- এই মুহূর্তে দে । শ
- সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪
স্বজনপোষণের অভিযোগ এড়াতেই হাউসস্টাফ নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল, ঘোষণা স্বাস্থ্য দফতরের। চিকিৎসকের অভাবে বিঘ্নিত হবে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, আশঙ্কা সাধারণ মানুষের
রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ আরজি করে নিয়োজিত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর
আর জি করের ঘটনার বিচারের দাবিতে এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলতে গত দুদিন জুনিয়ার ডাক্তারদের লালবাজারে অবস্থান চলে, জুনিয়ার ডাক্তারদের চাপে পড়ে কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার ডাক্তারদের সাথে দেখা করতে বাধ্য হন। ডাক্তারদের ২২ জন প্রতিনিধির একটি দল তাঁর সাথে দেখা করে। এরপর তাঁরা জানান, এই মিটিং থেকে কোনো সন্তোষজনক জবাব তাঁরা পাননি, তাই লালবাজারে অবস্থান উঠলেও কর্মবিরতি তাঁরা চালিয়ে যাবেন। দিনের পর দিন, রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ চিত্র সামনে এসেছে, হাউস স্টাফের সংখ্যা কমতে থাকায় ক্রমাগত জুনিয়ার চিকিৎসকদের বাড়তি সময় ডিউটি করে যেতে হয়েছে, বাড়তি সময় কাজ করার জন্য সামান্য বিশ্রাম ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাটুকু করা হয় না বলে বহুদিন যাবৎ অভিযোগ করেছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরাও।
তারপর, আর জি করে ঘটে যাওয়া এই দুঃসহ ঘটনা এই প্রশ্নগুলিকে এবং অভিযোগগুলিকেই আরো স্পষ্ট করে দেয়। এরই মধ্যে, রাজ্যের সব মেডিকেল কলেজে স্থানীয় ভাবে হাউজ স্টাফ নিয়োগের জন্য লোকসভা ভোটের মধ্যে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর গত এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখ, ৩ সেপ্টেম্বর সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য । হঠাৎ কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হল তার ব্যাখ্যা দেয়নি স্বাস্থ্য ভবন। মঙ্গলবার ৩ সেপ্টেম্বর কেবল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, স্থানীয় ভাবে মেডিকেল কলেজগুলিতে হাউজ স্টাফ নিয়োগের প্রক্রিয়ায় স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠছিল। আরজি করের ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তাররা এখন আন্দোলনরত। নতুন করে কোনও বিতর্ক মাথাচাড়া যাতে না দেয় সেজন্য সতর্ক পদক্ষেপ করল সরকার।
কী বলা হয়েছে এই বিজ্ঞপ্তিতে ?
বলা হয়েছে যে, HFW-23099/136/2024/M/1058 তারিখ 24/04/2024, HFW-46020(99)/35/2024/M/1057 তারিখ 24/04/2024 এবং HFW-46020/99) 35/2024/M/1035 তারিখ 23/04/2024, রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ একটি আদেশ জারি করেছে এবং জুনিয়র ডাক্তার তথা হাউজ স্টাফ নিয়োগ বাতিল করেছে।
সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে হাউজ স্টাফ নিয়োগের পদ্ধতিতে দুর্নীতি হচ্ছে বলে গত মে মাসে অভিযোগ করেছিলেন নবীন ডাক্তারদের একাংশ। এমবিবিএস পাশ করার পর সম্ভাব্য ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য ইন্টার্নশিপ করতে হয়। ইন্টার্নশিপের পর তাঁরা রেজিস্ট্রেশন পান। এই রেজিস্ট্রেশনের পর দ্বিতীয় ধাপ হল হাউজ স্টাফ হিসেবে কাজ করা। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। হাউজস্টাফরা প্রকারান্তরে জুনিয়র ডাক্তারের মতোই কাজ করেন। এর আগে বাংলায় সরকারি হাসপাতালগুলিতে হাউজ স্টাফ হিসেবে কাজ করাটা ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু গত দশ বছরে সেই নিয়ম শিথিল করা হয়। হাউজস্টাফ হিসেবে কাজ করার জন্য মেডিক্যাল কলেজে আবেদন করতে হত ডাক্তারদের। এরপর ডাক্তারি পড়ার সময়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাঁদের বাছাই করা হত।
এ বছর সেই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনে স্বাস্থ্য দফতর। ঠিক হয়, এমবিবিএস পড়ার সময়ে প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ৮৫ শতাংশের স্কোরকার্ড তৈরি হবে। ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে বাকি ১৫ শতাংশের মধ্যে নম্বর দেওয়া হবে প্রার্থীদের। এই ইন্টারভিউর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ডাক্তারদের একাংশ এবং একাধিক সংগঠন। অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ইন্টারভিউয়ে যে ১৫ শতাংশ নম্বর যোগ হবে তা নিয়ে স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতি, অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য ভবনের নয়া নিয়মের বিরোধিতা করে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছিলেন ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও। তবে সরকার এদিন নিয়োগ বাতিলের ব্যাপারে কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। শুধু বাতিলের ঘোষণাটুকু হয়েছে।
24/04/2024 তারিখের নোটিশ নম্বর HFW-23099/136/2024/M/1058 অনুযায়ী, বিভাগ আরজি কর মেডিকেল কলেজে হাউস স্টাফ নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। সেই অনুসারে, মোট ৮৪টি পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। এছাড়াও, নোটিশ নম্বর HFW-46020(99)/35/2024/M/1035 তারিখ 23/04/2024 অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৯টি পদে হাউস স্টাফ নিয়োগ করা হবে৷ এখন বিভাগ একটি আদেশ জারি করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বাতিল করেছে।
এই নির্দেশ বর্তমান পরিস্থিতির জটিলতাকে আরো খানিক উস্কে দেবে বলেই আশঙ্কা করা যাচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রের পরিকাঠামো থেকে শুরু করে কর্মরত চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে অভিযোগের ঝড় বইছে । সাম্প্রতিক আরজি কর এর ঘটনা পরই দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে, আর জিকরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয় । এবার সেই সেই সেই জওয়ানদের সঙ্গেই অসহযোগিতার অভিযোগ উঠল রাজ্যের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্র। একদিকে যেমন জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বিপর্যস্ত, নানা জায়গায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, তেমনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্যের অসহযোগিতার প্রশ্নেও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে ।
গত ৮ অগস্ট মধ্যরাতে আরজি করে যৌন নির্যাতন এবং হত্যা করা হয় এক কর্মরত ডাক্তারি ছাত্রীকে। দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং নিরাপত্তা চেয়ে এরপরই আরজি করের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়ারা। ১৪ মার্চ গভীর রাতে একদল দুষ্কৃতী আন্দোলনকারীদের মঞ্চে হামলা চালায়। হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগের পাশাপাশি ভেঙে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের মঞ্চও। অভিযোগ, চারতলার সেমিনার হলের তথ্য লোপাটের জন্যই গভীর রাতে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। তবে দুষ্কৃতীরা থার্ড ফ্লোর এর সঙ্গে তিনতলাকে গুলিয়ে ফেলে সেখানে হামলা চালিয়ে ফিরে আসে। অভিযোগ, হামলাকারীদের দেখে সে সময় পুলিশ হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল।
ওই ঘটনার পরই বিভিন্ন মহল থেকে আরজি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপের দাবি জানানো হচ্ছিল। ২০ অগস্ট ওই মামলার শুনানিতে কলকাতা পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি। সেই মর্মে গত ২১ অগাস্ট হাসপাতালে এসে হাজির হয় সিআইএসএফ। দায়িত্ব নেয় হাসপাতালের। তার পর থেকেই হাসপাতালে মোতায়েন করা হয় ১৮৫ জওয়ান। ছেলেদের এবং মেয়েদের হস্টেল, ইনটার্ন হস্টেল, হাউসস্টাফ, পিজিটি হস্টেলে মোতায়েন করা হয় সিআইএসএফ জওয়ান। এই মুহূর্তে আরজি করে রয়েছে ৯২ জন সিআইএসএফ জওয়ান। এদের মধ্যে ৫৪ জন মহিলা।তাদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, কর্তব্যরত সেনাজওয়ানদের থাকার বিষয়ে রাজ্য কোনও সহযোগিতা করছে না।
সুপ্রিম কোর্টে করা পিটিশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে সিআইএসএফ বর্তমানে শহরের বাইরে সিআইএসএফ ইউনিটে থাকছেন। হাসপাতালে পৌঁছতে গেলে তাদের এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে আসতে হচ্ছে। এরকম চললে সিআইএসএফের পক্ষে ডিউটি করা মুশকিল। কোনও আপাতকালীন অবস্থা হলে তারা দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছতে পারবেন না।
এইসব ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্নমহলে।
❤ Support Us