- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- মার্চ ৬, ২০২২
অন্য ভাষা ভিন্ন স্বর
পর্ব ৬
গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক থেকে, বিদেশি ভাষার বহু স্বর, বহু সুর, নানা রকম ভাষাভঙ্গি আর বহুমাত্রিক বিষয়ের সংযোজনে ঋদ্ধ হয়েছে আমাদের কবিতা পাঠের মগ্ন চেতনা। কিন্তু এই উপমহাদেশের উত্তর আর দক্ষিণ, পূর্ব আর পশ্চিমের কবিতা, কবিতা ভাবনা দূরে পড়ে রইল এখনও । কেন ? ভারতীয় ভাষাচর্চায় বাঙালির অনীহা, না এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আরেক প্রতিবেশীর, আরোপিত প্রকান্তরে অনুশাসিত দূরত্বই তৈরি করেছে অপরিচিতির চৌহদ্দি ? যুক্তিপ্রসূত জিজ্ঞাসা নিয়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার কবিতার ধারাবাহিক তরজমায় প্রতিস্পর্ধী, সমান্তরাল চিন্তার বিশিষ্ট সহযোগী অংশুমান কর
সুরজিৎ পাতর
এই সময়ের উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় পাঞ্জাবি কবিদের একজন। তাঁর কবিতা সহজ কিন্তু গভীর। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ভারতীয় ভাষা পরিষদ পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান এবং গঙ্গাধর জাতীয় কবিতা পুরস্কারের প্রাপক তিনি। পেয়েছেন পদ্মশ্রীও। ব্রেখট, রেসিন এবং লোরকার নাটকের অনুবাদ করেছেন পাঞ্জাবি ভাষায়। কবিতা পড়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
আমার কবিতা
আমার মা আমার কবিতা বুঝতে পারতেন না
যদিও আমি মাতৃভাষাতেই কবিতা লিখতাম
তিনি কেবল বুঝতে পারতেন
তার পুত্রের হৃদয়কে কষ্ট দিচ্ছে কোনও এক দুঃখ
আমি বেঁচে থাকতেও
কোথা থেকে এল ওর দুঃখ–ভাবতেন।
প্রবল আগ্রহ নিয়ে
আমার নিরক্ষর মা আমার কবিতার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন
দেখো
এই গর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে
ছেলে আমার তার মায়ের কাছে দুঃখ লুকোচ্ছে
আর ভরসা করে তার দুঃখের কথা বলছে সাদা কাগজকে।
আমার মা কাগজটা হাতে তুলে নিতেন
আর বুকের খুব কাছে কাগজটাকে ধরে থাকতেন
সম্ভবত, এভাবেই
আমার কবিতার
আরও একটু কাছে যেতেন।
বিদেশ
দু’তিন পা হাঁটলেই
একটা বিদেশি ভূখণ্ড এসে পড়ে
যে-গাছগুলো আমি লাগিয়েছিলাম
তার ছায়ারা কত হ্রস্ব
মি. কবি
আমি প্রথম বাক্যটা লিখি
আর রাজার সৈন্যদের কথা ভেবে ভয় পাই
বাক্যটা কেটে দিই।
আমি দ্বিতীয় বাক্যটা লিখি
আর গেরিলা বিপ্লবীদের কথা ভেবে ভয় পাই
বাক্যটা কেটে দিই
নিরাপদে বেঁচে থাকবার জন্য
আমি আমার নিজেরই ডজন-ডজন বাক্যকে
এভাবে হত্যা করেছি
ওই বাক্যগুলোর আত্মারা
আমার চারপাশে উড়তে থাকে
আর জিজ্ঞাসা করে,
মি. কবি!
তুমি কবি নাকি কবিতার হন্তারক?
যে সমস্ত বিচারকেরা ন্যায়বিচারকে হত্যা করে
তাদের সম্বন্ধে আমি অনেক শুনেছি
আমি ধর্মের রক্ষাকর্তাদের সম্বন্ধেও শুনেছি
যারা নিজেরাই ধর্মের পবিত্র আত্মাটিকে হত্যা করে
এইটাই আমি আগেই শুনিনি
এখন এটাও শুনে নিলাম
আমাদের সময়ে ভয়ে কাঁপতে থাকা কবিরাও
কবিতার হন্তারক হয়ে গেছে।
ও, আমার শব্দরা
ও আমার শব্দরা
আমি তোমাদের মুক্তি দিলাম, বাড়ি যাও
ফিরে যাও অভিধানে
স্লোগানে
বক্তৃতায়
ছেয়ে ফেলো বিবৃতিকে
দাসত্ব করছে যে-নেতারা, যাও, তাদের সেবা করো।
এরপরেও যদি সামান্য আর্দ্রতা
তোমরা নিজেদের ভেতরে বাঁচিয়ে রাখতে পারো
তাহলে মিশে যাও আমাদের মা, কন্যা আর বোনেদের
আর্তনাদ আর কান্নার সঙ্গে
তাদের চোখের জলে ডুবে যাও
নিজেদেরই আহ্বান করা মৃত্যুবরণ করো
আর যদি তোমরা খুবই বিচলিত বোধ করো
তাহলে নিজেদের ফিরিয়ে নিয়ে যাও নিজেদেরই অতীতে
হয়ে যাও একটা হুংকার, একটা চিৎকার, একটা গর্জন
♦−♦♦−♦
❤ Support Us