শিবভোলার দেশ শিবখোলা
শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।
পর্ব-৩
গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক থেকে, বিদেশি ভাষার বহু স্বর, বহু সুর, নানা রকম ভাষাভঙ্গি আর বহুমাত্রিক বিষয়ের সংযোজনে ঋদ্ধ হয়েছে আমাদের কবিতা পাঠের মগ্ন চেতনা। কিন্তু এই উপমহাদেশের উত্তর আর দক্ষিণ, পূর্ব আর পশ্চিমের কবিতা, কবিতা ভাবনা দূরে পড়ে রইল এখনও । কেন ? ভারতীয় ভাষাচর্চায় বাঙালির অনীহা, না এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আরেক প্রতিবেশীর, আরোপিত প্রকান্তরে অনুশাসিত দূরত্বই তৈরি করেছে অপরিচিতির চৌহদ্দি ? যুক্তিপ্রসূত জিজ্ঞাসা নিয়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার কবিতার ধারাবাহিক তরজমায় প্রতিস্পর্ধী, সমান্তরাল চিন্তার বিশিষ্ট সহযোগী অংশুমান কর
প্রাক্তন আইএএস অশোক বাজপেয়ীর জন্ম ১৯৪১ সালে। হিন্দি ভাষার অন্যতম এই কবি ছিলেন ভোপালের ভারত ভবন প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর । বিভিন্ন ভাষা-ভাষী কবিদের নিয়ে ভারত ভবনে একাধিক অনুষ্ঠান ও কর্মশালার আয়োজন করেছেন। ললিত কলা আকাদেমির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।
এটা ছিল একটা সকালবেলা । ছিল সকালের আভা, নরম ঊষ্ণতা আর ঘুম ভেঙে জেগে-ওঠা। তবে সবার জন্য নয়। যে-বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছিল তাদের জন্য আর যে-সমস্ত মধ্যবয়স্ক মানুষরা হাঁটতে যাচ্ছিল তাদের জন্য এটা ছিল একটা সকাল । পাখি আর পায়রাদের জন্য, চরাচর জুড়ে যে-সবুজ ছড়িয়ে ছিল তার জন্য । এমনকি গাছপালা আর সবজিগুলোও জানত যে, এটা ছিল সকাল । কিন্তু টেবিলগুলো, গ্লাসগুলো, প্লেটগুলো, কাগজের রোলগুলো আর গরম মশলাগুলো জানত না যে, এটা সকাল । তাদের জানতেই দেওয়া হয়নি । আচারকে কেউ বলেইনি যে, সকাল হয়েছে এবং তার কিছু একটা করা উচিত । যেমন, নুন আর তেলের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে এক চক্কর হেঁটে আবার ফিরে আসা । মাটির অনেক গভীরে থাকা শেকড়গুলো জানেই না যে, ওপরে ঝকঝকে রোদ । সকাল সবার জন্য একরকম নয় । কারও কারও জন্য ভোর বলে কিছু হয়ই না । সবার কাছে সময়ও সমান নয় । কেউ কেউ সময়ের বাইরে পড়ে থাকে যেন ওদের অস্তিত্বই নেই । আর বাকি কারও কারও জন্য সময়েরই অস্তিত্ব নেই ।
নুড়িপাথর আর শুকনো পাতায় ঢাকা
একখণ্ড জমির ওপর
একটি পাখি
ধীরে লাফাতে লাফাতে পোকা খুঁটে খাচ্ছে
একটি জঙ্গলের জনশূন্যতায়
একঝাঁক পাখি
এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে উড়ে যেতে যেতে
ডেকে উঠল
একটি জলপ্রপাতের কাছে
পর্ণরাজি অলঙ্কৃত
একটুকরো জমির ওপর
ঘুমোচ্ছে এক কাঠুরিয়া, ক্লান্ত।
পাদদেশে
নদীটির কাছে
জল খেতে
একটি সিংহ নেমে এল, নীরবে ।
কাছের রাস্তাটায়
কালো তেলের দাগের ওপর দিয়ে
একটা ট্রাকের ফুটো থেকে খসে পড়া
চকচকে জলের ফোঁটাগুলো
ছুটছে শহরের দিকে ।
এ পাড়ার পুরোনো মন্দিরের
অন্ধকার কোণটায়
এক গরীব মেয়ে
লুকিয়ে রাখছে
ওর চুরি করা মিষ্টি ।
ভিজে ঘাটগুলোর ওপর
একা একা বসে
ভাবনার ভেতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলা একটা লোক
ওর নিষ্পাপ চোখ দিয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে
বাঁশঝাড়ের ভেতর হারিয়ে গেল একটা কুকুর ।
আমাদের বৃদ্ধ পিঠে
জীবনের তুচ্ছতায় ঠাসা
তালাহীন একটা বাক্স চাপিয়ে
আমরা ফেরিওয়ালা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি এদিক ওদিক
যখন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আমরা বসছি
আর ভাবছি কতখানি ভার আমরা বইছি
আমরা অনুভব করছি
আমরা আসলে একটা কবিতা লিখছি ।
চিত্র: সৌরভ নন্দী
কোনও মন্দির ছিল না, এমনকি ভাঙাচোরা একটা মন্দিরও নয় । কোনও উঁচু মাচা ছিল না কিংবা সিঁদুর-মাখানো কোনও গাছ । শান্তির কোনও আভাও ছিল না । কিন্তু একজন ঈশ্বর ছিলেন, অদৃশ্য, ন্যাকড়ার পিছনে লুকোনো । বয়স হচ্ছিল, তিনি ছিলেন বৃদ্ধ এবং জ্ঞানী । তাঁর বীরগাথার উল্লেখ ছিল পরিত্যক্ত এবং সম্পূর্ণ ভুলে-যাওয়া কিছু প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে । তিনি ছিলেন একজন অনুপস্থিত ঈশ্বর। তেঁতুলগাছের নীচে খেলছিল যে বাচ্চা মেয়েদুটো তারা এমনকি তাঁকে দেখেওনি । খেলাধুলো বা করুণা কোনওটার জন্যই তিনি উপযুক্ত ছিলেন না । কেউ জানে না কোন শুভক্ষণে তাঁর জন্ম হয়েছিল। থাকা বা না-থাকা কোনওটাই আর তাঁর হাতে ছিল না । যদিও কিছুই ছিল না, না কোনও প্রার্থনা, না কোনও শক্তি, না কোনও ভক্তি, না কোনও খ্যাতি, তবুও ঈশ্বর ছিলেন। নিজের ব্যর্থতা যাঁকে সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলেছে ।
একটি পাখির মতো
অনায়াসে, প্রায় অদৃশ্য হয়ে
মৃত্যুর দূত
একদিন আসে ।
আমরা এটা কখনওই জানব না যে
আমাদের পূর্বপুরুষেরা
অদৃশ্য পাখিদের মতো
আমাদের ঘরবাড়ির ওপর চক্কর খেতে থাকবে
তারপর একদিন সে আসবে
সূর্যালোকের মতো–
আমাদের শরীরের ওপরে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়ে
খুব সকালে যেভাবে একটি হাত
একটি শিশুকে মর্নিংওয়াকে নিয়ে যায়
সেভাবে আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাবে ।
শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।
সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।
মিরিক নামটি এসেছে লেপচা ভাষার “মির-ইওক” শব্দ থেকে, যার অর্থ আগুনে পুড়ে যাওয়া জায়গা।
15:34