Advertisement
  • গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
  • ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

ফুলের বনে প্রজাপতি

ময়ূরী মিত্র
ফুলের বনে প্রজাপতি

 
ধীরেন নামে ল্যাম্পপোস্টটা  তুমুল ভিজছে ৷ দুদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি ৷ ভিজে একশা ধীরেন আর ধীরেনের মাথায় সর্বক্ষণ বসে থাকা ভুলু কাক ! সে ব্যাটা এমন  ভিজেছে, কালো পালকগুলো কয়েকগাছা দড়ি হয়ে গেছে ! পেটেও দানা নেই ৷ একমাস হল আকাশে উড়তে গিয়ে  ডানায় আঘাত লেগেছে ৷ প্লেনটা  একদম কাছে এসে পড়েছিল ৷ প্রবল শব্দে বাতাস খুব কাঁপছিল ৷ তার মধ্যেও ভুলু চেষ্টা করেছিল তার আর প্লেনের ডানার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করতে ৷ মনের আলোচনা অপরপক্ষ টের পায় না ৷ সাঁ করে প্লেনটা চলে গেল। ভুলু দেখল তার কালো পালক ডাটি ভাঙা রজনীগন্ধার মতো আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে ৷ ডানায় ব্যাথাও শুরু হয়ে গেল৷ সেই যে আকাশ ছেড়ে ধীরেনের মাথায় এসে বসল, আর ওড়েনি ৷ সকালে ডিমের খোলা থেকে শিকনি লাগা , রুমাল চোষা – সব ধরণের  খাবার সে গ্রহণ করে ধীরেনের মাথায় ৷ পটি, সেও ধীরেনের নাকে ৷ পেটখারাপ হলে পটি বেশী তরল আর চুনবর্ণ হয়ে যায় ৷ ধীরেনের মাথা থেকে সুড়ুত করে গড়িয়ে পড়ে লোকের মাথায় ৷ লোকে ওপরে তাকায় ! এনতার খিস্তি খেয়েও ভুলু তখন খুব হাসে ৷ তবু তো বর্জ্যের সূত্র ধরে পাড়ার মানুষ তার অস্তিত্ব এখনো বোঝে ! নতুবা  ডানার যা অবস্থা তাতে মানুষ আর কদ্দিন মনে রাখবে ! যার যা ধর্ম তা তো তাকে পালন করতে হবে রে বাপু ! না উড়তে পারলে ভুলু যে পাড়ার কাক তা লোকে মনে রাখবে কেন ! এই মনে না রাখায় লোকের তেমন দোষ দেখতে পায় না ভুলু ৷ এই যে দত্তবাড়ির মেয়ে ঈশানী সেই ছোটবেলা থেকে সেদিন অব্দি ,বেলা দশটা বাজলেই রান্নাঘরের টিনের চালে এঁটো সাজিয়ে রাখত, আলাদা এক টুকরো খবরের কাগজে দুধের ছাঁচি রাখত -এখন সে সব করে কি ! দশটায় ভাত ডাল আলুভাজা খেয়ে গটগটিয়ে কলেজ চলে যায় ! পাতে এঁটো রাখার মতো মেনুই নেয় না ৷ কারণ ভুলু নেই ৷ কিংবা ভুলু হয়ত আছে কিন্তু তার ভুলুত্ব নেই ৷ ধীরেনের  মাথায় একটুকরো  জগন্নাথ হয়ে বসে আছে !  নাহ ! ঈশানীর ভুলে যাওয়ায় কোনো ভুল দেখা উচিত না৷ বরং ঈশানীর সঙ্গে তার সোনার দিনগুলো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা যায়৷ নীল স্ল্যাক্স পরা ছয় বছরের ঈশানী লুকিয়ে লুকিয়ে বোয়াল মাছের গোটা পিস ভুলুকে দিয়ে দিচ্ছে ৷
 
— ভুলু  কাঁটা বেছে দেব ? খেতে পারবি গোটাটা ? হাঁ কর দেখি ! দেখি গলার ফুটোটা কত বড় ! হাত ঢোকাতে দে বলছি ! বোয়াল গলবে কিনা দেখি— !
 
উফ ! কত যে প্রশ্ন তখন ঈশানীর ! কী মিষ্টি গলা ছিল মেয়েটার ! সন্ধেবেলা পিকলু মাস্টার গান শেখাতে আসত ৷ ঈশানী গাইত, দূরদীপবাসিনী চিনি তোমারে চিনি ! দারুচিনির দেশে….!  কমন দাওয়ায় বসে ,চক্ষু মুদে  ভুলু ঈশানীর গান শুনত ৷
 

মানুষখোর চিল ভুলুকে ভালোবাসে মন দিয়ে ৷ উড়তে পারে না দেখে রোজ ভুলুকে নিজের ভাগের আদ্ধেক দেয় ৷ রাজেশ্বরী দিয়েই ওপরে উঠে গেছে ৷ চোখের বিন্দু মুছে ভুলু খাবারে মুখ দিল ৷ খাবার এলে সব ভুলতে হয় ! বিশেষ করে যাদের জোগাড়ের ক্ষমতা থাকে না

 
একটা মাত্র ঘর ছিল ঈশানীদের ৷ দুপাশে রাখু মুদী, অনিল ডেকরেটারের সংসার ৷ ওপরে থাকত পুষ্প বাড়িওয়ালীর দুই বোনের ফ্যামিলি ৷ পুষ্প মরে বাড়ি দুই বোনকে দিয়ে গিয়েছিল ৷ বোন দুটো সারাদিন নীচতলার তিন ভাড়াটেকে ওঠাবার ধান্দা করত। আর সন্ধেতে দু বর ফিরলে চাট মশলা খেতে খেতে ঈশানীর গান শুনত ! আট ন বছরেই ঈশানী কলকাতার নামী চ্যানেলের গান গান বাংলা প্রোগ্রামে চান্স পেয়ে গেল ৷ তিন নম্বর রানার আপ হয়ে  যেদিন পাড়ায় ফিরল, ভুলু  ধীরেন পুষ্পর দজ্জাল বোন— সবার কী আনন্দ ! বিকেলে দোতলার বারান্দায় উঠে  পুষ্পর ছোট বোনের ল্যাংটাপোঁদা মেয়েটাকে কোলে নিয়ে চাট খাচ্ছিল ঈশানী ৷ আটের কোলে চারের খুকী ! ভুলুকে উড়তে দেখে মশলা মাখা ছোলা ছুঁড়ে দিল !  মুগ্ধ চোখে চক্কর দিচ্ছিল তার প্রিয় কাক ……!
 
—এই ভুলু ! নে আজ হাফ টিকটিকি আর একটা পেঁয়াজি ৷ এই পেলাম ৷ সাবধান ! ঠিক করে সাজিয়ে রাখ ৷ নাহলে ল্যাম্পের শেড থেকে গড়িয়ে নীচে চলে যাবে খাবার ! রাজেশ্বরী চিল  রেগুলার  রেশন বিলোতে এসেছে ৷
 
মানুষখোর চিল ভুলুকে ভালোবাসে মন দিয়ে ৷ উড়তে পারে না দেখে রোজ ভুলুকে নিজের ভাগের আদ্ধেক দেয় ৷ রাজেশ্বরী দিয়েই ওপরে উঠে গেছে ৷ চোখের বিন্দু মুছে ভুলু খাবারে মুখ দিল ৷ খাবার এলে সব ভুলতে হয় ! বিশেষ করে যাদের জোগাড়ের ক্ষমতা থাকে না ৷ ছেলেবেলায় মায়ের কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করল ভুলু ৷ কিন্তু টিকটিকি কোথায় পেল রাজেশ্বরী মাসি ! গেরস্তের দেওয়াল ছেড়ে টিকিটিকি কি আজকাল পথে হাঁটে নাকি ! দুবছর পাথর হয়ে থেকে  ভুলু এখন পরিচিত সরীসৃপটির অজানা গতিপথ কল্পনায় ব্যস্ত ৷ মরা টিকটিকির পচামি বাসি পিঁয়াজির সঙ্গে মিশে পরস্পরের গন্ধ ঢাকছে ৷ বৃষ্টির চোটে বাল্ব নিভে গেলেও ধীরেনের হেলদোল নেই ৷ অক্ষমের থেকে চিরস্থবিরের সুবিধে বেশি ৷
 

 

 
সমরেশদা -এই যে আমি — সমরেশদা আমি এদিকে — আরে এই হাঁদা কোনদিকে তাকাচ্ছিস রে— তোর মতো আমার মাথায়ও ছাতা ! দেখতে পাচ্ছিস না !  ও রাখুদা ! হেব্বি শেয়াল তো তুমি ! দেখছ , পিছলে যাচ্ছি ! তবু হাসছ ! ইচ্ছে করে অন্যমনস্ক থাকা তোমার বার করছি  ! সমরেশদাকে দাঁড় করাও বলছি  ! পাস করে যায় যদি সমরেশদা …রাখুদা ছাড়ব না তোমায় …
 
— জলভরা রাস্তায় নাগাড়ে কথা বলে রাখু মুদিকে অস্থির করে তুলল ঈশানী ৷ রাখু হাসছিল ৷ ঈশানীটা পাগলা আছে ৷ আর খুব ডেসপ্যারেড ৷ সবাই দেখছে ৷ ছেলেটা পাত্তা দিচ্ছে না ৷ তাও চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মদ্দ ডাকছে পাগলী !  বিপদ বুঝে রাখু নয় বাই আটফুটের দোকানে  সমরেশকে আটকাল ৷ হাতে চাও ধরিয়ে দিল ৷ পাঁচ টাকার কাগজের কাপ চোখে দেখা যায় না ৷ সমরেশের মাথার মতোই সেটা যখন তখন এদিক সেদিক লুকিয়ে পড়ে ৷ বিরক্ত মুখে চা গলায় দিল সমরেশ ৷ দুটো ছোট ঢোকে ফুটটুস চা শেষ ৷
 

কানুর মুখে জল ছিটিয়ে দিল ঈশানী ৷ দু মুঠো জল নিয়ে এবার ছুটে আসছে সমরেশের দিকে ৷ খদ্দেররা হাসছে ৷ রাখুর দোকানের খদ্দের সব এলাকার মানুষ ৷ ধীরেন ল্যাম্পপোস্টের চারপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংসার করে ৷ আর রোজ ঈশানীর কাণ্ড দেখে মজা মারে

 
হাঁটু অব্দি প্যান্ট গুটিয়ে দোকানের কাছে চলে এসেছে ঈশানী ৷ চামড়ার ব্যাগটা দড়াম করে বেঞ্চে নামিয়ে কলতলায় পা ধুতে গেল ৷ একটু আগেই কানু সেখানে ঘুঘনির প্লেট ধুতে গেছে ৷ এই রে ! আজ আবার ঈশানীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধবে কানুর ৷ রোজ টিউশনি থেকে ফেরার পথে একবার করে রাখুর দোকানে ঢুঁ মারে ঈশানী ৷ এসেই মুখ হাত ধুতে কলতলায় ছুটবে ৷ আর কানু খেপবে ৷ কানুর কাজ খুব গোছানো ৷ একটা একটা করে প্লেট আগে জলে  ধোবে ৷ তারপর আবার সেগুলোকে একটা একটা করে সাবান দিয়ে ধোবে ৷ ঠিক এইসময় ঈশানী গিয়ে বাসন বালতি এদিক ওদিক সরিয়ে পা মুখ ধুতে লাগে ৷ গরম হলে রুমাল ভিজিয়ে কানের দুপাশে বুলোবে ৷ আর কানু চেঁচাবে ! আজো চেঁচাল কানু–
 
রাখুদা আজ কাজ ছাড়ব ৷ এসে দেখো ঈশানীর কাণ্ড ৷ নোংরা জল মাড়িয়ে এসে সেই পা দিয়ে বাসন সরাল ৷ আবার জল মাড়িয়ে বাড়ি ফিরবে ৷তাও বাসন মাজার কলতলায় গু মাখা পা নাচাচ্ছে ! সর …সর বলছি ! বালতি দিয়ে মাথা গুঁড়ো করব তোর !
 
কানুর মুখে জল ছিটিয়ে দিল ঈশানী ৷ দু মুঠো জল নিয়ে এবার ছুটে আসছে সমরেশের দিকে ৷ খদ্দেররা হাসছে ৷ রাখুর দোকানের খদ্দের সব এলাকার মানুষ ৷ ধীরেন ল্যাম্পপোস্টের চারপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংসার করে ৷ আর রোজ ঈশানীর কাণ্ড দেখে মজা মারে ৷ সন্ধের এই সময় রাখুর দোকান জমিয়ে রাখে ঈশানী কানু ৷
 
আজ কিন্তু লাস্ট রাখুদা ..ওকে সাবধান করে দিও ৷ শয়তান মেয়ে একটা …
 
–বলতে বলতে বাসন মাজায় ফিরল কানু ৷
 
রাখু এক প্লেট ঘুঘনি আর দুটো টোস্ট দিল ঈশানীকে–
 
আগে খা ৷ তারপর সমরেশের সঙ্গে কথা বলবি ৷ ঘুঘনিতে আজ কিমা পড়েছে ৷ মুরগির অবশ্য ৷ তবে গন্ধ লাগবে না ৷ বেশি করে  গরম মশলা দিয়েছি ৷
 
আর একটা প্লেট দে রাখুদা–
 
আমি খাব না রে ৷ বৌদি আজ চাউমিন করবে ৷ না খেলে রেগে লাল ৷ তোর কথা মানে তো জেরক্সের দোকান ৷ কদ্দুর এগোল – তাড়াতাড়ি বল ৷
 
– বলতে বলতে প্যাকেট থেকে ক্লাসিক  ঠোঁটে নিল সমরেশ ৷
 
ঈশানী ধীরে সুস্থে ঘুঘনিতে পাউরুটি ডোবাল ৷ সে জানে সমরেশের এই নির্লিপ্তি বানানো ৷ হাজার প্লেট চাউমিন পড়ে থাকলেও দোকানের কথা না শুনে সমরেশ যাবে না ৷ দোকানে পঞ্চাশ শতাংশ ভাগ রাখুদার ৷ সমরেশ আর ঈশানীর পঁচিশ পঁচিশ ৷ সমরেশ খানিকটা লোনের এপ্লাই করে দিয়েছে ৷ বাদবাকি সব রাখুদার একাউন্ট থেকে ৷ গতর ইশানীর ৷ ব্রেইন পুরো সমরেশের৷
 
– আগে কথা শেষ কর ঈশানী ৷ পুষ্প বাড়িওয়ালীর বোনের সঙ্গে কথা ফাইনাল করেছিস ?  ঘরটা দেবে কবে থেকে বলতো ! – সমরেশ অধৈর্য হচ্ছিল ৷
 
ঈশানীর খাওয়া শেষ ৷ রাখুকে টাকা দিল ৷ কাল আর আজের ৷
 
রাখুদা তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাড়ি আয়।সকাল থেকে বৃষ্টি ৷ শালা কেউ বেরোবে না বাড়ি থেকে ৷ পুষ্পর বোন ঘরের চাবি দিয়ে দেবে আজ। দেখে নিবি … রঙ করতে হবে কিনা …!
 
জলে নেমে ঈশানীকে টানল সমরেশ ৷
 
দুজনের বাড়ি ধীরেনের ডান ও বাম কোণে ৷
 
ঈশানীর হাতে জোর জোর চাপ পড়ছে ৷ সমরেশের ঠোঁট নেমে এসেছে ঈশানীর কানের লতিতে–
 
একটা কাচের ডিভিশন করতে হবে ঈশানী ৷ রাখুকে  বলবি৷ তুই বললে না করবে না – ! বিয়ের পর তোর টিউশন আমার জেরক্স .. শোধ হয়ে যাবে…
 
মুখ নীচু করে হাঁটছে ঈশানী ৷
 
কাল সকালে উঠেই পার্টি অফিসে গিয়ে মিস্ত্রীর কথা বলতে হবে ৷
 
ধীরেন গোটা সন্ধে আঁধার হয়ে আছে ৷
 
জলে সমরেশের ঝকঝকে হাসিটা দেখা যাচ্ছে না ৷
 

 

 
কিছু রোদে খুশি থাকে ৷ আজ তেমন রোদ ৷ চওড়া সবুজ পাড়ের শাড়ি পরে   পুজোর ফল কাটছে রাখি ৷ আজ দেওরের দোকানের উদ্বোধন ৷ বেলা বারোটা নাগাদ  পৌরমাতা নিভা পাল এসে ফিতে কাটবেন ৷
 
বৌদির মতো তাঁর জন্যেও গরদের শাড়ি কিনেছে সমরেশ ৷ কিছু না দিয়ে ফিতে কাটানো যায় না ৷ রাখু আগেই বলে রেখেছিল— হার্ড ক্যাশ দিস না ৷ পাড়ার বউ চক্ষুলজ্জায় নিতে পারবে না ৷ তার চেয়ে একটা গিফট প্যাক কর ৷ তাতে শাড়ি, অরিজিনাল ম্যাক লিপস্টিক আর পাটের গয়না ৷ জমে যাবে রে সমরেশ ৷ গড়গড় করে চলবে আমাদের শব্দের ছবি ছাপানো ৷
 
জেরক্সের ভালো নাম বের করেছে রাখু ৷ ওর এতো বুদ্ধি আগে ধরা পড়েনি তো ! রাখুর গিফট প্যাকের কথা শুনে বোকা বোকা হেসেছিল সমরেশ ৷ তবে ঠিকঠাক জিনিসগুলো জোগাড় করে এনেছিল। রাখি বৌদি হ্যান্ড মেড ব্যাগে ভরতে বলেছিল ৷ সমরেশ প্যাকেটের ওপর হাত বোলাতে লাগল ৷
 
আমি ব্যাগের ওপর কাল রাতে ফ্লোরাল ড্রইং করে দিয়েছি সমরেশদা ৷ দেখ তোর পছন্দ হয় কিনা —
 
কক ঝুড়ি খুচরো ফুল নিয়ে ঢুকছে ঈশানী৷
 
বরের জন্য ফুল এঁকেও গলা এমন কাঠ কেন ঈশানী ?
 
– রাখি আলতো করে প্রশ্ন ছুঁড়ল ৷
 

বাংলায় যে গান গেয়ে থার্ড হয়েছিলে সেটা মনে আছে ? সেটা গাইবে —অপছন্দ ঢাকতে অনেক কথা একসঙ্গে বলছিল রাখি ৷ নোংরা পোশাক পরলেও আজ ঈশানী উজ্জ্বল ৷ অনর্গল হাসছিল 

 
আসলে মেয়েটাকে অসহ্য লাগছিল রাখির ৷ সৌভাগ্যের দিনে কেমন প্যান্ট শার্ট পরে ঘুরছে ৷ নেহাত সমরেশের পছন্দ তাই ৷ বিজনেসের আদ্দেকের বেশি মূলধন আসছে ঈশানীর জোরে ৷ রাখিকে এমনটাই বলেছে সমরেশ ৷
 
এই গাঁদার মালা দুটো আলাদা করে রেখো৷ বিয়ে যবে হবে, হবে ! আজ দোকান চালু হলে বিকেলে গানবাজনা করব৷ তোমরা দুটো মালা পরে গাইবে ৷ বাংলায় যে গান গেয়ে থার্ড হয়েছিলে সেটা মনে আছে ? সেটা গাইবে —অপছন্দ ঢাকতে অনেক কথা একসঙ্গে বলছিল রাখি ৷ নোংরা পোশাক পরলেও আজ ঈশানী উজ্জ্বল ৷ অনর্গল হাসছিল ৷ সমরেশের চুল মুঠ করে টানল ৷
 
— বৌদি এই দেখো তোমার দেওরকে কেমন চুলের মুঠি ধরে ঘোরাচ্ছি ৷
 
— তুমিই তো ঘোরাবে ভাই ৷
 
দুমিনিটে রাখির মুখ কালি ৷ সমরেশ দূরে গিয়ে চুপ করতে বলছে ৷
 
এত পেট গুলিয়ে হাসি কেন আসছে ঈশানীর ! বেশি হাসার পর অস্বস্তি হয় ৷ বাইরে গাড়ির আওয়াজ ৷ দরজায় একসঙ্গে রতন পুরুত আর নিভা পাল ৷
 
সমরেশ রাখু সব দৌড়েছে ৷
 
— কাতলা আর চিতল আছে মেনুতে ৷ সব গরম গরম হয়েছে ৷ খেয়ে যেতে হবে দিদি ৷ না শুনতে পারি না দিদি– রাখুদার স্বর গদগদ ৷
 
নিভা পাল না না করছেন ৷
 
শাঁখ ঘন্টা যখন যেরকম বাজার  ,বেজে চলেছে ৷
 
ঈশিতা  জানলা দিয়ে ধীরেনকে দেখল ৷ কদিন আগে ওর মাথা থেকে ভুলি আর ভুলির দুটো ডিম নামানো হয়েছিল ৷ নামানোর কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য ভুলি মরে গিয়েছিল ৷ মাটির জন্যই হয়ত প্রাণটুক ছিল ৷ পাখির টান মাটিতে ! ওমাগো ! আবার হাসি আসছে ! তেলওয়ালা মাছ রাখুদা তার জন্য এনেছে !
 

 

 

পূর্ণিমার চাঁদ কখনো নারায়ণ কখনো লক্ষ্মীচাঁদ,  বুঝলি ঈশানী ! গান করার কথা না তোর !
রাখুদা বাচ্চাদের মতো বায়না করছে ৷ সমরেশ,  রাখি,  অনিল ডেকরেটারের বউ, পুষ্পর জোড়া বোন সবাই চেঁচাচ্ছে —
 
গান গান—গাও গান —গান গান বাংলার গান…৷
 
গাইব গাইব ৷ বাট শর্ত শর্ত …শর্ত …! মিটলে শর্ত ,গাইব গাইব গাইব ! ও মোর প্রেমিক দাদারা  গেয়ে গেয়ে কানে তোদের  পিচুটি ভরে দেব রে ..বলতে বলতে ছোট্ট ছোট্ট লাফ দিতে শুরু করেছে ঈশানী !
 
তোর গানের জন্য সব শর্ত রাখব — সমরেশ রাখু একসঙ্গে বলছে ৷
 
– রাখি বাজি ?
 
– কী বাজি ?
 
– তার আগে আমার পঁচিশ ভাগ সমরেশদাকে দিলাম ৷
 
রাখির চোখ বড় বড় হয়ে গেছে– বাবা বরের ওপর এখনই এতো টান ! কদিন বাদেই নাহয় পঁচিশ যোগ পঁচিশ হত ! আজই ঘোষণা করতে হল !

 

বেগুনি রঙের তাঁতে হলুদ গাঁদার মালায় অপূর্ব লাগছিল ঈশানীকে ৷ বিকেলে ঘরে গিয়ে মায়ের পুরোনো শাড়িটা পরেছে ৷ পুরোনো গানের সুরে নতুন নাচের ছন্দ পায়ে ৷ উঠোন ঘুরে ঘুরে নাচে ! তার পিছনে সমরেশ রাখু !

 

বাজির পরের টার্ম দিল ঈশানী– তাহলে রাখুদা আর সমরেশদার সমান সমান হল ৷
 
তা তো হল ৷ তাতে তোর কী লাভ হল বল দেখি ! মেয়েদের নিজস্ব টাকা রাখতে হয় !  চিরকালের হাঁদা একটা  মেয়ে ….
 
— অনিল ডেকরেটার, পুষ্পর বোন সবাই  রেগে উঠেছে৷ ছোট থেকে তারা ঈশানীকে দেখছে ৷
 
ঈশানী এবার ফাইনাল টার্মে— একবছর সময় ৷ যে দোকান থেকে বেশি টাকা আনবে আমি তার ৷
 
বিয়ে বা না বিয়ে তার ব্যাপার ৷ কিন্তু আমি ক্লিয়ারলি তার ৷
 
বেগুনি রঙের তাঁতে হলুদ গাঁদার মালায় অপূর্ব লাগছিল ঈশানীকে ৷ বিকেলে ঘরে গিয়ে মায়ের পুরোনো শাড়িটা পরেছে ৷ পুরোনো গানের সুরে নতুন নাচের ছন্দ পায়ে ৷ উঠোন ঘুরে ঘুরে নাচে ! তার পিছনে সমরেশ রাখু !
 
ঈশানীর শর্ত তাদের খুব পছন্দ৷ উঠোন ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে তিন বণিক !
 
অনিল ডেকোরেটার ভয় পাচ্ছে খুব ! পাগল মেয়েটা দুটোকে ছুটিয়ে মারবে নাকি !
 
পথের শেষে পুকুর ! সেখানে নিয়ে গিয়ে ডুবসাঁতার দেওয়াবে !
 
রাখু সমরেশ হুঁশ হারিয়েছে ! এইমুহূর্তে তাদের কাজ ঈশানীর মনোরঞ্জন ৷
 
নাচ নাচ ঈশানী …নাচি নাচি আমরা !
 
রাজেশ্বরী ওপর থেকে ভুলির বন্ধুটাকে দেখল একবার   !
 
ধীরেন কাল থেকে থাকবে না ৷
 
নগরায়নের নতুন আলো জ্বলবে ৷
 

♦–•–♦♦–•–♦♦–•–♦


  • Tags:
❤ Support Us
গুম গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
ধারাবাহিক: একদিন প্রতিদিন । পর্ব ৫ পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
পথ ভুবনের দিনলিপি । পর্ব এক ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
error: Content is protected !!