Advertisement
  • গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
  • জানুয়ারি ১৯, ২০২৫

ব্রীজ

বনানী দাস
ব্রীজ

অলঙ্করণ: দেব সরকার

 
সাইকেলটা নিয়ে সে তীব্র গতিতে সমুদ্রের ধারের সর্পিল পথ ধরে ফিরে আসতে থাকে । ভেতরে বুড়বুড়ি কাটছে বুড়ো ও’নীলের স্প্যানিশ গিটারের ঝিকমিক ও নীল স্নেহজ বিদ্রুপভরা চোখ দুটো !
 
ওই বিদ্রুপের প্রাচির পেরিয়ে সে, অসীম, এক ভারতীয় সন্তান উঁকিঝুঁকি দিয়েছে ও’নীলের ভেতরে । সে কেবল তিনি এক আলোকচুম্বী সঙ্গীত-মানুষ বলেই নয়, অসীমও হাত খালি, বুক খালি এক পিপাসু, তাই !
 
এই মানুষের আশপাশে ঘুরঘুর করবে অসীম, যে বর্ণচ্ছটা ও’নীলের মগ্ন-সঙ্গীত-উৎসার থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে চারপাশে, তার আত্তীকরণ হতে থাক্ অসীমের মধ্যে, সে চায় । তাই ক্ষান্ত দিয়েছে প্রাইভেট ব্যাঙ্কের চাকরিটাতে । মিসেস জর্জিয়ার সাজানো ভাড়াবাড়িটা ত্যাগ করেছে । হ্যাঁ, টাকার অভাবেই । কিন্তু নেহাৎ করুণা বা অভ্যস্ত বিদ্রুপে ও’নীল তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর গোটা দশেক ক্ষুদে ছাত্রছাত্রীর গানচর্চার। সেটুকু ছাড়া অসীমের আর কোন দায়বদ্ধতা নেই কোথাও। অনেক অন্বেষণে সে পেয়ে গেছে সমুদ্রের ধারের এই ছোট ফ্ল্যাটটা। এক মহামারীর পর এই নর্থ আমেরিকান শহরটাতে অনেককাল খালি পড়ে আছে কয়েক কিলোমিটার ব্যপ্ত এক সারি ফ্ল্যাট।
 
ছোঁয়াচে ব্যধির ভ্রুকুটিতে সব পরিবারই পালিয়ে বেঁচেছে বা মরেছে সেই কবে ! প্রচন্ড বেগে প্যাডেল চালায় অসীম। এই পথ সম্পূর্ণ নির্জন। আজও কেউ থাকেনা, তবে সুষ্ঠু দলিল আছে উত্তরপুরুষের সুঠাম কব্জায়। যে সম্পত্তি কেউ কিনতে বা ভাড়া নিতে চায়না একশ বছর ধরে, তার প্রতি একটা বেয়ারা উপেক্ষা থাকেই আজকের ছেলেদের মেয়েদের।
 
তবু যখন অসীম, এক মধ্য-তরুণ একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চাইলো, তাদেরই একজন উইলি, খুশি হয় । আর অন্তত ছ’টি সঙ্গীত-যন্ত্র নিয়ে আসা সে, পুরু বালি আর ধুলো ঝেড়ে আবিষ্কার করে এই সুদূরের আবাস। তালা নেই, এদিকে অনন্তকাল কেউ আসেনা। অসীম দরজা ঠেলে ঢুকে গীটারটাকে দেওয়ালের হ্যাঙারে রাখে । খুলে দেয় পূবের দরজা । ঝম্ ঝম্ করে সমুদ্র এসে পড়ে দৃশ্যে ! বেলা তিনটে। আবহাওয়া মনোরম !
 
নীচু হয়ে সাগরকে অভিবাদন জানায় সে। তার পর পোষাক খুলতে থাকে। একটি একটি করে শেষটিও ছুঁড়ে দেয় ঘরের কোণে। অতঃপর সমুদ্রের দিকে চেয়ে দু’হাত ওপরে তুলে দাঁড়ায় । মনে বিড়বিড় – অয়ি অসীম রহস্যের সশব্দ শক্তিপুঞ্জ, তুমি তোমার সমস্ত অজানা নিয়ে ঢুকে যাও এই আমির মধ্যে ! তোমাকে আমি সুরের মধ্যে ধরি, গাঁথি, তোমার আদর পাই !
 

ধানক্ষেতে, কফিশপে দেশটার শ্রমিক-বিক্ষোভে সমাহিত, ভীতিহীন শ্রমিকদের আশপাশে ঘুরেছে অসীম, তারপর গুরুর পাশে বসে বাজিয়েছে নিজেকে। ও’নীল এত সমৃদ্ধ বান্ধব যে বেশির ভাগ সময়েই কোন প্রতিক্রিয়া থাকে না তাঁর, শুধু পাহাড়ের পাদদেশে বসে বাঁশি বাজাবার অনুভূতি হয়

 
ধ্যানের শেষে প্রায় টলতে টলতে ঘরে আসে সে । হীটার জ্বেলে কৌটোর মাংসে জল ঢালে। কিছু মুহূর্তের মধ্যেই খদবদ করা মাংসের গন্ধ আন্দোলিত করে।
 
– আজ ভাত হবে ! বলে, কৌটো থেকে চালমেপে নেয় দুবারের মতো। কাল দুপুরেও এই খাবারই খাবে সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুটে ওঠা ভাত অসীমকে ডেকে নেয়।
 
খেতে খেতে দূরের ভারত দেশের মেদিনীপুরের ছোটো গ্রাম তালবন্দীর কথা মনে ভাসে। আর আবছা মা। মায়ের মুখের ভাব সে পড়তে পারেনা এতদূর থেকে ! এই ছাব্বিশেই কি তার কাছে সবটা পূর্বজন্মের মতো হয়ে গেছে !
 
গুরু ও’নীলের কথায় গত দুদিন ছিল সে হাঞ্চব্যাক বস্তিতে এক স্ট্রিট সিংগার তরুণের কাছে । চরম নেশার আড্ডার পাশেও কালো ছেলেটা ( ম্যাক) নিবিষ্ট প্র্যাকটিস করে চলে, পরদিন রাস্তার ধারে যা গাইবে, বাজাবে সেসব । সঙ্গে শ্রমিক, রাস্তা ঝাঁট দেওয়া লোকেদের বাজিয়ে টিম । শেষ বিকেল থেকেই শহরের কয়েকটি জায়গাতেই শুরু হয় নাচ,গান, শরীরের কসরৎ প্রদর্শন। দর্শক দুই বা দুশো, যাই হোক শিল্পীদের ঘষামাজা চলেই !
 
এই বিজনে অসীম গিটার নিয়ে সমুদ্রে পিঠ দিয়ে বসে। উদ্ধার করে চলে ভেতরের অনুরণন। দুদিন ধরে দেখেছে ম্যাক ও ম্যাকের পারিপার্শ্বিক। পিঠ কুঁজো একটা বাহিত জীবন। সুর কেমন সায় দেয় দেখা যাক। অসীম নিমজ্জিত হয় !
 
গভীর রাতে অজানা একটুকরো কষ্ট সাগরপাখির ঠোঁটে উড়ে এসে অসীমকে ঘুম পাড়ায়। সে জানতে পারেনা আরও কত রাতে প্রবল ঝড় এসেছিল। সাগর হয়েছিল অসহিষ্ণু। সকালে সে যখন কাঁচের দরজাটি খুলে নেমে যায় স্নানে, তখন সাগররাজের শান্ত, উদ্দীপ্তরূপ।
 
এইমতো কতদিন, ধানক্ষেতে, কফিশপে দেশটার শ্রমিক-বিক্ষোভে সমাহিত, ভীতিহীন শ্রমিকদের আশপাশে ঘুরেছে অসীম, তারপর গুরুর পাশে বসে বাজিয়েছে নিজেকে। ও’নীল এত সমৃদ্ধ বান্ধব যে বেশির ভাগ সময়েই কোন প্রতিক্রিয়া থাকে না তাঁর, শুধু পাহাড়ের পাদদেশে বসে বাঁশি বাজাবার অনুভূতি হয়।
 
ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে অসীম প্রায়শই সাগর ধ্যানে উত্তীর্ণ হয়, সেখান থেকে প্রায় এক কিমিব্যপী পরিত্যক্ত ফ্ল্যাটগুলোর বারান্দা ক্রম বিলিয়মান কুয়াশা বা রোদের ঝলকানিতে । জনহীন এক শূন্যতা চারদিকে ! সম্পূর্ণ জন্মের পোষাকে ও মুডে অসীম ক্রমেই ভুলে যায় সেসবের অস্তিত্ব !
 
সমুদ্রের কাছে দীর্ঘ সময় থাকলে পাঁচ ইন্দ্রিয়ই বিকল হয়ে যায় । শুধু সাগরের মহাকান, মহাত্বক, মহাজিভ, মহাচোখ ও মহাঘ্রাণ জেগে থাকে ! ব্যস !
 
এক ভোরে উদিত সূর্যের খুনখারাবি পুলকের মধ্যে অসীম হঠাৎ বহুদূরের এক বারান্দায় কিছু নড়তে দ্যাখে । তারপর আর দ্যাখে না । সীগাল বা অন্য কিছু কি ! সমুদ্রের তো সবই বৃহৎ! তবে কি মানুষ !
 
কতদিন মনের ভুল ভেবে চলে যায়, তার হিসেব নেই । অসীম, তালবন্দী গ্রামের তারামণির ছেলে, মা বাবা সবাইকে আজ দ্যাখে ও’নীলের বৃত্তে । যিনি তাকে শুধু ঠেলে দেন অন্যবৃত্ত — মানুষের ওঠাপড়া যদি গায়ে না লাগে, সে কিসের গানওয়ালা !
 
তাই নিজের প্রতিষ্ঠিত হতে আসা ভবিষ্যতকে ক্রমে নিঃস্ব করে অসীম মানুষের আবেগ, উষ্ণতা, প্রবণতা খুঁজে চলে । আর খোঁজে এ দেশের গান । তার স্মরণেই থাকেনা দূরের বাতায়ন ।
 
আবার হঠাৎ একদিন বহু দূরের বারান্দায় একলাই দাঁড়ানো কুয়াশা আর ঢেউ এর মাতনের মাঝে একটি শান্ত স্থির কাঠামো তাকে টানে ! তারপর একসময় নেই !
 
মনের একমুখীনতা নষ্ট হলো । এই পরিত্যক্ত জায়গায় আর কেউ আছে এই সত্য তাকে বিচলিত করে । শহর থেকে বেশি পাওয়ারের বায়নোকুলার নিয়ে সে চারদিন ঢেউ, কুয়াশায় আচ্ছাদিত সেই বারান্দার দিকে চেয়ে থাকে বেলা আড়াইটে থেকে ছ’টা । চতুর্থদিন ছ’টা নাগাদ সে এলো ! চিত্রায়িত তরঙ্গের মতো এসে দাঁড়ালো আসলে ! অসীম কেঁপে উঠল, নারী ! তার দম বন্ধ হয়ে গেল, শরীরের বাঁকগুলি স্পষ্ট, তবে কি সে দাঁড়িয়ে তার জন্মের পোষাকে !
 
তাড়াতাড়ি বায়নোকুলার ঘুরিয়ে নিল অসীম। ছিঃ, একজনের নিঃসীম একাকীত্বের মাঝে সে অনধিকার প্রবেশ করে ফেলেছে ! নিজের বেষ্টনীতে ফিরতে চায় সে। কিন্তু কোথাও তার ছাব্বিশ বছর সেই একাকিনীকে ছুঁয়ে থাকে। পাউরুটির লোফ ছিঁড়ে সবজি দিয়ে খেতে খেতে মনে হয়, ওই দূরের মানুষী কী খাচ্ছে এখন ! কে তার রোজকার সামগ্রীর যোগান দেয় ? কতটা সাহসিনী সে, এইরকম মানুষবর্জিত জায়গায় থাকে ! সে-ও এই প্রবল শক্তি ও সৌন্দর্যের বেলাভূমিতে বেছে নিয়েছে নগ্নতা !! তারও কি আছে কোন সাধনার ক্ষেত্র, সেও কি ফাঁকা করতে চায় প্রাত্যহিকতা ! কিন্তু মেয়েরা কি একাকীত্বের সাধনায় ব্রতী হতে পারে ! মনে পড়ে অসীমের বাবা বিবাগী হয়ে যান, কিন্তু মা ! সে নিশ্চিত জানে মা তারামণির মন খালি হয় না, কোলে থেকে যায় সন্তানের স্মৃতি !
 

স্ট্রোকে স্ট্রোকে মিশিয়ে ফ্যালে তারামণির পুকুরঘাটে বাসনমাজা চোখ, পথশিল্পী ম্যাকের হাসি, প্রাইভেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের প্লাস্টিক আনাগোনা, কারখানার গেটে কোলে সন্তান সহ বসা শ্রমিক বৌএর স্থির চাউনি ! কিছুই খায় না ! তৃতীয় দিন একটিন আনারসের রস শেষ করে সকালেই সে সাইকেল নিয়ে বেরোয়

 
ও’নীল কিছু বোঝেন । চোখ বুজে বাজনা শুনতে শুনতে হঠাৎ বলেন– মেয়েটি কে !
খুব অসহায় চেয়ে থাকে অসীম । ও’নীল বলে – তাতে কি ! তার রহস্যভেদ কর । নয়ত তোমার পরিত্রাণ নেই !
 
ছ দিন বাদে বায়নাকুলারে ভাসে নারীর উড়ন্ত চুল, কেমন বিক্ষুব্ধ লাগে অসীমের, তার একাগ্রতা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয় ! কেন জানেনা! সত্যিই জানেনা !
 
দুদিন সে কাটায় নিবিড় বাজনায়। স্ট্রোকে স্ট্রোকে মিশিয়ে ফ্যালে তারামণির পুকুরঘাটে বাসনমাজা চোখ, পথশিল্পী ম্যাকের হাসি, প্রাইভেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের প্লাস্টিক আনাগোনা, কারখানার গেটে কোলে সন্তান সহ বসা শ্রমিক বৌএর স্থির চাউনি ! কিছুই খায় না ! তৃতীয় দিন একটিন আনারসের রস শেষ করে সকালেই সে সাইকেল নিয়ে বেরোয় ।
 
অপেক্ষাকৃত কম গতিতে আজ সে তার পার্শ্ববর্তী পথদিয়ে প্যাডেল চালায় । সব দরজাই বন্ধ, চুপচাপ বারান্দা । অনেকটা গিয়ে হঠাৎ একটি দরজা ভেজানো । বারান্দায় পরিচ্ছন্নতা । সাইকেল দাঁড় করিয়ে দরজা ঠেলতে এক মুহূর্ত ভাবতেই হয় । এখানে একজন নারী থাকেন । যদি সে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র ভীতির সঞ্চার করে তবে এক ডায়ালে এই দেশের পুলিশ তার দফারফা করে দেবে, আজগুবি অভিযোগে জেলবাস অবধারিত । কালো বা বাদামীদের ওপর আইনি খাঁড়া ধারালো ! অসীম ছোট্টো কিন্তু স্পষ্ট টোকা দেয় । ভেতর থেকে – এস ! যা এনেছ রেখে যাও!
 
অসীম কি রাখবে ! দরজাটা ফাঁক হওয়ায় রান্নার ওভেনসহ ঘরখানা চোখে পড়ে । তিনি দৃশ্যমানা নন । তিনি কি বারান্দায় ? যিনি সাগর তান্ডবের মাঝেও দরজার টোকা শুনতে পান ! যাঁর ইংরেজিতে নর্থ আমেরিকান টান !
 
অসীম কী করবে বুঝতে পারেনা । খুব মোলায়েম কিন্তু উচ্চ গলায় বলে– আমি একজন পুরুষ । আমি ছাড়া আমার সঙ্গে কিছু নেই !
 
মুহূর্তে বারান্দার দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন একজন কালো প্রৌঢ়া নারী, সম্পূর্ণ নিরাবরণ ! দীর্ঘ শরীর, প্রশান্ত আয়ত চোখ, মুখে প্রসন্নহাস ও মৃদু কৌতূহল– বল ছেলে !
 
প্রবল,রুক্ষ ও শান্তস্বরে নির্গত হয় তাঁর কথা । শরীর নয়, ইনি লজ্জা, আড়ষ্টতা বা ভীতির বেশবাস খুলে রেখেছেন তাঁর চোখ থেকে । অসীম শুধু তাকিয়ে থাকে !
 
তিনিই দায়িত্ব নিলেন । ফায়ারপ্লেসের দিকে ছোট পাইন কাঠের টুল এগিয়ে দেন — বোস । এখানে কেন বাবা ! এ দেশ তো তোমার নয় !
 
বসলেন উল্টো দিকে । অসীম স্বতঃস্ফূর্ত বলল– আমি গান চাই !
 
অদ্ভুত সশব্দে ভারী গলায় হেসে উঠলেন তিনি । হাসির শেষ টুকু মিশে গেল সাগরের সকাল- ফিসফিসে ! হাসির শেষে নীচু বিশ্বস্ত গলায় বললেন– জয় হোক তোমার !
 
অসীম নিজের ভেতরে শিবরঞ্জনির ঝালা শুনতে পায়, তার সাথে মিশে যাচ্ছে চটুল গীটারের জল পড়ার আওয়াজ !
 
– মা !
 
অজান্তেই ডেকে ওঠে সে । পুকুরঘাট থেকে মুখ নীচু উঠে আসছে তারামণি । স্বামী ঘরছাড়া, ছেলে শিল্পী হতে চাওয়া উন্মাদ ! নিজের আর গোপালের বাসন মেজে ঘরে ফিরছে মা । একদিন অসীম বলেছিল — চলো মা আমার সঙ্গে, নিস্তব্ধ পাহাড়ের দিকে চেয়ে বসে থাকবে ! মনটা হাল্কা হবে !
 
– আমি বোধহয় সেটা পারব না বাবা ! সংসারের কথা মনে শুধু ঘুরে ঘুরে আসবে ! তবে আর লাভ কি অসীম !
 
কালো মহিলা কাপে কোন পানীয় গুলে এগিয়ে দিলেন । অসীম নির্ভরতায় বলল– আমি গাইতে পারব মা !
এবারে শুধু মাথাটা ওপর নীচ করে হ্যাঁবাচক হাসলেন তিনি । তার হয়ে সমুদ্রের আছড়ে পড়ার আওয়াজ যেন হ্যাঁ, হ্যাঁ সঙ্গত করে চলল । অসীম খুব নীচু ফিসফিসে গলায় বলে — এখানে যে এমনভাবে আছ !
 
– সংসার ছেড়েছি গো ছেলে ! এখন বড়ো সংসারের পাশে আনন্দে আছি ! তুমি ভালো থেক ! অসীমের মন হঠাৎ বিষন্ন হয় !
 
সে আজও ভাবে, মা শুধু তার কথা বুকে নিয়েই বেঁচে আছে ! তবে কি এই প্রত্যাশা উপড়ে গেছে গত চারবছরের অদর্শনে !
 
পরক্ষণেই মন আলো হয়ে ওঠে, মা স্নেহের গরাদ থেকে মুক্তি পাক । গোপালের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে তুলে দিক সব ভাবনা, চিন্তা, আশঙ্কার খেলনা । তারামণি সেই কবেকার নির্ভার বালিকা হোক ! বালিকা হোক !
 
গরম পানীয়টুকুতে চুমুক দিয়ে নীচু হয়ে সে । ছোঁয় এই নগ্নিকা, আদি জননীর পায়ের পাতা !
 

♦•♦♦•♦–♦•♦♦•♦


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!