- ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র প্রচ্ছদ রচনা
- নভেম্বর ১২, ২০২৪
প্রয়াত মনোজ। আজ ‘মৃত্যুর চোখে জল’

দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা গেলেন বিশিষ্ট অভিনেতা মনোজ মিত্র। মৃত্যুকালে থিয়েটার ও চলচ্চিত্র জগতের এই কিংবদন্তি শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী ও কন্যাকে।
বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন মনোজ মিত্র। কিছুদিন আগেই হৃদযন্ত্রে সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সল্টলেকের ক্যালকাটা হার্ট রিসার্চ সেন্টারে। আজ সকাল ৮.৫০ নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভর্তির সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতার হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করছে না। হার্টে পাম্পের সমস্যা রয়েছে। রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণও ছিল না। ক্রিয়েটিনিনও অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল। এছাড়াও ছিল সোডিয়াম–পটাসিয়াম সমস্যা। হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের সব প্রয়াস বৃথা হয়ে গেল।
চলতি বছরের শুরুতেই বুকে প্রেসমেকার বসেছিল মনোজ মিত্রের। তারপর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এই নিয়ে প্রায় ৩ বার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতারই এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল মনোজ মিত্রকে। তখনই কয়েকবার ভুয়ো খবর রটেছিল, মারা গেছেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। কিছুটা সুস্থ হয়ে পুজোর আগে বাড়ি ফেরেন তিনি। এবার আর শেষ রক্ষা হল না। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হৃদযন্ত্রের সমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস মেলাইটাস, ক্রনিক কিডনির অসুখ, সিওপিডি, ডিমেনশিয়ার মতো রোগও ছিল তাঁর।
১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের সাতক্ষিরা জেলার ধূলিহর গ্রামে জন্ম মনোজ মিত্রর। ১৯৫৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্সসহ স্নাতক হন। কলেজেই থিয়েটারে দীক্ষিত হন। সেই সময় তাঁর সঙ্গী ছিলেন বাদল সরকার, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মতো অভিনেতারা। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনাও করেছেন। শেষ জীবনে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন।
১৯৫৭ সালে কলকাতায় মঞ্চ নাটকে প্রথম অভিনয় মনোজ মিত্রর। প্রথম নাটক ‘মৃত্যুর চোখে জল’ লেখেন ১৯৫৯ সালে। কিন্তু ১৯৭২-এ ‘চাক ভাঙা মধু’ নাটকের মাধ্যমে তাঁর খ্যাতি এবং পরিচিতি বাড়ে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নাট্যগোষ্ঠীর নাম ‘সুন্দরম’। মাঝে ‘সুন্দরম’ ছেড়ে ‘ঋতায়ণ’ নামে এক দল গড়লেও কিছু দিনের মধ্যে ‘সুন্দরম’-এই ফিরে আসেন। ‘অবসন্ন প্রজাপতি’, ‘নীলা’, ‘মৃত্যুর চোখে জল’, ‘সিংহদ্বার’, ‘ফেরা–র মতো একাধিক দর্শক সমাদৃত নাটকের সঙ্গে জুড়েছিল মনোজের নাম।
১৯৭৯ সালে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, বাসু চট্টোপাধ্যায়ের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মনোজ। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘গণশত্রু’ এবং ‘ঘরে বাইরে’-তেও অভিনয় করেন তিনি। ‘বাঞ্ছারামার বাগান’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’–এ দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন। সারা জীবনে বহু পুরস্কার, সম্মান পেয়েছেন এই শিল্পী। সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার জয়ী এই নট ও নাট্যকারের প্রয়াণে বাংলা সংস্কৃতি জগতে বিশাল শূন্যতা তৈরি হল। বলা বাহুল্য, মনোজ মিত্রের মৃত্যু একটি যুগের অবসান।
তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিশ্বময় গুণগ্রাহীরা ।শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও ।
Saddened by the demise of the famous actor, director and playwright, ‘Banga Bibhushan’ Manoj Mitra today morning.
He had been a leading personality in our theatre and film worlds and his contributions have been immense.
I convey my condolences to his family, friends and…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 12, 2024
❤ Support Us