Advertisement
  • টে | ক | স | ই
  • এপ্রিল ১৮, ২০২২

সেফটিপিন আবিষ্কারের গল্প

নারীদের ব্যবহৃত এই মহার্ঘ্য বস্তুটি আবিষ্কার হয়েছিল দেনা শোধ করতে

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
সেফটিপিন আবিষ্কারের গল্প

সেফটিপিনের সঙ্গে মহিলাদের বন্ধুত্ব অজীবনের ছেলেবেলায় পুতুলের পোশাক হোক কিংবা নিজেদের পোশাক ছেঁড়া-ফাটা জুড়তে সাময়িক সেফটিপিনের জুড়ি মেলা ভার ।শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের মেলবন্ধন করতে, শালোয়ারের সঙ্গে ওড়না আটকানোর ক্ষেত্রে, চলতি ভাষায় যাকে বলে পিন করা এই ক্ষেত্রে সেফটিপিনের গুরুত্ব অপরিসীম। সে কারণেই সেফটিপিনের আদি নাম ছিল, ‘ড্রেস পিন’।দিন কয়েক আগে সেফটিপিন দিয়ে আস্ত একটা পোশাকই বানিয়ে ফেললেন মডেল উর্ফি জাভেদ । বোঝাই যাচ্ছে সেফটিপিনের গুরুত্ব বাড়ছে । অবশ্য এখন বলে নয় বহু যুগ আগে থেকেই মহিলাদের সাজসরঞ্জামের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে সেফটিপিন ।

সেফটিপিনের জন্ম আমেরিকায়। ১৮৪৯ সালে ।আবিষ্কারক বিখ্যাত যন্ত্রকৌশলী ওয়াল্টার হন্ট। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, আবিষ্কারক একজন পুরুষ। তবে যে উদ্দেশ্যে এখন সেফটিপিন ব্যবহার করা হয় সেই উদ্দেশ্যে তিনি এটি আবিষ্কার করেননি। তিনি করেছিলেন ধার শোধ করতে। শুনে খানিক ধাঁধা লাগলেও এই ছিল সেফটিপিন আবিষ্কারের আসল কারণ।

ওয়াল্টার হান্ট, সেপটিপিনের আবিষ্কারক ।

ওয়াল্টার হান্ট তাঁর বন্ধুর থেকে ধার করেছিলেন পনেরো ডলার। টাকা পয়সার সমস্যা চলছিল, তাই ধার করেছিলেন । কিন্তু ধার শোধের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কিছুতেই ধার শোধ করতে পারছিলেন না। এদিকে পাওনা টাকা পেতে বন্ধু তাগাদা দিচ্ছিলেন। কী হল ওয়াল্টার টাকা কটা এবার ফেরত দাও। কী ব্যাপার এবার তো না দিলেই নয়। এরকম নানাবিধ তাগাদা আর নানাবিধ উপরোধ আসছিল। ওয়াল্টারের ছোটখাটো জিনিসের উদ্ভাবন ক্ষমতা ছিল। মাঝে মধ্যেই ঝোঁকের বশে নানা জিনিস বানাতেন। একদিন ভাবছিলেন, কীভাবে ধার শোধ করা যায়। হাতে তো কিছুই নেই, নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করবেন কি! যদি নতুন কিছু বানিয়ে সেটা বিক্রি করে খানিক অর্থ সংস্থান হয়, মন্দ হয় না। এইসব সাত পাঁচ ভাবনার মধ্যেই লম্বা তারের টুকরো আড়াআড়ি দুবার বাঁকালেন, মাথায় পরালেন একটা খাপ, যাতে গায়ে ফুঁটে না যায়। অর্থাৎ পিন কিন্তু সেফ। ব্যস, তৈরি হল সেফটিপিন।১৮৪৯ সালের ১০ই এপ্রিল তিনি পেটেন্টের জন্য আবেদন করলেন। সেই পেটেন্ট বিক্রি হল ৪০০ ডলারে। ধার শোধ তো হলই। কিছুদিনের মধ্যেই সেফটিপিনের বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু হল । ওয়াল্টার হয়ে উঠলেন লাখ লাখ ডলারের মালিক।
যে বন্ধুর থেকে ওয়াল্টার ধার করেছিলেন, নির্ধারিত পনেরো ডলার শোধের সময়, তিনি সঙ্গে দিয়েছিলেন একটি সেফটিপিন। কারণ তাঁর তাগাদায় বা উপরোধেই না এই জিনিসের জন্ম। সেটি ৮ ইঞ্চি লম্বা ছিল যার একপাশে দন্ড দুটিতে তারের কয়েল লাগিয়েছিলেন যেটি স্প্রিংয়ের ভূমিকা পালন করেছিল এবং অন্যপাশে একটি দন্ড ছিল যেটি আবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছিল।

সেফটি পিন জুড়ে জুড়ে পোশাক তৈরি করেছেন, মডেল অভিনেতা উর্ফি জাভেদ।

তবে খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০-১৪০০ শতকে, গ্রীসের পেলোপন্নিয়াসরা ব্যবহার করত ফিবুলা নামের এক ধরনের ব্রোচ বা রূপককাঠি। যেটিকে সেফটিপিন এর পূর্বসূরী হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। হোমারের লেখা ‘ওডিসি’ মহাকাব্যে লিখেছিলেন কাপড়ে ব্যবহৃত পিনের কথা। সেটার রং ছিল সোনালি।

তিনের দশকে ইউরোপে আভিজাত্যের প্রতীক ছিল সোনালি রঙের সেফটিপিন। এশিয়ার বহু দেশে শাড়ির বিভিন্ন ধরনের পরিধান শৈলীতে এবং আরব দেশগুলো বোরকা ও হিজাবের স্তরগুলো সুসজ্জিত বা মার্জিত রাখতে সেফটিপিনই ক্রমে হয়ে ওঠে ফ্যাশনজগতের আইকন ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!