Advertisement
  • এই মুহূর্তে বৈষয়িক
  • এপ্রিল ১৪, ২০২৫

চিন-মার্কিন শুল্ক বাণিজ্য দ্বন্দ্বে এবার খনিজ রফতানিতে কোপ, ঘোষণা বেইজিং-এর

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
চিন-মার্কিন শুল্ক বাণিজ্য দ্বন্দ্বে এবার খনিজ রফতানিতে কোপ, ঘোষণা বেইজিং-এর

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে চিন সরকার নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন নীতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকায় গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, যেমন ধাতু, চুম্বক ইত্যাদি রফতানি করা বন্ধ করে দিয়েছে। এইসব খনিজ পদার্থ গাড়ি থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত প্রায় সবকিছুর নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিনের ওপর চাপানো অতিরিক্ত শুল্ক ও পাল্টা চিনের মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়ানো নিয়ে এই সময়ে বিশ্ববাণিজ্য মহল উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে ভয়াবহ চাপানোতর চলছে। কেউই পিছু হটতে রাজি নয়। এই আবহে আবার ড্রাগনের দেশের নিঃশব্দ হুংকার। সম্প্রতি নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন নীতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকায় গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, যেমন ডিসপ্রোসিয়াম, টারবিয়াম, টাংস্টেন, ইন্ডিয়াম, ইট্রিয়াম ইত্যাদি রফতানি করা বন্ধ করে দিয়েছে। এইসব খনিজ পদার্থ গাড়ি থেকে শুরু করে মহাকাশযান, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত প্রায় সবকিছুর নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিনে এই খনিজগুলোর রপ্তানি বিষয়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আগেই আলোচনায় ছিল। সম্প্রতি আমি বৃটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে-এর ক্রিটিক্যাল মিনারেল ইন্টেলিজেন্স সেন্টারের পরিচালক গ্যাভিন মাড জানিয়েছিলেন, ‘শক্তি ও প্রযুক্তির এই সংমিশ্রণ ছাড়া পশ্চিমাদের জন্য মহাকাশে ক্ষমতা পুনর্নির্মাণ করা ভীষণ কঠিন। চিনের এই পদক্ষেপ আমাকে আরো গভীরভাবে ভাবাচ্ছে । এ নিয়ে আমি লাইল ট্রিটেনের সঙ্গে, যিনি খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের বিশ্বখ্যাত প্রকৌশলী তাঁর সাথে কথা বলেছি।’ যদিও চিনের এই পদক্ষেপকে নিষেধাজ্ঞা বলে মনে করছেন না গ্যাভিন। তাঁর মতে এটি চিনের ‘রাপ্তানি কৌশল মাত্র’, এর মাধ্যমে চিন একদিকে যেমন এই উপকরণগুলো কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করছে, অন্যদিকে সেগুলোর পরিমাণ, দ্রুততা ইত্যাদি বিষয়েও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে। যতটুকু জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে এর লাইসেন্স নিতে হলে, ডিসপ্রোসিয়াম, টারবিয়াম, টাংস্টেন, ইন্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম দিয়ে তৈরি বোল্টের চূড়ান্ত ব্যবহার জায়গা উল্লেখ করতে হবে। তবে, আমেরিকায় এর অনুমোদনের সম্ভাবনা কম, কারণ চিন অনেক বছর ধরে এই খনিজ সরবরাহ নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

এদিকে এই রফতানি স্থগিতাদেশ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে বেজিংয়ের প্রতিক্রিয়া বলে মনে করেছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ । চিন বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল মৌল উৎপাদন করে। যেগুলো প্রতিরক্ষা, বৈদ্যুতিক গাড়ি, জ্বালানি আর ইলেকট্রনিক্স শিল্পে বহুল ব্যবহৃত হয়। এই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় সাত ধরনের মাঝারি ও ভারী বিরল মৌল রয়েছে: স্যামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লুটেশিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম। উদাহরণস্বরূপ, ডিসপ্রোসিয়াম বৈদ্যুতিক মোটরগুলোর তাপীয় স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। তারপর রয়েছে টাংস্টেন, যা শুধু গোলাবারুদেই ব্যবহৃত হয় না, সেমিকন্ডাক্টর, সিএনসি মেশিন টুলস ও বিশেষ অ্যালয়ের সুরক্ষায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ। চিন এই ধাতুর উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী ৮০% অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ধরে এটি উৎপাদনে আগ্রহী হয় নি। টারবিয়াম, যা বৈদ্যুতিক গাড়ি, অফশোর উইন্ড টারবাইন এবং নাইট-ভিশন গগলসের জন্য অপরিহার্য, তাও চিনের নিয়ন্ত্রণে।

ইন্ডিয়াম এবং ইট্রিয়ামও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়—ইন্ডিয়াম আপনার স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিন আর ৫জি বেস স্টেশনের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও ইট্রিয়াম ছাড়া বিমানের ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চিন এই উপকরণগুলো রপ্তানি স্থগিত করে দিয়ে শুধু মার্কিন সামরিক শক্তি নয় পাশাপাশি, ক্লিন টেকনোলজির উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। ডিসপ্রোসিয়াম ও টারবিয়াম ছাড়া ইভি মোটরের কার্যক্ষমতা কমে যাবে, টেলুরিয়াম ছাড়া সৌর প্যানেল উৎপাদন সম্ভব হবে না, ইট্রিয়াম ছাড়া অফশোর বায়ু টারবাইন কম কার্যকর হবে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সংকটের মুখেও পড়তে পারে। কারণ এসব খনিজের দাম ইতিমধ্যেই বেড়ে গেছে, সরবরাহ সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিছু মার্কিন-মিত্র দেশ যেমন কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছে, তবে এক্ষেত্রে রাতারাতি চিনকে প্রতিস্থাপন করা অসম্ভব। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র একটি বিরল মৌল খনি আছে। ট্রাম্পের দেশে বেশিরভাগ সরবরাহ চিন থেকেই আসে। ট্রাম্প সরকার কিছু বিরল মৌলের মজুত রাখলেও, দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা পূরণের জন্য তা যথেষ্ট নয়।

যদিও বেজিংয়ের নয়া ফরমান কোনো সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নয়, কিন্তু চিন রফতানি লাইসেন্সের সংখ্যা সীমিত করে আর সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে ট্রাম্পকে যে চাপে ফেলতে চাইছে, তা পরিষ্কার। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে চিনের সাথে চলমান শুল্ক-যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। পুরনো বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বহাল করতে হবে, যার সম্ভাবনাও বর্তমান আবহে অত্যন্ত ক্ষীণ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!