- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- মে ২২, ২০২২
দশ ইঞ্চি প্রজাপতি
পর্ব ৪

অলঙ্করণ: দেব সরকার
উ প ন্যা স
যদুনাথের ভাগ্যলক্ষ্মী চিরকালই সুপ্রসন্ন। ক্রমে ওই নির্জন অঞ্চলেও স্ট্রাকচারটি রাস্তার পাশে ছোট্ট দোকান হয়ে ওঠে। কাঠের জন্য সরঞ্জাম তখন কলোনির মানুষদের কাজে জরুরি। আর একটা-দুটো নয়, পঞ্চাশের দশক একটু গড়িয়ে যেতেই এলাকার এ প্রান্ত-ওপ্রান্তে সতেরটি কলোনি গড়ে ওঠে।
ধীরে ধীরে যুগ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুলে ফেঁপে ওঠে যদুনাথ। একটু একটু শহর বদলায়। যদুনাথ তালমিলায়। কাঠের গোলা কিনেছে। আধুনিক ইংলিশ খাট, ওয়ারড্রোভ, সোফা, আলমারি থেকে কাঠের আসবারের আভিজাত্যে শহরের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান ‘নীলোৎপলা ফার্নিচার। ‘ শুধু এ শহর কেন, বহু দূর দূর অঞ্চলে দোকানের সীমানা ছাড়িয়েছে। বিয়ের মরশুমে গঙ্গা পেরিয়ে ভিন জেলার খদ্দের আসে। ডেলিভারি খরচা দিলে, যদুনাথ সব ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঠিক ঠিক পৌঁছে দেয়। এখন অবশ্য যদুনাথ নিছক একটি কারবারে নিবদ্ধ নয়। জমি কেনাবেচার সিদ্ধিলাভে এলাকার প্রথম সারির চিন-চার জনের মধ্যে। হরিয়ানার জোত সিং কে তো প্রতিনিধি মারফৎ যদুনাথের পাকাপাকি আইনজ্ঞর সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে হয়েছিল। প্রভাতী টেক্সটাইলটি বন্ধ হয়ে যেতে জমি তো যদুনাথের চুম্বক ক্ষেত্রের আকর্ষণে ছিল। যদুনাথের প্রখর একটি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে– যার সাহায্যে সে অঞ্চলের বন্ধ কলকারখানা, কিংবা অবশিষ্ট বাগানবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের ওয়ারিশদের সঙ্গে গোপন সংযোগ রাখতে সক্ষম। তাই, যদুনাথ আইনি ঝামেলার বৃহৎ বাগান জমি বা কলমিলের আওতায়থাকা ভূমি-কুমীরদের একজন দীনহীন হিসেবে নিজেকে মনে করে। আজ যে অধিক রাতের শহরবাসী বা যার যার ফ্ল্যাটের কমন ছাদের মাথায় দাঁড়িয়ে, দিগন্তের চতুর্দিকে ‘ঝিকমিক জোনাকির’, দীপ জ্বলে শিয়রে দেখতে পায়—যার কোনোটি গদরেজ এর, ‘মার্লিন’-এর বা পিয়ারলেস-এর— আকাশের ধূলিমলিন তারা নক্ষত্রের মুক্তির আহ্বানে ক্ষণিক বিহ্বল হয়ে পড়তে জানে—কিছু কৃতিত্ব যদুনাথের। যদিওসে মা তারার অপার করুণা ছাড়া, রাতের এইসব নান্দনিক বিলাসে আদৌ উৎসাহী নয় এখন ।
মায়ের করুণাই তো আসল । আমাদের ক্ষ্যামতা আর কতটুকু? যদুনাথ কড়ায়গন্ডায় বিশ্বাস করে। নইলে, শহরকে ‘শহর’ বানিয়ে তোলার পর্যায়ে এটা চতুর্থবারের ভাঙচুর। আজ যে, স্টেশন রোডের হাজার হাজার দোকানের দৈনিক কয়েক মিলিয়ন টাকার কারবার চলে —বহু দোকানেই গলোসাইন, সি.স.টি ভি, কয়েক হাজার মানুষের জীবিকাস্থল —তিন-তিনটি ভাঙচুরের মধ্যে গড়ে উঠেছিল । আর এই সব অনাগত প্রক্রিয়াগুলো কে যেন যদুনাথকে আশীবার্দ জানিয়ে বলেছিল, P. W. D-র জমিতে লোভ করিস না —সীমানা ছেড়ে জমি কিনে দোকানবসা। তারপর থেকেই একই স্থানে বাস ও চাষ। যদিও গ্লোসাইনে ‘শান্তি নিকেতন’ পোষার আশাকের মালিক ভুলু আইচ, ‘দি ম্যাচিং’ রেডিমেড গারমেন্টস এর খোকা সাহা আরও অনেকেরই প্রতিষ্ঠানে জ্বলজ্বল করে। যদুনাথের ‘নীলোৎপলা ফার্নিচার’ কেবল রংয়ের অক্ষর স্ফূট হয়ে আছে।। মেয়েরা কিংবা ম্যানেজার অবরে সবরে অনুরোধ রাখলে যদুনাথ বলে, তোমরা খুবই আহম্মক!… আমার ফুলে যদি মধু থাকে এমনিতেই ভোমরা আইব। …সেন্ট ছড়াবার দরকার কি?
আজও তাই নীলোৎপলা ফার্নিচার ঠিকানাটি সামান্য রং দিয়ে দেয়ালেই লেখা। মাঝেমধ্যে পুরো বাড়িটায় যখন নতুন রং-এর কোটিং হয়। নামটিও ফের জ্বলজ্বল করে।
বসো তোমরা!
থপথপে পা ফেলতে ফেলতে উঠে গেল যদুনাথ। এতক্ষণ যেন বাড়তি কিছু আড়াল ছিল। এবার তার ফাঁকা চেয়ারটার পেছনে টকটকে লাল রক্তজবার মালা পরিহিতা তারা মার সজিভ প্রতিকৃতিটি বাড়তি মাত্রা পায় এই সব উদ্বিপ্রদের কাছে । দীর্ঘশ্বাস ফেলে নমস্কার করে। এবং আজকের এই বিপদের শিরে সংক্রান্তিতে যে-যার আশীবার্দ ভিক্ষা করে। আর এতেই একটু বাড়তি আস্থা জন্মায় যদুনাথের ওপর ।
লোকটার সম্পর্কে পেছনে যতই নিন্দামন্দ দুবৃত্তামির অপবাদ থাকুক, বড়বড় বিপদে পরামর্শের জন্য স্টেশন রোডের দোকানদের ছুটি আসতে হয় আজও । মানুষটি আজ স্টেশনরোডের ছোটখাট সমস্যা-ঝঞ্ঝাটে মাথা না ঘামালেও, খুটিনাটি সব ক্যাচাল ও অপরাধের খবর পৌঁছে যায়। যদুনাথ, ভুলু আইচ বা খোকা সাহারা আঞ্চলিক প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিশিষ্ট নাম। এখন তো হাফ কিলোমিটার লম্বা ঠাসাঠাসি ব্যবসার মাতব্বর একটি বা দুটি সমিতি নয়। পাঁচ পাঁচটি ইউনিয়ন। নিত্য ঝামেলা লেগেই থাকে । বিপদ খুব উঁচু মহলের সমাধানযোগ্য হলেই, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়।
যদুনাথ উঠে এল চারতলায়। মাথায় ঘুরছে। এইসব আশ্রয় প্রার্থীদের কী আশার আলো দেবে? এ যাত্রার যে কর্মকাণ্ড, তাতে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ভূমিকা আছে।
মেদিনীপুরের সমুদ্রতীরে ভাসমান যে-বন্দরের নকশা অনুমোদন পেয়েছে, তা নিয়ে সাজসাজ রব। নেপাল, বাংলাদেশ-এর স্বার্থকে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা মিলিয়ে দিয়েছে । ‘ডবল ফ্লাইওভার,’ চার চারটি লেন হয়ে গঙ্গার নতুন সেতু (যার আন্তর্জাতিক দর পত্র ছাড়া হয়েছে) পেরিয়ে পৌঁছে যাবে সমুদ্রবন্দরে ।
এটা কি আর, পূর্বের পৌরসভা, পি. ডব্লু. ডির সুবিধে অসুবিধের রাস্তা প্রসারণ? কিংবা জনসংখ্যাও পরিবহনের চাপের জন্য শহরের দুপ্রান্ত জুড়বার জন্য রেললাইনের উওপর ফ্লাইওভার নির্মাণ?
ইতিমধ্যে বি.টি.রোড ছ’লেন হয়েছে, মার্লিন, পালানজি সাপুরজির মতো বিগ প্রতিষ্ঠান থেকে রঙ মাঝারি— নানা সংস্থার অধিকৃত জমিতে শহর আকাশমুখীন। মল, ইলেকট্রনিক্স, স্বাস্থ্যসংস্থার বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন, স্টেশন রোডের ভুলুআইচ, খোকন সাহাদের প্রভাবও সীমিত, যদিও ‘শান্তিনিকেতন’ ইতিমধ্যে বেলগাছিয়া, ভিআইরোড ও বারাসতে তিনটি শাখা খুলেছে, ‘দি ম্যাচিং’ পা রেখেছে টালিগঞ্জ ও বেহালায়। বলে কি হবে, বাজারতন্ত্র তো বাজারের নিয়মেই চলবে। সেখানে চেয়ারম্যান, মন্ত্রী, এম. পি বা এস.এল. দিয়ে সব কিছু চূড়ান্ত হয় না আজকাল।
শালা! মুক্ষু। এই হতভাগের নিয়ে হাজার জ্বালা। এদের কাছে দিন কাল আর বদলায় না। মান্ধাতার আমল আঁকড়ে পড়ে আছে! যেন ভুলু খোকন, আমি ভগবান হইয়ে বসে আছি!
যদুনাথের গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। মাথায় কাচা-পাকা ব্যাকব্রাশ চুল, ইদানীং সুগারের দাপটে গলার চামড়া যথেষ্ট কুঁচকানো। দামি সুতির ফিনফিনে একটি সাদা ফতুয়া ও পায়জামা। পোশাক তার অনাড়ম্বর কিংবা সর্বদাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও ইস্তিরির ভাঁজ স্পষ্ট। এটুকুই তার বিলাসিতা।
দেরাজ খুলে হার্টের রুটিন বড়ি ও ইনহেলার এক ডোজ মেরে নিল ।
খুবই পারিবারিক গলায় বল্ল, ও দুলি!একটু চা করবি?
গিরিন টিটা দেই দাদা?
গ্রীন টি দিবি?
একবারও খান নি আজ!…খান এখন।
দিনে ছসাত বার চা খায় সে। এর মধ্যে একবারই গ্রীন টি। ডাক্তারের পরামর্শ। একবার ফাঁকে যদুনাথ পাঁচতলায় এল । স্ত্রীর সঙ্গে গম্ভীর হাই টুকটাক কাথাবার্তা বলে। গভীর হলেও বোঝা যায়, যদুনাথ স্ত্রীর প্রতি জারিজুরি খাটায় না। নিজেকে সমর্পিত করে রাখে।সুপ্রভা ইদানীং মুটিয়ে গেছে। দেহজোড়া বাত, উচ্চ রক্তচাপ এবং সুগার। মাঝে মধ্যেই নার্সিংহোমে চেক করাবার থাকে ষাট-সত্তর হাজার টাকা পেমেন্ট করে আসে। বলতে গেলে সুপ্রভা এখন মোটা জীবন্ত একটি স্তূপ। কে বলবে, কোমর অবধি চুল, ছিপছিপে সুন্ধরী সুপ্রভাকে, তৎকালীন মফৎস্বলের উদীয়মান এক ফুটবলারের, খেলার জন্য রেলে চাকরি জুটিয়ে ছিল প্রেমের জাল কেটে স্রেফ আপন উদ্যমে ছিনিয়ে নিয়েছিল যদুনাথ।
চা নিয়ে যদুনাথ দুলিকে বলে, বিস্কুট দিবি না রে?
আপনার বিস্কুট বাড়ন্ত।
যদুনাথ শিশুর হাসি দিয়ে বলে, বাড়ন্ত ক্যান?
দুলালী একটা কৈফিয়ত দিতে যাচ্ছিল। যদুনাথ জানে তার ছোট ছেলেটির স্বভাব বৃত্তান্ত।আস্তে বলে, ম্যানেজারের কানে দিলে পারতিস! … আমার সংসার নৌকা খানার দুই মাঝি। তুই আর বৈদ্যনাথ! …না থাকলে, বাবু বিবিদের ফুটানি ক-বে ছুটে যেত!
দুলালী বোঝে কাদের ইঙ্গিত করছে যদুনাথ।
আসলে দুলালী যদুনাথের জ্ঞাতিসম্পর্কের । বাবার খুড়তুতো ভাই সম্পর্কের কাকার সন্তানদের একজন ‘মাতব্বর’ । জনপ্রতিনিধি।
স্টেশনের কাছে রেল-সাইডিং-এর ধারে, যে কলোনিটায় যদুনাথের শৈশব কৈশোর এমন কি যৌবনেরও কিছুটা অংশ কেটেছিল— আসলে স্বাধীনতার আগে ছিল বসতিহীন বিশাল একটি ইটভাঁটা ও তার ওপাশ থেকে ঠাকুরদের সম্পত্তির সীমা অবধি একটা বাগান। বাগানের মালিক এক মাড়োয়ারী । আর ঠাকুরবংশও জোড়াসাঁকোর ছিল না, পাথুরিয়া ঘাটার বংশৱতার সম্পত্তি।
মাতব্বর এর বাবা ছিলেন স্টেশনটির মালবাবু। ছোট্ট সাইডিংয়ে বসতেন। মূলত মালগাড়ির ডাব্বায় আজও লোহাপাথর, গন্ধক। পরে এসছে চাল-গম। ছোট ছোট লাল রংয়ের বিশেষ ধরণের কোয়ার্টারে থাকতেন কাকা।
দেশভাগের পর, বহু মারপিট, ঝঞ্ঝাট-ঝামেলার পর কলোনি সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদুনাথের উৎসাহেই ‘মাতব্বর’-এর পরিবার এজঘন্য প্লট ম্যানেজ করে।
বিশাল সংসার। চার পাঁচ ভাই, তিনবোন।
এখন সে-সব বেমানান-ইতিহাস। ‘মাতব্বর’-এর তিনতলার সামনের চত্বরে যান থানা-পুলিস প্রশাসন থেকে এলাকার বিশিষ্টদের গাড়িও জমায়েত ঘিরে থাকে—বোঝা যায় সাফল্যের সংজ্ঞাও হালনাগাদের সঙ্গে বদলায়।
দুলালী সূত্রে যদুনাথের আত্মীয়া হলেও, মূলত ছিল মাতব্বরদের পরিবারের সরাসরি সদস্য। বিবাহসূত্রে । পিত্রালয় রাণাঘাটের কুপার্সক্যাম্পে।
মাতব্বরদের পরিবারে পাঁচভাইয়ের সর্বকনিষ্ঠটির ঠিক ওপরের ভাইএর বধূ ও পরিবারে এসেছিল । তখন অবশ্য মাতব্বরের নাম, ডাক, ক্ষমতা আজকের মতো বহু বিস্তৃত ছিল না। সবে কলোনিকে একাট্টা করে, ইন্দ্রপতন ঘটিয়ে পৌরসভার ওয়ার্ড প্রতিনিধি এবং তৎকালীন ডামাডোলের বাজারে পৌরপ্রধান।
তো, চতুর্থ ভাইটি ছিল জন্মখুঁতো। প্রায় দৃষ্টিশক্তিহীন এবং শরীরে তার ছিল এমনই দূরারোগ্য খুঁত—ডাক্তারের নিষেধ ছিল দাম্পত্যজীবন যাপনের। রেলকর্মচারী, সাইডিংএর মাল বাবুটি তা জানতেন । হলে কি হবে, তারও গিন্নির চলে যাওয়ার পর, মাতব্বরের জীবনে যখন মোড় আসে—যুগ বদলাতে শুরু করেছে। মাতব্বরের স্ত্রী সংসারের সকল নির্ণায়ক শক্তি। পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে রাত-বিরোতে পালানোর দিনে, নীলিমা দুঃসাহসে ভর দিয়ে তপেশকে আগলেছে। আজ, বাড়ির সামনে পুলিস-প্রশাসনের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও, নীলিমা কোনো সুখ সাফল্যে ভোগেনা। মহিলা জানে কোন কোন আঙুলে কতটুকু বাঁকিয়ে ঘি তুলতে হয়। তপেশও সংসারের সমস্ত সিদ্ধান্ত ছেড়ে রেখেছে নীলিমার পর । এমন কী, রাজনৈতিক উথাল-পাথাল বা নির্বাচনের টকড়াটকড়িতে, অসাধারণ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে শাসনের গলায় স্বামীকে বলে দেয়, কাছের মানুষের কে কে ক্ষমতার লোভে তপেশকে পেছন থেকে ছুড়ি মারতে পারে। বহু পরিস্থিতিতে, তপেশকে অমান্যতার খেসারত দিতে হয়েছে।
নীলিমার সিদ্ধান্তেই চির রুগ্ন ছেলেটিকে বিয়ে দেয়া হয়। নীলিমা জানে বাংলায় এমন মেয়ে গন্ডায় মিলবে, যাদের কাছে পাত্রবিচার নয়, দুবেলা দুথালা ভাত, পরনের কাপড়, আর শাঁখা-সিঁদুরের নিশ্চিন্ত মিললে বর্তে যাবে জীবনে। আর যদি স্বীকৃত স্বামী দেবতাটিকে দিয়ে একটা গর্ভ উৎপাদন করিয়ে নিতে পারে, কোলে সন্তান এলে তো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া।
তপেশকে নীলিমা বলেছিল, সারা জীবন হ্যান্ডিক্যাপের দায় বইবে কে, ভেবেছ?
ডাক্তারদের পরামর্শ তো জানো! তপেশ বোঝাতে চায়।
ওসব পরামর্শ-টরামর্শ বুঝলে আমার হবে না। …বউটা অন্তত গোপেশের যত্ন-আত্তি তো করবে। কিছু ঘটে গেলে?
ঘ-ট-ল? …থাকবে সংসারে।
আর যদি…?
সম্পত্তির দাবি? …শর্ত করিয়ে নেব…
নীলিমাই রাণাঘাটে যোগাযোগ করে, সব খুলে বলেই শর্ত হিসেবে দুলালীর বিয়ে দিয়েছিল। তারপরের ঘটনা ইতিহাস । গোপেশ চলে যাওয়াতে, দুলালী এ-সংসারেই গোপেশের ভাগের দাবিদার হিসেবে অধিকারের প্রশ্ন তুলেছিল। নীলিমার স্পষ্ট কথা—দ্যাখো দুলালী, সব জেনেশুনেই এ সংসারে এসেছিল। …আজ উল্টো পথে হাঁটতে চাইলে চলবে? গোপেশকে সামনে রাখলে তো এ প্রশ্ন উঠত না? …কপালে নেই তোমার, আমরা কি করব?
দিদি, আমি যাই কোথায়?
তা বলার আমি কে?…এ বাড়ি থেকে যেটুকু দেওযা হয়েছিল, ফেরত চাইব না।…কোথায় উঠবে, তাতো আমার বলার কথা নয়।
দুলালী গুম হয়ে বসেছিল । নীলিমা টের পেয়েছিল, ক্যাম্পের মেয়ে তো, তায় ‘শখের পুরের’ জল খেয়ে, ক্ষমতার বাড়াবাড়িতে পেটে কি শয়তানি বুদ্ধি জন্মায়নি? গরিবের মেয়েরা ইঁদুরের মতো গোপনে গত্ত খুঁড়তে পারে, সে জানে।
আর এই সব কেচ্ছা, ৩ পাশের বিরোধী রাজনীতির মানুষরা শতখণ্ডে ফাঁপিয়ে ফায়দা তুলতে পারে!
যে দুলালী, অনেকটা জীবন পড়ে আছে তোমার! … ফের সংসার করতে চাইলে
এ আপনি কি কন দিদি?
তখন নীলিমা যদুনাথের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে সমস্যার সমাধান করে।তখন নীলা হয়েছে, উৎপলার ব্যাপারটা মনে নেই, সুপ্রভার শরীরে বাত-এর আক্রমণ শুরু হয়েছে। মুটতে শুরু করে দিয়েছে।
দুলালী আশ্রয় পেল এ-সংসারে । বর্তে গেছে সে । কুপার্সে ভাইরা কেউ আশ্রয় দেবে না। নানা ধান্দায় থাকে । সেঝ দিদিকে বলেছিল, সে কোনো উচ্যবাচ্যই করেনি।
তবে, দুলালীর কোনো ক্ষোভ নেই আজ নীলিমার উপর । শ্বশুড়বাড়ি থেকে যে- টুকু গয়নাগাটি পেয়েছিল গোপেশের বউ হিসেবে, পুটুলি করে পাঠিয়ে দিয়েছে ।
ক্রমশ..
চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক । বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই, কেউ যদি মিল খুঁজে পান তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ।
❤ Support Us