Advertisement
  • এই মুহূর্তে মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
  • জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

পঞ্চসিন্ধু জয়ের স্বীকৃতি, তেনজিং নোরগে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত কালনার সায়নী

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
পঞ্চসিন্ধু জয়ের স্বীকৃতি, তেনজিং নোরগে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত কালনার সায়নী

২২ বছরের অপেক্ষার ইতি। ভারত সরকারের তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন কালনার বারুইপাড়ার ‘পঞ্চসিন্ধু’ জয়ী সাঁতারু সায়নী দাস। ২০০২ সালে বাংলার সাঁতারু বুলা চৌধুরি এই সম্মান লাভ করেন। তার ২২ বছর বাদে এই জাতীয় পুরস্কার গ্রহণের জন্য কেন্দ্র সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি মাধবী মোহনের চিঠি পেলেন সায়নী। তাতে লেখা, ১৫ জানুয়ারি পুরস্কার গ্রহণের মহড়ায় জন্য হাজির হতে হবে। ১৭ জানুয়ারি দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবন লাগোয়া গণতন্ত্র মণ্ডপে সায়নীর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। একটার পর একটা উথালপাথাল আন্তর্জাতিক চ্যানেল জেতার স্বীকৃতি হিসেবেই সায়নী এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন উপহার ও স্মারকের সঙ্গে থাকছে ১৫ লক্ষ টাকা। এই টাকাটা তার আসন্ন জিব্রালটার চ্যানেল জয়ের জন্য ‘যাতায়াত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে খুবই কাজে লাগবে’ বলে দাবি সায়নী ও তার বাবা তথা প্রশিক্ষক রাধেশ্যাম দাসের। একের পর এক আন্তর্জাতিক চ্যানেল জয়ের স্বীকৃতি হিসেবে সায়নী এর আগে খেলাশ্রী, সেরা বাঙালি, মাদার টেরিজা অ্যাওয়ার্ডের মত নানা সম্মান ও পুরস্কার পেলেও তেনজিং নোরগের মত এত বড় মাপের পুরস্কার এই প্রথম।

কালনা শহরের বারুইপাড়ার জলকন্যা সায়নীর লক্ষ্য ‘সপ্তসিন্ধু’ জয়। আর দুটো মাত্র চ্যানেল জিতলেই সেই লক্ষ্য পূর্ণ হবে। দুটোর মধ্যে প্রথমে স্পেনের জিব্রালটার প্রণালী জয় করতে নামার প্রস্তুতিও পুরোদমে শুরু করে দিয়েছেন সায়নী। কিন্তু এই চ্যানেল জয়ের স্বপ্ন ধাক্কা খাচ্ছিল আর্থিক সমস্যায়। যাতায়াত-সহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ দরকার মোটামুটি ১০ লাখ টাকা। এই অবস্থায় স্বপ্ন ছুঁতে সমাজমাধ্যমে শুভানুধ্যায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জিও জানান সায়নী। তেনজিং নোরগে অ্যাওয়ার্ডের পুরস্কার মূল্য সায়নীর স্বপ্নপূরণের সহায়ক হল। এতবড় সম্মান প্রাপ্তিতে খুশি সায়নীর মা রূপালি দাস-সহ গোটা পরিবার।

সায়নীর ‘জল-জার্নি’ শুরু হয় বছর সাতেক আগে। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ইংলিশ চ্যানেল জেতেন সায়নী। সেখানে যাতায়াতের খরচ জোগাড় করতে নিজের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু বন্ধক দেন সায়নীর বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক রাধেশ্যাম দাস। অবলীলায় সেই চ্যানেল জিতে বাবার কষ্ট মুছে দিয়েছিলেন সায়নী। তারপর আর থামেননি কালনার ‘জলপরি’ সায়নী। একের পর এক উত্তাল সাগরের উথালপাথাল ঢেউ, হিমশীতল জল আর ভয়াল সামুদ্রিক প্রাণীর হামলা আর আর্থিক প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেই জয়ের নিশান উড়িয়েছেন ক্যাটলিনা, মলোকাই, কুক স্ট্রেট ও নর্থ চ্যানেল পেরিয়ে। সায়নীই এশিয়ার প্রথম মহিলা যিনি মলোকাই জিতেছেন। আর ভারতের প্রথম মেয়ে হিসেবে নর্থ চ্যানেল জিতেছেন। আর দুটি চ্যানেল পেরলেই ‘ওশেন সেভেন’ বা সপ্তসিন্ধু জয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করতে পারবেন কালনার ‘সাগরিকা’ সায়নী।

সায়নীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এইসব চ্যানেল জয় করতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। স্পনসর তেমন মেলে না। যেটুকু মেলে সেটুকু আর নিজেদের সঞ্চয়, আর ধার-দেনা করে ১০/১৫ দিনের মধ্যে সেখানকার পরিস্থিতির সঙ্গে সড়গড় হয়ে চ্যানেলে নামতে হয়। কিন্তু এ দেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার এতটাই পার্থক্য যে, সেই দেশে অন্তত তিনমাস আগে গিয়ে অনুশীলন করতে পারলে ভালো হয়। টাকা-পয়সার কারণেই তা সম্ভব হয় না। ২০২৫-র এপ্রিলের মাঝামাঝি ষষ্ঠ সিন্ধু স্পেনের জিব্রাল্টার চ্যানেলে নামা একরকম চূড়ান্ত হয়েছে। ২০২৪-এ দুটি চ্যানেলে নামার খরচ হিসেবে এখনও ৫ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ ঝুলছে সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাসের ঘাড়ে। রাধেশ্যামবাবু জানান, ‘একই বছরে দুটি চ্যানেলে নামতে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। শুভানুধ্যায়ী, বন্ধুরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে।’ আরও বললেন, ‘আমি নিজে ব্যাঙ্ক থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। এখনও সেই ঋণ শোধ করতে পারিনি।’ এই আবহে ভারত সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দপ্তরের তেনজিং নোরগে পুরস্কার সায়নীর জিব্রালটার জয়ের স্বপ্নপূরণের ‘চাবিকাঠি’ হয়ে রইল।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!