যাদা করে তিনি স্বাধীনতার নামে এর অপব্যবহার করেছেন।

ঘ.  এ দেশের কিছু প্রবীণ শিল্পীদের মতে নিজেরা যেহেতু এত কাজকর্ম করতে পারে না। তাই অন্য কেউ করুক তা ঠিক নয় বলে মনে করে। তাই মানবেন্দ্র নজরুল এর গান অশুদ্ধ গেয়েছে। অথচ ফিরোজা বেগম নজরুলের প্রতিটি গান অতি সূক্ষ্ম কারুকার্যের মাধ্যমে সুরেলা কণ্ঠে পরিবেশন করে প্রতিটি মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছে, এ ব্যাপারে টু শব্দটিও নেই। অথচ ফিরোজা বেগমের গাওয়া নজরুল-সঙ্গীত কারো পক্ষেই তার মতো করে গাওয়াটা মোটেও সম্ভব নয় কিন্তু তার অশুদ্ধ সুরে গাওয়া গানগুলো নিয়ে ভুলেও কোনো সমালোচনা শুনতে পাওয়া যায় না। অথচ অপূর্ব গায়কীতে, সুরেলা কন্ঠে, রেয়াজি গলায় নজরুল-সঙ্গীত গেয়ে এই সাধক শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় যেন অপরাধ করেছে।

ঙ.  কলকাতায় একশ্রেণীর মানুষ মানবেন্দ্র মুখার্জীর মুখে এত ভাল নজরুল-সঙ্গীতকে কিছুতেই গ্রহণ করতে পারেনি। তাদের মতে বিমান মুখোপাধ্যায় রাগ-রাগিণীর ব্যবহারের সুযোগে নজরুল-সঙ্গীতকে অতিরিক্ত রাগাশ্রয়ী ও অলংকার ব্যবহার করে জটিল করে তুলেছে– যা সাধারণ মানুষের জন্য মোটেও বোধগম্য নয়। তাদের মতে, সঙ্গীতের পাণ্ডিত্য আর নজরুল-সঙ্গীত পরিবেশন এক নয়। মানবেন্দ্র মুখার্জীর চাচা নজরুল সান্নিধ্যধন্য শিল্পী সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মাঝেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সিদ্ধেশ্বর মুখার্জি এ নিয়ে বারবার মানবেন্দ্রকে বকাঝকা করেছেন। এজন্য মানবেন্দ্র নিজ কাকার সামনে যেতে পর্যন্ত ভয় পেতেন, কিন্তু তিনি তার গায়কী বন্ধ করেননি। অথচ বাংলাদেশে নজরুল একাডেমীর আমন্ত্রণে দেশ স্বাধীন হবার পর সিদ্ধেশ্বর মুখার্জি ও আঙ্গুরবালা দেবী ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গান গাইতে এসে নজরুলের প্রকৃত শিষ্য আঙ্গুরবালা দেবী স্বাধীনভাবে নজরুল-সঙ্গীত পরিবেশন করে মানুষের হৃদয়-মন কেড়ে নিয়েছিলেন। সেই সময়ে আঙ্গুরবালা দেবীর সঙ্গে হারমোনিয়াম বাজিয়েছিলেন সিদ্ধেশ্বর মুখার্জি, কিন্তু আঙ্গুরবালা দেবীর এই স্বাধীনচেতা গায়কী নিয়ে তিনি কোন কথা বলেননি। মানবেন্দ্র মুখার্জীর সত্যিকার অর্থে ছিলেন একজন সাধক শিল্পী, গান ছাড়া তার কোন পেশা ছিল না বলে শোনা যায়। তাই সারাদিন গানের সাথেই ছিল তার আত্মীয়তা। তার কোন ছাত্রছাত্রী নেই বা গান শেখানোর ইচ্ছাও ব্যক্ত করেননি কোনদিন। নিজের হৃদয়ে মাত্রাতিরিক্ত আবেগ ও সুরব্যঞ্জনার কারণে সারাক্ষন অন্তর ভরে থাকতো সঙ্গীত সাধনা ও চর্চায়। এ কারণে সম্ভবতঃ তিনি সময় পাননি কেউকে তালিম দিতে কিন্তু সঙ্গীত অঙ্গনে তার দাপট কেউ আটকাতে পারেনি। এই সুর সাধকের মধ্যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রভাব ও তালিম থাকায় তিনি আধুনিক, রাগপ্রধান গান ছেড়ে দিয়ে সম্ভবতঃ শেষ পর্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ নজরুল-সঙ্গীতের ভান্ডারে প্রবেশ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তার কন্ঠে নজরুল-সঙ্গীতের সুর ও বাণী একাকার হয়ে মিশে গিয়ে এক মধুর রস ব্যঞ্জনার আবহ তৈরি করেছে। যে কারণে তিনি নজরুল-সঙ্গীতের এক মুকুটহীন সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন। আজও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া নজরুল-সঙ্গীত শোনেন না- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

কাজী নজরুল ইসলাম সর্বপ্রথম জগত ঘটক ও নিতাই ঘটক এই দুই জনকে তার সৃষ্ট গানের স্বরলিপি করতে বলেছিলেন। তার সন্দেহ হয়েছিল যে, আস্তে আস্তে তার গানসমূহ সংরক্ষিত না হওয়ার কারণে হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এতকাল পরে এসে শোনা যায় যে, জগত ঘটক এবং নিতাই ঘটক কৃত স্বরলিপিও সঠিক নয়। এই সমস্ত গবেষকদের মতে আসল সত্য হলো গ্রামোফোন রেকর্ড ও রেকর্ডের গায়ে ছাপানো লেবেল। কিন্তু এই লেবেলের লেখাও যে ভুল তা ওই সমস্ত অদৃশ্য গোষ্ঠী মানতে নারাজ। এখানেই ওই কুচক্রী মহলের কারসাজী ও চতুরতা পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে। যদিও নজরুলের কোন গবেষণা না করে বা সঙ্গীতে অবদান না রেখে এদেশে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে পুরষ্কার, পদক অর্জন ও এককালীন টাকা পাওয়া যেখানে সম্ভব– সেখানে আর কিছু বলার থাকে না। একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল প্রতিবছর নজরুলের জীবন্ত অনুষ্ঠান কবির জন্মদিনে করে আসছে– সেখানে পদক ও পুরস্কার দেয়া হয় গুণীজনকে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী অদৃশ্যভাবে পর্দার আড়াল থেকে বাহুবলে পদক-পুরস্কার প্রদান করে থাকে অজ্ঞ ও মেধা-দক্ষতাহীন মানুষদের– যা কোন কোন সময় রীতিমত সমালোচিত হয়েছে পত্র-পত্রিকায় ও নজরুল কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবাদী ভাষায়। এই ঘটনা ও ব্যাপারটি ঘিরে নজরুল অনুরাগীদের মাঝে আরো সন্দেহ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে চলেছে। ফিরোজা বেগম, সোহরাব হোসেন, ফেরদৌসী রহমান, খালিদ হোসেন, মোস্তফা জামান আব্বাসীর মত উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পীদের কথা আলাদা কিন্তু এমন সব শিল্পী ও গবেষক নামধারী ব্যক্তিকে এই সম্মান দেয়া হয়েছে- যা একেবারেই অর্থহীন। শুধুমাত্র স্বরলিপি লিখন, গানের শিক্ষকতা করে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার-পদক আশা করা ঠিক নয়। মৌলিক গবেষক কিংবা জনপ্রিয় শিল্পীদের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শন করা অবশ্যই জাতীয় কর্তব্য। সেখানে পদক-পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। অত্যান্ত দুঃখের বিষয় এই যে, এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার রবীন্দ্র-গবেষক বলে বাজারে খ্যাতি রয়েছে এবং রবীন্দ্র পদক-পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছে। অথচ ভারতের মত সঙ্গীত প্রধান দেশে এরূপ ঘটনা বিরল। এদেরই উৎসাহে একদল অবুঝ ও লোভী সঙ্গীত শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়-এর মত শিল্পীকে অমর্যাদা করতে সাহস পেয়েছে। এদের অনেকেই নজরুল-সঙ্গীতকে পেশা ও পুঁজি করে বাড়ি-গাড়ি ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে সংসার চালাতে সক্ষম হলেও নজরুলের মূল্যায়ন ও মর্যাদাবোধকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে নজরুল-সঙ্গীতের প্রচলিত সুর ও আদি রেকর্ডভিত্তিক সুরের বিতর্কে নাকাল হয়ে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে অনেকেই নজরুল-সঙ্গীত গাওয়া ও শেখা বন্ধ করে দিয়েছে। যে কারণে আজ মফস্বলে নজরুল-সঙ্গীতের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী তেমনটা খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ এই সুযোগে ওই সমস্ত লোভী শিল্পী শিক্ষকতা করে শুদ্ধ সঙ্গীত শেখাবার নামে নিজ বাসা-বাড়িতেই প্রাইভেট টিউশনি চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের পকেট ভর্তি করতে। ফলে স্বভাবতঃই তাদের মাসিক আয় অনেকটা বেড়ে গেছে। খোলাখুলি ভাষায় বলতে হয় যে, শুদ্ধ সঙ্গীতের উছিলায় মানবেন্দ্রকে অবৈধ ঘোষণা করে নিজেদের আয় উপার্জন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকার কারণে তারা যে কারো ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা হওয়ার কথা নয়। অথচ বর্তমান কালে বিভিন্ন শিল্পীরা যেভাবে নজরুল-সঙ্গীত গাইছেন তাতে আরেকটি স্বর্ণযুগ আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাই মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পর চতুর্থ দফায় নজরুল-সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ ভবিষ্যতে আসবে কিনা বলা মুশকিল।

নজরুলের সুর পাওয়া যায়নি, রেকর্ড পাওয়া যায়নি এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে নিঃসন্দেহে আমাদের সকল নজরুল প্রেমীদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমতঃ মানবেন্দ্রের কন্ঠে গাওয়া প্রায় সকল গানগুলোকে বৈধতা দিয়ে সরকারীভাবে বিবৃতি প্রদান করতে হবে, যদিও নজরুল জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেশের প্রাচীনতম নজরুল চর্চা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল একাডেমী সারা দেশে প্রতিষ্ঠিত জেলা, উপজেলা শাখাগুলোর মাধ্যমে মানবেন্দ্র মুখার্জি গীত গানগুলোকে গাওয়ার বৈধতা প্রদান করেছে। এই ঘোষণার পর থেকে বেসরকারী অনুষ্ঠানে মানবেন্দ্র মুখার্জীর কন্ঠে গাওয়া গানগুলো যে কোন নজরুল শিল্পীর পরিবেশনের ক্ষেত্রে আর বাধা হয়ে থাকবে না। নজরুল-সঙ্গীতের মহান শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

♦–♦♦–♦♦–♦


❤ Support Us
error: Content is protected !!