- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জুলাই ৪, ২০২৩
কমিশনের প্রকাশ করা স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৩৪। সংখ্যা দেখে কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরোধীদের
অবশেষে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে রাজ্যে মোট পঞ্চায়েত নির্বাচনের বুথের নিরিখে কমিশনের ঘোষণা করা স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যাটা নগন্য বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধদীরা। তাদের অভিযোগ নিয়ম রক্ষার জন্য কমিশন স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা জানিয়ে শাসকদলকে ভোট লুঠে সাহায্য করছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জানিয়েছে, রাজ্যের মোট ৪ হাজার ৮৩৪টি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংখ্যার নিরিখে রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে মুর্শিদাবাদে। তারপরই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। তবে শতাংশের নিরিখে দেখা যাচ্ছে স্পর্শকাতর বুথের তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ।
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে ভোটের চারদিন আগে পর্যন্ত যেখানে রাজ্যে ভোটকে কেন্দ্র করে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের, সেখানে পঞ্চায়েতের ভোটগ্রহণের মাত্র ৪ দিন আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্যের স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা প্রকাশ করে কী সঠিক বার্তা দিল? আর যে সংখ্যক বুথকে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হল সেই সংখ্যাটা নিয়েও প্রশ্ন উঠল।
সোমবার পঞ্চায়েত মামলার শুনানির সময় কলকাতা হাই কোর্টে স্পর্শকাতর বুথের তালিকা পেশ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে জানানো হয়, রাজ্যের ২২টি জেলায় মোট ৪ হাজার ৮৩৪টি বুথকে ”স্পর্শকাতর” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলিতে রয়েছে মোট বুথের সংখ্যা ৬১ হাজার ৬৩৬টি। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মতো রাজ্যে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা শতাংশের নিরিখে মাত্র ৭.৮৪ শতাংশ। যেখানে ভোট ঘোষণার দিন অর্থাৎ ৯ জুন থেকে রাজ্যে হিংসা, সংঘর্ষ, বোমাবাজি, গুলি চালনা, খুনের ঘটনা ঘটেছে। তার পরেও কী করে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা এতো কম হতে পারে? এই প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের বিরোধীরা। তবে তৃণমূল মুখপাত্র থেকে শুরু করে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বলছে, মাত্র হাতে গোনা করেকটি বুথ ছাড়া পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া। বিরেধীরা ছবি চায়, তাই এসব করছে।
এদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা স্পর্শকাতর বুথের তালিকা বলছে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। পরে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া। তবে শতাংশের নিরিখে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কোচবিহার। এই তালিকায় এরপরই রয়েছে হাওড়া ও পুরুলিয়া। এদিকে রাজ্যের যেসব জেলায় সবচেয়ে বেশি হিংসা চোখে পড়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল মুর্শিদাবাদ। এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে এই জেলা। তবে যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এত রক্ত ঝরল, স্পর্শকাতর বুথের নিরিখে সেই সেই জেলা বেশ খানিকটা নীচেই রয়েছে তালিকায়।
এক নজরে স্পর্শকাতর বুথের তালিকা:-
কোচবিহার জেলা:-
এই জেলায় মোট ২ হাজার ৩৮৫টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৩১৭টি। অর্থাৎ, এই জেলার ১৩.২৯ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হাওড়া :-
এই জেলার মোট ৩ হাজার ০৩১টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৩৫৩টি। অর্থাৎ, এই জেলার ১১.৫৬ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুরুলিয়া :-
এই জেলায় মোট ২ হাজার ৪০৫টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ২৫৩টি। অর্থাৎ, এই জেলার ১০.৫২ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ :-
এই জেলায় মোট ৫ হাজার ৪৩৮টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৫৪১টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৯.৯৫ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নদিয়া :-
এই জেলায় মোট ৩ হাজার ৮৯৬টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৩৭৩টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৯.৫৭ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মালদা :-
এই জেলায় মোট ৩০৩৫টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ২৭০টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৮.৯ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান :-
এই জেলায় মোট ৩৯৩৩টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৩৪২টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৮.৭ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পূর্ব মেদিনপুর :-
এই জেলায় মোট ৪১২৮টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৩৫৬টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৮.৬২ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বীরভূম :-
এই জেলায় মোট ২৭৬৮টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ২২৮টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৮.২৪ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা :-
এই জেলার মোট ৬২২৬টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৫০২টি। অর্থাৎ, এই জেলার ১৩.২৯ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর :-
এই জেলার মোট ৩৮৬৭টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৩০৫টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৭.৮৯ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর:-
এই জেলায় মোট ১২২৩টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৮৪টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৬.৮৭ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা :-
এই জেলায় মোট ৪৫৩২টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ২৫৮টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৫.৬৯ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হুগলি :-
এই জেলায় মোট ৩৮৫১টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ২০৯টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৫.৪৩ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দার্জিলিং :-
এই জেলায় জেলার মোট ৫১৪টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ২৭টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৫.২৫ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুর :-
এই জেলায় মোট ২১২৬টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ১০৮টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৫.০৮ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ি :-
এই জেলায় মোট ১৬৬০টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৭৪টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৪.৪৬ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম :-
এই জেলায় মোট ১০৪৫টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৪৫টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৪.৩১ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পশ্চিম বর্ধমান :-
এই জেলায় মোট ৯৯৮টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৪০টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৪.০১ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাঁকুড়া :-
এই জেলায় মোট ৩১০০টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ১১৬টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৩.৭৪ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কালিম্পং :-
এই জেলায় মোট ২৬৩টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ৮টি। অর্থাৎ, এই জেলার ৩.০৪ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার :-
এই জেলায় মোট ১২১২টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর ২৫টি। অর্থাৎ, এই জেলার ২.০৬ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজ্যের ৯৫ শতাংশ বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকছে এবং ৫ শতাংশ বুথে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।
❤ Support Us






