Advertisement
  • এই মুহূর্তে বি। দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

নারীশিক্ষা নিয়ে বিভাজিত তালিবান। অবরুদ্ধ দেশ ছেড়ে পালালেন বিদেশমন্ত্রী স্তানিকজাই

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
নারীশিক্ষা নিয়ে বিভাজিত তালিবান। অবরুদ্ধ দেশ ছেড়ে পালালেন বিদেশমন্ত্রী স্তানিকজাই

আফগানিস্তানের নারীশিক্ষাইয় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রকাশ্যে তালিবান সরকারের সমালোচনা করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজান। যার জেরে ফাটল ধরেছিল দলের অন্দরে, শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছেন ওই মন্ত্রী। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত ২০ জানুয়ারি আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী খোস্ত প্রদেশে একটি ‘গ্র্যাজুয়েশন’ অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই। বক্তৃতায় তিনি কন্যাশিশুদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা এবং নারীদের উচ্চশিক্ষায় তালেবান সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন। আফগানিস্তানে মেয়েদের পড়াশোনার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। এই আবহে তালিবানি মন্ত্রী শের মহম্মদ স্তানিকজাইকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। আফগানিস্তান দখলের পরে এই স্তানিকজাই হয়ে উঠেছিলেন তালিবানের ‘মুখ’।
সেদিন বক্তৃতায় স্তানিকজাই বলেছিলেন, ‘নারীশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞার জন্য কোনো অজুহাত দেওয়া যায় না, বর্তমানেও না এবং ভবিষ্যতেও না। আমরা দুই কোটি মানুষের প্রতি অন্যায় করছি।’ তিনি আরো বলেছিলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জমানায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জ্ঞানের দরজা খোলা ছিল। সেখানে এত অসাধারণ সব নারী ছিলেন যে আমি যদি তাঁদের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে যাই, তাহলে অনেক সময় লাগবে।’

সরকারের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সমালোচনা করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিলেন । যার জেরে ফাটল ধরেছিল দলের অন্দরে, তাঁর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। এই পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছেন ওই স্তানিকজাই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর।

স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে দুবাইয়ের উদ্দেশে আফগানিস্তান ছাড়ার কথা নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই। তবে শারীরিক সমস্যার কারণেই তিনি দেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে জানতে তালেবানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা মন্তব্য করতে রাজি হননি। আফগানিস্তানে ২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করে তালেবান। এরপর থেকে নারীদের শিক্ষা, চাকরি, চলাফেরা এবং জনপরিসরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর ফতোয়া আরোপ করা হয়। এ প্রসঙ্গে স্তানিকজাকে বারবার সরব হয়ে দেখা গিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জাতি সংঘের তরফে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, নারী শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের উপর যতদিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে এবং নারীরা ‘পুরুষ অভিভাবক’ ছাড়া জনসমক্ষে যেতে পারবে না, ততদিন বৈধ সরকার হিসাবে তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে না কোনোভাবেই। উল্লেখ্য, কোনো দেশই তালিবানের শাসনকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।

দক্ষিণ-এশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেছেন, স্তানিকজাই নানান সময়ে মেয়েদের শিক্ষা সহ, আফগান নারীর অধিকার প্রসঙ্গে বেশ কিছু বিবৃতি দিয়েছেন। তবে তাঁর এই মন্তব্যটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই কারণেই, কারণএবার তিনি প্রকাশ্যে তালিবানের নীতি পরিবর্তনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং বর্তমান পদ্ধতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’

গত মাসে হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ও আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। সামাজিক বৈষম্যে সৃষ্টি করে নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবার দাবি। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আইসিসির আদালতে করিম খান এই আবেদন করেছেন।

বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই একসময় ভারতে মিলিটারি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। দেরদূনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির ১৯৮২ ব্যাচে ছিলেন তিনি। ব্যাচমেটদের কাছে ‘শেরু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ৪০ বছর আগে থেকে ভারতে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। সেই সময়ই দীর্ঘ দিন ভারতে কাটিয়ে গিয়েছিলেন স্তানিকজাই। আই এম এ থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে আফগানিস্তানে ফিরে যান তিনি। আফগান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগ দিয়ে সোভিয়েত সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ১৯৯৬ সালে তালিবান আফগানিস্তান দখল করলে সেসময়ও বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল স্তানিকজাইয়ের কাঁধে। মার্কিন গোয়েন্দাদের বোকা বানিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে তালিবান যেভাবে গোটা আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল, তারপর থেকেই স্তানিকজাইয়ের নাম নিয়ে চর্চা তুঙ্গে উঠেছিল। সেই সময়কার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, দেরাদূনে প্রশিক্ষণের সময় নাকি স্তানিকজাই স্বল্পভাষী ছিলেন। কট্টরপন্থার ছিঁটেফোঁটাও ছিল না তাঁর মধ্যে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!