Advertisement
  • খাস-কলম মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
  • নভেম্বর ১৩, ২০২৩

বিশ্বকাপের ‘‌সারপ্রাইজ প্যাকেজ’‌ রাচিন রবীন্দ্র

নজরুল ইসলাম
বিশ্বকাপের ‘‌সারপ্রাইজ প্যাকেজ’‌ রাচিন রবীন্দ্র

৫ অক্টোবর রাতটা কি কখনও ভুলতে পারবেন রাচিন রবীন্দ্র? নিশ্চিতভাবেই নয়। ৫ অক্টোবরের রাতটা যে তাঁর জীবনের অন্যতম স্মরণীয় রাত। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি। কী করে ভুলবেন আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের সেই রাতকে। কেন উইলিয়ামসন পুরোপুরি ফিট থাকলে হয়তো স্মরণীয় রাতটা তাঁর স্বপ্নেই থেকে যেত।

এবারের বিশ্বকাপে উদ্বোধণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। পুরো ফিট না থাকায় অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের খেলার কোনও সুযোগই ছিল না। তিন নম্বরে কিউয়ি টিম ম্যানেজমেন্ট এমন একজনকে খুঁজছিল, যে উইকেট ধরে রাখতে পারে, আবার রানের গতি বাড়াতেও সক্ষম। শুরুতে উইকেট হারালে রাচিন রবীন্দ্রকে পাঠানো হবে। আগেই ভেবে রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। দ্বিতীয় ওভারেই উইল ইয়ং আউট। আর জীবনের প্রথমবার তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ইতিহাসে রাচিন রবীন্দ্র। ডেভন কনওয়ের সঙ্গে ২৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। মাত্র ৯৬ বলে ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে ইতিহাসে রাচিন রবীন্দ্র।

নিউজিল্যান্ডের এই স্পিনার অলরাউন্ডারের উঠে আসার পেছনে রয়েছে অন্য গল্প। রাচিন রবীন্দ্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত। নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ও মা ভারতীয়। শিকড় বেঙ্গালুরুর। রাচিনের বাবা রবি কৃষ্ণমূর্তি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মা দীপা গৃহকর্ত্রী। ১৯৯০–এর দশকে বেঙ্গালুরু থেকে ওয়েলিংটনে চলে আসেন রবি। নিউজিল্যান্ডে আসার আগে নিজের শহর বেঙ্গালুরুর হয়ে ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছেন। নিউজিল্যান্ডে এসে কাজের মধ্যে ডুবে গেলেও ক্রিকেটের নেশা ছাড়তে পারেননি। ওয়েলিংটনে এসে তিনি হাট হকস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেই প্রথাগত ক্রিকেট শুরু করেন রাচিন রবীন্দ্র।

রবীন্দ্রর বাবা রবি কৃষ্ণমূর্তির প্রিয় ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন তেন্ডুলকার। ছেলের জন্মের পর ঠিক করেছিলেন দুই প্রিয় ক্রিকেটারের নাম মিশিয়ে ছেলের নাম রাখবেন। রাহুল দ্রাবিড়ের ‘রা’ এবং শচীনের ‘চিন’ মিলিয়ে ছেলের নাম রাখেন ‘‌রাচিন’‌। রবি কৃষ্ণমূর্তির ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করার। বাবার ইচ্ছেতেই নিজেকে ক্রমশ ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে থাকেন রাচিন। স্পিনার–অলরাউন্ডার হিসাবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তাঁকে তাঁকে তিন নম্বরে পাঠায় টিম ম্যানেজমেন্ট। আর সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান।

কেন উইলিয়ামসন ফিট না থাকায় রাচিন রবীন্দ্রকে ওপরের দিকে ব্যাট করারনোর পরিকল্পনা করেছিল নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল। দলকে নিরাশ করেননি রাচিন। ৯৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে অপরাজিত ১২৩।
ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল সামনাসামনি কিংবদন্তী শচীনকে দেখার। সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছে রাচিন রবীন্দ্রর। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ট্রফি নিয়ে মাঠে ঢোকেন শচীন তেন্ডুলকর। যাকে এতদিন টেলিভিশনে দেখেছেন, খুব কাছ থেকে দেখার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রবীন্দ্রর।

চলতি বিশ্বকাপে দারুণ নজর কেড়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই কিউয়ি ওপেনার। ৯ ম্যাচে ৫৬৫ রান করে সর্বোচ্চ রানসংগ্রহকারীর তালিকায় রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। করেছেন ৩টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফ সেঞ্চুরি। বল হাতেও রয়েছে সাফল্য। অনেকেই শ্রীলঙ্কার বাঁ হাতি স্পিনার অলরাউন্ডার সনৎ জয়সূর্যর সঙ্গেও তুলনা করছেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ৬–৭ নম্বরে খেলা জয়সূর্যকে ওপেন করতে পাঠিয়ে সাফল্য পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। নিউজিল্যান্ডকেও কি সেই রাস্তায় নিয়ে যেতে পারবেন রাচিন রবীন্দ্র?‌ যে রকম ফর্মে রয়েছেন, স্বপ্ন দেখতেই পারে কিউয়ি শিবির। তবে দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারুন আর না পারুন, চলতি বিশ্বকাপে রাচিন রবীন্দ্র কিন্তু সারপ্রাইজ প্যাকেজ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!