Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

‘দেশে তৈরি হচ্ছে পরজীবী শ্রেণি’ — ‘দান-খয়রাতি’র রাজনীতিকে প্রবল সমালোচনা সুপ্রিম কোর্টের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
‘দেশে তৈরি হচ্ছে পরজীবী শ্রেণি’ — ‘দান-খয়রাতি’র রাজনীতিকে প্রবল সমালোচনা সুপ্রিম কোর্টের

ভারতীয় রাজনীতিতে ‘খয়রাতি’র ভূমিকা অনেকখানি। ভোটের আবহে প্রত্যেক দলের রাজনৈতিক নেতাদের মুখে মানুষকে বিনামূল্যে পরিষেবা দান ও নানান প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা যায় যায়। বিনামূল্যে রেশন থেকে বিভিন্ন ভাতা, সরকারি প্রকল্পের উপর ভরসা করে জনমত দেয় অধিকাংশ মানুষ। এমনকি টাকা দিয়ে ভোট কেনবার অভিযোগ ওঠে নেতাদের বিরুদ্ধে। শহরাঞ্চলে দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। সে সংক্রান্ত একটি মামলায়, ভোটের আগে মানুষকে বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও সরাসরি টাকা বিলোনো নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলির বিনামূল্যে সুবিধা দেওয়ার প্রচলিত রীতি ভয়াবহ ক্ষতি করছে সমাজের। মামলার শুনানিতে বিচারপতি বিআর গাভৈ এবং এজি মাসিহর বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, মানুষকে কাজ না করেও রেশন ও টাকা দেওয়া হচ্ছে। আদালত প্রশ্ন তোলে, ‘মানুষকে সমাজের মূল স্রোতে এনে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করানোর পরিবর্তে কি আমরা তাদের এক পরজীবী শ্রেণিতে পরিণত করছি না?” আদালত জানায়, এই ধরনের সুবিধার ফলে মানুষ কাজ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে দেশ কি এক ‘পরজীবী শ্রেণি’ তৈরি করছে না, সে প্রশ্নও তোলেন বিচারপতিরা। ‘শহরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জন্য যে আপনারা ভাবছেন, সেটা খুবই ভাল কথা। কিন্তু তাঁদের যদি সমাজের মূলস্রোতের অঙ্গ করে তোলা যায়, তাঁদের যদি দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো যায়, সেটা কি আরও ভাল হবে না?’ কত দিনের মধ্যে কেন্দ্রের শহুরে দারিদ্র দূরীকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে, অ্যাটর্নি জেনারেলকে তা জানাতে বলেছেন বিচারপতি।

বিচারপতি গাভৈ কন্যাশ্রী প্রকল্পের অনুকরনে তৈরি ‘লডকি বহিন’ প্রকল্পের প্রসঙ্গ এনে বলেন দুঃখজনক ভাবে, নির্বাচনের আগে এই ধরনের প্রকল্প ঘোষণা করা হয়, যেমন ‘লাডকি বহিন’ বা অন্যান্য প্রকল্প। এর ফলে মানুষ কাজ করতে চায় না, কারণ তারা বিনামূল্যে রেশন ও টাকা পেয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীর ভান্ডারের আদলে কর্নাটক সরকার ভাগ্যলক্ষ্মী স্কিম চালু করে মাস শেষে মহিলাদের নগদ টাকা দিচ্ছে, এ কথাও উঠে আসে। মামলাকারীদের পক্ষ থেকে আইনজীবী প্রশান্ত ভুষন দাবি করেন, ‘দেশে এমন বোধহয় কেউ নেই যে কাজ করতে চায় না।’ তখন বিচারপতি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনার জ্ঞান ভীষণ একপাক্ষিক। আমি কৃষক পরিবার থেকে এসেছি। আমি জানি মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে বিনামূল্যে সুবিধা ঘোষণার পর শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।’

আদালত মনে করে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, গরীব মানুষকে পরিষেবা দেওয়া ভালো উদ্যোগ, কিন্তু সুষম নীতি প্রয়োজন। যাতে সমাজ ব্যবস্থার ভারসাম্য না হারিয়ে যায়। শুনানিতে এক মামলাকারী হঠাৎ দাবি করেন, সরকার শুধু ধনীদের জন্যই সহানুভূতি দেখায়। বিচারপতি গাভৈ কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘ এখানে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখবেন না। আদালত রাজনৈতিক বিতর্কের মঞ্চ না। সরকার কেবল ধনীদের জন্য কাজ করছে, এমন মন্তব্য আপনি এখানে কীভাবে করতে পারেন?’ ৬ সপ্তাহ পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেদিন এ বিষয়ে কেন্দ্রের তরফে কিছু বলা হয় কিনা সেটা দেখার। প্রধানমন্ত্রী মোদি ভোটের ময়দানে টাকা বিলানোর সমালোচনা করেছেন বারবার, ‘রেউড়ি কালচার’-এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও চিত্র একই।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!