- খাস-কলম প্রচ্ছদ রচনা
- অক্টোবর ১৯, ২০২৩
মুখে আর্তের সহায়তার বার্তা, পেছনে জারি বিমান হানা । ইসরায়েলের মুখ আর মুখোশ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ
সম্পর্ক যখন শাসক-শাসিতের হয় তখন ঠিক যে রকমের আধিপত্যবাদ, ফ্যাসিজম শুরু হয় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর সেটারই নির্মম অত্যাচারের এক চিত্রনাট্য গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে। একদিকে বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের খতম করার নামে অগণিত নিরীহ ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ করছে, হত্যা করছে অন্যদিকে মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্বের কাছে নিজেদের “মানবিক” তুলে ধরার জন্য আর্যদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাস্তা খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘরছাড়া, অসহায়, যুদ্ধাক্রান্ত সাধারণ মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। গোটা বিশ্ব দেখছে দীর্ঘ,দীর্ঘ সময় ধরে গাজায় ফিলিস্তিনিদের একটা মুক্ত কারাগারে বন্দি রেখে, তাদের সমস্ত অত্যাবশ্যক জিনিস সরবরাহের দায়িত্ব নিজেদের হাতে রেখে, নিজভূমে ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী করে রেখে, ইসরায়েল তাদের ফ্যাসিস্ট মুখ বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে। তার পর যখন দীর্ঘ অত্যাচারের পর হামাস গোষ্ঠীর পাল্টা আক্রমণ করেছে ইসরায়েলের ওপর, নিজেদের অধিকারের দাবিতে, তখন ফের পাল্টা আঘাত হানতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠা না করে এক নির্মম যুদ্ধের ভয়াবহ চেহারা নিয়ে ইসরায়েল আবার ফিলিস্তিনিদের সামনে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল হিসেবে দিচ্ছে, হামাস গোষ্ঠীর আক্রমণে গত ৭ অক্টোবর, শনিবার ১৪০০ ইসরায়েলি মারা গেছে। তবে তারপর মার্কিন সাহায্যপুষ্ট হয়ে ইসরায়েল গাজায় যে ভয়াবহ আক্রমণ চালাচ্ছে, তাতে কত সাধারণ মানুষ হামাস জঙ্গিদের খতমের নাম ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স খতম করছে তার হিসেবে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার দিচ্ছে না। সেটা দিচ্ছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ, এমনকি গাজায় স্থল আক্রমণের পরিণতিতে যে ভয়াবহ গণহত্যা হতে পারে সেটা উল্লেখ করে ইসরায়েলকে সতর্কও করেছে তারা। তবে জো বাইডেনকে পাশে পেয়ে বেঞ্জামিনের সরকার কোনও নিষেধই মানছে না। এমনকি সাদা ফসফরাস বোমা, যা নিষিদ্ধ, তাও প্রয়োগ করেছে গাজায়। বুধবার একদিনে ৫ হাজার বোমা বর্ষণ করেছে গাজায়। তারপর মানবিক মুখ নিয়ে ইসরায়েল মার্কিনি সহযোগিতায় ফিলিস্তিনের অসয়ায়,নিরীহ মানুষদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র হামাস ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট হামলার মতো আক্রমণকে কেউ সমর্থন করে না, করার প্রশ্নও নেই। কিন্তু সেই হামাসকে খতম করতে ইসরায়েল সেনা আকাশ পথে যে হামলা গাজায় চালাচ্ছে সেটা কি সমর্থনযোগ্য? এই হামলায় যে সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে, তারা কিন্তু নিরীহ, অসহায়, সন্ত্রাসী নয়। তাহলে প্রশ্ন এই মানুষগুলোকে খতম করার অধিকার ইসরায়েল প্রশাসনকে কে দিয়েছে?
এদিকে এই পরিস্থিতিতে মিশর প্রশাসন ঠিক করেছে, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের মিশরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে রাফা সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনীয়দের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ পাঠানোয় অনুমোদন দেবে মিশর। প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ আল-সিসির সঙ্গে বুধবার রাতে টেলিফোনে কথা বলেছেন ইসরায়েল সফররত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনাতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছ। বাইডেন বলেছেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ২০ ট্রাক ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিচ্ছে মিশর।’’ এই ত্রাণসামগ্রী গাজায় পৌঁছোবার জন্য করিডোর করার ব্যবস্থা করেছে ইসরায়েল প্রশাসন মার্কিন প্রশাসনের সহায়তা ও সমর্থনে। পাশাপাশি চলবে গাজায় বিমান হানাদারি।
এদিকে প্রেসিডেন্ট আবদেল জানিয়েছেন, হামাস যোদ্ধারা যদি এই ত্রাণসামগ্রী ব্যবহার করে, তাহলে এর পর আর কোনও মানবিক সাহায্য গাজায় পৌঁছতে দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থার মতে, ১৩ দিনের সংঘর্ষে অন্তত ১০ লক্ষ গাজাবাসী ঘরছাড়া হয়েছেন। তাঁদের জন্য দৈনিক অন্তত ১০০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজন। ২০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী যে সেখানে কিছুই নয়, সেটা সহজেই অনুমেয়।
তবে ফিলিস্তিনীদের এই ‘গণহত্যায়’ উদ্বেগ প্রকাশ করে মিশরের প্রেসিডেন্ট বুধবার বলেছেন, ‘‘ভবিষ্যতে হয়তো আমরা দেখব প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের জন্য জমি রয়েছে। কিন্তু থাকার মতো মানুষ নেই।’’ এই পরিস্থিতিতে কেন প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে না মিশর? আবদেলের যুক্তি, ‘‘ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে জর্ডনে আশ্রয় নেওয়া প্যালেস্তেনীয় শরণার্থীরা যে সমস্যায় পড়েছেন, ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রেও তা-ই হতে পারে।’’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পশ্চিম এশিয়া সফরের ঠিক আগে মঙ্গলবার গাজার উপর বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছিল ইসরায়েল। ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারের ওই ভূখণ্ডের ২৩ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় বাসিন্দার জল, খাবার, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল আগেই। মঙ্গলবার সেখানে আন্তর্জাতিক ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর উপরেও বিধিনিষেধ জারি করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। এর পর মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলায় অন্তত ৫০০ জনের হয়েছে।
নেতানিয়াহু সরকার উত্তর এবং মধ্য গাজার বাসিন্দাদের ঘর ছাড়ার জন্য চরম সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্থলপথে ইসরায়েলি সেনার অভিযান শুরু হয়নি। হাসপাতালে আকাশপথে আক্রমণের কারণে বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বুধবার গাজায় কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছিল, ‘‘অবিলম্বে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছনো দরকার।’’ মঙ্গলবার আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক সাহায্য গাজায় পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েল সফররত জো বাইডেনের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠকে আলোচনা হবে। তার পরেই ইসরায়েল মানবিক মুখ দেখতে মার্কিনি সমর্থনপুষ্ট হয়ে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য করিডোর করার কথা ঘোষণা করেছে। যে পথে মিশর থেকে ২০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রী গাজায় পৌঁছোবার অনুমতি মিলেছে। এটা যদি ইসরায়েলের মানবিক মুখ হয় তাহলে নির্বিচারে গাজায় হামাস জঙ্গিদের খতমের নাম সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে হাসপাতালের রোগী,চিকিৎসক, শিক্ষালয়ের ওপর হামলা অবশ্যই পৈশাচিক মুখের বহিঃপ্রকাশ নয় কী? সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে !
❤ Support Us