Advertisement
  • খাস-কলম
  • ডিসেম্বর ২৮, ২০২১

হাওড়া স্টেশনে শরীরে প্লেগের জীবাণু ঢুকিয়ে জমিদারকে খুন !

এক ধনী জমিদার পরিবারের একজন সদস্যকে এরকম অদ্ভুত উপায়ে খুন করা ঘটনা তখন ব্রিটিশ ভারত ও ভারতের বাইরে তুমুল আলোড়ন ফেলে দেয়।

সৌতিক বিশ্বাস
হাওড়া স্টেশনে শরীরে প্লেগের জীবাণু ঢুকিয়ে জমিদারকে খুন !

১৯৩৩ সালের ২৬ নভেম্বর । ভিড়ে ভরা হাওড়া স্টেশন চত্বরে একজন তরুণ জমিদারের গায়ে হঠাৎ ঘষা লাগিয়ে চলে গেলেন খাটো চেহারার, মোটা খদ্দরের পোশাক পরা ব্যক্তি দ্রুত স্টেশনের জনসমুদ্রে মিশে গেলেন । কুড়ি বছরের জমিদার অমরেন্দ্র চন্দ্র পান্ডে ডান হাতে  সূঁচ ফোটানোর মতো ব্যথা অনুভব করলেন।

অমরেন্দ্র বললেন—উহু, সূঁচ ফোটানোর মতো ব্যাথা । অমরেন্দ্র চন্দ্র পান্ডে যাচ্ছিলেন প্রতিবেশি রাজ্য ঝাড়খন্ড-র পাকুড় জেলায় তাঁদের পৈতৃক বাড়িতে । সঙ্গী আত্মীয়স্বজনরা তাঁকে অনুনয় করলেন, এখানে থেকে রক্ত পরীক্ষা করাও। কিন্তু অমরেন্দ্র থেকে  ১০ বছরের ছোটো তাঁর সৎ ভাই বিনয়েন্দ্র ব্যাপারটা হেসেই উড়িয়ে দিয়ে অমরেন্দ্রকে রাজি করালেন, বিলম্ব না করে  রওনা দাও ।

তিনদিন পর কলকাতায় ফিরতে হল অমরেন্দ্রকে।  তখন তাঁর ভীষণ জ্বর । কলকাতায় ফিরে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলেন অমরেন্দ্র ।  ডাক্তার তাঁর হাতের ব্যাথা জায়গা পরীক্ষা করে দেখলেন । সূঁচ ফোঁটার মতোই একটি চিহ্ন ।
পরের কয়েক দিন তাঁর জ্বর বাড়তে থাকে, বগলের নিচটা ফুলে ওঠে এবং ফুসফুসের রোগের প্রাথমিক লক্ষ্মণগুলো প্রকাশ পায়। ৩ ডিসেম্বর রাতে তিনি কোমায় চলে যান এবং পরের দিন ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

চিকিৎসকরা জানান, অমরেন্দ্র মারা গেছেন নিউমোনিয়া রোগে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ল্যাবরেটরি থেকে যখন পরীক্ষার রিপোর্ট আসে, তখন জানা যায়, তাঁর রক্তে ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামে একটি প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া অস্তিত্ব আছে, যার থেকে প্লেগ রোগ ছড়ায়।

এক ধনী জমিদার পরিবারের একজন সদস্যকে এরকম অদ্ভুত উপায়ে খুন করা ঘটনা তখন ব্রিটিশ ভারত ও ভারতের বাইরে তুমুল আলোড়ন ফেলে দেয়।  পত্রপত্রিকাগুলো এই খুনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বৃত্তান্ত প্রকাশিত হতে থাকে ।  টাইম ম্যাগাজিন একে ‘দেহে জীবাণু প্রবেশ করিয়ে  হত্যা’ আর সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস এই ঘটনার শিরোনাম দেয় ‘বাহু বেঁধানোর রহস্য’ ।

কলকাতা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে এক জটিল ষড়যন্ত্রের রোমাঞ্চকর কাহিনী।  পুলিসের তরফে তুলে ধরা হয় সুদূর মুম্বাইয়ের (সেসময়ের বম্বে) এক হাসপাতাল থেকে প্রাণঘাতী জীবাণু চুরি করা সহ নাটকীয় ও সাহসী এক চক্রান্তের বূত্তান্ত । ওই খুনের পরিকল্পনার মূলে ছিল পরিবারের ভেতরে দুই ভাইয়ের বিরোধ।

পান্ডে পরিবারের দুই সৎ-ভাইয়ের মধ্যে দুই বছর ধরে চলছিল পাকুড়ে তাদের প্রয়াত পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই। পাকুড় কয়লা ও খনিজ পাথরের খনি সমৃদ্ধ এলাকা। জনপ্রিয় কাগজগুলো তখন দুই ভাইয়ের এই বিরোধের কাহিনী নিয়ে উত্তাল।

এরকম একটি খবরে অমরেন্দ্র পান্ডেকে নিয়ে বলা হয় ‘ভদ্র ও উচ্চ-শিক্ষিত সজ্জন। কঠোর নৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী । স্বাস্থ্যবান। নিয়মানুবর্তী জীবনে অভ্যস্ত  এবং জনপ্রিয়’।  তাঁর ভাই বিনয়েন্দ্র উচ্ছৃঙ্খল ।  মদ ও নারীতে অতি মাত্রায় আসক্ত ।

আদালতের নথিতে বলা হয়, অমরেন্দ্রকে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্ভবত নেওয়া হয়েছিল ১৯৩২ সালে। তখন তারানাথ ভট্টাচার্য নামে এক চিকিৎসক, যিনি বিনয়েন্দ্রর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, একটি চিকিৎসা গবেষণাগার থেকে প্লেগ রোগের জীবাণু নিয়ে কালচার তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

সে খবরটি দেয়া হয় ব্রিটিশ এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডি পি ল্যাম্বার্টের একটি রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে, যেখানে বলা হয়, একটি শৈল শহরে অমরেন্দ্র আর বিনয়েন্দ্র দুই ভাই হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। তখন বিনয়েন্দ্র হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একজোড়া চশমা বের করে তা এমন জোরে অমরেন্দ্রর নাকের ওপর চেপে বসিয়ে দেন যে তার নাকের চামড়া ছড়ে যায়।

ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, এরপরই অমরেন্দ্র অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্দেহ করা হয় যে ওই চশমায় জীবাণু মাখানো ছিল। অমরেন্দ্র পান্ডের ধনুষ্টঙ্কার হয়েছে বলে ডাক্তাররা মত দেন এবং তাঁকে ধনুষ্টঙ্কার নিরাময়ের ওষুধ দেন। বিনয়েন্দ্র পান্ডের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ছিল যে তিনি তিনজন আলাদা চিকিৎসককে নিয়ে এসেছিলেন, যাতে তাঁরা ধনুষ্টঙ্কারের চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। কিন্তু ড. ল্যাম্বার্টের বিবরণ অনুযায়ী, কোন ডাক্তারই তার কথামত কাজ করতে রাজি হননি।

ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৯৬ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে এক কোটি বিশ লাখের ওপর মানুষ মারা গিয়েছিল প্লেগ রোগে । এরপর ১৯২৯ থেকে ১৯৩৮এর মধ্যে প্লেগে মৃত্যুর হার প্রায় পাঁচ লাখ কমে আসে। অমরেন্দ্র পান্ডের মৃত্যুর আগের তিন বছর কলকাতায় প্লেগ রোগে একজনও আক্রান্ত হন নি।

এর পরের বছর যা ঘটল, তা সময়ের বিচারে ছিল অনেক উঁচু মানের খুনের চক্রান্ত।একদিকে তখন বিনয়েন্দ্র পান্ডে তাঁর পৈতৃক বাসভবনের উত্তরাধিকার পেতে মরিয়া, অন্যদিকে তার ডাক্তার বন্ধু তারানাথ ভট্টাচার্যও বন্ধুকে সাহায্য করতে জীবাণু তৈরিতে নাছোড়বান্দা। ডা. তারানাথ ইতোমধ্যে অন্তত চারবার কৃত্রিমভাবে প্লেগের জীবাণু তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

ডা. তারানাথ ১৯৩২ সালের মে মাসে মুম্বাইয়ের হাফকিন ইন্সটিটিউটের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। ভারতে সেটাই ছিল একমাত্র গবেষণাগার যেখানে এধরনের জীবাণুর কালচার তৈরি করা হত । কিন্তু ওই গবেষণাগারের পরিচালক সাফ জানিয়ে দিলেন, বেঙ্গলের সার্জেন জেনারেলের অনুমতি আনতে হবে, নাহলে তাঁরা এই জীবাণু তৈরির রসদ তাকে সরবরাহ করবেন না।

ওই মাসেই ডা. তারানাথ কলকাতার এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বলেন যে তিনি প্লেগের ওষুধ আবিষ্কার করেছেন এবং গবেষণাগারে কালচার করা জীবাণুর ওপর সেটা  পরীক্ষা করে দেখতে চান।
আদালতের নথি অনুযায়ী, চিকিৎসক তাঁকে গবেষণাগারে কাজ করার অনুমতি দেন, কিন্তু বলেন যে, হাফকিন ইন্সটিটিউট থেকে কালচার করা কোন জীবাণুতে তাঁর হাত দেয়া নিষেধ।

ড. ল্যাম্বার্ট বলছেন, গবেষণাগারে প্লেগ ভাইরাস তৈরি করতে না পারার কারণে তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু দমবার পাত্র নন ডা. তারানাথ । ১৯৩৩ সালে তিনি আবার কলকাতার ওই চিকিৎসককে দিয়ে জোর করে হাফকিন ইন্সটিটিউটের পরিচালকের কাছে চিঠি লেখান।  চিঠিতে চিকিৎসক ইন্সটিটিউটের অনুমতি চান যাতে ডা. ভট্টাচার্যকে ‘প্লেগের ওষুধ’ পরীক্ষা করতে তাদের গবেষণাগার ব্যবহারের অনুমতি হয়।

সেবছরই গ্রীষ্মে বিনয়েন্দ্র পান্ডে মুম্বাই যান। তিনি ডা. তারানাথের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইন্সটিটিউটে কর্মরত দুজন পশুরোগ বিশেষজ্ঞকে ঘুষ দিয়ে হাত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা ল্যাবরেটরি থেকে প্লেগ রোগের জীবাণু লুকিয়ে বাইরে এনে দেন।

বিনয়েন্দ্র বাজারে গিয়ে কয়েকটা ইঁদুরও কিনে এনে দেখাতে চাইলেন, তাঁরা আসলেই বিজ্ঞানী এবং প্লেগ নিয়ে গবেষণা করছেন।হাফকিনে বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে, তারা দুজন আর্থার রোডে সংক্রামক ব্যাধির একটি হাসপাতালে যান। তারাও জীবাণুর কালচার মজুত রাখত।

মি.পান্ডে সেখানকার কর্মকর্তাদের রাজি করান যাতে ডা. তারানাথ তাঁর উদ্ভাবিত প্লেগের ওষুধ তাদের গবেষণাগারে পরীক্ষা করতে দেয় ।  এ তথ্য লিপিবদ্ধ আছে আদালতের নথিতে। কিন্তু ডা. তারানাথ যে সেখানে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, এমন কোন তথ্যপ্রমাণই নেই।

গবেষণাগারে ঢোকার অনুমতি পাবার প্রায় দিন পাঁচেক পর, ১২ জুলাই ডা. তারানাথ হঠাৎ করেই ‘তার পরীক্ষা’ বন্ধ করে দেন এবং বিনয়েন্দ্রকে নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন ।

মুম্বাই বা তৎকালীন বম্বের হাফকিন ল্যাব থেকে ভাইরাস তৈরির কালচার চুরির চেষ্টা করা হয়। হাফকিন তাদের নতুন অফিস করেছিল যা পরে ‘পার্ল ল্যাব’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে ।অমরেন্দ্র পান্ডেকে খুন করার তিন মাস পর ১৯৩৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ এই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তকারীরা খুঁজে বের করেন, বিনয়েন্দ্র পান্ডের ভ্রমণের কাগজপত্র, মুম্বাইয়ের হোটেল বিল, হোটেলের রেজিস্টার বইয়ে তাঁর নিজে হাতে লেখা নাম-ঠিকানা, ল্যাবরেটরিতে তাঁর পাঠানো বার্তা এবং যে দোকান থেকে তিনি ইঁদুর কিনেছিলেন তার রসিদ।

নয় মাস ধরে চলে চাঞ্চল্যকর এই খুনের মামলার শুনানি হয় । বাদী ও বিবাদী পক্ষের দেওয়া তথ্য নিয়ে মানুষের কৌতূহল পৌঁছয় তুঙ্গে।আসামী পক্ষের আইনজীবী যুক্তি দেন ইঁদুরের গায়ে বসা মাছির কামড়ে মারা গেছেন অমরেন্দ্র পান্ডে। কিন্তু আদালত বলে খুনের দায়ে অভিযুক্ত দুই আসামী মুম্বাইয়ের হাসপাতাল থেকে ‘প্লেগের জীবাণু চুরি করেছেন’ এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ তাদের হাতে আছে। আদালত আরও বলে, ‘ওই জীবাণু কলকাতায় নিয়ে আসার এবং ১৯৩৩ সালের ২৬ নভেম্বর অর্থাৎ খুনের দিন পর্যন্ত তা বাঁচিয়ে রাখারও যে ব্যবস্থা করা হয়’ সে প্রমাণও রয়েছে।

বিচারে প্রমাণিত হয়, বিনয়েন্দ্র পান্ডে এবং ডা. তারানাথ ভট্টাচার্য অমরেন্দ্র পান্ডেকে ‘ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত । তবে, ১৯৩৬ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদনের পর তাঁদের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে নেমে আসে। খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে আরও যে দুজন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়, প্রমাণের অভাবে তারা খালাস পেয়ে যান। ওই আপিল শুনে একজন বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, ‘এই ঘটনা সম্ভবত অপরাধের ইতিহাসে নজিরবিহীন’।

আমেরিকান সাংবাদিক ড্যান মরিসন যিনি এই হত্যার ঘটনা নিয়ে ‘দ্য প্রিন্স অ্যান্ড দ্য পয়জনার’ নামে একটি বই লেখার জন্য গবেষণা করছেন, তিনি বলেছেন, ‘বিনয়েন্দ্র ছিলেন বিংশ শতাব্দীর চিন্তাধারার একজন মানুষ। ভারতে সেসময় ব্রিটিশ শাসনামলে যেসব ভিক্টোরিয় মানসিকতার প্রতিষ্ঠান শাসনকাজ চালাত, বিনয়েন্দ্র ভেবেছিলেন, খুনের এই আধুনিক বুদ্ধি ব্যবহার করে তাঁদের তিনি সহজে বোকা বানাতে পারবেন।’

খৃস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে সম্ভবত জৈব অস্ত্রের ব্যবহার হয়ে আসছে। সেসময় আসিরিয়ানরা একধরনের ছত্রাকের জীবাণু বিষ হিসাবে তাদের শত্রুদের শরীরে প্রয়োগ করত। কিন্তু, অমরেন্দ্র পান্ডের মৃত্যুর সঙ্গে অনেক দিক দিয়ে মিল রয়েছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনের সৎভাই ৪৫ বছর বয়সী কিম জং নাম-এর মৃত্যুর ঘটনার। ২০১৭ সালে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে তিনি যখন ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন আততায়ীরা ঠিক এভাবেই তার শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিল।

ওই ঘটনায় পরে যে দুজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তারা কিম জং নাম-এর মুখের ওপর প্রাণঘাতী বিষ ঘষে দিয়ে গিয়েছিল।আজ থেকে ৮৮বছর আগে কলকাতার হাওড়া রেল স্টেশনে এক প্রিন্সও যে প্রায় একই কায়দায় খুন হয়েছিলেন, সেকথা মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে।

ওই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ভাড়া করা যে খুনি অমরেন্দ্র পান্ডেকে মেরেছিল, সেই ব্যক্তিকে এবং তার ব্যবহৃত মারণাস্ত্র — ইনজেকশনের সিরিঞ্জটা কখনই খুঁজে পাওয়া যায়নি।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!