- এই মুহূর্তে দে । শ
- মার্চ ২৮, ২০২৫
গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য – ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুস্থ-সভ্য সমাজের স্তম্ভ’

মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুস্থ-সভ্য সমাজের স্তম্ভ, ব্যঙ্গ মানুষের চিন্তাভাবনাকে সমৃদ্ধ করে ‘- নাগরিকদের বাক-স্বাধীনতা নিয়ে শুক্রবার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির মামলায় শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী দেশের নাগরিকদের নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা প্রকাশ করবার অধিকার রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ১৯-[১-এ] অনুচ্ছেদ আর ২১ নাম্বার ধারা বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও এটি নিরঙ্কুশ নয়, সরকার কিছু ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে এ স্বাধীনতা সীমিত করতে পারে। দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ প্ররোচনার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাক স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। বাক-স্বাধীনতা বিশ্বের মানবাধিকার ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত অধিকার। তবে সাম্প্রতিক ভারতবর্ষে বারবার মানুষের মৌলিক এই স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার উঠেছে সরকারের উপর। সম্প্রতি কুণাল কামরা, রণবীর এলাহাবাদিয়ার ঘটনায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শুক্রবার সুপ্রিমকোর্টে রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির বিরুদ্ধে গুজরাট পুলিশের দায়ের করা মামলায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট উল্লেখ করেছে, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুস্থ-সভ্য সমাজের স্তম্ভ, ব্যঙ্গ মানুষের চিন্তাভাবনাকে সমৃদ্ধ করে।’
গুজরাট পুলিশের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস এমপি ইমরান প্রতাপগড়ি তাঁর ইস্টাগ্রামে প্রকাশিত কবিতা ‘এ খুন কে পিয়াসে বাত শুনো’-তে সমাজে বিভেদ ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৯৬ [ধর্ম, জাতি ইত্যাদি ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ উস্কে দেওয়া] ও ১৯৭ [জাতীয় একীকরণের জন্য ক্ষতিকর বক্তব্য পেশ ] ধারায় অভিযুক্ত করা হয়। এদিন ওই অভিযোগগুলি সপাটে খারিজ করে দিয়ে, বিচারপতি অভয় এস ওকা আর উজ্জল ভুঁইয়ার বেঞ্চ জানিয়েছেন, ‘কোনো লেখা বা মন্তব্য ‘বিদ্বেষমূলক’ ফৌজদারী মামলার মানদণ্ড হতে পারে না। সব কিছুতে হুমকি বা উগ্র সমালোচনা মনে করাটা এদানিং কিছু মানুষের রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সাহিত্য, কবিতা, নাটক, শিল্পকলা ও ব্যঙ্গচিত্র সমাজকে, মানুষের চিন্তাভাবনাকে সমৃদ্ধ করে। ‘ বিচারপতিরা আরো বলেছেন, ‘যে কোনো সুস্থ গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকলে, যুক্তি দিয়ে বিরোধিতা করতে হবে। দমনপীড়ন দিয়ে নয়। বাকস্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন দেশের আইন-আদালতের কাজ, তেমনি সমাজকেও ভূমিকা রাখতে হবে।’ বেঞ্চ, আদালত ও পুলিশকে জনস্বার্থ রক্ষা করার জন্য দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। শুনানির সময় প্রতাপগিরির পক্ষে দায়ের করা পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতিরা বলেছেন, এক্ষেত্রে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। উল্লেখ্য, কংগ্রেস নেতা ১৭ জানুয়ারি গুজরাট হাইকোর্টের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এর আগে ইমরানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজ করতে চায়নি গুজরাট হাইকোর্ট। তাদের দাবি ছিল, জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছেন ইমরান।
প্রসঙ্গত, বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজিরবিহীন রায় এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গোটা দেশে ক্রমাগত মানুষের কণ্ঠস্বর দমিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে ধারাবাহিকভাবে। গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার আলোচনা আর সমালোচনা, একটি দেশের এগিয়ে যাওয়ার পিছনে বিরুদ্ধ মতামতের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অপরিসীম। অথচ এ সময়ে সরকারের সমালোচনা করা বা ব্যঙ্গ করা-কে অপরাধ হিসাবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরুদ্ধ মত হলেই মারধোর, হেনস্থা এমনকি খুনের ঘটনা সামনে এসেছে অজস্রবার। শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, গান, সিনেমার উপর নেমে এসেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের নখ। সে তালিকা দীর্ঘ। অতীতে সফদর হাশমী, গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গী, ভারভারা রাও কিংবা চলতি সময়ে কৌতূকশিল্পী কুণাল কামরা হোক বা বাংলার কার্টুনিস্ট অম্বিকেশ মহাপাত্র হোক — শাসকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললেই, গলা টিপে ধরবার ইতিহাস পুরনো, বহমান।
❤ Support Us