- খাস-কলম পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
- মে ১৪, ২০২৩
উনিশের পরশমণি ছোঁওয়াও প্রাণে, পূর্ণ করো মহিমার অঙ্গীকার

চিত্রে বরাকের ভাষা আন্দোলন, শিল্পী অঞ্জন ভট্টাচার্য
সামনে মহান উনিশ। মহিমাময় ওই লড়াইকে নতুন করে স্মরণ করতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বরাকে, ত্রিপুরায়, কলকাতায়। শিলচরে উনিশের গর্বিত সন্তানেরা নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। গান্ধীবাগে প্রকাশিত হবে, দিলীপকান্তি লস্করের সম্পাদিত ৫৩৩ পাতার উনিশ কেন্দ্রিক কবিতা সংগ্রহ। লিখেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি।
তিন জেলায় ভোরের প্রভাত ফেরিতে গর্জে উঠবেন শহিদ কমলা ও তার সহযোগী শহিদেরা। শিলচর শশ্মান ঘাটে ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হবে কান্না জড়ানো প্রতিবাদ, ভাষার একাধিপত্য চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। কেউ কেউ মিছিল থেকেই উঁচিয়ে ধরবেন জোরালো কণ্ঠ। শহিদের রক্ত, ভুলে থাকা শক্ত। রক্তঋণ শোধ করো, দুহাতেই তুলে ধরো, খড়গ।
এবছর কলকাতায় ভীরু, সংশয়াচ্ছন্ন নীরবতা ভাঙবে, মহানগর বৃহত্তর ভাষা আন্দোলনের ডাক দেবে। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কলকাতা চ্যাপ্টার আগামী শুক্রবার গানে কবিতায় কথায় ভাষা শহিদদের স্মরণ করবে। জানিয়েছেন, বঙ্গ সম্মেলনের সভাপতি রণবীর পুরকায়স্থ। বরাক জমিনের প্রেক্ষাপটকে ঘিরে হয়ে ওঠা শানিত বুদ্ধির কথা সাহিত্যিক। রণবীর এখন কলকাতার বাসিন্দা হলেও তাঁর স্বপ্নে, তাঁর বয়নে, চয়নেও লেগে আছে বরাক আর সুরমা নদীর পানি।’ এমন একজন গদ্যপুরুষকে সামনে রেখে উনিশের মহান বিসর্জনের গৌরবকে উদযাপন করতে চাইছে বরাক -বঙ্গের সাহিত্য সম্মেলনের কলকাতা চ্যাপ্টার। সম্মেলনের সম্পাদক, শান্তনু গঙ্গারিডি। উনিশের গর্বিত সন্তান এবং ভালো কবি। শান্তনু ‘উনিশে মে’ লিটল ম্যাগের সম্পাদক, প্রতিবছর বিশেষ সংখ্যা বের করেউনিশ উদযাপনের অন্যরকম দিগন্ত খুলে দিয়েছেন তিনি। এবারও তাঁর সম্পাদনার উজ্জ্বলতর সংকলন উন্মোচিত হবে কলকাতায়, বরাক বঙ্গ সম্মেলনের আসন্ন সভায় , রবীন্দ্র সদন চত্বরে। যোগ দেবেন বহু গুণী। সভায়, বলবেন বাহার উদ্দিন, কবি মনোতোষ চক্রবর্তী এবং আরো কয়েকজন।
উনিশকে নিয়ে, গত শতকের ৯০-এর দশকে অভূতপূর্ব আলোড়ন জাগিয়ে তোলে ‘বাংলার নবজাগরণ’, ভাষা চেতনা সমিতি আর ভাষা স্মৃতিস্মারক সমিতি। কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে, নবজাগরণ সভায়, ২১ শতকের গোড়ার দিকে তারুণ্যের সংগঠক ও খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক শৈবাল মিত্র প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ১৯ মে ‘সাহিত্য দিবস’ পালিত হোক। শৈবাল মিত্রের ওই প্রস্তাবের ব্যবহারিক প্রয়োগের চিহ্ন নেই কোথাও, তার ভাবনা আর মনোজগতের সমৃদ্ধি অস্তাচলে যায়নি, সগৌরব কার্যকারিতা দাবি করছে তার ওই প্রস্তাবে। অভিনেতা দিলীপ রায়, খেলার অর্জুন সুরজিৎ সেনগুপ্ত, শিল্প বিশেষজ্ঞ তপন মিত্র, বেপরোয়া কলমচি অশোক দাশগুপ্ত গণ সংগঠক আজিজুল হক, সুরান্বেষী ইন্দ্রনীল সেন এবং শঙ্খ ঘোষ আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়- এক সময় উনিশকে নিয়ে ভেবেছেন, প্রচার করেছেন তার অসীম মহিমা, তা এখনকার উনিশের ভাবনাকে কতটা প্রাণিত করে , জানা নেই , কিন্তু তাঁদের দৃপ্ত উচ্চারণ ভুলে থাকা যায় না। ওই সব উচ্চারণকে ‘ভাষা ভবন’ নির্মাণ করে এবং ২১ আর ১৯- শের আত্মত্যাগী ভাষা যোদ্ধাদের নামে— মৃণাল সেন, সুচিত্রা মিত্র, অমর্ত্য সেন, মহম্মদ ইউনুস, স্যার হজলে হাসান আবেদ, আহমদ সৈয়দ মলিহাবাদী, মোস্তাক হোসেন , সত্যব্রত দে, দিলীপ রায়, পরিতোষ সেন, আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়, আবীরলাল মুখোপাধ্যায়–এরকম দীর্ঘাঙ্গ বহু প্রজ্ঞাকে উনিশের পদক দিয়ে সম্মান জানিয়েছিল ‘আরম্ভ’ পত্রিকা। সেদিন মঞ্চে ছিলেন ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়(তখনকার বিদেশমন্ত্রী), কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব,(৬১-এর ভাষা আন্দোলনের তরুণ কর্মী)প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিন এবং অমিতাভ চৌধুরী। ভাষা ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রণব বাবু, স্বাগত ভাষণ দিয়েছিলেন অশোক দাশগুপ্ত। ‘পুরনো সে দিনের কথা’ নয়, এসব ঐতিহ্য আর অঙ্গীকার রক্ষার কয়েকটি স্মৃতির পুনরুল্লেখ। এরকম স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে চায় বাঙালি। জগৎ সভায় উন্নত শিরকে উন্নততর করে তুলতে তার গগনমুখী আগ্রহকে ছাড়িয়ে যেতে চাইছে তারই সাম্প্রতিকের ঘোষিত -অঘোষিত প্রবাহ। সে দাবি করে না, উনিশ দীর্ঘজীবী হোক। হ্যাঁ দাবি করে— উনিশের পরশমণি ছোঁওয়াও প্রাণে , পূর্ণ করো মহিমার অঙ্গীকার।
❤ Support Us